বিদেশি লিগে সবচেয়ে বেশি খেলোয়াড় যে ৫টি দেশের

ফুটবল এমন এক খেলা যেটা বিশ্বের আনাচে-কানাচের শত কোটি মানুষ দেখে থাকেন কিংবা ফুটবল খেলে থাকেন। অনেক আগে থেকেই বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে ফুটবলের চর্চা হয়ে আসছে। কিন্তু উনিশ শতকের গোড়ার দিকে আধুনিক ফুটবলের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন ব্রিটিশরা। তারাই সর্বপ্রথম ফুটবল লিগ চালু করেন এবং অনেক ফুটবল ক্লাবের প্রতিষ্ঠা করেন। এর মাধ্যমে এক দেশের ফুটবলার হয়ে অন্য দেশের ফুটবল লিগে খেলার সুযোগ তৈরি হয়। এভাবে ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আজকের লা লিগা, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ কিংবা ইতালিয়ান সিরি’আ।

{ "slotId": "2452885053", "unitType": "in-article" }

বিশ্বের অনেক দেশের ফুটবলাররা নিজ দেশ ছেড়ে বিদেশি লিগে খেলছেন। এর মাধ্যমে একটি দেশের জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা যেমন পরিপক্ক হয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়ের খেলার যেমন যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করে সেই সাথে একটি দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখে। তবে বিশ্বের শীর্ষ ৫টি দেশ সম্পর্কে জানবো যাদের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পেশাদার ফুটবলার অন্য দেশের লিগে খেলে থাকেন। মোট ১৩৭টি লিগ এবং ৯৩টি দেশের পরিসংখ্যান যাচাই-বাছাই করে শীর্ষ পাঁচটি দেশের নাম এখানে উঠে এসেছে।

ইংল্যান্ড

ফুটবলের জনক বলা হয় ইংল্যান্ডকে। সেই সাথে ইংল্যান্ড আধুনিক ফুটবলের নিয়ম-কানুনেরর প্রবর্তক। এছাড়া ফুটবল বিশ্বের সর্বপ্রথম দেশ হিসেবে ইংল্যান্ডে চালু হয় ফুটবল ক্লাব, জাতীয় লিগ এবং নক-আউট প্রতিযোগিতা এফএ কাপ। বিশ্বের সবচেয়ে জমজমাট লিগ হচ্ছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন দেশ থেকে শত শত ফুটবলার এসে খেলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারে খেলেন ইংলিশ ফুটবলার স্টিভেন জেরার্ড; Source: mirror.co.uk

তবে অন্য দেশের ফুটবলাররা শুধু ইংল্যান্ডেই এসে খেলেন সেটা নয়। ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়রাও অন্য দেশে লিগগুলোতে খেলে থাকেন। বর্তমানে ইংল্যান্ডের প্রায় ৪৫১ জন ফুটবলার অন্যদেশের লিগগুলোতে খেলছেন। এই খেলোয়ারদের মধ্যে ৭৯ শতাংশ উয়েফা ভুক্ত দেশগুলোতে খেলছেন। ৫৭ শতাংশ ফুটবলার ওয়েলস এবং স্কটল্যান্ডে খেলছেন বাকি ফুটবলাররা গ্রেট ব্রিটেনে খেলছেন।

{ "slotId": "", "unitType": "in-article", "pubId": "pub-6767816662210766" }

তবে ইংলিশ ফুটবলারদের বড় একটি অংশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে খেলতে পছন্দ করেন কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভাষা এবং সংস্কৃতির সাথে ইংল্যান্ডের বেশ মিল রয়েছে। ওয়েলস এবং স্কটল্যান্ডের পরে বেশিসংখ্যক ফুটবলার আমেরিকায় খেলতে পছন্দ করেন। এছাড়া ইংলিশ ফুটবলাররা দুই স্প্যানিশ জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদ এবং বার্সেলোনা খেলার জন্য মুখিয়ে থাকেন। তবে ইংলিশ ফুটবলাররা বিশ্বের যেকোন লিগে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেলে তারা সেটি গ্রহণ করেন।

