রাশিয়া বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের পর দ্বিতীয় রাউন্ডের খেলাও শেষ। ৩২ দল থেকে শিরোপার দৌড়ে টিকে রয়েছে মাত্র ৮টি দল। কোয়ার্টার ফাইনালে উঠা দলগুলো নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ, সেই সাথে কোন দলের কোন খেলোয়াড়টি কেমন করলেন সেটিও নিয়েও চলছে বিস্তর গবেষণা। প্রতিটি বিশ্বকাপ শেষে ফিফা আনুষ্ঠানিকভাব বিশ্বকাপের সেরা একাদশ প্রকাশ করে থাকে। তবে সেই একাদশের জন্য অপেক্ষা করতে হবে ফাইনাল শেষ হওয়া পর্যন্ত। কিন্তু বিশ্বকাপের প্রতিটি ধাপে সেরা কিছু ম্যাচ হয়ে থাকে, সেরা কিছু পারফর্মারের উত্থান ঘটে।
তেমনি রাশিয়া বিশ্বকাপেও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। রাশিয়া বিশ্বকাপের শেষ ষোলোতে উত্তেজনা, রোমাঞ্চকর এবং শৈল্পিক ফুটবলের প্রদর্শনী দেখেছে ফুটবল ভক্তরা। সেই ম্যাচ গুলোতে অসাধারণ ফুটবল শৈলী প্রদর্শন করে সবার নজর কেড়েছেন অনেক ফুটবলার। তবে বিশ্ববিখ্যাত ওয়েবসাইট গোল ডটকম তৈরি প্রকাশ করেছে রাশিয়া বিশ্বকাপের শেষ ষেলোর সেরা একাদশ। চলুন দেখে নেওয়া যাক কারা রয়েছেন সেই একাদশে।
ইগর আকিনফিয়েভ, রাশিয়া
গোলরক্ষক
২০১০ সালের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন স্পেনের বিপক্ষে পেনাল্টি ঠেকিয়ে পুরো রাশিয়ার নায়ক বনে গেছেন ইগর আকিনফিয়েভ। নির্ধারিত সময় এবং অতিরিক্ত সময় ১-১ গোলে সমতায় থাকার পর ম্যাচ গড়ায় ট্রাইবেকারে।
সেখানে তিনি কোকে এবং আসপাসের স্পটকিক ঠেকিয়ে রাশিয়াকে কোয়ার্টার ফাইনালে নিয়ে গেছেন। এছাড়া পুরো ম্যাচ জুড়ে স্পেনের একের পর এক আক্রমণ প্রতিহত করে দ্বিতীয় রাউন্ডের সেরা একাদশের গোলরক্ষক হিসেবে নিজের নাম লিখিয়েছেন।
মারিও ফার্নান্দেজ, রাশিয়া
রাইট ব্যাক
স্পেনের বিপক্ষে রাশিয়ার জয়ের ‘ডার্ক সাইট’ হিরো মারিও ফার্নান্দেজ। ইগর আকিনফিয়েভ পেনাল্টি শ্যূটআউটে দুটি শট আটকালেও পুরো ম্যাচ জুড়ে স্পেনের বাঁ প্রান্ত থেকে আক্রমণে উঠে আসার চেষ্টা প্রতিহত করেছেন রাশিয়ার রাইট ব্যাক মারিও ফার্নান্দেজ।
তার দূর্দান্ত পারফর্মেন্সের কারণেই স্পেনের বিপক্ষে ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত ১-১ গোলে সমতায় থেকে পেনাল্টিতে গড়ায়। এরপর পেনাল্টিতে খেল দেখান রুশ গোলরক্ষক আকিনফিয়েভ।
ভিক্টর লিন্ডেলফ, সুইডেন
সেন্টার ব্যাক
দ্বিতীয় রাউন্ডে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে সুইডিশ রক্ষণভাগ ছিলো অনেকটা নিরেট। সুইডিশ রক্ষণভাগে দূর্গ গড়ে তোলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সেন্টার ব্যাক ভিক্টর লিন্ডেলফ এবং আন্দ্রিয়াস গ্রাঙ্কভিস্ত।
ভিক্টর লিন্ডেলফের কারণেই দ্বিতীয় রাউন্ডে কোনো গোল হজম করতে হয়নি সুইজারল্যান্ডকে। তার অসাধারণ পারফর্মেন্সের কারণে সুইডেন শেষ পর্যন্ত ১-০ গোলের জয় নিয়ে কোয়ার্টারে উঠে গেছে।
দিয়েগো গডিন, উরুগুয়ে
সেন্টার ব্যাক
রাশিয়া বিশ্বকাপে সবচেয়ে দুর্দান্ত পারফর্ম করছে উরুগুয়ের রক্ষণভাগ। রাশিয়া বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত মাত্র এক গোল হজম করেছে উরুগুয়ে। এমন জমাট রক্ষণভাগ তৈরিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন উরুগুয়ের অধিনায়ক দিয়েগো গডিন।
দ্বিতীয় রাউন্ডে তার অসাধারণ পারফর্মেন্সের কারণেই ক্রিস্টিয়ানোর রোনালদোর পর্তুগালকে ২-১ গোলে হারিয়ে রাশিয়া বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে গেছে উরুগুয়ে।
দিয়েগো লাক্সাত, উরুগুয়ে
লেফটব্যাক
২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপ জুড়ে উরুগুয়ের লেফটব্যাক দিয়েগো লাক্সাত তার ফুটবল দক্ষতা দিয়ে অভিভূত করে যাচ্ছেন। দ্বিতীয় রাউন্ডে তিনি বল পর্তুগিজজ ফরোয়ার্ডদের কাছে থেকে বল কেড়ে নেওয়ার পাশাপাশি সমান দক্ষতার সাথে এডিনসন কাভানি এবং লুইস সুয়ারেজদের আক্রমণ চালানোর জন্য বল সরবরাহ করেছেন।
তার দূর্দান্ত পারফর্মেন্সের কারণে উরুগুয়ের রক্ষণভাগ দূর্গে পরিণত হয়েছে।
পল পগবা, ফ্রান্স
সেন্টার মিডফিল্ডার
বিশ্বের অন্যতম দামি ফুটবলার পল পগবা ফ্রেঞ্চ মিডফিল্ডের হৃদয়। মিডফিল্ডের সবচেয়ে সেরা খেলোয়াড় পগবা দ্বিতীয় রাউন্ডে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ৪-৩ গোলে জয় পেতে দারুণ সহায়তা করেছেন।
তিনি নিজে গোল না পেলেও আক্রমণ শাণানোর জন্য আতোয়ান গ্রিজম্যান, কিলিয়ান এমবাপ্পে এবং অলিভার জিরুদের বল সরবরাহ করেছেন।
মারুয়ান ফেলাইনি, বেলজিয়াম
সেন্টার মিডফিল্ডার
দ্বিতীয় রাউন্ডে জাপানের বিপক্ষে শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে বেলজিয়ামের প্রথম একাদশে জায়গা হয়নি ফেলাইনির। ফেলাইনিদের মতো খেলোয়াড়দের পুরো ম্যাচ খেলতে হয় না।
ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের উপস্থিতি অল্প সময়ের জন্য হলেই যথেষ্ঠ। জাপানের কাছে ২-০ গোলে হারার পর বেলজিয়ামের কোচ তাকে বদলি হিসেবে মাঠে নামান। মাঠে নেমে তিনি জাপানের বিপক্ষে সমতাসূচক গোলটি করেন। পরবর্তীতে শেষ মূহুর্তের গোলে ৩-২ গোলে ম্যাচটি জিতে নেয় বেলজিয়াম।
তাকাশি ইনুই, জাপান
সেন্টার মিডফিল্ডার
দ্বিতীয় রাউন্ডে বেলজিয়ামের কাছে শেষ মূহুর্তের গোলে হৃদয় ভাঙলেও জাপানের খেলা সবার হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। বিশেষ করে জাপানি মিডফিল্ডার তাকাশি ইনুই দূর্দান্ত খেলেছেন।
বেলজিয়াম বিপক্ষে অসাধারণ এক গোল করেছেন। সেই সাথে তার পাসিং, ড্রিবলিং সবকিছুই ছিলো একেবারে মনোমুগ্ধকর।
কিলিয়ান এমবাপ্পে, ফ্রান্স
ফরোয়ার্ড
রাশিয়া বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে সবচেয়ে বড় তারকা বনে গেছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। ১৯ বছর বয়সী ফরাসি ফরোয়ার্ড একাই দুই গোল করে আর্জেন্টিনাকে বিদায় করেছে দিয়েছেন।
তার গতি এবং নিঁখুত ফিনিশিংয়ের কাছে অসহায় আত্মসমর্পন করেছে আর্জেন্টাইন রক্ষণ। এমবাপ্পে তার পারফর্মেন্স ধরে রাখতে পারলে কপাল পুড়তে পারে উরুগুয়ের।
এডিনসন কাভানি, উরুগুয়ে
ফরোয়ার্ড
কিলিয়ান এমবাপ্পে যেমন একাই লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনাকে বিদায় করেছেন, তেমনি এডিনসন কাভানি একাই ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পর্তুগালকে বিদায় করেছেন।
তার দুই গোলে উরুগুয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে পর্তুগালকে ২-১ গোলে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে। এডিনসন কাভানি প্রতিপক্ষের রক্ষণ ভাঙতে দারুণ সিদ্ধহস্ত। কোয়ার্টার ফাইনালেও তার উপর নজর থাকবে সবার।
নেইমার, ব্রাজিল
ফরোয়ার্ড
রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলার সময় বার বার পড়ে যাওয়ার কারণে তার নামের সাথে ‘অভিনেতা’ তকমা জুড়ে গেছে। অনেকে তার মাঠে অপ্রয়োজনীয় গড়াগড়ি করার কারণে তার উপর বিরক্ত ছিলেন। কিন্তু ‘অভিনেতা’ নেইমার দ্বিতীয় রাউন্ডে একদম নেতার ভূমিকা পালন করেছেন।
মেসি-রোনালদো দলকে কোয়ার্টার ফাইনালে তুলতে ব্যর্থ হয়েছেন। কিন্তু নেইমার ঠিকই মেক্সিকোর বিপক্ষে গোল করে এবং গোল করিয়ে ব্রাজিলকে দ্বিতীয় রাউন্ডে তুলেছেন।
Featured Image: sportsspectrum.com