প্রতিটি ব্যর্থতা অধিকতর জ্ঞানী ও শক্তিশালী হওয়ার প্রাথমিক পর্যায়। আজ চলুন দেখা যাক কয়েকটি ধাপে ব্যর্থতাকে কীভাবে জয় করবেন।
১. ব্যর্থতার কারণ খুঁজে বের করুন
আপনি নির্দিষ্ট গোল, লক্ষ্য থেকে কেন ছিটকে পড়েছেন? এটা কি প্রতিরোধ করা যায় না? নিশ্চয় যায়। প্রথমত আপনি এর সহজ সমাধান খুঁজে বের করুন। উদ্দীপনা নিয়ে কাজ করুন এবং ফলাফল বিবেচনা করুন। আপনার প্রত্যাশা এখনো কি অপূর্ণ থেকে যাচ্ছে? তাহলে আপনার কাছের মানুষদের কাছে, দলের সবার কাছে এ সম্পর্কে বলুন।
আপনি যদি আপনার প্রত্যাশিত কাজ করতে ব্যর্থ হন আপনার সুপারভাইজারের সাথে আলোচনা করুন। যতক্ষণ পর্যন্ত সঠিক সমাধান না পাচ্ছেন ততক্ষণ পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। যে কাজে ব্যর্থ হয়েছেন সেখান থেকে কিছু নতুন ধারণা, প্রশ্ন এবং ভবিষ্যতে কীভাবে উন্নতি করবেন তা বের করে আনুন। আপনার প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ বাছাই করতে ব্যর্থ হলে অনলাইন থেকে এমন কয়েকজনকে খুঁজে বের করুন যারা উক্ত কাজে সফল হয়েছে। তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা কি আপনার থেকে বেশি? অনেক বছরের অভিজ্ঞতা? তারা কি বিশেষ কোন সময়ে কার্যক্ষেত্রে প্রবেশ করেছে?
আপনি প্রেমে ব্যর্থ হয়ে থাকলে নিজেকে প্রশ্ন করুন আপনার সঙ্গীর উপর অস্বাভাবিক প্রত্যাশা কিংবা চাপ চাপিয়ে দিয়েছিন কিনা। আপনি কি বুঝতে চেয়েছেন ভালোবাসা সম্পর্কে আপনার সঙ্গীর মতামত? আপনি কি তার বন্ধুত্ব ও কাজকে সাপোর্ট করেছেন?
২. নির্দিষ্ট গোল সেট করুন
অতীতে ব্যর্থ হয়ে থাকলে ভবিষ্যতের জন্য কিছু বাস্তববাদী গোল সেট করুন। এবং সে অনুযায়ী কাজ করুন। পরবর্তীতে নিজেকে কোথায় দেখতে চান? কোন কাজগুলো বাছাইকরণের মাধ্যমে আপনি সফলতা লাভ করবেন তা খুঁজে বের করুন।
প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তি নিয়ে সামনে অগ্রসর হোন। বার বার ব্যর্থতা আসতেই পারে। ভেঙে না পড়ে সামনের পথে অগ্রসর হোন। সাপ্তাহিক, মাসিক, বাৎসরিক কাজগুলোকে ভাগ করে নিন। নিজের স্বপ্নের কথা একটি ডায়েরীতে লিখে ফেলুন। প্রথম ছয় মাসে আপনি কী কী অর্জন করতে চান, পরবর্তী ছয় মাসে কী কী অর্জন করতে চান, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে নিজেকে কোথায় দেখতে চান সেইসব নিজস্ব ডায়েরিতে লিখে ফেলুন। প্রত্যাশা অনুযায়ী পরিশ্রম করতে থাকুন। মনে রাখবেন, পরিশ্রম সৌভাগ্যের চাবিকাঠি।
৩. মানসিক বৈপরীত্য অনুশীলন করুন
কল্পনা করুন বাস্তবতার সাথে মিল রেখে। প্রথমত আপনার প্রত্যাশিত কাজটি খুঁজে বের করুন যা স্বাচ্ছ্যন্দের সাথে করতে পারবেন। কয়েক মিনিটের মধ্যে সফলতার ভবিষ্যত পরিকল্পনা করে ফেলুন। সফলতার পথে কোন কোন পরাজয় বা ব্যর্থতা আসতে পারে তা আগে থেকে চিন্তা করে রাখুন। সার্বিক দিক বিবেচনা করে যদি বুঝতে পারেন আপনার লক্ষ্য বাস্তবতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় তাহলে অকল্পনীয় লক্ষ্য থেকে বেরিয়ে এসে বাস্তবিক এবং অর্জনযোগ্য লক্ষ্যের দিকে ফোকাস করুন।
৪. পদ্ধতি বা পন্থা পরিবর্তন করুন
একবার ব্যর্থ হলে পরবর্তীতে একই পথে না হেঁটে অন্য পন্থা অবলম্বন করুন। নতুনত্ব নিয়ে আসুন চিন্তায় এবং কাজে। একই ভুল বার বার করা থেকে বিরত থাকুন। ভুল থেকে শিক্ষা নিন। নিজেকে প্রশ্ন করুন আপনার উদ্দেশ্য, লক্ষ্য সঠিক আছে কিনা, যে সকল সমস্যা উদ্ভূত হবে তা সমাধান করতে পারবেন কিনা, ঝুঁকি নিতে আপনি প্রস্তুত কিনা ইত্যাদি। ব্যবসায়ে সফল হতে হলে ঝুঁকি নিতে হবে। কথিত আছে, “No risk No gain”
৫. আবার চেষ্টা করুন
সফল হতে হলে প্রয়োজন অদম্য চেষ্টার। আপনার নতুন গোল, নতুন পরিকল্পনা নিয়ে অবিরাম কাজ করে যান। তবে কাজ শুরু করে তার কিছুদিনের মধ্যেই চূড়ান্ত সফলতার কথা চিন্তা করবেন না। এটা বোকামী ছাড়া অন্য কিছু নয়। সফলতার জন্য নির্দিষ্ট সময় প্রয়োজন। কৃষক যখন নির্দিষ্ট সময়ে জমিতে বীজ বপন করে তেমনি একটি নির্দিষ্ট সময়ে ফসল ঘরে তোলেন, একটি শিশু জন্মের সাথে সাথেই হাঁটতে পারে না। হাঁটার জন্য উপযুক্ত বয়সের প্রয়োজন হয়। তাই আপনাকে চূড়ান্ত সফল হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে এবং অবিরাম পরিশ্রম করে যেতে হবে।
সফলতার পথে পথে পরাজয় বিছানা পেতে থাকবে তা স্বাভাবিক। ব্যর্থতাকে জয় করে সামনে অগ্রসর হলেই প্রকৃত অর্থে সফল হওয়া যায়। জীবনে ব্যর্থতা থাকবেই। তাই বলে হাল ছেড়ে বসে থাকলে চলবে না। নতুন করে শুরু করতে হবে এবং কাজে সফল হওয়ার জন্য বার বার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।