একটি কথা বহুল প্রচলিত – বেকারত্ব একটি অভিশাপ, যা বর্তমান বাস্তবতায় কোনো অংশেই মিথ্যে নয়। একজন বেকার যেন সমাজ ও আত্মীয়-স্বজনের কাছে অস্পৃশ্য। বেকারকে নিয়ে কেউ স্বপ্ন দেখে না, কেউ উৎসাহ দেয় না, এমনকি দুটো ভালো কথাও কখনও কেউ বলে না। তো এই চাকরি না পাওয়ার/হওয়ার পেছনে নিশ্চয়ই কিছু কারণ রয়েছে। চলুন না আমরা নিজেরাই দেখে নেই এর পিছনে কী কী নিয়ামক থাকতে পারে।
১। অভিজ্ঞতার অভাব
বেশিরভাগ চাকরির ক্ষেত্রে অভিজ্ঞদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়। কিন্তু যেখানে এটা আমার চাকরির জন্য প্রথম আবেদন সেখানে অভিজ্ঞতা আসবে কোত্থেকে! সমাধান: ছাত্রজীবন থেকেই চেষ্টা করুন শিক্ষানবিশ (ইন্টার্নশিপ) হিসেবে কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করার। এছাড়া আপনি আপনার মেধা, কর্মদক্ষতা ও উপস্থিত বুদ্ধি দিয়ে ইন্টারভিউ বোর্ডে প্রমাণ করতে পারেন আপনি কোনো অবস্থায়ই অভিজ্ঞদের চেয়ে কম নন! তাছাড়া একবার চাকরি হয়ে গেলে নতুন চাকরিতে আবেদনের সময় আপনি কিন্তু অভিজ্ঞই! তাই অপেক্ষা করুন আপনার প্রথম চাকরিটির জন্য।
২। হতাশা
খুব ভালো প্রস্তুতি এবং আত্মবিশ্বাস থাকা সত্ত্বেও অনেক সময় আপনি চাকরি নাও পেতে পারেন । আবার প্রায়ই দেখা যায়, আপনার বন্ধু-বান্ধব ও পরিচিত অনেকেরই চাকরি হয়ে গেছে, কিন্তু আপনি এখনও বেকার। এই ব্যাপারগুলো আসলেই খুব পীড়াদায়ক। এক্ষেত্রে আমার পরামর্শ হচ্ছে – আপনি মনের মধ্যে এই বিশ্বাসটুকু রাখুন – সৃষ্টিকর্তা হয়তো আপনার জন্য আরো ভালো কিছু রেখেছেন । মোটকথা কিছুতেই হতাশ হওয়া যাবে না। হতাশা আপনাকে শুধুমাত্র পশ্চাৎবর্তী করবে, অগ্রবর্তী না!
আর হ্যাঁ, কখনো হাল ছাড়বেন না। সব সাফল্যের পেছনে থাকে একরাশ হতাশার গল্প। সফল ব্যক্তিদের জীবনীই দেখুন না!
৩। উচ্চাকাঙ্ক্ষা
অমুক চাকরিতে বেতন খুব কম, পোস্টটা খুব ছোট, কোম্পানিটা আরো ছোট! এরকম মানসিকতা আমাদের অনেকেরই আছে। তার জন্য দেখা যায় আমি কোনো চাকরিই পাচ্ছি না (শুরুতেই ভালো পদে চাকরি কজনই বা পায়)। আর আমি যে শুরুতেই খুব ভালো চাকরি পেয়ে যাব – এই ভাবনাটা কি খুব বেশি উচ্চাকাঙ্ক্ষী হয়ে যাচ্ছে না। মানসিকতায় একটু পরিবর্তন আনুন। ছোট থেকেই মানুষ বড় হয়। আপনি অবশ্যই ভালো পদে যাবেন। সেটা কিন্তু নির্ভর করবে আপনার উপরই। আপনি কতোটুকু এফোর্ট দিয়েছেন, চেষ্টা করেছেন এবং আপনি কতোটা যোগ্য সেটার উপর।
৪। সিভি তৈরিতে সাধারণ কিছু ভুল
আমরা অনেকেই এখনও সেই মান্ধাতার সময়ের মতো করে সিভি লিখে থাকি। তথ্য-প্রযুক্তির এই যুগে খুব সহজেই আকর্ষণীয় সিভি তৈরি করা যায়। এক্ষেত্রে ইন্টারনেটকে ব্যবহার করে নিতে পারেন বন্ধুর মতো। চাইলে এখানে দেখে নিতে পারেন। তাছাড়া নিজের সৃজনশীলতা ব্যবহার করে নিজেও তৈরি করতে পারেন আর্কষণীয় সিভি, যা আপনাকে অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী থেকে বেশ খানিকটা এগিয়ে রাখবে।
৫। ইন্টারভিউ বোর্ডে সাধারণ কিছু দুর্বলতা
প্রায়ই দেখা যায় অনেক প্রার্থী আছেন যারা সব লিখিত পরীক্ষায় সহজেই উতরে যান, কিন্তু ভাইভাতে গেলেই ফেল! ভাইভা বা মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে আমাদের অনেকেরই ছোট বেলা থেকে বেশ ভীতি কাজ করে থাকে। এই ভীতি থেকে আপনাকে মুক্তি দিতে পারে আপনার স্বতঃস্ফুর্ততা ও আত্মবিশ্বাস।নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন। নার্ভাসনেস কাটানোর চেষ্টা করুন। ডেমো ইন্টারভিউ দিতে থাকুন ভাই-বোন কিংবা বন্ধু-বান্ধবদের সাথেই। দেখবেন লিখিত পরীক্ষার মতো ভাইভাতেও বস হয়ে গেছেন।
৬। ছাত্রজীবন থেকেই ক্যারিয়ার নিয়ে না ভাবা
প্রতিযোগিতামূলক চাকরির এই বাজারে আপনি যদি পড়াশোনা শেষ করে ক্যারিয়ার নিয়ে ভাববেন বলে ঠিক করেন,তাহলে আপনি আপনার গোটা ক্যারিয়ারকে কয়েক বছর পিছিয়ে দিলেন। ক্ষেত্র বিশেষে যা হতে পারে কয়েক দশকও! স্কিল ডেভেলাপমেন্ট, এক্সট্রাকারিকুলার এক্টিভিটি শেখা বা অংশগ্রহণের সময় কিন্তু ছাত্রজীবন। স্কুল-কলেজে সময় দিতে না পারলেও ভার্সিটি লাইফে তো নিশ্চয়ই করা উচিত। বেকার (পড়ুন পড়াশোনা শেষ করার পর) অবস্থায় এসব কাজ করার ইচ্ছা বা মানসিকতা কোনোটাই আপনার থাকবে না।
৭। এখনই শুরু না করা
আমি জানলাম শুরু করাটাই আসল। আমি বুঝলাম আমি যে অবস্থাতেই আছি না কেন – এখন শুরু করা মাত্রই আমি পারব। কিন্তু আমি শুরুই করলাম না! হ্যাঁ, ঠিক তাই। প্রচুর মোটিভেশনাল কথা শুনে এবং কাজ না করে শুধু শুধু অনুপ্রাণিত হওয়ার স্বভাব আমাদের ত্যাগ করতে হবে। কাজই হউক আমার-আপনার জীবনের অনুপ্রেরণা! দেখবেন, সাফল্য আমাদের দ্বারপ্রান্তে।