কয়েক বছর পূর্বে অনলাইনে দোকান তৈরি করা খুবই জটিল একটি কাজ হিসেবে বিবেচিত হতো। কারণ ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করা, পণ্যের ছবি ও তথ্য সংযুক্ত করা, পণ্যের মার্কেট রিসার্চ করা, পেমেন্ট মেথড যুক্ত করা, পণ্য ডেলিভারির পদ্ধতি সংযুক্ত করাসহ আরো অনেক ঝামেলা পোহাতে হতো। কিন্তু বর্তমানে খুব সহজেই একটি অনলাইন দোকান শুরু করা সম্ভব।
চলুন দেখা যাক, কীভাবে নিজের একটি অনলাইন দোকান শুরু করবেন।
পণ্যের বাজার চাহিদা কেমন?
আপনার অনলাইন দোকানে যেসকল পণ্য বিক্রি করবেন, সেই পণ্যগুলোর বাজার চাহিদা কেমন সেটার উপর নির্ভর করেই ব্যবসা শুরু করা উচিত। যেসব পণ্য মানুষ সচরাচর কেনেনা, সেসব পণ্য দিয়ে ব্যবসা না করাই উচিত। আপনার পণ্য যদি সম্পূর্ণ নতুন হয়, অর্থাৎ আপনি যদি এমন কোনো পণ্য বা সেবা দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন, যা এর পূর্বে কেউ দেখে নি, তাহলে সেসব পণ্যের ক্ষেত্রে মার্কেট রিসার্চ করাটা জরুরী।
এসইএম রাশ হচ্ছে এমন একটি মার্কেট রিসার্চ টুল, যেটার মাধ্যমে খুব সহজেই জেনারেল অরগানিক সার্চ করে আপনার পণ্যের মার্কেট অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারবেন। এছাড়াও আপনাকে গুগল ট্রেন্ডের মাধ্যমে আপনার পণ্যের ব্যবসায়িক অবস্থান, অরগানিক ভলিউম, পেইড ভলিউম এবং ট্রেন্ড ভলিউম সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে।
আপনি যদি ইউনিক কোনো পণ্য বিক্রি করতে না চান, তাহলে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের ওয়েবসাইটগুলো থেকে পণ্য বাছাই করতে পারেন। ক্লিকব্যাংক, শেয়ার অ্যা সেইল, সি জেসহ আরো অনেকগুলো অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ওয়েবসাইট আছে, যেখানে আপনি খুঁজে পাবেন হাজার হাজার পণ্য।
অনলাইন স্টোর কিভাবে সেটআপ করবেন?
পূর্বে একটি অনলাইন ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করা অনেক ঝামেলার কাজ ছিলো। কিন্তু বর্তমানে ওয়েবসাইট ফ্রেমওয়ার্ক ও সিএমএসের কারণে, যেকোনো ওয়েবসাইট তৈরিই অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। বর্তমানে ইন্টারনেটে হাজার হাজার অনলাইন সিএমএস ও ই-কমার্স ফ্রেমওয়ার্ক আছে যেগুলো মাধ্যমে খুব সহজেই কয়েক মিনিটেই আপনার নিজের অনলাইন দোকান সেটআপ করতে পারবেন।
ম্যাগনিটো
ম্যাগনিটো হচ্ছে এমন একটি ইকমার্স সিএমএস প্লাটফর্ম, যার মাধ্যমে কয়েক মিনিটেই যেকোনো আকারের ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করা সম্ভব। এর সাহায্যে কম্পিউটার সম্পর্কে ন্যূনতম জ্ঞান থাকা যে কেউ কয়েক মিনিটেই তৈরি করতে পারবেন একটি পূর্ণাঙ্গ ইকমার্স ওয়েবসাইট।
থিমফরেস্ট থেকে ম্যাগনিটো ইকমার্স সিএমএসের জন্য যেকোনো ডিজাইনের থিম পছন্দ করে তা কয়েক মিনিটেই নিজের পছন্দমতো এডিট করা সম্ভব। যেমন, পোর্টো হচ্ছে অসাধারণ একটি ম্যাগনিটো থিম, যেখানে আপনি পাবেন ১৮ ধরনের হোমপেইজ ডিজাইন। এটি এনভাটো থিম মার্কেটে সর্বাধিক বিক্রিত থিমগুলোর মধ্যে একটি।
ওয়ার্ডপ্রেস (ওয়ো কমার্স)
ওয়ার্ডপ্রেস দ্বারা সাধারণত ইউজার ও কাস্টোমাইজ ফ্রেন্ডলি ডিজাইনের ওয়েবসাইট তৈরি করা যায়। ওয়ার্ডপ্রেসের মধ্যে ওয়ো কমার্স প্লাগইন সংযুক্ত করে, অসাধারন ডিজাইনের ইকমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করা সম্ভব। থিমফরেস্ট থেকে ওয়ো কমার্স প্লাগইনের জন্য হাজার হাজার থিম ডাউনলোড করতে পারবেন।
খুব সহজেই কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওয়ার্ডপ্রেস ও ওয়ো কমার্স প্লাগইনের দ্বারা নিজের অনলাইন ইকমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারবেন। সেভয় হছে অসাধারণ ডিজাইনের একটি ওয়ো কমার্স প্লাগইন, যেটার মাধ্যমে মাত্র কয়েক মিনিটেই একটি পূর্ণাঙ্গ ইকমার্স ওয়েবসাইট সেটআপ করা সম্ভব।
শপিফাই
ছোটো কিংবা বড়, যেকোনো আকারের ইকমার্স ওয়েবসাইট সেটআপ করার জন্য সবচেয়ে অসাধারণ একটি ওয়েবসাইট ফ্রেমওয়ার্ক হচ্ছে শপিফাই। শপিফাই মূলত ইকমার্স ওয়েবসাইট ফ্রেমওয়ার্ক যা সিএমএসও বটে। শপিফাই দিয়ে ইকমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করলে ডিজাইন, আকৃতি ও পেমেন্ট মেথড নিয়ে আর কোনো চিন্তা করতে হবে না।
যদিও শপিফাইয়ের থিম কাস্টোমাইজেশন ততটা সহজ নয়, কিন্তু তারপরেও মাত্র তিনটি ধাপে আপনি পূর্ণাঙ্গ একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারবেন। থিমফরেস্ট থেকে শপিফাইয়ের জন্য হাজার হাজার থিম খুঁজে পাবেন, যেগুলো দ্বারা কয়েক মিনিটেই ইকমার্স ওয়েবসাইট সেটআপ করা সম্ভব।
কোন ধরণের পেমেন্ট মেথড সেটআপ করবেন?
