মুশফিকুর রহিম, গর্বিত বাঙালীর গর্বের সন্তান

 

“বগুড়ার সবচেয়ে নামজাদা আর সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম মুশফিকের। চাইলেই আরাম আয়েশ করে বাকিটা জীবন কাটিয়ে দিতে পারতো। কিন্তু বেছে নিলো কঠিন জীবনকে। ওর মত পরিশ্রমী এবং ডেডিকেটেড খেলোয়াড় আমি খুব কম দেখেছি। হয়তো প্রতিভার দিক থেকে অন্য অনেকের চেয়ে পিছিয়ে ছিল। কিন্তু সব সময় ছিল সবাইকে ছাড়িয়ে যাবার প্রচেষ্টা। ব্যাবহারে ছিল নম্র আর ভদ্র। বিকেএসপিতে মুশি সম্পর্কে কারো কাছেই খারাপ কিছু শুনবেন না কোনদিন ।”–এমনটাই মন্তব্য করেছেন মুশফিকুর রহিম এর গর্বিত কোচ, সালাহউদ্দিন।

হ্যাঁ, শুধু বিকেএসপি নয়, বিশ্বজোড়াই তাঁর অমায়িক ব্যাবহার আর অদ্বিতীয় পারফর্মেন্সের জন্য মোহাম্মদ মুশফিকুর রহিম এখন তরূণ বাংলাদেশের আদর্শ।

 

১৯৮৮ সালের ৯ মে,মোহাম্মদ মুশফিকুর রহিম জন্মগ্রহন করেন বগুড়ার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে। ডাক নাম, মুশি। বাবা মায়ের আদরের এই ছেলেটি শৈশব থেকেই ছিলেন প্রচন্ড জেদী! ঠিক কতটা জেদী তা শৈশবের একটা গল্প থেকেই আন্দাজ করা যায়। একবার নানার বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন মুশি। সেখানে রাত দু’টোর সময় তিনি ঘুম ভেঙ্গে ব্যাডমিন্টন খেলার বায়না ধরেন। নানাভাবে ভোলাবার চেষ্টা করলেও, ছোট্ট মুশি ছিলেন নাছোড়বান্দা। সেই রাতেই তাঁর ব্যাডমিন্টন খেলার ব্যাবস্থা করতে হয়েছিল। হয়তো এই নাছোড়বান্দা মনোভাবই পরবর্তী জীবনে তাঁকে সবসময় সকল চ্যালেঞ্জ উপেক্ষা করে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। ক্যারিয়ারের শুরুটা রাজসিক না হলেও, নিজের ক্যারিয়ারকে রাজকীয় করে তুলে আজ সারা দেশের মানুষের ভালোবাসার রাজপুত্র হয়েছেন মুশফিকুর রহিম।

বগুড়ার স্থানীয় একটি ক্রীড়াচক্রে ক্রিকেটে হাতেখড়ি হয় মুশফিকের। পরে বিকেএসপি-তে ভর্তি হন। মুশফিক একজন উইকেট-কক্ষরএবং ব্যাটসম্যান । উইকেটের পেছনে তাঁর চটুল অবস্থান দলের সবাইকে চাঙ্গা রাখে সর্বক্ষণ। ২০০৫ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সেই মুশফিক জাতীয় দলে খেলবার সুযোগ পান।তবে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে মাত্র ১৯ রানের একটি ইনিংস এবং পায়ে ইঞ্জুরি নিয়ে ফিরতে হয় মুশফিককে।

২০০৬ সালে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ ১৯ বিশ্বকাপে মুশফিক বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৬ সালের জিম্বাবুয়ে সফরে আবার জাতীয় দলে সুযোগ পান মুশফিক। এবারে মুশফিক আন্তর্জার্তিক ক্রিকেটে তাঁর প্রথম হাফ সেঞ্চুরি করেন এবং ২০০৭ এর বিশ্বকাপে নিজের নাম স্থায়ী করেন। একই বছর শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্টে ৮০ রানের দুর্ধর্ষ ইনিংস খেলেন মুশফিক।

এরপর ২০০৯ এর জিম্বাবুয়ে সফরে মুশফিক বাংলাদেশের সহ-অধিনায়ক নির্বাচিত হন। ২০১০ এর ২১ জানুয়ারী ভারতের বিরুদ্ধে সিরিজের প্রথম টেস্টে মুশফিক তার ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি করেন মাত্র ১১২ বলে।

এরই মধ্যে বাঙ্গালী ক্রিকেট প্রেমীদের কাছে মুশফিকুর রহিম হয়ে ওঠেন অনুসরণীয় নাম। ২০১১ সাল থেকে বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন শুরু করেন তিনি। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ এশিয়া কাপে নিজেদের সেরা সাফল্য দেখায় এবং রানার্সআপ হয়। বাংলাদেশ দলের জন্য এই ম্যাচ ছিল এক বিশাল মাইল ফলক।

২০১৫ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের গ্রুপ পর্বের ৫ম খেলায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে সাথে নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্বকাপের যেকোনো উইকেটে ১৪১ রানের সর্বোচ্চ জুটি গড়েন মুশফিকুর রহিম। এর ফলে একদিনের আন্তর্জাতিকে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ দলগতভাবে সর্বোচ্চ রান তোলে।

এছাড়াও ২০১৫ ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশ বনাম আফগানিস্তান ম্যাচে তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

মুশফিকুর রহিমই প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে ডাবল সেঞ্চুরি করেন। মুশফিক ৮ম উইকেট রক্ষক যিনি টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন এবং ৯ম ব্যাটসম্যান যিনি টেস্টে ৬ নম্বরে ব্যাটিংএ নেমে ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন। একারণেই হয়তো মিডল-অর্ডারে খেলতে এতোটা কনফিডেন্ট মুশফিক। মুশফিকের মতে, মাঝামাঝি ব্যাট করাটা দলের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ রেস্পন্সিবিলিটি, এবং মুশফিক সবসমই দলের জন্য এই বিপদসীমায় খেলতে আগ্রহী।

ব্যাটসম্যান হিসেবে মুশফিকের সাফল্য অনেক সময়ই দোটানায় ফেলে দেয় তাঁর উইকেট কিপিং এর সফলতাকে। ছোট-খাটো চঞ্চল শরীর নিয়ে মুশফিকুর রহিম উইকেটের পেছনে বলের উপর ঝাপিয়ে পড়েন ক্ষিপ্র বাঘের মতই!বর্তমানে মুশফিকুর রহিম সফলতার সাথে বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করছেন ।

খেলাধুলায় নিজের সর্বোচ্চ সময় ব্যয় করলেও,ব্যাক্তি মুশফিক পড়াশোনায় ছিলেন বরাবরই মনোযোগী। নানাবিধ ব্যাস্ততার মাঝেও তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে সম্মানজনক ফলাফল নিয়ে পড়াশোনা শেষ করেন।

বাংলার প্রাণপ্রিয় এই ক্রিকেটার ২০১৪ সালে জান্নাতুল কিফায়াত মন্ডির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। জান্নাতুল কিফায়াত সম্পর্কে জাতীয় দলের আরেক ক্রিকেটার মাহামুদুল্লাহ রিয়াদের শ্যালিকা। পারিবারিক অনুষ্ঠানেই মুশফিকের সাথে পরিচয়, তারপর প্রণয় এবং পরবর্তীতে সংসারের জুটি বাঁধেন মুশফিক-মণ্ডি। সম্প্রতি মুশফিক তাঁর জীবনের সর্বোচ্চ পদক অর্জন করেছেন। ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ , সোমবার মুশফিকের স্ত্রী জান্নাতুল কিফায়াত পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। বাবা হলেন মুশফিকুর রহিম। মিস্টার ডিপেন্ডেবলের জীবনে একের পর এক সাফল্যের সাথেই তাই বেড়ে চলেছে আরও আরও দায়িত্ত্ব। কোটি বাঙ্গালীর ভালোবাসায় মুশফিকুর রহিম তাঁর গৌরবময় জীবন অতিবাহিত করুন, আমাদের বুকে ভালোবাসার সঞ্চার করুন তাঁর দৃপ্ত ক্রীড়াদক্ষতায়, আরো সুদীর্ঘকাল, সেই শুভকামনা।

Md. Monirujjaman

Communication Manager

 

Youth Carnival: