কুমার ধর্মসেনা আঙুল উঁচিয়ে ধরতেই ছুটলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। স্টিভেন ফিনের রিভিউ নেওয়ার ইশারায় ক্ষনিকের জন্য থমকে যাওয়া। হঠাৎই সবার মনে পড়ল, ইংল্যান্ডের তো রিভিউ নেই। ব্যাটসম্যানের আশেপাশেই ছিলেন বেশিরভাগ ফিল্ডার। ছুটে এলেন বাকিরাও। চোখের পলকে স্টাম্পসগুলো উঠে এলো হাতে হাতে। উল্লাস বাঁধনহারা!
চট্টগ্রামে হাতছানি দিয়েও মিলিয়ে গিয়েছিল যে জয়, সেই স্বপ্ন বাস্তবতা হয়ে ধরা দিল মিরপুরে। টেস্টের কুলীন দেশ, প্রবল পরাক্রমশালী ইংল্যান্ডকে তিন দিনেই হারিয়ে বাংলাদেশ পেল অসাধারণ, ঐতিহাসিক এক জয়।
তৃতীয় দিন চা বিরতির আগেও টেস্টের ভাগ্য ছিল দোদুল্যমান। ২৭৩ রান তাড়ায় ২৩ ওভারেই ইংল্যান্ড তুলেছিল ১০০। বিরতির পর ভোজবাজির মতো পাল্টে গেল সব। মিরাজ ও সাকিব আল হাসানের অসাধারণ বোলিংয়ে ইংলিশরা গুটিয়ে গেল আর ৬৪ রান যোগ করেই। বাংলাদেশের জয় ১০৮ রানে।
চট্টগ্রামে আলো ছড়িয়ে অভিষেক যার, সেই মিরাজ দ্বিতীয় ম্যাচেই জয়ের নায়ক। রেকর্ডে ভাস্বর। প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও নিয়েছেন ৬ উইকেট। ম্যাচে ১৫৯ রানে ১২ উইকেট বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড।
সকালে বাংলাদেশ শুরু করেছিল ৩ উইকেটে ১৫২ রান নিয়ে। প্রথম সেশনে উইকেট পড়েছে নিয়মিত, রানও এসেছে দ্রুত। ৫৯ রানে দিন শুরু করা ইমরুল কায়েস বিদায় নেন ৭৮ রানে।
বারবার আউট হতে হতে বেঁচে গিয়েও ৪১ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন সাকিব। শেষ দিকে ২৫ রানের মহামূল্য ইনিংস আসে শুভাগত হোমের ব্যাট থেকে। বাংলাদেশ লক্ষ্য দেয় ২৭৩।
এই লক্ষ্য এই উইকেটে ছিল ভীষণ কঠিন। তবে ইংল্যান্ডের শুরুটা ছিল দুর্দান্ত। সিরিজের আগের তিন ইনিংসেই পঞ্চাশ ছুঁতে তিন-চার উইকেট হারিয়েছে তারা। এবার রান তাড়ার চাপ নিয়েও শতরানের জুটি গড়ে ফেলেন অ্যালেস্টার কুক ও বেন ডাকেট।
মূলত ডাকেটের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়েই অনেকটা এলোমেলো হয়ে মনে হয়েছে বাংলাদেশের বোলিং। সুইপ, রিভার্স সুইপ করে বাংলাদেশের স্পিনারদের দিশাহারা করে দেন ডাকেট। ঝুলে যায় বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের শরীরী ভাষাও। জমা হতে থাকে শঙ্কার মেঘ।
আলোকবর্তিকা হয়ে আসেন যথারীতি সেই মিরাজ। চা বিরতির পর প্রথম বলেই বোল্ড ডাকেট। এরপর আর পেছন ফিরে তাকানো নয়। ধরা দিতে থাকে একের পর এক সাফল্য। মূল বাধা হয়ে থাকা কুককে ফিরিয়ে মিরাজ পূর্ণ করেন ম্যাচে ১০ উইকেট। বাংলাদেশের মাত্র তৃতীয় বোলার হিসেবে পেলেন ১০ উইকেটের স্বাদ।
মিরাজ থামেননি সেখানেই। সঙ্গত ধরেনও সাকিবও। চার বলের মধ্যে তিন উইকেট নিয়েনেন সাকিব। ফিনকে ফিরিয়ে ইতি টানেন মিরাজ। যোগ্য হাতেই সমাপ্তি!
প্রথম ইনিংসে লিড পাওয়ার সম্ভাবনা থেকেও শেষ পর্যন্ত লিড গোণা, পিছিয়ে থাকা, সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো, শেষ ইনিংসে প্রতিপক্ষের শতরানের উদ্বোধনী জুটির পরও বড় জয়, সব কিছু মিলিয়ে এই জয়কে অসাধারণ বললেও যেন মনে হয় কম!
বাংলাদেশের আসল উদযাপনটা হলো প্রতিপক্ষের সঙ্গে করমর্দনের আনুষ্ঠানিকতা সারার পর। সবাই ছুটলেন মাঠে। গোল হলে চলল আনন্দ নৃত্য। বাংলাদেশের টেস্টে ক্রিকেটে এমন দৃশ্য বিরল!
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ২২০
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ২৪৪
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ৬৬.৫ ওভারে ২৯৬ (তামিম ৪০, ইমরুল ৭৮, মুমিনুল ১, মাহমুদউল্লাহ ৪৭, সাকিব ৪১, মুশফিক ৯, সাব্বির ১৫, শুভাগত ২৫*, তাইজুল ৫, মিরাজ ২, কামরুল ৭; ফিন ০/১৮, মইন ১/৬০, আনসারি ২/৭৬, স্টোকস ৩/৫২, রশিদ ৪/৫২, ওকস ০/১৪)।
ইংল্যান্ড ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ২৭৩) ৪৫.৩ ওভারে ১৬৪ (কুক ৫৯, ডাকেট ৫৬, রুট ১, ব্যালান্স ৫, মইন ০, স্টোকস ২৫, বেয়ারস্টো ৩, ওকস ৯*, রশিদ ০, আনসারি ০, ফিন ০, মিরাজ ৬/৭৭, সাকিব ৪/৪৯, শুভাগত ০/২৫, তাইজুল ০/৭)
ফল: বাংলাদেশ ১০৮ রানে জয়ী
সিরিজ: ২ ম্যাচ সিরিজ ১-১ ড্র
ম্যান অব দ্য ম্যাচ ও সিরিজ: মেহেদী হাসান মিরাজ