
রোমানিয়া প্রতিবছর বিদেশি শিক্ষার্থীদের সরকারিভাবে নানা বৃত্তি দেয়। ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের সরকারি এ বৃত্তির আবেদনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দেশটির শিক্ষা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বৃত্তি দেয়। এ বৃত্তির আওতায় শিক্ষার্থীরা স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রির অর্জনের সুযোগ পাবেন। প্রতিবছর সাধারণত জুলাইয়ে রোমানিয়া সরকার বৃত্তির ফলাফল ঘোষণা করে। মেডিসিন ও ফার্মেসি ছাড়া সব বিষয়ে পড়াশোনা করার জন্য এ বৃত্তি দেওয়া হয়। বৃত্তির আওতায় শিক্ষার্থীর লেখাপড়ার কোনো খরচ বহন করতে হয় না। আবাসন খরচ সরকার বহন করবে। হাতখরচ হিসেবে আনুষঙ্গিকভাবে প্রতি মাসে একজন ব্যাচেলর শিক্ষার্থীকে ৬৫ ইউরো, মাস্টার্সের শিক্ষার্থীকে ৭৫ ইউরো ও পিএইচডি শিক্ষার্থীকে ৮৫ ইউরো দেবে রোমানিয়া সরকার।
প্রতিবছর রোমানিয়ার সরকার ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত নয়, এমন দেশগুলোর নাগরিকদের উচ্চশিক্ষার জন্য এ বৃত্তি দেয়। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা এ বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। রোমানিয়ার উল্লেখযোগ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে ইউনিভার্সিটি অব বুখারেস্ট, বুখারেস্ট ইউনিভার্সিটি অব ইকোনমিক স্টাডিজ, বাবেস-বলিয়াই ইউনিভার্সিটি, আলেকজান্দ্রু আইওয়ান কুজা ইউনিভার্সিটি, ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি অব তিমিশোআরা, ইউনিভার্সিটি পলিটেকনিক অব বুখারেস্ট, টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব ঘিওরঘি আসাচি ইয়াস ইত্যাদি। একজন শিক্ষার্থী রোমানিয়ায় ব্যাচেলর, মাস্টার্স কিংবা পিএইচডি যেকোনো লেভেলে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন।
রোমানিয়া দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপে অবস্থিত ৯২ হাজার ৪৫ দশমিক ৬ বর্গমাইলের একটি দেশ। আয়তনের দিক থেকে রোমানিয়া ইউরোপের ১২তম বৃহত্তম রাষ্ট্র এবং জনসংখ্যার বিবেচনায় রোমানিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নে ষষ্ঠ দেশ। বুখারেস্ট রাজধানী ও বৃহত্তম নগরী। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের সঙ্গে গঠনশৈলীর বিবেচনায় সামঞ্জস্য থাকায় বুখারেস্টকে অনেকে পূর্ব ইউরোপের প্যারিসও বলে থাকেন। দেশটির উল্লেখযোগ্য নগরীর মধ্যে রয়েছে ব্রাসোভ, ইয়াশ, তিমিশোআরা, ক্লুজ নাপোকা, কন্সটান্টা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
রোমানিয়ার দক্ষিণে বুলগেরিয়া, পশ্চিমে সার্বিয়া ও হাঙ্গেরি এবং পূর্বে ইউক্রেন ও রিপাবলিক অব মলদোভার সঙ্গে সংযুক্ত। এ ছাড়া দেশটির দক্ষিণ-পূর্বের প্রায় ২৪৫ কিলোমিটার রেখা বরাবর কৃষ্ণসাগর বা ব্ল্যাক সির উপকূল রয়েছে। রোমানিয়ার অধিবাসীদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত ভাষার নাম রোমানিয়ান। দেশটির ৯২ শতাংশ মানুষ এ ভাষায় কথা বলে। তবে দেশটিতে ফ্রেঞ্চ ও ইংরেজি ভাষার প্রচলন রয়েছে। পূর্ব ইউরোপে প্রচলিত ভাষাগুলোর মধ্যে রোমানিয়ান একমাত্র ভাষা, যেটি লাতিন ল্যাঙ্গুয়েজ ফ্যামিলির অন্তর্ভুক্ত।
২০০৭ সালে রোমানিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ পায়। রোমানিয়ার জাতীয় মুদ্রার নাম রোমানিয়ান লিউ। রোমানিয়া বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনৈতিক দেশগুলোর মধ্যে একটি। আঙুর, আপেল, শর্ষে ও বিভিন্ন সবজি থেকে প্রস্তুতকৃত তেল থেকে আরম্ভ করে বিভিন্ন ধরনের ফার্মাসিউটিক্যাল, কেমিক্যাল, লৌহ, ইস্পাতশিল্প, মেশিনারিশিল্প, বস্ত্রশিল্প ও মোটর গাড়ি তৈরির কারখানার মতো ভারী ভারী শিল্প রোমানিয়ার অর্থনীতিকে করেছে অত্যন্ত বেগবান।
সুযোগ-সুবিধা—
- নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা পাবেন রেজিস্ট্রেশন ফি
- সম্পূর্ণ টিউশন ফি
- বিনা মূল্যে আবাসন
- উপবৃত্তি স্নাতকে ৬৫ ইউরো (মাসে)
- স্নাতকোত্তরে ৭৫ ইউরো (মাসে)
- পিএইচডিতে ৮৫ ইউরো (মাসে)
বৃত্তির মেয়াদ—
- স্নাতক ডিগ্রির মেয়াদ থাকবে তিন থেকে ছয় বছর
- স্নাতকোত্তরে দেড় থেকে দুই বছর
- পিএইচডির জন্য থাকবে তিন থেকে চার বছর
স্কলারশিপের আবেদন করতে যা প্রয়োজন—
- স্কলারশিপের অ্যাপ্লিকেশন ফরম
- যে ইউনিভার্সিটিতে পড়তে আগ্রহী, সে ইউনিভার্সিটির আবেদন ফরম
- যাবতীয় শিক্ষা সনদ ও ট্রান্সক্রিপ্টের কপি
- জন্মনিবন্ধন বা বার্থ সার্টিফিকেটের কপি
- পাসপোর্টের বায়োগ্র্যাফিক্যাল পেজ এবং সেই সঙ্গে প্রথম তিন পৃষ্ঠা
- মেডিকেল সার্টিফিকেট
- ইউরো পাস ফরম্যাটের সিভি
- সম্প্রতি তোলা দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- প্রয়োজনে ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ বা রোমানিয়ান ভাষার অভিজ্ঞতা সনদ
অধ্যয়নের ক্ষেত্রগুলো— - স্থাপত্য, ভিজ্যুয়াল আর্ট, রোমানিয়ান সংস্কৃতি ও সভ্যতা, সাংবাদিকতা, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বিজ্ঞান, প্রকৌশল, সামাজিক ও মানববিজ্ঞান, প্রযুক্তিগত অধ্যয়ন, তেল ও গ্যাস, কৃষিবিজ্ঞান ও পশু চিকিৎসা।
- অধ্যয়নের ভাষা—
- স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রির জন্য শিক্ষার্থীদের রোমানিয়ান ভাষা জানতে হবে। কারণ, দুটি ডিগ্রি দেশটির নিজস্ব ভাষায় পড়ানো হয়। তবে যেসব প্রার্থী রোমানিয়ান ভাষা জানেন না, তাঁদের ভাষা অধ্যয়নের সুযোগ করে দেওয়া হবে। আর পিএইচডি ডিগ্রির জন্য শিক্ষার্থীরা রোমানিয়ান ছাড়া অন্য ভাষা নির্বাচন করতে পারবেন।
আবেদনের যোগ্যতা— - ইউরোপীয় সদস্যরাষ্ট্র ছাড়া যেকোনো দেশের শিক্ষার্থীদের আবেদনের সুযোগ
- প্রার্থীদের রোমানিয়ার নাগরিকত্ব থাকা যাবে না
- স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের জন্য ৩৫ বছর এবং পিএইচডির জন্য ৪৫ বছরের বেশি বয়স অযোগ্যতা বলে বিবেচিত হবে
আবেদনের পদ্ধতি— - আগ্রহী শিক্ষার্থীরা অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। আবেদনের বিস্তারিত, পদ্ধতিসহ বিস্তারিত দেখতে এখানে ক্লিক করুন
- আবেদনের শেষ তারিখ:৩১ মার্চ ২০২৫