২০২০ সাল। করোনা মহামারিতে সবাই বাড়িতে। নারায়ণগঞ্জে নিজের বাসায় বসে ইন্টারনেটে একদিন একটা কোর্সের খবর পান সাজ্জাদ ইসলাম। বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয় যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড তাদের একটি জনপ্রিয় কম্পিউটার প্রোগ্রামিং কোর্সের অর্ধেক অনলাইনে উন্মুক্ত করেছে, যেটা শেখাবেন স্ট্যানফোর্ড অধ্যাপকেরা। ‘কোড ইন প্লেস’ নামের এই অনলাইন কোর্সের মাধ্যমে সাজ্জাদ প্রথম কোনো প্রোগ্রামিং ভাষা শেখার কোর্সে অংশ নেন। এ কোর্সটি ছয় সপ্তাহের মধ্যে শেষ করতে হবে। প্রতি সপ্তাহে একাধিক ভিডিও ক্লাস ছাড়াও একজন মেন্টরের তত্ত্বাবধানে অনলাইনে রিভিউ করার সুযোগ। সাজ্জাদ যে দলের সঙ্গে অনলাইনে রিভিউ কোর্সের সুযোগ পান, সেটির মেন্টর ছিলেন স্ট্যানফোর্ডেরই একজন ছাত্র।
‘কিছুদিনের মধ্যে আমি এই কোর্সে অভ্যস্ত হয়ে উঠি এবং সব নিয়ম মেনে ছয় সপ্তাহের মধ্যে সাফল্যের সঙ্গে কোর্সটি শেষ করি, কিন্তু এই শেষতো শেষ নয়, বরং এর মধ্যেই লুকানো ছিল বড় কিছুর শুরু।’ প্রথম আলোকে এভাবেই জানালেন সাজ্জাদ। এই কোর্সের মধ্যে কোডিংয়ের প্রতি যে আগ্রহ ও নিষ্ঠা তৈরি হয়, সেটি পরের বছরে সাজ্জাদকে সাহায্য করে ওয়ার্ল্ড রোবট অলিম্পিয়াডে (ডব্লিউআরও) অংশ নিতে।
২০২১ সালে অনুষ্ঠিত এই অলিম্পিয়াড হয়েছে অনলাইনে। নারায়ণগঞ্জ থেকেই অংশ নেন সাজ্জাদ। আর এটা করতে গিয়ে ডব্লিউআরও-এর বাংলাদেশি আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের (বিডিওএসএন) মেন্টরদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ থেকে প্রথমবার অংশগ্রহণ করে সাজ্জাদের দল বিশ্বের ৬৫টি দেশের ২০০ দলের মধ্যে দশম স্থান অর্জন করে।
পাশাপাশি গবেষণা করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে। কোডিং ও রোবটিকসের প্রতি ভালোবাসা এগিয়ে নিতে এর পর সাজ্জাদ স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন করেন এবং সম্পূর্ণ (১০০ শতাংশ) মেধাবৃত্তি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পান। সাজ্জাদ বর্তমানে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের পিচ ল্যাবে অধ্যাপক ক্রিস পিচের সঙ্গে কাজ করছেন। এই ল্যাব ও স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ প্রচেষ্ট হলো কোড ইন প্লেস।
এক বছর বন্ধ থাকার পর বিশ্বখ্যাত স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ‘কোড ইন প্লেস’ নামের অনলাইনে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শেখার কোর্সটি আবারও সবার জন্য উন্মুক্ত করেছে। ছয় সপ্তাহের এই অনলাইন কোর্সের কয়েকটি পর্যায়। প্রতি সপ্তাহে একটি করে বিষয়ের একাধিক ভিডিও বক্তৃতা শুনতে হয়। ছয় সপ্তাহের বিষয়বস্তুতে রয়েছে—কন্ট্রোল ফ্লো উইথ কারেল, দ্য আর্ট অব কোডিং, কনসোল প্রোগ্রামিং, আন্ডারস্ট্যান্ডিং ভেরিয়েবল, গ্রাফিক্স এবং লিস্ট ও ডিকশনারি। এর ভিডিও ক্লাসগুলো নিজের সময়মতো করে দেখে নেওয়া যায়। কিন্তু প্রতি সপ্তাহে একজন ‘সেকশন লিড’ বা মেন্টরের সঙ্গে অনলাইন ক্লাসে যোগ দিতে হয়। এটি সেকশন লিডের সময় অনুসারে অনুষ্ঠিত হয়। কোর্স চলাকালীন অনুশীলন ছাড়াও তিনটি অ্যাসাইনমেন্ট সম্পন্ন করতে হয় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে। কোর্স শেষে প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীকে নিজের একটি প্রকল্পও সম্পন্ন করতে হয়। সম্পূর্ণ কোর্সটি পাইথন প্রোগ্রামিং ভাষার মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়।
কোড ইন প্লেস কোর্সের মাধ্যমে পাইথন প্রোগ্রামিং শেখার ব্যাপারে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং বইয়ের লেখক তামিম শাহরিয়ার বলেন, এই কোর্সটি কেন করা উচিত? অনলাইনে অনেক বিনা মূল্যের ভিডিও এবং টিউটোরিয়াল আছে, অনেকেই এগুলো শুরু করে তবে শেষ পর্যন্ত যেতে পারে না। কিন্তু এই কোর্সটি যেহেতু একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে হবে এবং সেকশন লিডারের সঙ্গে সরাসরি কথা হবে, তাই শিক্ষার্থীরা একটি রুটিনের মধ্যে থেকে কোর্সটি শেষ করতে পারবে। আর এই কোর্সের জন্য কোনো টাকা খরচ করতে হবে না।
এর আগে ২০২১ শিক্ষাবর্ষে মোট ২২ হাজার শিক্ষার্থী এই কোর্সের মাধ্যমে পাইথন প্রোগ্রামিংয়ে হাতেখড়ি নিয়েছেন। তাঁদেরকে মেন্টরিং করেছেন ২ হাজার ২০০ জন সেকশন লিড। স্ট্যানফোর্ডের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের দুজন অধ্যাপক, ক্রিস পিচ ও মেহরান সাহামি এই প্রকল্পের উদ্যোক্তা।
তাঁদেরই একজন অধ্যাপক ক্রিস পিচ এই প্রকল্পের অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশের সব শিক্ষার্থী, সেকশন লিড ও পাঠক্রম প্রণেতাদের অভিনন্দন জানান। সেই সঙ্গে তিনি চলতি ব্যাচে অংশগ্রহণের জন্য আগ্রহীদের আহ্বান জানিয়েছেন।
শুধু শেখার জন্য নয়। এই কার্যক্রমে সুযোগ রয়েছে শিক্ষক বা মেন্টর হিসেবে যুক্ত হওয়ার। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, প্রোগ্রামার হিসেবে কর্মরত, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যাঁরা কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শিখছেন কিংবা এর আগে যাঁরা কোড ইন প্লেসের শিক্ষার্থী ছিলেন, তাঁরাও এই প্রকল্পে সেকশন লিড হওয়ার জন্য আবেদন করতে পারেন। সেকশন লিডদের পাইথন প্রোগ্রামিংয়ের লিস্ট ও ডিকশনারি পর্যন্ত দক্ষতা থাকা প্রয়োজন। নির্বাচিত হলে সেকশন লিডদের ‘আর্ট অব কম্পিউটার সায়েন্স টিচিং’-এর ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
শিক্ষার্থী কিংবা সেকশন লিড হিসেবে এই অনলাইন কোর্সে অংশগ্রহণের জন্য https://codeinplace.stanford.edu– এই ঠিকানার ওয়েবসাইটে গিয়ে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে। আবেদনের শেষ তারিখ ১০ এপ্রিল ২০২৩।
Source: Prothom Alo