শেখার আছে বাকি!
মানুষের পক্ষে মায়ের গর্ভ থেকে সবকিছু শিখে আসাটা একটু কঠিনই বটে, তাই মানুষকে জীবনে এগিয়ে যেতে নিজের চেষ্টায় অনেক কিছুই শিখতে হয় যেগুলো তাকে জীবনযুদ্ধের মুখোমুখি হতে সাহায্য করে। তবে এটি অনুধাবন করা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ যে যা শিখছি তা সঠিক এবং যথার্থ কিনা।
বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠী তরুণসমাজের অংশ, পাশাপাশি দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যাও অনেক। যদিও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রায়শই লোকবল সংকটের বিষয়গুলো উঠে আসে দেশের শীর্ষস্থানীয় দৈনিকও গুলোর পাতায়। কারণ মানুষের অভাব না থাকলেও আছে যোগ্য মানুষের অভাব।
মূলত এই শিক্ষিত তরুণদের কর্মজীবন সম্পর্কে সচেতন করা, কর্মজীবনে সফল হওয়ার জন্যে প্রয়োজনীয় ধারণা দেয়া, কর্মজীবনের প্রস্তুতি গ্রহণে সহায়তা করা, এবং দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীকে জনশক্তিতে রূপান্তর করার উদ্দেশ্যেই ২০১৫ সালের জানুয়ারী মাসে দেশে ও দেশের বাইরে বিভিন্ন খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বাংলাদেশী তরুণদের সহযোগে প্রকৌশলী শাহীনুর আলম জনির নেতৃত্বে গড়ে ওঠে ইয়ুথ কার্নিভাল।
সংগঠনটির প্রধান উদ্যোক্তা প্রকৌশলী শাহীনুর আলম জনি বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রচুর কৃতী সন্তান আজ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে শীর্ষপদে কাজ করছে, তবুও আমাদের দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা অস্বাভাবিকরকম বেশি। মূলত এই শিক্ষিত তরুণদের সাথে বাংলাদেশের এই কৃতী সন্তানদের মেলবন্ধনের উদ্দেশ্যেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ইয়ুথ কার্নিভাল।’
তাঁর মতে বাংলাদেশের যেই তরুণেরা আজ বিশ্ব দরবারে সুপ্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছেন তাঁদের পরামর্শ এবং দিক-নির্দেশনা পেলে বাংলাদেশের শিক্ষিত তরুণসমাজও নিজেদের জীবনকে গুছিয়ে নিতে পারবে এবং একদিন তারাও দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে সক্ষম হবে।
ইয়ুথ কার্নিভাল তাদের কার্যক্রমকে মূলত তিনভাগে ভাগ করে নিয়েছে যথাক্রমে ক্যারিয়ার কার্নিভাল, সোশ্যাল কার্নিভাল এবং আর্ট অ্যান্ড লিডারশিপ কার্নিভাল।
ক্যারিয়ার কার্নিভালের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে কর্মজীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ঠিক করতে দিক-নির্দেশনা দেয়ার চেষ্টা করা হয়। মূলত এর মাধ্যমে ইয়ুথ কার্নিভাল চেষ্টা করছে বিশ্বের সফল ব্যক্তিদের সাথে দেশের তরুণদের একটি সার্বক্ষণিক যোগাযোগমাধ্যম প্রতিষ্ঠা করার যার মাধ্যমে পৌঁছে দেয়া হবে কর্মজীবনে প্রবেশ এবং উন্নতির কার্যকর তথ্যসমূহ।
এছাড়া, সোস্যাল কার্নিভাল প্রধানত কাজ করে সামাজিক সমস্যাগুলোর ব্যাপারে জনসচেতনা সৃষ্টি, সচেতনতা বাড়ানো এবং এর সাথে সাথে সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করা।
অন্যদিকে, আর্ট অ্যান্ড লিডারশিপ কার্নিভাল চেষ্টা করছে সৃজনশীল কর্মক্ষেত্রগুলোর জন্যে প্রয়োজনীয় জনবল সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সৃজনশীল কাজের কর্মশালা, প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনার।
গত দেড় বছর সময় কালে ইয়ুথ কার্নিভালের উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ (AIUB), ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (DIU), চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) সহ দেশের বিভিন্নপ্রান্তে অবস্থিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মশালার আয়োজন করেছে।
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কর্মজীবন, উদ্যোগ, প্রযুক্তিবিষয়ক দক্ষতাবৃদ্ধি (বিগডাটা, ইন্টারনেট অফ থিং, ক্লাউড কম্পিউটিং) এবং কর্মক্ষেত্রে নেতৃত্বের দক্ষতা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির প্রয়াস পেয়েছে সংগঠনটি।
এছাড়া সংগঠনটির নিজস্ব ওয়েবসাইট (www.youthcarnival.org)-এ কর্মক্ষেত্রসম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহের উপর বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, তাঁদের মতামত এবং তাঁদের কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা প্রবন্ধ প্রকাশ করা হয়। সাইটটিতে প্রকাশিত বিশেষজ্ঞ অভিমতের কার্যকারিতার কারণে বর্তমানে সাইটটি অ্যালেক্সা রেটিং-এ বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ওয়েবসাইটের একটিতে পরিণত হয়েছে।
ইয়ুথ কার্নিভাল বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এবং সংগঠন যেমন সামিট, গুগল ডেভলোপার গ্রুপ, ইনফ্ল্যাক, অটবি, লিডারশিপ অ্যান্ড এমপাওয়ারমেন্ট নেটওয়ার্ক (LANE ) সহ আরো বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও কাজ করেছে।