সাহিত্য শিল্পের একটি বিশুদ্ধ রূপ। একে কখনো শুধুমাত্র একটি সংজ্ঞা দিয়ে পুরোপুরি বোঝানো সম্ভব নয়। সে চেষ্টায় আপাতত যাচ্ছি না। একজন লেখক, একজন কবির ক্যারিয়ার কী হতে পারে, কী হয়; লেখালেখির ক্যারিয়ারটাই বা কেমন সেসবই বলবো। ‘কবির ক্যারিয়ার’ শুনে অবাক হচ্ছেন! অবাক হওয়ার কিছুই নেই। পৃথিবীতে বেশিরভাগ মানুষ টাকার পিছনে ছুটলেও অল্প কিছুসংখ্যক মানুষ থাকেই যারা শিল্প নিয়ে, কবিতা নিয়ে স্বপ্ন দেখে থাকে। বন্ধুরা যখন বিসিএস, জিআরই, চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছে তখন কেউ কেউ কবিতা, চিত্রকলা এগুলো চর্চার জন্য গতানুগতিক ক্যারিয়ার বিসর্জন দিয়ে ভিন্ন ধরনের ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবে। যে ক্যারিয়ার অনেক শৈল্পিক, সুন্দর। কিন্তু তা আপনাকে খুব বেশি অর্থ দিবে না, যা দিবে তা হচ্ছে তৃপ্তি সাথে অল্পকিছু অর্থ। যে ছেলেটি আজ কবিতা লিখছে, তাকে অনেকেই নিস্কর্মা, অলস, লক্ষ্যহীন বলছেন। বলুক তাতে ক্ষতি নাই; পৃথিবী চিরদিনই বিশুদ্ধ শিল্প বোঝার মত মানুষের সংখ্যা কম ছিলো, আছে, থাকবে।
“I don’t worry about the status of poetry as an art form. Good poems find their way in the world and they stand the test of time.” — Wendy Cope ( a british poet )
অনেকেই লিখতে গিয়ে পরিবারের সহযোগিতাটুকুও পান না। যারা কবি ও কবিতা নিয়ে,সাহিত্য নিয়ে ভাবেন এবং এই স্বপ্ন নিয়ে ক্যারিয়ার গড়তে চান তাদের জন্যে কিছু পরামর্শ –
কবি-লেখকের আবার ক্যারিয়ার আছে নাকি?
হ্যাঁ ভাই আছে। কবি-লেখকদেরও ক্যারিয়ার আছে। তবে তা কোন কর্পোরেট জবের মত না, ব্যবসায়ীর মতও না, সরকারী চাকরির মত নিরাপত্তাও নেই এখানে। অঢেল অর্থের আনাগোনা কখনো আছে, কখনো নেই। অর্থ কখনোই এক্ষেত্রে প্রধান হয়ে ওঠে না। প্রাথমিকভাবে অর্থের পেছনে ছুটলেও লক্ষ্যচ্যুত হবার ভয় থাকে। একজন কবি, গল্পকার, নাট্যকার, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক প্রত্যেকে স্বাধীন লেখক। তারা স্বাধীনভাবেই লেখেন বই প্রকাশ করেন, বই বিক্রির টাকাগুলোই তাঁদের উপার্জন।
তবে বেশিরভাগ লেখক পেশা হিসেবে অন্য কিছুকে বেছে নেন- কেউ পত্রিকার সম্পাদক, প্রকাশক, ডাক্তার, শিক্ষক, অধ্যাপক, সরকারি চাকুরিজীবি কেউ কেউ আবার গানও লিখেও উপার্জন করেছেন।
এটা সময়ের প্রয়োজন। তবে এই লেখকের-কবিদের ক্যারিয়ার নিয়ে বলতে গেলে জীবনানন্দ দাশের ‘কবি’ কবিতাটি স্মরণ করতেই হবে –
” কবিকে দেখে এলাম,
দেখে এলাম কবিকে
আনন্দের কবিতা একাধিক্রমে লিখে চলেছে
তবুও পয়সা রোজগার করার দরকার আছে তার
কেউ উইল করে রেখে যায়নি,
চাকরি নেই
ব্যবসার মারপ্যাচ বোঝে না সে
‘শেয়ার মার্কেটে নামলে কেমন হয়’, জিজ্ঞেস করলে আমাকে,
হায়, আমাকে!
‘লাইফ ইনসিওরেন্সের এজেন্সি নিলে হয় না’, শুধায়,
‘লটারির টিকিট কিনলে কেমন হয়? ডার্বি নয়, আইরিশ সুইপ
নয় – গোয়ার কিংবা বউবাজারের?”
জীবনানন্দ দাশের দিন কেটেছে অর্থকষ্টে কিন্তু নিজের লেখার ব্যাপারে আপস করেননি। ছবিসুত্র- প্রথম আলো
কঠিন অর্থাভাবে ছিলেন বলেই হয়তো জীবনবাবু এমনভাবে অনুভব করতে পেরেছেন।
তাহলে কীভাবে একজন নবীন লেখক তার লক্ষ্যের দিকে আরো ভালোভাবে যেতে পারবেন?
১। নিজের জন্য লিখুন
কবিতা হবে নিজের জন্য। যদি আপনি মনে করেন মনের গভীর-অগভীর বোধগুলো কবিতার মাধ্যমে সুন্দরভাবে মুক্তি দিতে পারছেন, তখন মনে যে তৃপ্তিটুকু অনুভব করবেন; একজন পাঠক আপনার লেখা পড়ে যখন সেরকম কোন তৃপ্তি, ভালোলাগা, প্রশান্তি পায় সেটুকুই আপনার লেখার প্রেরণা।
একজন নবীন লেখকের জন্য অনেকসময়ই নিজেই একমাত্র পাঠক, প্রবীণদের ক্ষেত্রে নিজেই প্রথম পাঠক। সেজন্যই নিজের আত্মার প্রশান্তি, প্রাপ্তি, পূর্ণতার জন্যই লিখুন। এটিই হোক প্রাথমিক লক্ষ্য। প্রথমেই অন্য লক্ষ্যের পেছনে ছুটলে আপনি লেখালেখির জগতে ভালো করতে পারবেন না। দুই-একটা লেখা হয়তো পাঠকপ্রিয়তা পেতে পারে কিন্তু একসময় সেসব সহজেই হারিয়ে যাবে, আপনি লক্ষ্যভ্রষ্ট হবেন। তাই লিখুন নিজের জন্য।
২। পরিশ্রম করুন
সব কাজের জন্যই পরিশ্রম প্রয়োজন। কিন্তু কবিদের জন্য সেটা নতুন মাত্রা পায়।
ক) একজন লেখককে প্রচুর পড়তে হবে।
প্রচুর কবিতা, প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যাস, নাটক… । এককথায় বিশ্বসাহিত্য ও বাংলা সাহিত্যের ক্লাসিকগুলো যদি একে একে পড়তে থাকেন তাহলে আপনি নিজেই বুঝবেন আপনার লেখার উন্নতিটুকু। পড়ার আগের ও পরের লেখাগুলো তুলনা করে দেখতে পারেন। প্রচুর পার্থক্য পাবেন – তাই লিখতে হলে প্রচুর (লেখার ৪-৫ গুণ বা আরো বেশি) পড়তে হবে।
পড়তে হবে প্রচুর। Image source- businessinsider.com
যিনি পড়েন না তিনি ভালো লিখতেও পারবেন না।বিশ্বসাহিত্য ও বাংলা সাহিত্যের কয়েকজনের উদাহরণ দিলে বিষয়টা স্পষ্ট হবে।
কাজী নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ম্যাক্সিম গোর্কি তাঁদের কারোই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। তার মানে কি এই যে তারা পড়াশোনা করেননি! তাঁদের পঠনপাঠনের ফিরিস্তি শুনলে আপনাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিকে তুচ্ছ মনে হবে। এখন তাঁদের লেখা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা হয়, তাঁদের লেখা নিয়ে কাজ করে শিক্ষার্থীরা ডিগ্রি অর্জন করে।
খ) লিখতে হবে, লেখার জন্য সময় দিতে হবে, লেখার উন্নতির দিকে চেষ্টা করতে হবে।
কবিতা হবে নিজের জন্য। যদি আপনি মনে করেন মনের গভীর-অগভীর বোধগুলো কবিতার মাধ্যমে সুন্দরভাবে মুক্তি দিতে পারছেন, তখন মনে যে তৃপ্তিটুকু অনুভব করবেন; একজন পাঠক আপনার লেখা পড়ে যখন সেরকম কোন তৃপ্তি, ভালোলাগা, প্রশান্তি পায় সেটুকুই আপনার লেখার প্রেরণা।
