সব জল্পনা কল্পনা শেষ করে ১৫ জুলাই ফ্রান্সের বিশ্বকাপ জয়ের মাধ্যমে পর্দা নামলো ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপের। রাশিয়ার মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে ফ্রান্স ও ক্রোয়েশিয়ার মধ্যকার ফাইনাল খেলার মাধ্যমে শেষ হলো এবারের বিশ্বকাপ আসর। খেলার পর পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ক্রোয়েশিয়ার লুকা মড্রিচ, ফ্রান্সের কিলিয়ান এমবাপ্পে, ইংল্যান্ডের হ্যারি কেন, বেলজিয়ামের গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়াকে বিশ্বকাপ আসরে তাদের নিজ নিজ কৃতিত্বের জন্য পুরস্কার প্রদান করা হয়।
ফান্সের বিশ্বকাপ জয়ের মূল ভূমিকায় ছিলেন কোচ দিদিয়ের দেশ্যম, সেজন্য বিশ্বকাপ জয়ে বিশেষ কৃতিত্ব দেখানোর জন্য ও দলকে দারুণভাবে পরিচালনা করার জন্য বিশ্বকাপ জয়ের তৃতীয় ব্যাক্তি হিসেবে তাকে পুরষ্কার প্রদান করা হয়। আজকের আয়োজনে রাশিয়া বিশ্বকাপে ফুটবলাররা কে কী পুরষ্কার জিতে নিলেন, তা বর্ণনা করা হলো।
ফিফা গোল্ডেন বুট, হ্যারি কেন (৬ গোল)
প্রতিটি ফিফা বিশ্বকাপের ফাইনালে সর্বোচ্চ গোলদাতা খেলোয়াড়কে গোল্ডেন বুট দেওয়া হয়। যদি দুই বা ততোধিক ফুটবলারের গোল সংখ্যা সমান হয়, তবে কার অ্যাসিস্ট সবচেয়ে বেশি তা বিবেচনা করা হয়। রাশিয়া বিশ্বকাপে ৬টি গোল করে ইংল্যান্ডের হ্যারি কেন গোল্ডেন বুটের পুরষ্কারটি জিতে নেন। গ্রুপ পর্বে ইংল্যান্ড এবং তুনিশিয়ার মধ্যকার খেলায় তুনিশিয়ার বিপক্ষে হ্যারি কেন ২টি গোল করেন। গ্রুপ পর্বের অন্য ম্যাচে পানামা ও ইংল্যান্ডের মধ্যকার খেলায় তিনি পানামার বিপক্ষে হ্যাট্রিক গোল করেন, সেই ম্যাচে ইংল্যান্ড পানামার বিপক্ষে ৬-১ গোলে জয় পায়।
২য় রাউন্ডের নকআউট পর্বে হ্যারি কেন তার ৬ নম্বর গোলটি করেন ইংল্যান্ড ও কলম্বিয়ার মধ্যকার ম্যাচটিতে, এই ম্যাচে তিনি পেনাল্টি থেকে ১টি গোল করেন। ইংলিশ ফুটবলারদের মধ্যে এর আগে গ্যারি লিনেকারের কেবল গোল্ডেন বুট পুরস্কার জয়ের রেকর্ড রয়েছে। ১৯৮৬ বিশ্বকাপে তিনি সর্বোচ্চ ৬টি গোল করেছিলেন। গোল্ডেন বুট জয়ের দৌড়ে কেনের পরেই ছিলেন দুই ফরাসি তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পে ও অ্যান্টনি গ্রিজম্যান। তারা দু’জনই রাশিয়া বিশ্বকাপে চারটি করে গোল করেছেন। এছাড়াও চারটি করে গোল করেছেন পর্তুগালের অধিনায়ক ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, রাশিয়ার দেনি চেরিসভ ও বেলজিয়ামের রোমেলো লুকাকু।
ফিফা গোল্ডেন বল, লুকা মড্রিচ
ক্রোয়েশিয়ার অধিনায়ক ও মিডফিল্ডার লুকা মড্রিচ রাশিয়া বিশ্বকাপে ফ্রান্সের বিপক্ষে খেলার পর গোল্ডেন বলের পুরষ্কারটি জিতে নেন। কোয়ার্টার ফাইনালে রাশিয়ার বিপক্ষে এবং সেমি ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ক্রোয়েশিয়াকে জিততে তার গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা ছিলো। কোয়ার্টার ফাইনাল ও সেমি ফাইনাল জেতার পর গোল্ডেন বল জেতার দৌড়ে লুকা মড্রিচ ছিলো শীর্ষে। ২০১৮ বিশ্বকাপ আসরে লুকা মড্রিচ দুটি গোল করেন এবং তিনটি ম্যাচে ম্যান অফ অফ দ্য ম্যাচ হিসেবে নির্বাচিত হন। ক্রোয়েশিয়াকে ফাইনালে নিয়ে আসার মূল নায়ক ছিলেন লুকা মড্রিচ।
ছোট্ট দেশ ক্রোয়েশিয়া প্রথমবারের মতো দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনাকে গ্রুপ পর্বে ৩-০ গোলে পরাজিত করে এবং শক্তিশালী ইংল্যান্ডকে সেমি ফাইনালে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে। তবে ফাইনালে ফ্রান্সের কাছে ৪-০ গোলে হেরে যায় ক্রোয়েশিয়া। দলকে ফাইনালে তোলা ও অসাধারণ পারফর্মেন্সের জন্য ফিফার এই আসরের গোল্ডেন বলটি প্যান লুকা মড্রিচ। ২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপের ফাইনালে আর্জেন্টিনা হেরে যাওয়ার পরও দলকে ফাইনাল খেলাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় এবং পারফর্মেন্সের ভিত্তিতে গোল্ডেন বলের পুরষ্কার পান লিওনেল মেসি।
ফিফা গোল্ডেন গ্লাভস, কুর্তোয়া
বিশ্বকাপের সেরা গোলকিপারকে এই পুরষ্কারটি প্রদান করা হয়। সাধারণত গোলকিপারের দক্ষতা এবং প্রতিপক্ষের বল আটকে দেয়ার পারফর্মেন্সের ভিত্তিতে সেরা গোলকিপারকে গোল্ডেন গ্লাভস পুরষ্কারটি দেয়া হয়। ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে গোল্ডেন গ্লাভস জিতে নেন বেলজিয়ামের গোলরক্ষক কুর্তোয়া। এবারের বিশ্বকাপ আসরে চোখ ধাঁধানো পারফর্মেন্স দেখিয়ে সবার নজর কেড়ে নেয় ২৬ বছর বয়সী বেলজিয়ামের এই গোল রক্ষক। বেলজিয়ামকে তৃতীয় স্থানে নেয়ার মূল কারিগর ছিলো কুর্তোয়া, তিনি বিশ্বকাপের ৭টি ম্যাচে অংশ নিয়ে ৬৩০ মিনিট মাঠে ছিলেন।
২৭টি নিশ্চিত গোল রুখে দিয়েছেন বেলজিয়ামের এই গোলকিপার, যার মধ্যে ৭টি ক্লিয়ারেন্স ছিলো। কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিল বধের মূল ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলো কুর্তোয়া, মূলত ব্রাজিলের হার হয়েছিলো কুর্তোয়ার কাছে। শেষ মুহূর্তে নেয়া নেইমারের দারুন এক শটকে পোস্টের উপর দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছেন কুর্তোয়া, এরকম আরও অনেক সেভ করে হয়েছেন ২০১৮ ওয়ার্ল্ড কাপের সেরা গোলকিপার।
ফিফা ফেয়ার প্লে অ্যাওয়ার্ড, স্পেন
এই পুরষ্কারটি দেয়া হয় বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর মধ্যে খেলায় সেরা শৃঙ্খলা রক্ষাকারী দলকে। এই পুরষ্কারটির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেয় ফিফার টেকনিক্যাল সাপোর্ট টিম।
২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে ফিফা ফেয়ার প্লে অ্যাওয়ার্ডটি দেয়া হয় টিম স্পেনকে, তাদের ধারাবাহিক ও সুশৃঙ্খল খেলার কারনেই তাদেরকে এই পুরষ্কারটি দেয়া হয়। ২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপে এই পুরষ্কারটি দেয়া হয়েছিলো টিম কলম্বিয়াকে।
ফিফা ইয়াং প্লেয়ার অ্যাওয়ার্ড বা সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়, কিলিয়ান এমবাপ্পে
প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে এসে যে তরুণ খেলোয়াড় তার পারফর্মেন্সে সবার নজর কেড়ে নেয়, তাকেই এই পুরষ্কারটি দেয়া হয়। ফিফা জানায়, এই পুরস্কারের বেলায় খেলোয়াড়ের খেলার দক্ষতা, খেলার ধরণ, কারিশমা এবং গোল সংখ্যার উপর বিবেচনা করে এই পুরষ্কারটি প্রদান করা হয়। ফিফার টেকনিক্যাল স্টাডি গ্রুপ এই পুরস্কারের জন্য খেলোয়াড় নির্বাচন করে থাকে। বরাবরের মতো এবারও এই পুরষ্কারটি তুলে দেয়া হয় ফ্রান্সের কিলিয়ান এমবাপ্পের হাতে। ১৯ বছর বয়সী ফ্রান্সের এই খেলোয়াড় তার দুর্দান্ত গতি দেখিয়ে ফুটবল বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে।
৭ ম্যাচে ৪ গোল করে ফ্রান্সকে বিশ্বকাপ জেতাতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখেন এই ফুটবলার। ২য় রাউন্ডের নকআউট পর্বে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে জোড়া গোল করেন এই গতিময় খেলোয়াড়, মূলত আর্জেন্টিনা হারার অন্যতম প্রধান কারণ ছিলো কিলিয়ান এমবাপ্পের জোড়া গোল। ব্রাজিলিয়ান লিজেন্ড পেলের পর তিনিই একমাত্র খেলোয়াড় যিনি প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে এসেই জোড়া গোল করেছেন। বিশ্বকাপের প্রতিটি ম্যাচেই কিলিয়ান এমবাপ্পের পারফর্মেন্স ছিলো অসাধারণ, এমনকি ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে ফ্রান্সকে বিশ্বকাপ জেতানোর অন্যতম মূল নায়ক ছিলেন কিলিয়ান এমবাপ্পে।