বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতকে সংস্কার ও আধুনিকায়নে করণীয় : বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে

Transformation and modernizing the power sector of Bangladesh is crucial for ensuring an uninterrupted supply of electricity. Enhancing energy efficiency, effectiveness, and sustainability are key factors in achieving this goal.


বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে এই মুহূর্তে সর্বপ্রথম বিশ্বাসযোগ্য পাওয়ার ডিমান্ড এনালাইসিস করতে হবে কার্রেক্ট ও রিয়ালিস্টিক ফোরকাস্ট ডাটার ভিত্তিতে।

এরপর ক্যাপাসিটি ডাইমেনশন করতে হবে সাথে গ্যাপ এনালাইসিস। সেই অনুসারে ডিমান্ড ম্যানেজমেন্ট এবং সম্পূর্ণ পাওয়ার ম্যানেজমেন্টের পলিসির সংস্কার ও আধুনিকায়ন করতে হবে।

পাওয়ার রিলেটেড পলিসি ও স্ট্র্যাটেজির সংস্কার করে হবে।

বিশেষজ্ঞদের দিয়ে আদানি সহ সকল চুক্তির অডিট & রিভিউ করতে হবে। প্রয়োজনে ডিমান্ড ম্যানেজমেন্টের পলিসির ভিত্তিতে রিভাইস চুক্তি ও চুক্তি বাতিল করতে হবে।

পিক ডিমান্ড ১২০০০ থেকে ১৫০০০ MW সেখানে একটিভ ও ব্যবহারযোগ্য ক্যাপাসিটি ২০০০০ MW। আদানির গোড্ডা পাওয়ার ছাড়াই আমরা ভালোভাবে চলতে পারবো। মাসে ৭০ – ৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিল না দিয়ে এই টাকা ব্যবহার দেশে নিজেদের পাওয়ার প্লান্ট করা সম্ভব।

যেসব কারণে বাংলাদেশ সরকার চাইলে আদানির চুক্তি বাতিলের প্রস্তুতি নিতে পারে

বিশেষজ্ঞদের মতে আদানি এবং বাংলাদেশের মধ্যে করা এই চুক্তি অস্বচ্ছ এবং এতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আনুপাতিক লাভের অভাব রয়েছে। তারা মনে করেন, চুক্তির শর্তগুলি আদানি গ্রুপের জন্য বেশি সুবিধাজনক, যেখানে বাংলাদেশ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বাংলাদেশের জন্য প্রকৃত সুবিধা না দিয়ে আদানির জন্য বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের দাবি বাংলাদেশের বিদ্যুৎ চাহিদার তুলনায় আদানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ আমদানি অতিরিক্ত হচ্ছে । এর ফলে বাংলাদেশকে অপ্রয়োজনীয়ভাবে বেশি খরচ করতে হচ্ছে, যদিও দেশটির নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদন করার সক্ষমতা বাড়ছে।

বাংলাদেশ নিজস্ব নবায়নযোগ্য শক্তি উৎস ( সৌর বিদ্যুৎ বা বায়ুশক্তি) উন্নয়নের দিকে অগ্রসর হতে পারতো, যা দীর্ঘমেয়াদে পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ী। কিন্তু আদানির চুক্তির কারণে এই উন্নয়নমূলক পদক্ষেপগুলো প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে পারে।



বাংলাদেশ বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহে ও লোডশেডিং কমাইতে এই মূহুতে করণীয়:

জ্বালানির নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে যেনো বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিঘ্ন না ঘটে । প্রাকৃতিক গ্যাস, এলএনজি, এবং কয়লা নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ  মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন স্থিতিশীল রাখতে হবে । জ্বালানির সংকট থাকলে আমদানি করতে হবে। 

পেট্রোলিয়াম-ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। বিদ্যমান তেল-ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়ে দ্রুত বিদ্যুতের চাহিদা মেটানো সম্ভব।

বিদ্যুৎ বণ্টন ব্যবস্থায় সীমাবদ্ধতার কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটে। বিদ্যুৎ লাইন এবং ট্রান্সমিশন ব্যবস্থার আধুনিকীকরনের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।   বিদ্যুৎ লাইনের উন্নতি ও রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে বিদ্যুতের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

স্মার্ট ব্যবহার, স্মার্ট নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যবস্থাপনা: end-userদেরকে শক্তি-দক্ষ প্রযুক্তি গ্রহণ করতে উত্সাহিত করুন (যেমন LED আলো, শক্তি-সঞ্চয়কারী যন্ত্রপাতি), এবং স্মার্ট মিটারের মাধ্যমে রিয়েল-টাইম এনার্জি ব্যবহার মনিটরিং বাস্তবায়ন করতে।

চাহিদার ধরণগুলির উপর ভিত্তি করে গতিশীলভাবে শক্তির ব্যবহারকে অপ্টিমাইজ করতে স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা (যেমন স্মার্ট থার্মোস্ট্যাট বা এআই-চালিত নিয়ন্ত্রণ) একীভূত করুন।

সামগ্রিক শক্তি দক্ষতার উন্নতি করে সর্বোচ্চ এবং অফ-পিক সময়ের সাথে পাওয়ার ব্যবহার সমন্বয় করে খরচ অপ্টিমাইজ করার জন্য নিয়ন্ত্রণ, ডেটা বিশ্লেষণ এবং যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রয়োগ করুন।

