স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর আইনস্টাইন ফজলুর রহমান খান

0

-২০০৯ সাল। কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা করেন এক কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিন প্রেসিডেন্ট, বারাক ওবামা। “আমরা শ্রদ্ধার সাথে স্মরন করি এক বাঙ্গালী প্রকৌশলীকে কারন আমাদের আকাশচুম্বী ভবনটি তারই নকশায় করা…
-১৯৬৯ সাল। সীয়ারস এন্ড কোং চিন্তা করলো তাদের ৩ লাখ ৫০ হাজার কর্মচারীকে এক কর্মস্থলে এনে রাখা যায় কি ভাবে। আকাশ চুম্বী এক বিল্ডিং গড়ার চিন্তা করলেন তারা। নকশার দায়িত্ব দেওয়া হলো এক বাঙ্গালী প্রকৌশলীকে।
-১৯৭১ সাল। মার্কিন সিনেটে প্রথম এক বাঙ্গালী তার কষ্টের কথা জানাতে এসেছেন। তিনি কাপা গলায় বলছেন “বাংলাদেশের উপর পশ্চিম পাকিস্তানীরা নিষ্ঠুর নির্যাতন চালিয়েছে…


-১৯৭১ সাল। প্রবাসী বাঙ্গালীদের দ্বারে দ্বারে তিনি ছুটছেন। ভালো একটা আর্থিক সম্বল গড়ে তোলার জন্য, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সাহায্যর উদ্দেশ্যে।


-১৯৭২ সাল।স্বাধীনতার পর পরই বাংলাদেশের মুদ্রার অফিসিয়াল নাম কি হবে তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলছে, বেশীর ভাগেরই মত রুপী। সেই প্রকৌশলী ভিন্ন মত দিলেন। তিনি “টাকা” নামকরনের পক্ষে কঠিন যুক্তি দেখালেন। বঙ্গবন্ধু সরকার এক কথায় সেই প্রস্তাব মেনে নিলেন।


-১৯৬৫,১৯৬৮,১৯৭০,১৯৭১,১৯৭৯ সাল।মোট পাঁচবার স্থাপত্য শিল্পে সবচেয়ে বেশী অবদানকারী ব্যক্তিত্ব হিসেবে অভিহিত হলেন।


– ১৯৯৯ সাল।অবশেষে তার জন্মভুমি তাকে স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করলো, ৪ টাকা মুল্যের একটা ডাকটিকিটও বের হলো। সেইসব দেখার জন্য তিনি এই দেশে আসলেননা । কারন তারো ১৭ বছর আগে তিনি পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন।হয়তো অভিমান নিয়ে, কষ্ট নিয়ে।

তার ইঞ্জিনিয়ারিং অবদান, জ্ঞান নিয়ে লেখার যোগ্যতা আমার নেই আমি মনে করি একটা লাইনই যথেষ্ট তা বোঝানোর জন্য। Wikipedia তার সম্বন্ধে বলছে “He has been called Einstein of structural Engineering” তাকে আরো বলা হয় “Father of Tubular designs” এবং ” Master of Engineering”. ।।

আকাশ চুম্বী Tube আকৃতি বিল্ডিং এর সৌন্দর্য এবং অভিনবতা দেখে আমরা যারা মুগ্ধ ও বিস্ময় হয়ে যাই তাদের জানা দরকার একজন বাংলাদেশীর চিন্তা , মেধা আজকের বিশ্বকে এতো দ্রুত আকাশ ছুয়ে দেবার সাহস দেখিয়েছিলো।উনি শুধু সৌন্দর্যই নিশ্চিত করেননি, স্টীলের ব্যবহার কমিয়ে অনেক বেশী ইকোনোমিকাল করেছেন পূরো ব্যাপারটাকে। তার কয়েকটা বিশেষ স্থাপনার নাম উল্লেখ করা যায়। sears tower( বর্তমানে willis tower,প্রায় ২৫ বছর বিশ্বের সর্বোচ্চ ভবন হয়ে ছিলো, এখনো আমেরিকার সর্বোচ্চ ভবন),john hancock cemtre etc.

“Architectural engineering এবং structrul engineering এর মাঝে এতো চমৎকার সামঞ্জস্য দেখিয়ে এতো চমৎকার নিদর্শন তার মতো আর কোন structural engineer কখনই দেখাতে পারেনি” বিখ্যাত একজন ইঞ্জিনিয়ার বলেছেন তার সম্বন্ধে। নাম john zill (senior engineer, som)

আমি তার একটা অসাধারন বাণী (আমার অন্যতম প্রিয় বাণী) দিয়ে লেখা শেষ করতে চাই। “‘প্রযুক্তিবিদের অবশ্যই তার প্রযুক্তির মধ্যে হারিয়ে যাওয়া উচিত নয়, তাকে অবশ্যই জীবনকে তারিফ করতে পারতে হবে। আর জীবন হচ্ছে শিল্প, নাটক, সংগীত এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ…মানুষ।“”

প্রিয় ফজলুর রহমান খান স্যারকে শ্রদ্ধা

Courtesy : A.K.M. Monoarul Huda

(তথ্যসুত্র; সোনালি জীবন, প্রকৌশলী আহমেদ আবুল মজিদ; মুনতাসির মামুনের একটা কলাম থেকেও কিছু নেওয়া)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *