বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, সদ্য পাশ করা ছেলেমেয়েদের চেয়ে পড়াশোনা করছেন এমন শিক্ষার্থীরা ফ্রিল্যান্সিং কাজ করতে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠছেন । এই ফ্রিল্যান্সারদের মধ্যে রয়েছে প্রোগ্রামার, ইনফরমেশন টেকনোলজি এক্সপার্ট, আর্কিটেক্ট, সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, গ্রাফিক্স ডিজাইন, সফটওয়্যার এবং ওয়েবসাইট ডেভেলপাররা।
বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে দেখা যায় নিজের কর্মক্ষেত্র গড়ে তোলার সিদ্ধান্তে ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেরা স্থানে অবস্থান করছে। কারণ এই কাজে রয়েছে স্বাধীনতা, নিজের যোগ্যতার পরিচয় দেওয়ার পাশাপাশি দক্ষতা বাড়ানোর সুবিধা। আর সেই সাথে ভালো পরিমাণ আয়ের সুযোগ।
এ প্রসঙ্গে বর্তমানে সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং সাইট আপওয়ার্কের সিইও স্টেফেন কাসরিয়েল বলেন,
ফ্রিল্যান্সিং যেমন অসংখ্য কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি করছে, তেমনি এখানে কোনো প্রতিষ্ঠানের অধীনে না থেকে, নিজের দক্ষতা অনুযায়ী ভালো করা সম্ভব।
বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরটি বেশ বড় বলা চলে। এখানে রয়েছে আর্টিকেল রাইটিং থেকে শুরু হয়ে কোডিং, প্রোগ্রামিং, গ্রাফিক্স ডিজাইনসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ। তবে আপনি যদি এই সেক্টরে নতুন হয়ে থাকেন, তাহলে হয়তো ফ্রিল্যান্সিংয়ের কোন সেক্টরে আপনি নিজের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করতে পারবেন, সে বিষয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন।
অথবা হতে পারে, আপনি ইতিমধ্যেই বিভিন্ন ধরনের ফ্রিল্যান্সিং কাজে নিযুক্ত রয়েছেন। কিন্তু ভবিষ্যতে ফ্রিল্যান্সিং বাজারে কোন ধরনের কর্মক্ষেত্রের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে এবং নিজের কোন ধরনের কাজে দক্ষতা বৃদ্ধি করার দরকার, সে বিষয়ে জানতে আগ্রহী। তেমনটি যদি হয়ে থাকে, তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। বর্তমান সময়ের সেরা ১০টি ফ্রিল্যান্সিং কর্মক্ষেত্র নিয়ে আমাদের এই ফিচার।
১. ন্যাচারাল ল্যাংগুয়েজ প্রসেসিং / এপিআই ডেভেলপমেন্ট
আমাজন, ইকো আর গুগলের বদৌলতে বর্তমান সময়ে ভয়েস ইনপুট এসিস্ট্যান্টের চাহিদা চোখে পড়ার মতো। প্রযুক্তির এই সেক্টরটি এখনো যথেষ্ট পরিমাণ ডেভেলপড না হওয়াতে এই কাজের জন্য প্রচুর ফ্রিলান্সারের চাহিদা রয়েছে। ন্যাচারাল ল্যাংগুয়েজ প্রসেসিংয়ের মূল কাজ হচ্ছে, মানুষের ভাষাকে কম্পিউটারের বোধগম্য করে তোলা। আর এই কাজের জন্য প্রয়োজন হয় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স আর ল্যাংগুয়েস্টিকের উপর দক্ষতা। এই কাজের জন্য অবশ্যই কম্পিউটার সায়েন্সের উপর পড়াশোনা করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
২. সুইফ ডেভেলপমেন্ট
অ্যাপল কোম্পানি তাদের পণ্য অ্যাপল ওয়াচের ডেভেলপমেন্ট করেছে সুইফ প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজের মাধ্যমে। ২০১৬ সালে অ্যাপল ওয়াচ বাজারের অন্যান্য স্মার্টওয়াচের তুলনায় রেকর্ডপরিমাণ বিক্রি হয়েছে।
বাজারে যেমন এই স্মার্ট ওয়াচের চাহিদা বেশি, তেমনি ব্যবহারকারীরের নিত্যনতুন ফিচার প্রদানের জন্য ডেভেলপমেন্টের প্রয়োজন রয়েছে। ফলে অ্যাপল প্রচুর পরিমাণ ফ্রিল্যান্সারের চাহিদা প্রকাশ করেছে।
৩. সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট
বর্তমানে অনলাইনে ৭০ শতাংশ কাজ করা হয়ে থাকে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার উপর ভিত্তি করে। যার ফলে সোশ্যাল মিডিয়া সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজ যেমন প্রচারণা, এসইও, বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত কাজগুলোর জন্য প্রচুর ফ্রিলান্সারের চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণত মধ্যম মানের প্রযুক্তিগত দক্ষতা নিয়ে যে কেউ এই কাজে যুক্ত হতে পারেন।
৪. মার্কেটিং ওয়েব সার্ভিস
ইন্টিগ্রেটেড ওয়েবসাইটে এপিআই ডেভেলপমেন্ট করে ক্রেতাদের কাছে সহজে তথ্য সরবরাহ, ক্রমানুসারে সাজিয়ে রাখা, অর্ডার এবং শিপমেন্টের কাজগুলো করা হয়ে থাকে।
অ্যামাজনের মতো অনলাইনে বিভিন্ন শপিং সেন্টার গড়ে ওঠাতে এই কাজের জন্য অসংখ্য কোম্পানিতে দক্ষ ফ্রিল্যান্সারের চাহিদা রয়েছে। পাইথন প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজের উপর যথেষ্ট পরিমাণ দক্ষতা থাকলে আপনি মার্কেটিং ওয়েব সার্ভিসের কাজ করতে পারবেন।
৫. এনগুলার জাভাস্ক্রিপ্ট ডেভেলপমেন্ট
এই স্কিল থাকলে আপনি এইচটিএমএল কোডের সাহায্যে মোবাইল এবং ডেস্কটপ ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট করতে পারবেন। বিশেষত এই স্কিলটি ডায়নামিক ওয়েব এপ্লিকেশনের ফ্রেমওয়ার্ক সংক্রান্ত কাজ হওয়ার কারণে দক্ষতার উপর ভিত্তি করে প্রচুর আয় করা সম্ভব। গতবছরের রিপোর্ট অনুযায়ী, এনগুলার জাভাস্ক্রিপ্ট ডেভেলপমেন্ট করে বছরে ১ লাখ ডলার উপার্জন করা সম্ভব।
৬. মাইএসকিউএল প্রোগ্রামিং
বর্তমান সময়ের সবথেকে জনপ্রিয় ওপেনসোর্স ডাটাবেজ হচ্ছে মাইএসকিউএল প্রোগ্রামিং। বিভিন্ন ধরনের ওয়েব স্ক্রিপ্ট ল্যাংগুয়েজে জ্ঞান থাকার পাশাপাশি এই কাজের জন্য পিএইচপিতে ভালো দক্ষতা থাকার প্রয়োজন রয়েছে।
৭. ইন্সটাগ্রাম মার্কেটিং
ফেসবুকের মতো ইন্সটাগ্রাম মার্কেটিং ক্লায়েন্টদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ছবি শেয়ারিং করার এই সোশ্যাল মিডিয়াতে মার্কেটিং করার জন্য মধ্যম মানের টেকনোলজি বিষয়ক দক্ষতা থাকতে হবে। বর্তমানে ইন্সটাগ্রাম মার্কেটিং করে একজন ফ্রিল্যান্সার ঘণ্টা প্রতি সর্বোচ্চ ১৫ ডলার আয় করতে পারেন।
৮. ক্লাউড বেস এপিআই ডেভেলপমেন্ট
এসএমএস বিল্ডিং, ভয়েস এবং টেক্সটিং মেসেজিং এপ্লিকেশন মূলত ক্লাউড বেস এপিআইয়ের উপর হয়ে থাকে। যার উপর ভিত্তি করে টাইলোর মতো কমিউনিকেশন প্লাটফর্ম গড়ে উঠেছে। আর ক্লাউড ভিত্তিক কাজ হওয়াতে এ ধরনের কাজে ফ্রিল্যান্সারদের চাহিদা দিনকে দিন বৃদ্ধি হচ্ছে। বর্তমানে ক্লাউড বেস এপিআই ডেভেলপমেন্ট করে আপনি ঘণ্টা প্রতি ৩০ থেকে ৪০ ডলার আয় করতে পারবেন।
৯. মেশিন লার্নিং
আপওয়ার্কের হিসাব অনুযায়ী ডেটা সাইন্টিস্টের মধ্যে সবথেকে বেশি চাহিদা হচ্ছে মেশিন লার্নিং ইঞ্জিনিয়ারদের।হোক ফ্রিল্যান্সিং অথবা স্থায়ী চাকরি, মেশিন লার্নিং ইঞ্জিনিয়ারদের বাজার দর যে সবার উপর সেটা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। বর্তমানে একজন মেশিন লার্নিং ইঞ্জিনিয়ার বছরে ১ লাখ ২০ হাজার ডলারের মতো আয় করে থাকেন।
১০. ইনফরমেশন সিকিউরিটি
বিভিন্ন ধরনের সিকিউরিটি এনালাইসিস এবং ক্লাউড বেস সার্ভারিংয়ের তথ্য সংরক্ষণ এবং সেগুলোর নিরাপত্তা প্রদান করাই একজন ইনফরমেশন সিকিউরিটি এনালাইসিস্টের কাজ। এই কাজের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান স্থায়ীভাবে কর্মী নিযুক্ত করলেও ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইটে এই কাজের চাহিদার কমতি নেই।