বিদ্যুৎ বিতরণে লস কমাতে সিস্টেম লস নিয়ন্ত্রণে আনা ও বিদ্যুৎ চুরি বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছোট আকারের সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন এবং বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প বাড়ানো যেতে পারে। এর ফলে বিদ্যুতের ঘাটতি কিছুটা পূরণ করা সম্ভব।

বাংলাদেশ বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহে ও জিরো লোডশেডিং এর জন্য দীর্ঘমেয়াদি প্ল্যান:

নবায়নযোগ্য শক্তিতে ফোকাস করতে হবে:

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বড় মাপের সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হতে পারে। বাংলাদেশের মতো দেশে সৌরশক্তি ব্যবহারের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে, যা দেশে নিরবচ্ছিন্ন ও সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারে।

উপকূলীয় এলাকায় বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং নদী ব্যবস্থার ওপর ভিত্তি করে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।

প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার বাড়ানো:

দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধান এবং উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। দেশের ভেতরে প্রাকৃতিক গ্যাসের নতুন ক্ষেত্র আবিষ্কার এবং বর্তমান ক্ষেত্রগুলোতে উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পর্যাপ্ত জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা যাবে।

এলএনজি আমদানির জন্য আরও টার্মিনাল স্থাপন করা হলে, গ্যাস সরবরাহের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে এবং তা বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত হতে পারবে।

পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন:

নিরাপদ পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন: দীর্ঘমেয়াদে, বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো আরও পারমাণবিক প্রকল্প গড়ে তোলা বিদ্যুৎ উৎপাদনে একটি স্থায়ী ও বিশুদ্ধ সমাধান হতে পারে। এটি প্রাথমিকভাবে ব্যয়বহুল হলেও দীর্ঘমেয়াদে টেকসই এবং সাশ্রয়ী।

বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ:

স্মার্ট গ্রিড প্রযুক্তি চালু করা বিদ্যুৎ বণ্টন ব্যবস্থায় দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারে। স্মার্ট মিটারিং এবং গ্রিড ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে অপচয় কমিয়ে বিদ্যুতের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।

দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুৎ গ্রিড সম্প্রসারণ করা, এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার মাধ্যমে দেশের সর্বত্র বিদ্যুতের প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে।

স্মার্ট টেকনোলজি ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে:

স্মার্ট মিটার, অটোমেটেড কন্ট্রোল, ডিমান্ড রেসপন্স সিস্টেম, IoT ইন্টিগ্রেশন, এনার্জি ম্যানেজমেন্ট প্ল্যাটফর্ম, স্মার্ট হোম, স্মার্ট অফিস, স্মার্ট বিল্ডিং, স্মার্ট সিটির ইমপ্লিমেন্টেশন ও ইউসেজ নিশ্চিত করেতে হবে সাথে  জনসচেতনতাও বাড়াইতে হবে।

শক্তি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি (EMS):

শক্তি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি (EMS) হলো একটি সমন্বিত ব্যবস্থা যা শক্তির উৎপাদন, ব্যবহার, এবং সংরক্ষণ নিয়ন্ত্রণ ও অনুকূল করার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি বিভিন্ন ডিভাইস, সেন্সর, এবং সফটওয়্যারের সমন্বয়ে গঠিত, যা শক্তি ব্যবহারের তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। EMS এর মাধ্যমে ব্যবহার কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, যা খরচ কমানো, শক্তির অপচয় রোধ, এবং পরিবেশ সুরক্ষায় সহায়ক ভূমিকা রাখে।

EMS এর উপাদানসমূহ: Monitoring, Control, Optimization, Data Analysis, Automation এন্ড Integration with Renewable Energy।

EMS এর টেক: Smart Meters and Sensors, SCADA (Supervisory Control and Data Acquisition), AI and Machine Learning, Internet of Things (IoT)এন্ড Cloud-based Platforms।

পাওয়ার স্টোরেজ ব্যবস্থাপনা:

পাওয়ার স্টোরেজ ব্যবস্থাপনায় দৃষ্টি দেয়া যেতে পারে, বিশেষ করে নবায়নযোগ্য শক্তির ক্ষেত্রে যেমন ব্যাটারি, পাম্পড হাইড্রো স্টোরেজ, হাইড্রোজেন এনার্জি স্টোরেজ এবং ফ্লাইহুইল এনার্জি স্টোরেজ।

বিদ্যুৎ উৎপাদনে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ:

বিদ্যুৎ উৎপাদনে বেসরকারি খাতকে আকৃষ্ট করতে সহজ নীতি তৈরি করা এবং তাদের বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করা। এতে বিদেশি বিনিয়োগও বাড়বে এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।

বিদ্যুৎ সাশ্রয় ও দক্ষ ব্যবহারে জোর দেওয়া:

দক্ষতা বাড়াতে জনসচেতনতা সৃষ্টি করে হবে। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে, যেমন এনার্জি-এফিশিয়েন্ট যন্ত্রপাতির ব্যবহার উৎসাহিত করা।

শিল্পখাতে বিদ্যুৎ ব্যবহার আরও দক্ষ করে তুলতে হবে। এনার্জি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম প্রয়োগ করে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের সুযোগ তৈরি করা যাবে।

YC Team &

ইঞ্জি. জনি শাহিনুর আলম
প্রযুক্তিবিদ এবং ডিজিটাল রূপান্তর বিশেষজ্ঞ

Youth Carnival: