সফল হতে চান? প্রতিদিন এই অভ্যাসগুলোর চর্চা করুন

সব মানুষের হাত পা চোখ নাক মুখ তথা শারীরিক কাঠামো এক হলেও সফল আর ব্যর্থ মানুষের দৈনন্দিন কর্মতালিকায় একটা বিরাট তফাত আছে, যা তাদের সাফল্য বা ব্যর্থতার নিয়ন্ত্রক। সাধারণের দৃষ্টিতে ছোট ছোট এসব বিশেষ কর্ম সাফল্যের নিয়ামক বলে মনে হবে না। অথচ এই ছোট ছোট বিশেষ কাজগুলো মানুষকে সাফল্যের চূড়ায় পৌছে দেয়।

{ "slotId": "2452885053", "unitType": "in-article" }

কর্মব্যস্ত প্রতিটি দিন কীভাবে আমার ব্যবহার করি সেটাই আসল আর তার জন্য প্রয়োজন দৈনন্দিন কর্মতালিকা। দিনের শেষে খুব সংক্ষিপ্ত সময়ে পরবর্তি দিনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে এই কর্মতালিকা তৈরি করতে হয়, যার যথাযথ ব্যবহার ম্যাজিকের মত জীবন বদলে দেয়। আরও বিষদভাবে বলা যায় –

দিনান্তের কর্মতালিকা: সাফল্যের চূড়ায় ওঠার অন্যতম সোপান  photo source: Hubspot

পরবর্তী দিনের কর্মতালিকা

একজন সফল মানুষ সবসময় পরবর্তী দিনের কর্মতালিকা প্রস্তুত রাখেন। এই তালিকা তিনি দিনভর যুক্ত হওয়া নতুন নতুন কাজ নোট করে বা দিনের কাজ শেষ করার আগ মুহুর্তে তৈরি করে নেন। তারপর রাতে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত যদি আরও কিছু মনে পড়ে তো সেটাও তালিকায় যুক্ত করে নেন। এভাবে আলাদা করে সময় না ব্যয় করেও পরবর্তী দিনের চমৎকার কর্মতালিকা প্রস্তুত হয়ে যায়।

কর্মতালিকার ফোকাস নির্ধারণ করুন  photo source: Blossom

ফোকাস নির্ধারণ

শুধু পরবর্তী দিনের কর্মতালিকা প্রস্তুত করলেই হবে না। সেসব কাজগুলোর থেকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ ও কম গুরুত্বপূর্ণ কাজ বিবেচনা করে নির্ধারণ করতে হবে কোনটা আগে করবেন আর কোনটা পরে। তবে পরীক্ষার হলে যেমন শুরুতেই কোন জটিল সমিকরণের অংক নিয়ে বসতে নেই, তেমনি দিনের শুরুতেই এমন কোন কাজে হাত দিতে নেই, যা সমাধান করা খুব কঠিন বা ভেস্তে যেতে পারে। যদি শেষমেস তাই হয়, তো দিনের বাকি গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোও মাটি হয়ে যাবে।

{ "slotId": "", "unitType": "in-article", "pubId": "pub-6767816662210766" }
নিজের সাথে কথা  photo source: Bible Study Tools

নিজের সাথে কথা

দিনের শুরুতেই দাঁত ব্রাশ করার সময় নিজেকে জানিয়ে দিন যে, তুমি সকালে সুস্থ অবস্থায় জেগে উঠেছো এবং আরও একটি ক্লান্তিকর কর্মব্যস্ত দিন শুরু করতে যাচ্ছ। তুমি জানো না, সারাদিনে তোমার সাথে কী কী ঘটতে চলেছে। কিন্তু যাই ঘটুক না কেন তুমি সব কিছুর জন্য প্রস্তুত আর সবকিছুকে সফলভাবে মোকাবেলা বা নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা তোমার আছে। এভাবে যদি নিজেকে অনুপ্রাণিত করে প্রতিটা দিন শুরু করা যায়, তো আপনার দিন সাফল্যের সাথে ভাল কাটতে বাধ্য।

মনোযোগী হওয়া

কর্মব্যস্ত দিনের শেষ প্রান্তে এসে শক্তি আর উদ্যোমের ব্যাটারি ডাউন হয়ে যায়। মন কিছুটা বিক্ষিপ্ত হয়ে যায় বা অস্থিরতা আসতে পারে। সব কাজ গুলিয়ে যেতে পারে, মনোযোগ নষ্ট হতে পারে।

এটা নিয়ন্ত্রন একান্ত আপনার মানসিক ব্যাপার। গভীর রাতে ঘুমের মধ্যে হঠাৎ কোন বিকট শব্দ শুনলে ন্যানো সেকেন্ডে যেমন ঘুম হারিয়ে গিয়ে দিনে জেগে থাকা স্বাভাকিব মানুষের মত শব্দের কারণ খুঁজতে শুরু করেন, তেমনি কাজে অনিহা এলে নিজেকে মনে করিয়ে দিন, আপনি একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজের মধ্যে আছেন। দেখবেন দিনের শুরু মতো চাঙ্গা ভাব আবার ফিরে এসেছে।

বিক্ষিপ্ত মানসিক অবস্থা কাটিয়ে উঠতে নিজেকে সময় দিন। মোস্তাফিজুর রহমান, ছবি: তারেক মাহমুদ

নিজেকে সময় দেওয়া

দিন শেষের এমন বিক্ষিপ্ত মানসিক অবস্থা কাটিয়ে ওঠার আরও একটি চমৎকার উপায় হল নিজেকে সময় দেওয়া। চটজলদি এক কাপ কফি বা চা তৈরি করে নিয়ে অফিসের ছাদে উঠে যান, বা জানালা দিয়ে বাইরে চোখ মেলুন। এখন আর কোন কাজ নয়, শুধু নিজেকে সময় দিন। ১০ মিনিট সময় নিয়ে মনোযোগ দিয়ে চা/কফির কাপে চুমুক দিন আর চমৎকার বিকেলের সৌন্দর্য উপভোগ করুন। আপনাকে সকালের মত চাঙ্গা করতে এই ১০ মিনিটই যথেষ্ট।

দৈনন্দিন কাজ পর্যালোচনা করুন photo source: workmatters

কাজ পর্যালোচনা

পরবর্তী কাজ কী হবে তার চেয়েও অধিক গুরুত্বপূর্ণ এখন অব্দি কী কী কাজ করে ফেলেছেন। ব্যর্থতা পরে, আগে সারা দিনের অর্জনগুলো এক মিনিট ভাবুন। প্রফেসর ইউনুসের ভাষায়, একটা গ্লাস অর্ধেক খালি না দেখে দেখুন অর্ধেক পূর্ণ। এই ইতিবাচক ভাবনা আপনার মধ্যে ওই গ্লাসের মত পূর্ণতা এনে দেবে। এভাবে রোজ করতে থাকলে একসময় দেখবেন ব্যস্ত প্রতিটা দিনের শেষে আপনি প্রত্যাশার চেয়ে বেশি কাজ করে ফেলতে পারেন।

পেছন ফিরে তাকানো

শুধু নিরবধি কাজ করে গেলেই এগিয়ে যাওয়া যায় না। কখনো কখনো পেছন ফিরে তাকাতে হয়। দৈনন্দিন কাজ পর্যালোচনা করা যেমন জরুরি, তেমনি পেছন ফিরে তাকানোও জরুরি। কাজ পর্যালোচনার সময় মিলিয়ে দেখুন গত কোন কোন কাজের ফলাফল মন্দ ছিল আর কোন কোন কাজের ফলাফল ভাল ছিল। সেই মন্দ ফলাফলের কারণ খুঁজে বের করুন আর সেখান থেকে শিক্ষা নিন।

সাফল্য পেতে যোগাযোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ  photo source: ITP

যোগাযোগ

আপনি হয়তো অফিসের ডেস্কে বসে গভীর মনোযোগে ব্যবসার পরিকল্পনা উন্নয়ন করছেন, এমন সময় অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ একটা ফোন কল এল। আপনি কি ফোনটা এড়িয়ে যাবেন? না, আপনি ঠিক এই মুহূর্তে কী করছেন তা ঐ ব্যক্তির জানার কথা নয়। কাজেই তিনি ফোন করতেই পারেন। আর মনে রাখবেন, নিজের কাজের মধ্যে মুখ্য-গৌণ থাকতে পারে কিন্তু অন্যের সাথে যোগাযোগে কোন মুখ্য গৌণ নেই। আজ যে ব্যক্তিকে গৌণ মনে হচ্ছে কাল সে আপনার জন্য মুখ্য হয়ে উঠতে পারে। তাই সবার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করাও সাফল্যের অন্যতম নিয়ামক। তবে আপনি সেলিব্রেটি কেউ হলে এই যোগাযোগের ব্যাপারটা অন্য পর্যায়ের। তখনও আপনাকে জানতে হবে দিন শেষে কোন মেইল, ম্যাসেস বা ফোন কলের জবাব দিবেন, কোনটা এড়িয়ে যাবেন।

কাউকে অপেক্ষা না করানো

মানুষকে অপেক্ষা করিয়ে রাখা আমাদের দেশে একটা ট্রেন্ড হয়ে গেছে। ধারণাটা এমন যে, কাউকে যত অপেক্ষা করিয়ে রাখা হয় তার কাছে আমরা তত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠি। না, আসলে মোটেও তা না। এতে সম্মান বাড়ে না বরং কমে, আপনার প্রতি অপেক্ষমান ব্যক্তি আস্থা হারিয়ে ফেলে বা আপনার প্রতি বিরক্ত হয়ে ইতিবাচক চুক্তি বা কাজ নেতিবাচকে রুপ নিতে পারে।

অথবা ধরুন কোনো সহকর্মী ব বন্ধুকে একটা নির্দিষ্ট সময়ে কোন ফাইল বা টাকা পাঠাতে চেয়েছেন। সে আপনার জন্য অপেক্ষা করে আছে। অথচ আপনি সময়মত তাকে টাকা বা ফাইল পাঠালেন না। হতে পারে, আপার এই হেয়ালীপনার কারনে সে অনেক বড় বিপদে পড়তে পারে। যদি এমন সম্ভাবনা থাকে, তো আপনার অপারগতার বিষয়ে আগেই তাকে জানিয়ে দিন।

{ "slotId": "2452885053", "unitType": "in-article" }
ধন্যবাদ  photo source: LEARNING HACKS

ধন্যবাদ জ্ঞাপন

এই ছোট্ট ব্যাপারটার অপরিসীম শক্তি। কারো কাছ থেকে উপকার পেলে, বা কোন কাজের শেষে অবশ্যই তাকে ধন্যবাদ জানাতে ভুলবেন না। পারস্পরিক সহযোগিতা এবং কৃতজ্ঞতাবোধ সুন্দর ব্যক্তিত্ব এবং কর্ম জীবনের অন্যতম নিয়ামক। একটা ছোট্ট হাসির সাথে ধন্যবাদ যে কোন চুক্তি, কাজ বা সম্পর্ক কে অনেক বিশিষ্টতা দান করে।

ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *