সফলতা রাতারাতি ধরা দেয় না। সফল হতে হলে প্রয়োজন তীব্র ইচ্ছাশক্তি, অদম্য চেষ্টা এবং রোজ কিছু অভ্যাস মেনে চলা। বিশেষজ্ঞতের মতে যারা সফল হয়েছেন তারা প্রতিদিন কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকেন। সিভি-লাইব্রেরি এর প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক লি বিগিনস্ বলেন: ‘আপনি যদি নিজেকে একটি কর্মক্ষম ও সফল দিনের জন্য প্রস্তুত রাখতে চান তাহলে যে কাজগুলো করতে চান সেগুলোর জন্য আপনার শক্তি ও ফোকাস ধরে রাখতে হবে।’
সফল ব্যক্তিরা দিনের শুরুতেই যে কাজগুলো করে থাকেনঃ
১) খুব সকালে ঘুম থেকে উঠা
পৃথিবীতে যারা সফল হয়েছেন এবং সফলতার পথে হাঁটছেন তারা খুব সকালে ঘুম থেকে উঠেন। গবেষণায় বলা হয়েছে ঘুম থেকে উঠার ৪ থেকে ৬ ঘন্টার মধ্যে মস্তিষ্ক খুব ভালো কাজ করে। অ্যাপল, ইয়াহু, স্টারবাক সহ পৃথিবীর অনেক কোম্পানির সিইওরা খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে তাদের সারাদিনের কর্মতালিকায় চোখ বুলায়। খুব সকালে ঘুম থেকে উঠলে অফুরন্ত সময় পাওয়া যায় এবং অন্যান্যদের তুলনায় অনেক বেশি কাজ গুছিয়ে রাখা যায়। প্রবাদ আছে, “Early to bed and early to rise/makes a man healthy, wealthy and wise”
২) প্রতিদিন ব্যায়াম করা
স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। অবসাদ দূর করে শরীরকে প্রাণোচ্ছ্বল করতে ব্যায়ামের জুড়ি নেই। সফল ব্যক্তিরা রোজ শরীরচর্চা করেন। কারণ প্রতিদিনের শরীরচর্চা দেহ ও মনকে সুস্থ ও সতেজ রাখে। প্রখ্যাত লেখক হারুকি মুরাকামি প্রতিদিন ১০ কিঃমিঃ দৌড়ান এবং সাঁতার কাটেন। ফেইসবুকের জনক মার্ক জাকারবার্গ সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন ব্যক্তিগত প্রশিক্ষকের কাছে শরীরচর্চা করে থাকেন। জাকারবার্গ এর মতে ব্যায়াম তার শরীরকে ভালো রাখতে সহায়তা করে এবং ব্যবসায়িক নানারকম চিন্তা করতেও সহায়তা করে। রিচার্ড ব্রানসন দিন শুরু করেন সাইকেল চালিয়ে। স্কয়ারের প্রধান নির্বাহী এবং টুইটারের সহ প্রতিষ্ঠাতা প্রতিদিন ছয় কিলোমিটার দৌড়ান।
৩) স্বাস্থ্যকর নাস্তা গ্রহণ
বলা হয় you are what you eat অর্থাৎ আপনি তাই যা আপনি খান। আপনার অফিসের কাজে হাত দেওয়ার আগেই আপনি স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন। প্রতিদিনের সকালের নাস্তা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সফল ব্যক্তিরা রোজ সকালে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খান। টুইটারের প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক ডর্সির নাস্তাতে প্রতিদিন কয়েকটা সেদ্ধ ডিম থাকে। সকালবেলা ভার্জিন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা রিচার্ড ব্রানসন সাধারণত উচু ভিটামিন ও আঁশসমৃদ্ধ ফলের সালাদ ও বিভিন্ন খাদ্য উপাদান মিশ্রিত মুয়েসলি নামে একটি খাবার খান।
৪) সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য তৈরি
পৃথিবীতে যত সফল ব্যক্তি আছেন সবাই দিনের শুরুতে সারাদিনের কর্মতালিকার একটি ছক এঁকে ফেলেন। বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন প্রতিদিন দিনের শুরুতে আয়নার সামনে দাঁড়াতেন এবং নিজেকে প্রশ্ন করতেন আজকের দিনে তিনি কী কী করতে যাচ্ছেন। এমন পরিকল্পনা সবসময় মানুষকে এগিয়ে রাখতে সহয়তা করে।
৫) মেইলের ইনবক্স পরিষ্কার করা
আপনার কাছে প্রতিদিন হাজারো ইমেইল আসতে পারে। অনেকেই বলে থাকেন দুপুর পর্যন্ত ইনবক্সের মেইলগুলো রাখতে পারেন কিন্তু দিনের শুরুতেই ইনবক্স পরিষ্কার করলে অনেক চাপ থেকে মুক্তিলাভ করতে পারবেন। ইনবক্স যদি পরিস্কার রাখেন তাহলে অনেক সময় বাঁচানো যায়। কারণ ইনবক্সে প্রচুর মেইল থাকলে আপনার জরুরী মেইল খুঁজে পেতে কষ্ট হতে পারে বা অহেতুক মেইল দেখতে গিয়ে মনোযোগ হারাতে পারেন।
সফল ব্যক্তিরা দিনের অন্যান্য সময়ে যে কাজগুলো করে থাকেনঃ
১) যেকোন কাজে মনোযোগ দেয়া
সফল ব্যক্তিরা সর্বদাই সব কাজে মনোযোগী থাকেন, হোক তা পরিবারের কাজ কিংবা অফিসের কাজ। সফল ব্যক্তিদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো অত্যন্ত ছোট একটি কাজেও তারা আনন্দ খুঁজে নেয়। বিখ্যাত “ভোগ” ম্যাগাজিনের সম্পাদক অ্যানা উইন্টার প্রতিদিন কমপক্ষে এক ঘণ্টা সময় রাখেন টেনিস খেলার জন্য। প্রতিটি সফল ব্যক্তি প্রাতিষ্ঠানিক কাজের ফাঁকে নিজের পছন্দের কাজটি করে থাকেন। ম্যারাথন দৌড়বিদ ও চতুর্থ ধনী ব্যক্তি রিচার্ড ব্রানসন পছন্দ করেন ঘুড়ি উড়াতে। তারা শুধু সময় কাটানোর জন্যই এই কাজগুলো করেন না। শারীরিক ও মানসিকভাবে কর্মঠ থাকার জন্য পছন্দের কাজগুলো করে থাকেন।
২) প্রচুর বই ও ম্যাগাজিন পড়া
সফল মানুষ মাত্রই জ্ঞানপীপাসু হয়। প্রচুর বই, নিবন্ধ, ম্যাগাজিন, খবরের কাগজ পড়ার মাধ্যমে সারা বিশ্বের খবরাখবর রাখা যায় এবং জ্ঞান অর্জন করা যায়। সফল ব্যক্তিরা প্রতিদিন অন্তত এক পৃষ্ঠা বই পড়ে কারণ বই পড়লে মানসিক প্রশান্তি লাভ করা যায়। মার্কিন ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারী ওয়ারেন বাফেট দৈনিক পাঁচটি সংবাদপত্র পড়েন এবং এবং বিল গেটস প্রতিবছর পঞ্চাশটি বই পড়েন।
৩) অযথা সময় নষ্ট না করা
সফল ব্যক্তিরা কখনো অকারণে সময় নষ্ট করে না। এ যুগের তরুণ প্রজন্ম যে হারে ফেইসবুকে চ্যাট করে কিংবা ইউটিউবে গান, ভিডিও দেখে সময় নষ্ট করে উক্ত যোগাযোগ মাধ্যমের প্রতিষ্ঠাতা গণও এত সময় অকারণে ফেইসবুক বা ইউটিউবে ব্যয় করেন না। সফল ব্যক্তিরা সর্বদা সময়কে কাজে লাগায় ও সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে চলে। কারণ তারা জানে সময়ের এক ফোঁড় অসময়ের দশ ফোঁড়।
৪) সফলতার জন্য নাছোড়বান্দা হওয়া
আমাদের কাছে হ্যারি পটার চরিত্রটি কত না আকর্ষণীয়! হ্যারি পটারের লেখিকা জে কে রাউলিং তার লেখা বইটি প্রকাশ করার জন্য প্রকাশকের দুয়ারে দুয়ারে গিয়েছেন কিন্তু দুঃখের বিষয় তাকে প্রত্যাখাত হয়ে ফিরে আসতে হয়েছে। তেরো জন প্রকাশক তাকে প্রত্যাখান করেছে। তাই বলে সে থেমে যায়নি, ভেঙ্গে পড়েনি। পুনরায় উদ্যম ও উচ্ছ্বাস নিয়ে কাজে নেমে পরেছে এবং তাঁর বই প্রকাশ হওয়ার সাথে সাথেই পৃথিবী ব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। সফল ব্যক্তিরা কখনো হাল ছেড়ে দেন না।