পেশায় যখন স্ট্যান্টওম্যান

বড় পর্দায় রোমহর্ষক আকশ্যান সিকোয়েন্সের নেপথ্যের কারিগর তিনি।জীবনের বাজি রেখে ঝুকির মুখোমুখি হয়েছেন তিনি বহুবার। স্ট্যান্টওম্যান গীতা ট্যান্ডন শেয়ার করলেন তাঁর অভিজ্ঞতা।

বাইক চালাতে ছোটবেলায় খুব ভালবাসতাম।আসলে আর পাঁচছন মেয়ে ছোটবেলায় যেটা করে থাকে, সেগুলোর কোনটিতে আমার বিশেষ উৎসাহ ছিল না!দশ-পাঁচটা চাকরির প্রতি আরও কোনও আকর্ষন ছিল না।তবে ইন্ডাস্ট্রিতে শুরুটা করেছিলাম ফোক ড্যান্সার হিসাবে।কিছুদিন করার পরেই তো বুঝেছিলাম,এই জিনিসটা আমি উপভোগ করছি না।বাইক চালাতে জানতাম,সাহসীও ছিলাম।তাই আমাকে একছন পরামর্শ দেন এই গুনগুলো আই কাজে লাগিয়ে কিছু করার জন্য।তখন থেকেই পেশাগত ভাবে স্ট্যান্টওম্যান হিসাবে কাজ শুরু করি।এটা প্রায় সাত বছর আগের কথা।যা উপার্জন করতাম তাতে বেশ ভালভাবেই সংসার চালাতে পারতাম।আর যেহেতু এটা আমার প্যাশন ছিল তাই কাজের প্রতিটা মুহুর্ত খুব ভালভাবেই এঞ্জয় করতাম।এতগুলো বছর ধরে প্রচুর সিনেমায় কাজ করেছি।বিজ্ঞাপনের ছোট পর্দাতেও কাজ করেছি।তবে প্রথম কাজের অভিজ্ঞতাটা বেশ যন্ত্রনাদায়ক ছিল বলা যায়!স্ট্যান্ট করতে গিয়ে স্পাইন ফ্র্যাকচার হয়ে যায়।সজ্ঞে সজ্ঞে অজ্ঞান হয়ে যাই।তিনমাস বিছানাবন্দি ছিলাম।অনেকেই বলেছিল গীতা আর ফিরতে পারবে না।আমি কিন্তু হাল ছাড়েনি।স্পাইনে বেল্ট লাগিয়ে স্যুটিং করতাম।অনেক সিনেমায় স্ট্যান্ট করেছি।‘কর্পোরেট’,’দে দনা দন’,’ওয়েলকাম’,’হাসি তো ফাসি’,’রাগিনী এমএমএস ২’,’সিং অব দ্যা গ্রেট’,-এর মতো সিনেমায় কাজ করেছি।দক্ষিনের সিনেমায়ও কাজ করেছি।সব মিলিয়ে শতাধিক তো হবেই!সম্প্রতি একটা বিজ্ঞাপনে সোনাক্ষি সিনহার বডি ডাবল হিসাবে কাজ করেছি।একবার স্যুটিং করতে গিয়ে টেলবোন ফ্র্যাকচার হয়ে গিয়েছিল।শপিং মলে স্যুট করছিলাম।কাচ ভেজ্ঞে বাইক চালিয়ে ভেতরে ঢোকার দৃশ্য ছিল।তারপর প্রায় ১০০ ফুট উপর থেকে ফ্রি ফল করতে হত।এই স্যুটিং করার সময় লোহার রডে লেগে টেলবোন ফ্র্যাকচার হয়ে যায়।সহকর্মীরা সজ্ঞে সজ্ঞে ছুটে আসেন।যন্ত্রনায় কাতরাতে থাকলেও আমি ওই অবস্থায় সেদিন শ্যুট শেষ করি।যন্ত্রনা নিয়েও আমি উপর থেকে সেদিন ফ্রি ফল করেছিলাম।আসলে আমি যে ধরনের কাজ করি তাতে প্রতিটা শটেই প্রচুর ঝুকি থাকে।যে কোনও সময় বড় বড় দুর্ঘটনা ঘটার ভয় থাকে।আমি কোনও ফর্মাল ট্রেনিং নেই নি।তবে কাজ করতে করতে শিখেছি অনেক কিছুই।আত্ম্ররক্ষার অনেক কৌশল রপ্ত করেছি।টিভি তে একটা শ্যুটিং এর জন্য অস্ট্রেলিয়ায় ২০ দিনের ট্রেনিংযে গিয়েছিলাম।ফিট থাকাটা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ন,সারাদিন স্বাভাবিক খাওয়া দাওয়া করলেও রাতে কমখাই।নিয়মিত জিম করি।শ্যুটিংযের সময় প্রতিদিন ওভারটাইম হয়ে যায়।শ্যুট দেওয়ার সময় প্রচুর রির্হাসাল করতে হয়।এমকি কেবল আরেঞ্জমেন্ট সহ-অন্যান্য কাজও করতে হয়।সম্প্রতি একটা সর্বভারতীয় রিয়েলিটিশো তে অংশগ্রহন করেছি।এটি আমার কাছে একটা স্মরনীয় অভিজ্ঞতা।সিনেমায় রির্হাসাল করার সুযোগ থাকে কিন্তু ওয়ান টেক শট চাই।আমার প্রতিবেশীরা আমাকে সুপ্যারম্যান বলে ডাকেন।ডিভোর্সের পর একজন মহিলাকে যে আর একজন পুরুষের উপর নির্ভর হয়ে থাকতে হবে এটা আমি বিশ্বাস করি না।আমার দু’সন্তান।তারাও গর্ব অনুভব করে।মহিলা বলে যে কোনও বাধার সম্মুখীন হয়নি তা নয়।তবে এ ধরনের সমস্যা সব জায়গাতেই আছে।শুধু ইন্ডাস্ট্রেকে দোষ দেওয়াটা ঠিক হবে না।ফোকাসড থাকাটাই এ সমস্যার সমাধান হতে পারে।

পেশায় আসতে হলে

# শারিরীক সক্ষমতা থাকা খুব প্রয়োজন।নিজেকে ফিট রাখতে ডায়েট ও জিমের দিকে নজর দিন।

# চোট আঘাত লাগাটা আমাদের রুটিনে দাঁড়িয়ে যায়।তবে ঘাবড়ে গেলে এ পেশায় বেশিদিন থাকা সম্ভব না।

# লোকের নেগেটিভ কথাবার্তা শুনতে হতে পারে।তাতে দমে না গিয়ে কাজের প্রতি ফোকাস ধরে রাখাটা খুব জরুরি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *