বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষনীয় এবং মর্যাদাপূর্ণ লেখাটি হলো অলিম্পিক, যেখানে গ্রীষ্মকালীন এবং শীতকালীন অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের প্রতিযোগীরা বিভিন্ন ধরনের খেলায় অংশগ্রহণ করে। দুইশতাধিক দেশের অংশগ্রহণে মুখরিত এই অলিম্পিক গেমস বিশ্বের সর্ববৃহৎ এবং সর্বোচ্চ সম্মানজনক প্রতিযোগিতা হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।
খৃষ্টপূর্ব অষ্টম শতাব্দিতে প্রাচীন গ্রীসের অলিম্পিয়া থেকে শুরু হওয়া প্রাচীন অলিম্পিক গেমস থেকেই মূলত আধুনিক অলিম্পিক গেমসের ধারণা জন্মে। ১৮৯৪ সালে ব্যারন পিয়ের দ্য কুবেরত্যাঁ সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (আইওসি) গঠন করেন। এই আইওসি–ই অলিম্পিক গেমস সংক্রান্ত সকল কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। অলিম্পিক গেমস প্রত্যেক চার বছর পর পর অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এর দুটো প্রকরণ গ্রীষ্ম এবং শীতকালীন প্রতিযোগিতা প্রত্যেক দুই বছর পর পর হয়ে থাকে, যার অর্থ দাঁড়ায় প্রায় প্রত্যেক দুই বছর পর পর অলিম্পিক গেমসের আসর অনুষ্ঠিত হয়।
অতএব বোঝায় যাচ্ছে এই অলিম্পিক গেমেসের শুরু এখন থেকে প্রায় ১২৫ বছর আগে। ২০১৬ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরিও এর অলিম্পিক গেমস ছিল ৩১ তম অলিম্পিক গেমস। কিছু যারা বিশ্বকে মাতিয়ে বেড়িয়েছে, তাদের মেধা ও কর্ম শক্তি দিয়ে হয়েছেন পৃথিবীর সেরাদের একজন তাদের বর্তমান অবস্থা কেমন এই নিয়েই আজকের আয়োজন।
মাইকেল ফেলপস
সাঁতারের রাজা বা এককথায় জলের রাজপুত্র বলা হয় তাকে। আর বলা হবেই বা না কেন ৩ অলিম্পিক মিলিয়ে জয় করেছেন ২৮টি অলিম্পিক মেডেল যার মাঝে ২৩টিই স্বর্ণপদক। আমেরিকান এই সাঁতারু এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি অলিম্পিক মেডেলের অধিকারী। সাঁতার ছেড়েছন অনেকদিন আগেই এখন তিনি তার পরিবার নিয়ে আমেরিকাতেই বসবাস করেন এবং এখন যোগ দিয়েছেন তার আরেকটি হবি গলফস খেলাতে। মাইকেল ফেলপসকে এখন নিয়মিত দেখা যায় গলফ গ্রাউন্ডে, সেখানে ও সে তার প্রতিভা দেখিয়ে চলেছে।
উসেইন বোল্ট
২১ আগস্ট, ১৯৮৬ সালে জ্যামাইকার ছোট্ট শহর ট্রিলনি পারিশের শেরউড কনটেন্ট এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। জ্যামাইকার ছোট শহর শেরউড কনটেন্ট নামের ছোট্ট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন উসেইন বোল্ট। সেখানেই বাবা ওয়েলেসলি, মা জেনিফার বোল্ট, ভাই সাদেকি ও বোন শেরিনকে নিয়ে পরিবারের সঙ্গে বেড়ে ওঠা। উসেইন বোল্টের বাবা ছিলেন মুদি দোকানদার। বাবার সাথে মাও দোকান চালাতে সাহায্য করতেন। একসময় উসেইন বোল্টকেও চাল-ডাল বিক্রি করতে হয়েছিল বাবা-মায়ের সাথে। এই মুদি দোকান থেকে যা আয় হতো তা দিয়েই কোনোরকমে চলতো তাদের সংসার।
দৌড়বিদ হয়ে ওঠা
ছোট বেলায় ভাইয়ের সঙ্গে গ্রামের রাস্তায় ক্রিকেট ও ফুটবল খেলে সময় কাটত বোল্টের। এই দুটি খেলার প্রতিই বোল্টের ভালো লাগা রয়েছে। যে কোনো খেলার মাধ্যমেই হোক সারাক্ষণ দৌড়ের উপরেই থাকতেন তিনি। প্রাইমারি শিক্ষা গ্রহণের জন্য ভর্তি হলেন ওয়েলডেসিয়া প্রাইমারি স্কুলে। সেই স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে স্প্রিন্ট ট্র্যাকে ১ম পা পড়ে বোল্টের এবং শুরুতেই বাজিমাত করেন বোল্ট। ১০০ মিটারে স্কুলের সেরা দৌড়বিদ হন তিনি। বোল্টকে দেখে অলিম্পিকের সাবেক এক স্প্রিন্টারও বোল্টকে পরামর্শ দেন অ্যাথলেটিক্স এর মনোযোগ দেওয়ার জন্য। জ্যামাইকার হয়ে ক্যারিবীয় অঞ্চলের ইভেন্টে প্রথম অংশ নেন ২০০১ সালে। প্রথমবার অংশ নিয়েই ২০০ ও ৪০০ মিটারে জিতে নেন রুপা। একই বছর হাঙ্গেরিতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব যুব চ্যাম্পিয়নশিপে ২০০ মিটারে অংশ নেন। কিন্তু ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হলেও তখন পর্যন্ত ক্যারিয়ার সেরা টাইমিং (২১ দশমিক ৭৩ সে.) করেন।
