ভ্রমণ করতে কে না পছন্দ করে। কিন্তু ভ্রমণ করতে গিয়েও হরেক রকম সমস্যারও মুখোমুখি হতে হয় আমাদের। এরকমই একটা সমস্যা হচ্ছে ‘অর্থ সংকট’। ভ্রমণ করতে গিয়ে আমরা প্রায়ই অর্থ সংকটে পড়ে থাকি। এই অর্থ সংকট কাটানোর একটি ভালো উপায় হচ্ছে, ভ্রমণের সময়ই অর্থ উপার্জন করা। কিন্তু তা কীভাবে সম্ভব?
চলুন তাহলে জানা যাক, এমন কিছু পদ্ধতি সম্পর্কে, যেগুলোর মাধ্যমে ভ্রমণ করতে গিয়েও আমরা কিছু টাকাকড়ি আয় করতে পারবো ।
বিভিন্ন হোটেল ও রেস্টুরেন্টে কাজ খুঁজতে পারেন
প্রায় সব দেশেই ভ্রমণকালীন সময়ে টাকাপয়সার সংকটে পড়াটা স্বাভাবিক। বর্তমানে প্রায় সব দেশেই রেস্টুরেন্টে কিংবা হোটেল পার্টটাইম বা প্যাকেজে চাকরি দেয়া হয়। তাই আপনি ভ্রমণ করতে গিয়ে যে হোটেলে অবস্থান করবেন কিংবা যে রেস্টুরেন্টে খাবার খাবেন, সেখানে পার্টটাইম চাকরি নিতে পারেন।
স্থানীয় পত্রিকা কিংবা স্থানীয় ওয়েবসাইটেও এমন চাকরির খবর পাওয়া যায়। চেষ্টা করলে সেসব জায়গায় কাজ খুঁজতে পারেন। এভাবে ভ্রমণের পাশাপাশি পার্ট টাইম চাকরি করেও বেশ কিছু অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।
Source: camping-lourouchetou.com
তাছাড়া বেশ কিছু হোস্টেল ও রেস্টুরেন্টের ওয়েবসাইট আছে যেগুলোতে আপনি এসব প্যাকেজ চাকরি সম্পর্কে তথ্য পাবেন। আর এর আরেকটি সুবিধা হলো, নতুন জায়গায় ঘুরতে গিয়ে, অচেনা মানুষের সাথে ঘুরে বেড়ানোর চেয়ে হোটেল-রেস্টুরেন্টে চাকরি করে নতুন বন্ধু তৈরি করতে পারলে, ভ্রমণের আনন্দটাও দ্বিগুণ হয়ে যাবে।
হাউজ সিটিং বা ফার্নিচার টেস্টিং করে আয় করতে পারেন
এই কাজটা উদ্ভট শোনালেও, এমন অনেক ওয়েবসাইট কিংবা দোকান আছে যেখানে আপনি হাউজ সিটিং কিংবা ফার্নিচার টেস্টিং করে আয় করতে পারবেন। হাউজ সিটিং কিংবা ফার্নিচার টেস্টিং বর্তমানে প্রায় সকল দোকানপাটেই বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
ধরুন, কোনো বাসায় হয়তো পোষা প্রাণী আছে কিন্তু ঘরে দেখাশোনার মতো কেউ নেই। ঘরের কর্তা কিংবা কর্ত্রী কাজের চাপে ঘরে থাকেন না বললেই চলে। কোনো বিশ্বাসযোগ্য মানুষও নেই যে, ঘরের কিংবা পোষা প্রাণীটির দেখাশোনা করবে। এসব ক্ষেত্রে অনেকেই হাউজ সিটিং সার্ভিস দিয়ে থাকেন। অর্থাৎ আপনার কাজ হবে একটি ঘরের কিংবা পোষা প্রাণীর দেখাশোনা করা। এতে কিছু অর্থ উপার্জনও হলো, পাশাপাশি থাকার জায়গারও সমস্যা হবে না।
অনেক নতুন কোম্পানি আছে, যারা তাদের সোফা কিংবা নতুন কোনো ফার্নিচার ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতা জানতে চায়। সেক্ষেত্রে র্যান্ডম কিছু ব্যক্তি বাছাই করে তারা সেই সোফা কিংবা নতুন ফার্নিচার ব্যবহার করতে দেয়। যার বিপরীতে তারা সেই ব্যক্তিদের কিছু অর্থ প্রদান করে। আর এটাই হচ্ছে ফার্নিচার টেস্টিং।
ইন্টারনেট কিংবা বিভিন্ন জব বোর্ডে এমন অনেক চাকরি পাবেন, যেগুলোতে আপনি একজন হাউজ সিটার কিংবা ফার্নিচার টেস্টার হিসেবে আবেদন করতে পারবেন। যদিও এইসব প্যাকেজের চাকরিতে ততটা ভালো আয় করা সম্ভব হয় না। কিন্তু ভ্রমণে অতিরিক্ত কিছু অর্থ আপনার পকেটে যোগ হলে তাতে খারাপ কী?
ভাষা শিখিয়ে আয় করতে পারেন
আপনি যদি বিভিন্ন ভাষায় পারদর্শী হয়ে থাকেন, তাহলে বিভিন্ন কোচিং সেন্টার কিংবা ল্যাঙ্গুয়েজ ট্রেনিং সেন্টারে গিয়ে পার্ট টাইম চাকরির জন্যে কথা বলে আসতে পারেন। বর্তমানে প্রায় সব দেশেই ভাষার সমস্যাটা বেশ বড় একটি সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। যার বিপরীতে পর্যাপ্ত সংখ্যক ভাষা শিক্ষক বা শিক্ষিকা খুঁজে পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
অনেক দেশই আছে, যেখানে ভাষাগত সংকীর্ণতার কারণে ভাষা শেখাটাই বেশ দুরহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আপনি যদি সেরকম কোনো দেশে ভ্রমণের জন্য গিয়ে থাকেন বা যেতে চান, তাহলে এই ভাষা শেখানোকে আপনার অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
Source: atlanticlanguagetraining.com
যেমন, জাপান কিংবা চীনে ইংরেজি ভাষাভাষী শিক্ষকের পরিমাণ খুবই অল্প। আর যারা আছেন, তারাও খুবই ব্যয়বহুল। সেক্ষেত্রে আপনি সেসব জায়গায় নিজের হোটেলে কিংবা বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে অল্প খরচের প্যাকেজে কয়েকদিনের জন্য চাকরি নিতে পারেন। কম খরচে ভাষা শেখানোর কাজ শুরু করলে ভালো রকমের সাড়া পেতে পারেন।
ফ্রুট পিকিং করে আয় করতে পারেন
যদি আপনি মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে কিংবা শরীর খাটিয়ে কাজ করতে পছন্দ করেন, তাহলে ফ্রুট পিকিং করতে পারেন। এক্ষেত্রে বেশ ভালো পরিমাণে আয় করা সম্ভব হয়। যদিও কাজটা যতটা সহজ বলে মনে হচ্ছে, ততটা সহজ কিন্তু নয়। এক্ষেত্রে আপনাকে ধৈর্য ধরে পরিশ্রম করতে হবে ।
ফ্রুট পিকিং মানে হচ্ছে ‘গাছ থেকে ফল পড়ার পর সেটা সংগ্রহ করা’। ফ্রুট পিকিং করার জন্যে বিভিন্ন দেশের বাসা বাড়িতে ও স্থানীয় বাজারে বেশ কিছু দোকান পাওয়া যায়। ওসব জায়গায় আপনি সরাসরি গিয়ে কাজের কথা বলে আসতে পারেন। কিংবা চাইলে ফ্রুট পিকিং কমিউনিটিতেও যোগাযোগ করতে পারেন। হ্যাঁ, অবাক হওয়ার মতো তথ্য হলেও, সত্যিকার অর্থেই ফ্রুট পিকিং কমিউনিটি আছে, যারা ফ্রুট পিকিং করেই আয় করেন।
ট্যুর গাইড হিসেবে আয় করতে পারেন
আপনি যদি বেশ অনেক জায়গায় ভ্রমণ করে থাকেন এবং সেসব স্থান সম্পর্কে আপনার ভালো জ্ঞান থাকে, তাহলে ট্যুর গাইড হিসেবেও কাজ করতে পারেন। এটাও মাঠ পর্যায়ের কাজ এবং এখানেও ধৈর্য ও পরিশ্রমের পরীক্ষা দেয়া লাগে। যদিও এই কাজে তুলনামূলকভাবে অন্যান্য পার্ট টাইম কাজের চেয়ে অনেক বেশি আয় করা সম্ভব হয়।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় প্রতি বছরই লক্ষ কোটি মানুষ ভ্রমণে যায়। তাদের অধিকাংশকেই অর্থ সংকটে পড়তে হয়। প্রায়ই দেখে থাকবেন, বিভিন্ন স্থানীয় বাস স্ট্যান্ড, রেল স্টেশন কিংবা ফেরীঘাটে অনেক মানুষকেই দেখা যায়, যারা যাত্রীদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেন ও তাদেরকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যান। এরাই হলেন গাইড।
এছাড়াও ভ্রমণে বেড়িয়ে আয় করার আরো অনেক উপায় আছে। বিভিন্ন বোট কিংবা ইয়টের কর্মী বা বার্টেন্ডার হিসেবে, বাস্কিং করে (রাস্তার আশেপাশে কিংবা খোলা মাঠে গান গেয়ে) কিংবা বিভিন্ন গ্রীষ্মকালীন ক্যাম্পিংয়ে যুক্ত হয়েও বেশ ভালো পরিমাণে আয় করা যায়।
Featured Image: onhold.on.ca