তরুণ অনভিজ্ঞ রবীন্দ্রনাথ চর্চা ও পরিশ্রম দিয়েই হয়েছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ। Image source – youtube
একজন নবীন লেখকের জন্য অনেকসময়ই নিজেই একমাত্র পাঠক, প্রবীণদের ক্ষেত্রে নিজেই প্রথম পাঠক। সেজন্যই নিজের আত্মার প্রশান্তি, প্রাপ্তি, পূর্ণতার জন্যই লিখুন। এটিই হোক প্রাথমিক লক্ষ্য। প্রথমেই অন্য লক্ষ্যের পেছনে ছুটলে আপনি লেখালেখির জগতে ভালো করতে পারবেন না। দুই-একটা লেখা হয়তো পাঠকপ্রিয়তা পেতে পারে কিন্তু একসময় সেসব সহজেই হারিয়ে যাবে, আপনি লক্ষ্যভ্রষ্ট হবেন। তাই লিখুন নিজের জন্য।
৩। পাশাপাশি অন্য জব করুন
প্রাথমিকভাবে লেখালেখির জন্য আপনার কোন উপার্জন থাকবে না- যতদিন না একজন মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত লেখক হচ্ছেন। পরিবারের প্রাথমিক সমর্থনের ও ভরণপোষনের জন্য হলেও অন্য একটি পেশায় ঢুকে পরুন। লিখুন নিজের অবসর সময়টুকুতে। না হলে আপনার ভবিষ্যত লেখক ক্যারিয়ারটি ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। আবার আইরিশ লেখক অস্কার ওয়াইল্ডের মতে,” সাহিত্যের সেরা কাজগুলো তাদের মাধ্যমেই হয়েছে যারা তাঁদের রুটিরুজির জন্য এর উপর নির্ভর ছিলেন না । “
তার মানে হচ্ছে, যদি আপনার একমাত্র আয়ের উৎস যদি লেখালেখিই হয় তাহলে কিছুদিন পর আপনি অধিক উপার্জনের আশায় সাহিত্যের মানোত্তীর্ণ নয় এমন লেখাকেও প্রকাশ করে ফেলবেন। যা আপনার লেখক ক্যারিয়ারের জন্য যেমন খারাপ তেমনি খারাপ সমকালীন সাহিত্যের জন্যও। এই বিষয়ে সব বেশি বিতর্ক হয়তো হুমায়ূন আহমেদকে নিয়েই। আনিসুল হক, ইমদাদুল হক মিলন – ও তাঁদের সাম্প্রতিক লেখার জন্য প্রচুর সমালোচিত হচ্ছেন।
রেডিওর জন্য গান লিখে নজরুল প্রচুর আয় করেছেন। Image source- youtube.com
তবে এক্ষেত্রে মানিক বন্দোপাধ্যায় একটি বিশেষ ব্যতিক্রম। তিনি অন্য কোন জব করতেন না। তাঁর একমাত্র আয়ের উৎস ছিলো লেখালেখি। কিন্তু তুলনায় তাঁর লেখার মান নিয়ে কোন প্রশ্ন তোলা যাবে না। লেখার মানের ব্যপারে তাঁর কোন আপস ছিলো না। সারা জীবন তিনি প্রচুর অর্থকষ্টে ভুগেছেন। এবং তাঁর আর্থিক কষ্টের কথা ভেবেই হয়তো অনুজদের জন্য বলে গেছেন,”কেউ যেন রুটিরুজির ব্যবস্থা না করে লেখালেখিতে না আসে।”
৪। প্রাথমিকভাবে দৈনিক পত্রিকা, সাময়িকী, লিটলম্যাগে লেখা জমা দিন
নতুন লেখকদের জন্য একটি ভালো প্লাটফর্ম লিটলম্যাগ, সাময়িকী, দৈনিক পত্রিকাগুলো। এসব জায়গায় লেখা দিয়ে নিজের প্রতিভা যাচাই করে নিতে পারেন। এবং সাহিত্যের একনিষ্ঠ পাঠক, বোদ্ধাদের কাছে পৌছাতে গেলেও এই মাধ্যমগুলোর মত কার্যকর আর কিছু নেই। বাংলা সাহিত্যে বঙ্গদর্শন, ভারতী, সবুজপত্র, সন্দেশ, কল্লোল, কবিতা, প্রগতি, কালি ও কলম সাহিত্য পত্রিকাগুলো বাংলা সাহিত্যের ধারাই পালটে দিয়েছে।
বর্তমানে কালি ও কলম একটি জনপ্রিয় সাহিত্য পত্রিকা। image source-kaliokolom.com
একেকটা পত্রিকা ঘিরে তৈরি হয়েছে একেকটি সাহিত্য আন্দোলন। বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ, প্রমথ চৌধুরি, বুদ্ধদেব বসু, সুকুমার রায়, সুধীন দত্ত, বিষ্ণু দে, অমিয় চক্রবর্তী, শামসুর রাহমান, আহসান হাবিব, শহীদ কাদরী, আল-মাহমুদ, শামসুল হক প্রমুখ কবি-লেখকদের পাঠকসমাজের সাথে প্রাথমিক পরিচিতিটুকু সাময়িকীতে লেখার মাধ্যমেই হয়েছিলো।
৫। ভালো পৃষ্ঠপোষকতা ও পরামর্শ খুঁজুন
একজন ভালো লেখকের লেখক হওয়ার পেছনে আরো অনেক মানুষের পরামর্শ, পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রেরণা কাজ করে।
নিজের লেখাগুলো নিয়ে অগ্রজ কারো কাছে যেতে পারেন পরামর্শের জন্য। এবং প্রাথমিকভাবে একজন লেখকের আর্থিক, লেখালেখির মানোন্নয়ন এছাড়াও আরো অনেক বিষয়ে পৃষ্টপোষকতার প্রয়োজন আছে।
তাই সমসাময়িক লেখক, প্রকাশক, পাঠকদের সাথে যোগাযোগ রাখুন। নিজের লেখার বিষয়ে কারো কাছে প্রেরণা কিংবা পরামর্শ পেতে পারেন। আমরা দেখেছি কল্লোলগোষ্ঠীর কবিদের মধ্যে পরস্পরের সহযোগিতার মনোভাব ছিলো। জীবনানন্দ দাশকে যখন সবাই সমালোচনা, নিন্দার মাধ্যমে নিরুৎসাহিত করেছে তখন বুদ্ধদেব বসু তাঁর কবিতা নিজের সম্পাদিত পত্রিকায় ছাপিয়েছেন, বই প্রকাশে সহায়তা করেছেন এমনকি নিন্দুকদের বিরুদ্ধে কলমও ধরেছিলেন। আপনিও একজন বুদ্ধদেব বসু খুঁজে বের করুন। আমাদের দেশে এরকম পৃষ্ঠপোষকতার খুব অভাব।
পেঙ্গুইন পাবলিশিং গ্রুপের মত প্রকাশনী এদেশে খুবই প্রয়োজন। Image source- lambdaliterary.com
‘পেঙ্গুইন ‘ পাবলিকেশন নতুন কবিদের লেখা নিয়ে, প্রতিষ্ঠিত কবিদের সম্পাদনায়, নিজেদের খরচে বছর বছর সংকলন বের করে।
৬। লেখা প্রকাশের জন্য সরাসরি প্রকাশকের সাথেই যোগাযোগ করুন
যখন সাময়িকীতে লিখে লিখে একসময় মনে হবে বই প্রকাশ করার মত যোগ্যতা ও মান আপনার হয়েছে তখন বই প্রকাশের উদ্যোগ নিতে পারেন। একজন লেখকের জন্য বই প্রকাশের মত বড় আনন্দের বিষয় হয়তো আর কিছু নেই। এজন্য আপনি নিজেই সরাসরি প্রকাশকদের সাথে বই প্রকাশের জন্য যোগাযোগ করুন। এবং বাংলাদেশে বই প্রকাশের প্রবণতা যেহেতু বইমেলা কেন্দ্রীক সেজন্য বই মেলার আগে আগস্ট-সেপ্টেম্বরের মধ্যেই যোগাযোগ করে রাখলে ভালো হবে।
তবে মনে রাখবেন, তাড়াহুড়া করে বই প্রকাশ করতে গিয়ে যদি আপনি মানহীন কিংবা নিম্নমানের কোন বই প্রথমেই প্রকাশ করে ফেলেন তাহলে আপনার পরের বইগুলো পাঠক পর্যন্ত পৌছাতে বা প্রকাশ করতে বেশ বেগ পেতে হবে।
তাই প্রথম বইটি প্রকাশ করতে হবে একটু রয়েসয়ে, সময় নিয়ে।
প্রথম বই প্রকাশের আগে অবশ্যই নিজের কাছে নিজের লেখক হিসেবে একটা জায়গা তৈরি হওয়া লাগবে। প্রাথমিকভাবে প্রচুর প্রস্তুতি নিতে হবে একটি বই প্রকাশ করার জন্য, লেখার জন্য। বর্তমান বাংলা কথাসাহিত্যের তিন দিকপাল অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ, হাসান আজিজুল হক, হরিশংকর জলদাস লেখা শুরু করেছেন মাঝ বয়সে এসে। কিন্তু তার মানে এই না আপনাকেও এত দেরি করতে হবে। আপনি যখন মনে করবেন একটি বই লেখার জন্য আপনি প্রস্তুত তখনই শুরু করে দিন। লিখতে লিখতেই শিখবেন, শিখতে শিখতেই লিখবেন।
একটি পাঠকপ্রিয় বই আপনাকে সাফল্যের শিখরে তুলতে পারে আবার একটি নিম্নমানের বই শুরুতেই আপনার চলার গতিটুকু থামিয়ে দিতে পারে। আমরা অনেক কেই চিনি যারা একটি বা দুটি বই লিখেই স্মরণীয় হয়ে আছেন। এক্ষেত্রে ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ – এর ঔপন্যাসিক অদ্বৈত মল্লবর্মন এর কথা বলা যায়।
৭। সত্যিকার উদ্দেশ্য হোক লেখার আনন্দ
একজন লেখক কেন লিখেন যদি প্রশ্ন করি তাহলে সবাই মোটামুটিভাবে একটি উত্তরই দিবেন,”নিজের মনের কথা, বোধ, কান্না-হাসিগুলোকে লেখার মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারাটা আনন্দের। একটা নতুন লেখা সৃষ্টির এক অপূর্ব আনন্দ দেয়। সেই বোধটা বারবার পেতেই লিখি। এবং চাই একজন পাঠক লেখাটি পড়ে সেই আনন্দটুকু অনুভব করতে পারুক।”
আসলে একজন শিল্পীর উদ্দেশ্য শিল্পের জন্যই নিবেদিত হওয়া, বর্ণশিল্পী হিসেবে লেখকের উদ্দেশ্যও তাই।
“Young aspiring poets shouldn’t be thinking about ‘career moves’. You’ve got to want to work at getting better at writing for its own sake.” —- Wendy Cope ( a british poet )
এবং এর ফল অবশ্যই আনন্দ। একজন লেখক, একজন শিল্পী, একজন কবি চান তার সৃষ্টিটুকু কারো মনে নাড়া দিক, মানুষকে ভাবাক। একজন পাঠকও যদি তার লেখাটুকু পড়ে আনন্দিত হয়, ভাবে তাহলে সেটাই একজন লেখকের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। অন্য কোন স্থুল উদ্দেশ্য নিয়ে লেখা শুরু করলে আপনি জনপ্রিয় হতে পারেন, সাহিত্য ব্যবসায়ী হতে পারেন। কিন্তু একজন লেখক কখনোই হতে পারবেন না।
চেষ্টা, পরিশ্রম ও মেধা ছাড়া কোন বিখ্যাত লেখকই তাদের নিজের জায়গায় যেতে পারেননি। রবীন্দ্রনাথ তার পদ্মা-বোটে বসে কবিতা লিখেছেন, নজরুল লিখেছেন রুটির দকানে বসে। দুজনের অবস্থান আলাদা। কিন্তু লক্ষ্য ও চেষ্টা ছিল এক। নতুন – পুরাতন সব লেখক একই নদীর ধারায় এসে মিলে যান যার নাম – সাহিত্য।
তথ্যসূত্র –
১। জীবনানন্দ দাশ কবিতাসমগ্র।
২। একজন কমলালেবু – শাহাদুজ্জামান।
৩। https://www.theatlantic.com/entertainment/archive/2013/11/whats-the-ideal-day-job-for-a-poet/281081/
৪। https://ccskills.org.uk/careers/advice/article/a-career-in-poetry