যদি আপনার ইচ্ছা থাকে ফুল ফ্রি স্কলারশিপ নিয়ে বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হবেন তাহলে এখনই সেটা নিয়ে ভাবার উৎকৃষ্ট সময়। অনেকেই আন্ডারগ্রেডেই উচ্চশিক্ষা নিয়ে ভাবতে থাকেন। শুরুতেই চিন্তা-ভাবনা করে রাখলে আপনার লক্ষ্য সম্পর্কে স্পষ্টভাবে ভাবনা চিন্তা করে, লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ করতে পারবেন। বিশ্বের সেরা কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে হলে কিছু বিষয়ের প্রতি একটু ভালোমত দৃষ্টি দিতে হবে।
১। আগ্রহের বিষয়ে রীতিমত গবেষণা করুন
স্নাতক চলাকালীন আপনার আকাঙ্ক্ষিত স্নাতকোত্তর বিষয়ে খোঁজ নেয়া শুরু করুন। ঐ বিষয় সম্পর্কে ওয়েবসাইট ঘাঁটুন, পারলে সে বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে আসুন। সম্ভব হলে বর্তমান ও সাবেক ছাত্রদের সাথে কথা বলুন। ভর্তির যোগ্যতা সম্পর্কে জানতে এই কাজগুলো অনেক সহায়ক হবে। সেসব ধারণার উপর ভিত্তি করে নিজেকে যোগ্য করে তুলতে পারবেন। প্রয়োজনে ভর্তির যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হবে এমন অন্য কোন কোর্স করতে পারেন। কিংবা প্রয়োজনীয় সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিয়ে নিজের যোগ্যতাকে শাণিত করতে পারেন। গবেষণায় বেশ খানিকটা সময় দিন এবং শেষে ৬-৭ টি বিশ্ববিদ্যলয় টার্গেট করে প্রস্তুতি নিতে থাকুন।
২। ৩টি ভালো রিকমেন্ডেশন লেটার প্রস্তুত করুন
সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আবেদনকারী শিক্ষার্থী কোথা থেকে আসছেন এবং তার রিকমেন্ডেশন লেটারে কী লেখা আছে সেদিকে অনেক গুরুত্ব দেয়। যে বিষয়ে যেতে চাচ্ছেন সে বিষয়ের জনপ্রিয়, পরিচিত কিংবা অনেক বেশি গবেষণা আছে এক্ষেত্রে, এমন কোন প্রফেসরের কাছ থেকে রিকমেন্ডেশন লেটার নিতে পারলে ভালো। তাহলে কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা প্রফেসর আপনার সম্পর্কে আগ্রহী হবেন। যদি স্নাতক শেষ করার সাথে সাথেই স্নাতকোত্তরে ভর্তি হয়ে যেতে চান তাহলে এমন প্রফেসরদের চিহ্নিত করুন যারা ভালো সুপারিশকারী হতে পারবেন এবং তাঁদের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখুন। যারা পেশাজীবী তাদের জন্য অফিসের বস বা মেন্টর সুপারিশকারী হতে পারেন। যারা এখনও পড়ছেন তারা কমপক্ষে ২-৩ জন প্রফেসরের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখার চেষ্টা করবেন। একই প্রফেসরের কাছে একাধিক কোর্স পড়লে সে সুযোগ কমে যাবে।
৩। ভালো সিজিপিএ অর্জনের চেষ্টা করুন
সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সিজিপিএ কে খুব গুরুত্ব দেয়। সিজিপিএ যত বেশি রাখা যায় সে চেষ্টা করুন – বিশেষ করে মেজর কোর্সগুলোতে। সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সিজিপিএ ৩.৫+ এর উপর চায়। যদি আপনার সিজিপিএ কম থাকে তাহলে আরও কিছু কোর্স নিতে পারেন,এগুলো আপনার আবেনকে বেশি যোগ্য করে তুলবে। তাই সিজিপিএ এভারেজ থাকলেও একেবারে হতাশ হবার কারণ নেই। মাঝারি সিজিপিএ – এর পাশাপাশি যদি এক-দুইটা পেপার থাকে তাহলে আপনার কম সিজিপিএ বাধা হবে না।
৪। ভালো জিআরই স্কোর এবং আইএলটিএস (IELTS)/টোয়েফল (TOEFL ) স্কোর
জিআরই-তে ভালো স্কোর পেতে হলে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। যদি আপনি আগেই শুরু করতে পারেন এবং প্রস্তুতির পদ্ধতি ভালমতো অনুসরণ করতে পারেন তাহলে আপনার ভালো স্কোর তুলতে পারা অনেক সহজ হবে। সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জিআরই স্কোর ৩২০+ চেয়ে থাকে & আইএলটিএস স্কোর ৭.০ বা TOEFL স্কোর ৯৪ থেকে ১০১ । নিয়মিত চর্চার মাধ্যমে এক্ষেত্রে নিজেকে এখন থেকেই উন্নত করতে থাকুন।
৫। নিবন্ধ লেখার চর্চা করুন
বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের জন্য আপনাকে নিবন্ধ জমা দিতে হবে। এটি ভর্তি প্রক্রিয়ার একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নিবন্ধ লেখার স্কিল বাড়ানোর জন্য সাধারণ স্যাম্পলগুলো চর্চা করতে থাকুন। লেখায় নিজের স্বকীয়তা তৈরি করতে পারলে এটি আপনার যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হবে। ভালো নিবন্ধ লিখতে জানলে সহজেই প্রফেসরদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারবেন।
৬। পারসোনাল স্টেটমেন্ট নিয়ে ভাবতে থাকুন
যে পারসোনাল স্টেটমেন্ট আপনি পাঠাবেন সেখানে আপনি কোন কোন প্রজেক্টে যেতে চান, কী কী কাজ করতে চান সেসবে গুরুত্ব দিলে ভালো করবেন। যে কাজটি করতে চাচ্ছেন সেটি করার জন্য আপনার যেসব যোগ্যতা আছে তা উল্লেখ করতে ভুলবেন না। পারসোনাল স্টেটমেন্ট হচ্ছে আপনি যে কাজটি করতে চান তার সংক্ষিপ্ত পরিকল্পনা। একে নিজের জীবনী বানিয়ে ফেলবেন না। পারসোনাল স্টেটমেন্ট একজন ভর্তি প্রত্যাশী হিসেবে আপনার সম্পর্কে ভালো ধারণা করতে সহযোগিতা করবে। আপনার নিজস্ব গল্পটি কী ? ভাবুন। ভেবে সুন্দর একটি গল্প তৈরি করুন। যেখানে একটি ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পেছনে আপনার প্রেরণা নিয়েও লেখা থাকবে।
৭। নিজেকে এবং নিজের যোগ্যতা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখুন
গল্পটি লেখার জন্য নিজের সম্পর্কে – নিজের যোগ্যতা, দুর্বলতাগুলো সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখতে হবে। আপনার আশেপাশের সমমনা মানুষদের সাথে কথা বলুন, তাদের মতামত জানুন। সবকিছু মিলিয়ে আপনার একটা সুন্দর স্টোরি হয়ে যাবে। অন্যান্য আবেদনকারীদের চেয়ে আপনার নিজস্বতা আলাদাভাবে চোখে পড়ে কিনা ভেবে দেখুন। সেরা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের পেছনে আপনার নিজের অন্তর্গত প্রেরণাটি বোঝার চেষ্টা করুন।
৮। কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু যোগ্যতাও লাগবে
অনেক বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনায় ভালো হওয়ার পাশাপাশি আরো কিছু যোগ্যতা চায় যেমন – এক বা একাধিক বিদেশি ভাষায় দক্ষতা, পরিসংখ্যানে ভালো ধারণা অথবা বিজ্ঞানের কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভালো দক্ষতা। আপনার বিষয় কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কী কী চাওয়া হয়েছে সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। আগে থেকেই এগুলো চর্চা করতে থাকুন। যদি আপনার আন্ডারগ্রেডে এইসব নাও থাকে, প্রয়োজনে এরকম কিছু কোর্স করে রাখুন। অন্যথায় কাঙ্ক্ষিত জায়গায় যেতে আপনাকে ভালোই বেগ পেতে হবে। তাই আগে থেকেই আঁটঘাট বেঁধে নামুন। জয় আপনার হবেই।