সার্বিয়া

এই তালিকার চতুর্থ অবস্থানে সার্বিয়ার নাম দেখে হয়ত অনেকেই অবাক হচ্ছেন। কারণ ইউরোপের ফুটবল খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে সার্বিয়া নিচের দিকে রয়েছে, যদিও তারা সর্বশেষ রাশিয়া বিশ্বকাপ খেলেছে। কিন্তু ইউরোপিয়ান ফুটবলের এই দেশটি প্রচুর সংখ্যক ফুটবলার রপ্তানি করে থাকে। যুগোস্লাভিয়া এবং মন্টিনেগ্রো থেকে আলাদা হওয়ার পর সার্বিয়া স্বাধীন দেশ হিসেবে ফিফা এবং উয়েফার সদস্য হয়েছে। বর্তমানে সার্বিয়ার সর্বমোট ৪৬০ জন পেশাদার ফুটবলার বিভিন্ন নিয়ে খেলছেন।

দেশের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে সার্বিয়ার ফুটবলাররা; Source: skysports.com

এরমধ্যে ৯১ শতাংশ ফুটবলারই উয়েফা ভুক্ত দেশগুলোতে চুক্তিবদ্ধ হয়ে খেলছেন। সার্বিয়ার অধিকাংশ ফুটবলার অভিবাসী হিসেবে পার্শ্ববর্তী দেশ বসনিয়া-হার্জেগোভিনা, মন্টিনিগ্রো এবং হাঙ্গেরিতে অভিবাসী হিসেবে চলে গেছে। তবে বর্তমানে যে ফুটবলাররা বাইরের দেশের লিগগুলোতে খেলছেন তারা সার্বিয়ার মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা পালন করছে।

এ জন্য দেশটির সরকার যুব ফুটবলারদের পেছনে প্রচুর অর্থ ব্যয় করছে যাতে ভবিষ্যতে তারা আরো বেশি পরিমাণ ফুটবলার বাইরের দেশগুলোতে রপ্তানি করতে পারে। সার্বিয়া তাদের যুব ফুটবলারদের পেছনে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছে বা করছে তার ফলাফল ইতিমধ্যে তারা পেতে শুরু করেছে। ২০১৩ সালে সার্বিয়া অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছে এবং ২০১৫ সালে ফিফা অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপও জিতেছে।

আর্জেন্টিনা

ইউরোপের প্রায় বড় বড় সব লিগগুলোতে আর্জেন্টিনার ফুটবলাররা আধিপত্য বিস্তার করেছে। ফিফার সূত্রমতে বিশ্বের বিভিন্ন ফুটবল লিগে নিবন্ধিত এবং অনিবন্ধিতভাবে আর্জেন্টিনার প্রায় ২৬ লাখ ফুটবলার খেলছে। কয়েক বছর আগেও আর্জেন্টিনা ছিল শীর্ষ ফুটবলার রপ্তানিকারক দেশ। তবে বর্তমানে আর্জেন্টিনার ৭৫৩ জন ফুটবলার বিদেশী লিগগুলোতে খেলছেন।

যাদের মধ্যে ৫০ ভাগই খেলছেন চিলি, মেক্সিকো, ইতালি, স্পেন এবং বলিভিয়ায়। এই ৭৫৩ জন ফুটবলারের মধ্যে ৩৭ ভাগ ফুটবলারই দেশ ছেড়েছেন উয়েফাভুক্ত দেশগুলোর ক্লাবের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে। আর্জেন্টাইন ঘরোয়া লিগ বিশ্বের প্রায় প্রতিটি প্রতিটি প্রান্তের ফুটবল ক্লাবগুলোকে আকর্ষণ করে থাকে এবং এখান থেকে অনেক খ্যাতিমান ফুটবলার জন্ম নিয়েছে।

আর্জেন্টিনার দিবালা এবং হিগুয়েইন একসাথে ইতালিতে খেলছেন; Source: goal.com

এছাড়া আর্জেন্টাইন ফুটবল লিগে খেলার সুযোগ পাওয়া অনেক কঠিন হওয়ায় অনেক খেলোয়াড় আছেন যারা এর চেয়ে সহজ লিগগুলোতে খেলার জন্য দেশ ছাড়েন। এছাড়া প্রচুর পরিমাণ খেলোয়াড় অনিবন্ধিতভাবে বিদেশি লিগে খেলতে যাওয়ার কারণে আর্জেন্টিনার মোট কত জন খেলোয়াড় বাইরের লিগে খেলছেন সেই হিসাবটা পাওয়া খুব কঠিন। তবে আর্জেন্টিনার অর্থনীতিতে বড় অবদান রেখে যাচ্ছেন এই ফুটবলাররা।

ফ্রান্স

তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ফ্রান্স। কিন্তু ফ্রান্সের কোনো ক্লাব এখন পর্যন্ত কোনো ইউরোপিয়ান শিরোপা জিততে পারেনি। ফ্রান্সের সেরা ফুটবলাররা তাদের ঘরোয়া লিগের চেয়ে বিশ্বের অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ লিগগুলোতে খেলতে পছন্দ করেন। এ কারণেই হয়তো ফ্রান্সের ক্লাবগুলো ইউরোপিয়ান পর্যায়ে তেমন কোনো সাফল্য পাচ্ছে না। বর্তমানে ৭৮১ জন পেশাদার ফরাসি ফুটবলার বিদেশি লিগগুলোতে খেলছেন যার মধ্যে ১০৭ জন রয়েছেন ইংল্যান্ডের ক্লাবগুলোতে।

ইংল্যান্ডে খেলছেন ফরাসি খেলোয়াড় এন’গোলো কান্তে; Source: zeenews.india.com

মোট খেলোয়াড়ের মধ্যে ৮১ শতাংশ খেলোয়াড় উয়েফা ভুক্ত দেশগুলোর ক্লাবের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে খেলছেন। এর মধ্যে প্রায় ৫১ শতাংশ ফুটবলার খেলছেন ইংল্যান্ড, বেলজিয়াম, ইতালি, স্পেন, লুক্সেমবার্গ এবং জার্মানিতে। ফ্রান্সের অধিকাংশ ফুটবলারই আলজেরিয়ান বংশোদ্ভূত। মজার বিষয় হচ্ছে তারা অভিবাসী হয়ে ফ্রান্সে এসেছেন এবং ফুটবলার হওয়ার পরে তারা আবার আলজেরিয়ার ঘরোয়া লিগের শীর্ষ ক্লাবগুলোতে খেলতে যান। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৬০টি দেশে ফরাসি ফুটবলাররা খেলছেন।

{ "slotId": "2452885053", "unitType": "in-article" }

ব্রাজিল

এই তালিকার সবার শীর্ষে রয়েছে ব্রাজিল। ব্রাজিলকে বলা হয় ফুটবলের দেশ। ব্রাজিলের আনাচে-কানাচে হাজার হাজার ফুটবলারের জন্ম হয়। বর্তমানে বিদেশে লিগগুলোতে সর্বমোট ১,২০২ জন ফুটবলার খেলছেন। এদের মধ্যে ৬৫ শতাংশ ফুটবলার উয়েফা ভুক্ত দেশগুলোর ক্লাবের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে খেলছেন। তবে ব্রাজিলের সবচেয়ে বেশিসংখ্যক ফুটবলার খেলছেন পর্তুগালে। পর্তুগালের শীর্ষ দুটি লিগে ব্রাজিলের মোট ২২১ জন ফুটবলার খেলছেন।

পিএসজিতে খেলছেন ব্রাজিলের বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়; Source: bestfootballers.com

ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারদের প্রথম পছন্দ পর্তুগাল হওয়ার কারণ হচ্ছে এই দুটি দেশের ভাষা এবং সংস্কৃতি একই ধরনের। ব্রাজিল একসময় পর্তুগালের উপনিবেশ ছিলো। উপনিবেশ হওয়ার কারণে দুটি দেশের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। এই কারণেই ব্রাজিলের প্রচুর সংখ্যক ফুটবলার পর্তুগালের লিগগুলোতে খেলে থাকেন। পর্তুগালের পরেই রয়েছে জাপান। জাপানি লিগের ক্লাব গুলোতে বর্তমানে ব্রাজিলের প্রায় ৫৪ জন ফুটবলার খেলছেন। বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে ব্রাজিলিয়ান ফুটবলাররা দেশের গৌরবময় ফুটবলের প্রতিনিধিত্ব করছেন।

Featured Image: goal.com

{ "slotId": "2452885053", "unitType": "in-article" }

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *