যেকোনো উদ্যোগ, উদ্ভাবনী ভাবনা, প্রতিযোগিতাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারো কাজে ‘প্রেজেন্টেশনে’ আমাদের মাইক্রোসফটের পাওয়ার পয়েন্টের রঙিন সব স্লাইডে ভরসা করতে হয়। দেখা যায়, অনেক পরিশ্রম আর সময় নিয়ে পাওয়ার পয়েন্ট স্লাইড বানানোর পরও অনেক শিক্ষার্থীর প্রেজেন্টেশন ঠিক আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে না। হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ থেকে জানা যায়, শতকরা ৭০ ভাগ শিক্ষার্থীই পাওয়ার পয়েন্টে প্রেজেন্টেশন দেওয়ার ৩০ মিনিট আগেও জানে না ফাইলে কী কী তথ্য আছে। অন্যদিকে পেশাগত জীবনে সফল শতকরা ৭৪ ভাগ মানুষ শিক্ষাজীবনে নিজেই নিজের স্লাইড তৈরি করেন। চমৎকার স্লাইড উপস্থাপন করে পুরো ক্লাসকে চমকে দিতে চাইলে ছোটখাটো কিছু বিষয় খেয়াল রাখলেই চলে। কীভাবে আকর্ষণীয় পাওয়ার পয়েন্ট স্লাইড বানানো যায়, সে সম্পর্কে পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায়ে প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) সহকারী অধ্যাপক সাইফ নোমান খান।
১. স্লাইড বানানোর আগে ‘কনটেন্ট প্ল্যান’ করে নিন: পাওয়ারপয়েন্ট স্লাইডের মাধ্যমে কোনো প্রজেন্টেশন তৈরির আগে কাগজে কোন স্লাইডে কী কী দেখাবেন, কী কী তথ্য যুক্ত করবেন তার একটি তালিকা করে নিন। এতে আপনার প্রেজেন্টেশন তৈরির সময় স্লাইডের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকবে। প্রথম স্লাইডে আপনার প্রেজেন্টেশনে কী কী বিষয় থাকবে তার একটি ‘আউটলাইন’ দিলে দর্শক আপনার কথা শুনতে আগ্রহী হবেন।
২. কার্যকরী ছবি ও গ্রাফ ব্যবহার করুন: প্রতিটি স্লাইডে অপ্রাসঙ্গিক ছবি আর গ্রাফ ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো। বেশি ছবি দর্শকের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করে। বিভিন্ন পরিসংখ্যান-সংক্রান্ত গ্রাফ ব্যবহারের ক্ষেত্রে তথ্যসূত্র ও সঠিক গ্রাফ ব্যবহারে সতর্ক থাকা উচিত। গ্রাফের তথ্য খুব সহজে বলার অভ্যাস করুন।
৩. একই ফন্ট আর গাঢ় রং ব্যবহার করুন: স্লাইডের বিভিন্ন লেখায় একই রং ব্যবহার করার দিকে খেয়াল রাখুন। স্লাইড আর বিষয়বস্তুর শিরোনাম বড় সাইজের ফন্ট (ভারদানা কিংবা এরিয়েল ফন্ট) আর অন্যান্য তথ্যের লেখাগুলো মাঝারি সাইজের ফন্টে লিখুন। স্লাইড ডিজাইন যদি সাদা হয়, তাহলে লেখার রং কালো কিংবা গাঢ় নীল ব্যবহার করুন যেন দর্শক স্পষ্ট লেখা দেখতে পারেন। বিষয়-বক্তব্য জোরালো করার জন্য বিভিন্ন শব্দ ও বাক্যে আলাদা রং ব্যবহার করতে পারেন।
৪. স্লাইড ডিজাইনে সতর্ক হোন: আপনি যদি সূর্যের আলো প্রবেশ করে এমন ঘরে কিংবা উন্মুক্ত স্থানে পাওয়ার পয়েন্ট স্লাইড উপস্থাপন করেন, সে ক্ষেত্রে গাঢ় রঙের কোনো স্লাইড ডিজাইন ব্যবহার করবেন। এতে দূরের দর্শক ভালোভাবে আপনার স্লাইড দেখতে পারবেন। অন্ধকার কিংবা ছোট ঘরে প্রেজেন্টেশনের সময় সাদা রঙের স্লাইড ডিজাইন ব্যবহার করা ভালো।
৫. স্লাইডে ছোট ভিডিও দেখানোর চেষ্টা করুন: পাওয়ার পয়েন্ট স্লাইডে কোনো ভিডিওচিত্র দেখানোর সময় ২ থেকে ৩ মিনিটের ভিডিও দেখাতে পারেন। লম্বা সময়ের ভিডিওতে দর্শক মনোযোগ ধরে রাখতে পারেন না।
৬. এক স্লাইডে এক বক্তব্য: একই স্লাইডে অনেক ধরনের তথ্য আর বক্তব্য ব্যবহার কোনোভাবেই করবেন না। এতে শ্রোতা আপনার কথা শোনার বদলে স্লাইডের দিকে বেশি মনোযোগ দেবেন। পাওয়ার পয়েন্ট স্লাইডকে আকর্ষণীয় করার অন্যতম উপায় হচ্ছে বিভিন্ন স্লাইডে বিভিন্ন প্রশ্নকে শিরোনাম হিসেবে রেখে তার উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করা।
৭. বুলেট পয়েন্ট ব্যবহার করুন: স্লাইডের তথ্য খুব অল্প কথায় বুলেট পয়েন্ট ব্যবহার করে প্রকাশ করতে পারলে প্রেজেন্টেশন দৃষ্টিনন্দন হবে। একটি স্লাইডে ছয়টির বেশি লাইন ব্যবহার করবেন না। প্রতি লাইনে সর্বোচ্চ ৬ থেকে ৭টি শব্দ ব্যবহার করলে আপনার উপস্থাপন আরও আকর্ষণীয় হবে।
৮. ছোট ছোট অ্যানিমেশন ব্যবহার করতে পারেন: মাইক্রোসফট পাওয়ারপয়েন্টে বিভিন্ন রকম অ্যানিমেশনের অপশন আছে। ইউটিউবে টিউটোরিয়াল দেখে শিখে নিতে পারেন। তবে প্রয়োজন ছাড়াই খুব বেশি অ্যানিমেশন ব্যবহার করবেন না।
৯. স্লাইডে কী আছে তা জানুন: গ্রুপভিত্তিক স্লাইড নির্মাণের সময় বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই আরেকজনের তৈরি স্লাইড দেখে প্রেজেন্টেশনে বিভিন্ন তথ্য মুখস্থ করে। এতে কার স্লাইড কে বলবে তা নিয়ে হ-য-ব-র-ল অবস্থা দেখা যায়। প্রতিটি স্লাইডে কী কী তথ্য আছে বিস্তারিত জেনে রাখুন। এ ছাড়া, স্লাইডে কোনোভাবেই বানান ভুল থাকা চলবে না। এ ব্যাপারে খুবই সতর্ক থাকুন।
১০. স্লাইড তৈরি শেষে বক্তব্য ঠিক করুন: স্লাইড তৈরি শেষে একক কিংবা দলীয়ভাবে প্রেজেন্টেশন অনুশীলন করুন। অনুশীলনে স্লাইডে কী কী দুর্বলতা আছে তা নিজে জানার সুযোগ পাওয়া যায়।
গ্রন্থনা: জাহিদ হোসাইন খান