অনন্য কীর্তি
- তিনবার ২০০ মিটার স্প্রিন্ট জয়ী প্রথম অ্যাথলেট উসেইন বোল্ট। দুইবার করে জিতেছেন যুক্তরাষ্ট্রের মাইকেল জনসন ও ক্যালভিন স্মিথ
- দুইবার ১০০ ও ২০০ মিটারের ‘ডাবল’ জয়ের একমাত্র কীর্তি
- ৫টি ব্যক্তিগত স্বর্ণ জিতে বোল্ট স্পর্শ করেছেন কার্ল লুইস ও কেনেনিসা বেকেলেকে। মাইকেল জনসন ও সের্গেই বুবকা অবশ্য এগিয়ে। এ দু’জন জিতেছেন ৬টি করে ব্যক্তিগত স্বর্ণপদক।
- ৮টি স্বর্ণ জয়ের বিরল রেকর্ড। এই রেকর্ডে বোল্টের সঙ্গী কার্ল লুইস ও মাইকেল জনসন। কার্ল লুইস তিনটি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়ে জিতেছিলেন ৮টি স্বর্ণ। মাইকেল জনসনকে ৮টি স্বর্ণ জিততে খেলতে হয়েছিল ৫টি আসর। মস্কোতে ৩টি স্বর্ণ জিতে উসেইন বোল্ট র্স্প করেছেন এই দুজনকে। মেয়েদের মধ্যে অবশ্য ৮টি স্বর্ণ আছে মার্কিন স্প্রিন্টার অ্যালিসন ফেলিক্সের।
অবসরের ঘোষণা ও সিদ্ধান্ত পরিবর্তন
২০১৬ সালে অনুষ্ঠেয় রিও ডি জেনিরো অলিম্পিকের পর ট্র্যাক থেকে বিদায় নেবেন। তবে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন উসেইন বোল্ট। ২০১৬ সালে অবসর নিচ্ছেন না তিনি। অংশ নেবেন ২০১৭ সালের লন্ডন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপেও। বুটজোড়া তুলে রাখতে পারেন এর পর। অবসর প্রশ্নে আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার কারণটাও ব্যাখ্যা করেছেন তিনি, ‘রিওর পরই অবসর নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ভক্তরা চায়, আমি যেন অন্তত আরও একটা বছর খেলে যাই। আমার স্পনসররা একই মত দিয়েছে। কোচও বলেছেন, এটা করা যেতে পারে। কিন্তু ইতিমধ্যই উইসেনকে দেখা যাচ্ছে নানা ক্রিকেট অঙ্গনে, কিছুদিন আগে তাকে জ্যামাইকার ক্রিকেট দলের হয়ে মাঠে নামতেও দেখা গিয়েছিল। উইসেনের মতে সে মাঠে থাকার জন্যই জন্মগ্রহণ করেছেন, তাই সেটা যে খেলায় হোক তিনি মাঠেই থাকবেন।
Allyson Felix
বিশ্বের দ্রুততম মানব থেকে এবার আসা যাক বিশ্বের দ্রুততম মানবীতে। বিশ্বের দ্রুততম মানবীর খেতাব সবচেয়ে বেশিবার জিতেছেন এলাইসন। এপর্যন্ত তিনি ২ অলিম্পিকে জিতেছেন ৬টি স্বর্নপদক যা স্প্রিণ্টে প্রথম কোন নারী জিতেছেন। ২০১৬ সালের রিও অলিম্পিকেও তিনি স্বর্ন জয় করায় এখন বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুততম মানবীর খেতাব তিনিই বহন করছেন। বর্তমানে তিনি একটি এন্টি ডোপিং সংস্থার সাথে কাজ করে চলেছেন এবং নিয়মিত রক্তদান করছেন।
Paavo Nurmi
অনেকেই হয়ত পাভো এর নাম শুনেন নাই তবে তিনিই বিশ্বের একমাত্র ক্রিয়াবিদ যিনি একটা দুইটা বা পাঁচটা নন একটানা ১২টি অলিম্পিক গেমসে যোগদান করেছিলেন। তিনি এই ১২টি অলিম্পিক গেমস থেকে জিতেছিলেন ৮টি স্বর্নপদক ও ৩টি রৌপ্য পদক। একসময় এই দৌড়বিদকে বলা হতো দ্যা ফ্লাইয়িং ফিন। ১৯৭৩ সালে পাভো মারা যান। মৃত্যুর কয়েকবছর আগেও তিনি অলিম্পিক স্প্রীন্টে ঝড়ও তুলেছিলেন। জীবনের শেষ সময় গুলোতে তিনি এখন প্রফেশনাল ভায়োলিন বাদক হিসাবে কাটিয়েছেন।
চলবে …