অনেক অনলাইন ইকমার্স সাইটেই ওয়েবসাইট তৈরি করার পর সবচেয়ে ঝামেলার কাজ বলে মনে করা হয় পেমেন্ট মেথড সেটআপ করাকে। এর কারণ হচ্ছে, বিভিন্ন ধরনের পেমেন্ট মেথড বিভিন্ন দেশে সাপোর্ট করে এবং ইউজার ফ্রেন্ডলি না হওয়ার কারণে গ্রাহক সেই ওয়েবসাইটে পেমেন্ট করতে চায় না।
তাই ইউজার ফ্রেন্ডলি পেমেন্ট মেথড সেটআপ করাটা জরুরী। আপনি যেকোনো ধরনের ওয়েবসাইট ফ্রেমওয়ার্ক কিংবা সিএমএসের মাধ্যমেই ওয়েবসাইট তৈরি করুন না কেন, গ্রাহককে যদি পেমেন্ট সংক্রান্ত নিশ্চয়তা প্রদান করতে না পারেন, তাহলে আপনার অনলাইন দোকান তৈরি করাটা সম্পূর্ণ বৃথা। তাই অথোরাইজ ডট নেট, পেপাল ও স্ট্রাইপের মতো পেমেন্ট মেথড ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন, কারণ এগুলো ইউজার ফ্রেন্ডলি ও নিরাপদ।
বর্তমানে কী কী ইকমার্স ট্রেন্ড চলছে?
শুধু একটি ইকমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করলেই হয় না। ওয়েবসাইট তৈরি করার সময় বর্তমান ট্রেন্ড মানাটাও জরুরী। ইকমার্স ওয়েবসাইট তৈরি ও নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এবং গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি করার জন্য ইকমার্স ট্রেন্ড সম্পর্কেও জানতে হবে। বর্তমানে ব্যবহৃত কিছু ইকমার্স ট্রেন্ড হচ্ছে,
- রেস্পনসিভ ওয়েবসাইট তৈরি করতে হবে।
- ওয়েবসাইটে পণ্যের তথ্য ও ছবির সাথে ভিডিও যুক্ত করতে হবে। পণ্যের বর্ণনার সাথে ভিডিও দেয়া থাকলে ৭৩ শতাংশ বেশি ভিজিটর পাওয়া যায়।
- রিকোমেন্ডেশন অপশন তৈরি করতে হবে।
- পণ্যের বিশ্লেষণী বর্ণনা যোগ করতে হবে।
- ইকমার্স ওয়েবসাইটটি ডিভাইস ফ্রেন্ডলি করতে হবে।
- যত বেশি সম্ভব, পেমেন্ট মেথড যোগ করতে হবে।
মার্কেটিং করার প্রয়োজনীয়তা
আপনার ইকমার্স ওয়েবসাইটের সম্পর্কে মানুষ তখনই জানতে পারবে যখন আপনি এর মার্কেটিং করবেন। যেকোনো ব্যবসায় সফলতা পাওয়ার জন্য মার্কেটিং করাটা অত্যাবশ্যকীয়। আপনার ওয়েবসাইটের জন্য মার্কেটিং করাটা খুবই জরুরি কারণ,
- মার্কেটিংয়ের মাধ্যমেই গ্রাহক আপনার অনলাইন দোকান সম্পর্কে জানতে পারবে।
- মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে আপনার অনলাইন অবস্থান দ্রুত শক্তিশালি হবে।
- মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে ইউজার, ভিজিটর ও গ্রাহকসংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
- মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে আপনার পণ্যের বিক্রি বৃদ্ধি পাবে।
- মার্কেটিং আপনাকে বর্তমান ইকমার্স পরিস্থিতির সাথে আপডেটেড হতে সাহায্য করবে।
পূর্বে নিজের অনলাইন দোকান তৈরি করাটা যেমন ঝামেলার, তেমনি ব্যয়বহুলও ছিলো। কিন্তু বর্তমানে মাত্র কয়েক হাজার টাকায় নিজের পূর্ণাঙ্গ একটি অনলাইন ইকমার্স দোকান তৈরি করা সম্ভব।
Featured Image: envato.com