ব্রেকিং নিউজ: নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের বিধিমালা ৪৫ বছর পর

0

ব্রেকিং নিউজ: নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের বিধিমালা ৪৫ বছর পর

নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের (বিসিএস ক্যাডার ও জুডিসিয়াল সার্ভিসের সদস্য বাদে সব শ্রেণি) নিয়োগ, জ্যেষ্ঠতা ও পদোন্নতির জটিলতা নিরসন হচ্ছে। এ লক্ষ্যে দীর্ঘ ৪৫ বছর পর এই প্রথম নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অভিন্ন বিধিমালা প্রণয়ন করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে বিধিমালার খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। শিগগিরই প্রশাসনিক উন্নয়ন-সংক্রান্ত সচিব কমিটির বৈঠকে এ বিধিমালা উপস্থাপনের কথা রয়েছে। পরে এটি প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হবে।

সূত্র জানায়, এ বিধিমালা কার্যকর হলে কোনো সরকারি সংস্থা আর নিজেদের ইচ্ছামতো কাউকে শূন্য পদে নিয়োগ করতে, জ্যেষ্ঠতা ও পদোন্নতি দিতে পারবে না। নয়া বিধিমালা অনুসারে প্রতিটি সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের যে কোনো শূন্য পদ পূরণে উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রকৃত জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করে সে অনুযায়ী পদোন্নতি দিতে হবে। বিভাগীয়ভাবে অভিযুক্ত, দুর্নীতি-অনিয়ম ও ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত কোনো কর্মচারীকে মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত পদোন্নতি দেওয়া যাবে না। এমনকি কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর এসিআরে (বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন) বিরূপ মন্তব্য থাকলে তিনি পদোন্নতি পাবেন না। এ ছাড়া একই সঙ্গে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করা হবে মেধাতালিকা অনুসারে। পদোন্নতি পাওয়া কোনো প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা একই বছরে সরাসরি নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তার জ্যেষ্ঠ হবেন।

সূত্র জানায়, প্রশাসনে প্রায় ১০ লাখ নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা রয়েছেন প্রায় এক লাখ, দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা প্রায় দুই লাখ, তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী রয়েছেন প্রায় তিন লাখ ও চতুর্থ শ্রেণির প্রায় চার লাখ কর্মচারী রয়েছেন। এসব নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীর জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ, পদোন্নতি ও নিয়োগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় জারি করা কিছু আদেশ, পরিপত্র, নির্দেশনা অনুসরণ করা হয়। ফলে এ ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। এ ছাড়া সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা না থাকায় বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়। এ প্রেক্ষাপটেই সরকার সুস্পষ্ট বিধিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়।

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব সমকালকে বলেন, নিয়োগ ও পদোন্নতির জটিলতা নিরসনে নন-ক্যাডার বিধিমালা করা হচ্ছে। এটি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। প্রস্তাবিত সরকারি কর্মচারী আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এটি করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।

সূত্র জানায়, উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে একই সময়ে দুই বা ততোধিক ব্যক্তিকে নিয়োগ করা হলে তাদের পারস্পরিক জ্যেষ্ঠতা মেধাতালিকা অনুসারে নির্ধারণ করা হবে। তবে মেধাতালিকা না থাকলে বা পাওয়া না গেলে তাদের পারস্পরিক জ্যেষ্ঠতা বয়সের ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে; বয়স একই হলে শিক্ষাবর্ষকে পদোন্নতির ভিত্তি ধরা হবে।

উচ্চতর স্কেলে পদোন্নতির জন্য পদোন্নতি কমিটি বা কমিশনের সুপারিশকৃত এবং অনুমোদিত কর্মকর্তা ও কর্মচারী পরে অনুমোদিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জ্যেষ্ঠ হবেন। তবে পদোন্নতির জন্য যোগ্য কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী যদি অনবধানবশত প্রথমবারের বিবেচনায় কোনো কারণে বাদ পড়ে যান বা জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘিত হন, তাহলে তিনি পরবর্তী পর্যায়ে পদোন্নতির জন্য বিবেচিত হবেন এবং তার জ্যেষ্ঠতা মূল ব্যাচের সঙ্গে সংরক্ষিত হবে। একই ব্যাচের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উচ্চতর পদে নিয়মিত পদোন্নতির ক্ষেত্রে পদোন্নতির পদে তাদের জ্যেষ্ঠতা নিম্নপদের জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে। দুই বা ততোধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর নিম্নপদে ধারাবাহিক নিয়োগের তারিখ একই হবে এবং নিম্নপদে তাদের পারস্পরিক জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণের সুনির্দিষ্ট বিধি না থাকলে বয়সের ভিত্তিতে পারস্পরিক জ্যেষ্ঠতা নির্ধারিত হবে।

বিভিন্ন পদের সমন্বিত জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট শ্রেণির প্রারম্ভিক পদে নিয়মিত যোগদানের তারিখ বিবেচনা করা হবে। এ ছাড়া নিয়মিত ভিত্তিতে ধারাবাহিক ব্যবস্থায় কোনো একটি নির্দিষ্ট পঞ্জিকা বছরে উচ্চতর পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ওই পঞ্জিকা বছরে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জ্যেষ্ঠ হবেন।

পদোন্নতির জন্য নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মূল্যায়ন পদ্ধতি :প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে এসিআরে পাঁচ বছরের গড় নম্বর ৮০ থাকতে হবে। মূল্যায়নের জন্য বিবেচ্য ওই পাঁচ বছরের মধ্যে কোনো বছরে প্রাপ্ত নম্বর ৪০ বা তার নিচে থাকলে তা বিরূপ মন্তব্য হিসেবে গণ্য হবে। গত পাঁচ বছরের এসিআরে কমপক্ষে তিন বছরের অসাধারণ বা অত্যুত্তম বা উত্তম মূল্যায়ন থাকতে হবে। তবে ওই পাঁচ বছরের মধ্যে কোনো বছর চলতি মানের নিম্নে বা ‘নিকৃষ্ট’ বা ‘সন্তোষজনক নয়’ মূল্যায়ন থাকলে তা বিরূপ মন্তব্য হিসেবে গণ্য হবে।

তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের পাঁচ বছরের এসিআরে কমপক্ষে তিন বছরের মূল্যায়নে ‘অতি উত্তম’ বা ‘উত্তম’ বলে উল্লেখ থাকতে হবে। তবে ওই পাঁচ বছরের মধ্যে কোনো বছর ‘চলতি মানের নিম্নে’ বা ‘সন্তোষজনক নহে’ মূল্যায়ন থাকলে তা বিরূপ মন্তব্য হিসেবে গণ্য হবে। এ ক্ষেত্রে তিনি পদোন্নতির যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের ক্ষেত্রে চাকরি বইয়ে বিরূপ মন্তব্য থাকলে ওই মন্তব্যের তারিখ থেকে তিন বছর পর্যন্ত পদোন্নতির জন্য বিবেচিত হবেন না।

যাদের পদোন্নতি দেওয়া যাবে না :বিভাগীয় মামলায় অভিযোগনামা জারি অথবা দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের মামলার চার্জশিট দাখিল বা গ্রেফতার হলে অথবা ফৌজদারি মামলায় সরকারি অনুমোদন দেওয়া হলে ওই সব মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী পদোন্নতির জন্য বিবেচিত হবেন না। কোনো কর্মচারী লঘু দ পেলে তিনি তার দ ভোগের মেয়াদ শেষে এক বছর এবং গুরু দ পেলে দ ভোগের মেয়াদ শেষে দুই বছর পদোন্নতির জন্য বিবেচিত হবেন না। তবে দ াদেশে দ ের মেয়াদ সুনির্দিষ্ট করা থাকলে দ ের মেয়াদ অতিবাহিত হওয়ার পর থেকে ওই সময়সীমা প্রযোজ্য হবে। বিভাগীয় মামলায় অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেলে কিংবা মামলায় দোষী সাব্যস্ত না হলে কিংবা দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা মামলায় বা ফৌজদারি মামলায় খালাস পেলে পদ শূন্য থাকা সাপেক্ষে পদোন্নতির বিষয়টি বিবেচনা করা যাবে। এরূপ পদোন্নতির ক্ষেত্রে ধারণাগত জ্যেষ্ঠতা প্রাপ্য হবেন।

COLLECTED

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *