কিছু বাজে অভ্যাস আছে যেগুলো বেশি বেশি করলে উপকারে আসে না, উপরন্ত বেশ ক্ষতিকর। কিন্তু ছোটমাত্রার এই একই ‘বাজে’ অভ্যাস স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের অংশ হতে পারে। যেহেতু আপনি ঢিলেঢালা জীবনযাপন করতে চান না, কিন্তু বাজে অভ্যাসের এই সামান্য হরমোনগুলো আপনাকে আরো সৃষ্টিশীল করে তুলতে পারে। আজ ১০টি বিষয় নিয়ে কতাহ বলবো তা আপনার বাবা মা, শিক্ষক এবং সহকর্মীদের বলা কথা ও ধারণার বিপরীত হতে পারে তবে তা আপনার জন্য ভালো হবে।
মানুষ কেন গড়িমসি করে এবং কিভাবে এটা বন্ধ করতে হয়, তা এখন আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু Wharton প্রফেসর এবং ” Originals” এর লেখক অ্যাডাম গ্রান্টের মতে – আমদের গড়িমসি করার ধারণাটিকে আরও প্রসারিত করা উচিত। গড়িমসি করা শুধু আলস্যে সময় নষ্ট করা নয় বরং সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করা। অন্যভাবে এই অনীহা আপনার সৃজনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। কারণ এটা আপনার ভালো ভালো আইডিয়াগুলো নিয়ে ভাবার সুযোগ করে দেয়। বিজনেস ইনসাইডারের রিপোর্টার Rachel Gillett এক সাক্ষাৎকারে অ্যাপলের স্টিভ জব এর উদাহরণ দেন যে, এই ধরনের বিলম্বিত কাজের জন্য তিনি কিভাবে উপকৃত হয়েছেন।
নখ কামড়ানো
গবেষকরা ১০০০ শিশুকে ৫ বছর বয়স থেকে লক্ষ্য করতে থাকেন। শিশুরা যখন ৫, ৭, ৮ এবং ১১ বছরের তখন গবেষকরা তাদের পিতা-মাতাকে প্রশ্ন করলেন যে, শিশুরা নখ কামড়ায় কিংবা বৃদ্ধাঙ্গুলি চুষে কিনা। প্রায় এক তৃতীয়াংশ শিশুর মধ্যেই এই একটি বা দুটো অভ্যাস দেখা গিয়েছিলো। শিশুদের বয়স যখন ১৩ এবং ৩২ বছর, তখন গবেষকরা অ্যালার্জি পরীক্ষা করেন।
দেখা গেছে, যাদের শিশু বয়সের নখ কামড়ানোর বা আঙুল চোষার অভ্যাস ছিল তাদের আলার্জি কম আছে। একই সাথে একজন লেখক অভিভাবকদের পরামর্শ দেন যেন তারা তাদের বাচ্চাদের নখ-কামড়ানো বা বৃদ্ধাঙ্গুলি-চুষতে উৎসাহিত না করেন। যখন নখ-কামড়াচ্ছে, তা সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির কারণ হয় না, কিন্তু এটি নখ চারপাশের ত্বকের ক্ষতি করতে পারে, যা যেকোনো ধরণের সংক্রমণকে আরো তরান্বিত করবে। এদিকে যদি বাচ্চার স্থায়ী দাঁত ওঠা পর্যন্তও বৃদ্ধাঙ্গুলি-চোষা চলতে থাকে, তাহলে এটি দাঁতের সারি এলোমেলো করে দিতে পারে।
দীর্ঘকালের ধীরগতি আপনার ব্যক্তিগত ও পেশাদারী সম্পর্কে ঝামেলা তৈরি করতে পারে, যা আপনাকে বিশৃঙ্খল, খারাপ বা অন্যদের কাছে হাসির পাত্র বানাবে। ‘Never Be Late Again, ‘ এর লেখক Diana DeLonzor, কাজে দেরি করার ইতিবাচক অংশের উপর আলোকপাত করছেন। নিউ ইয়র্ক টাইমসকে তিনি বলেছেন, “সব কাজে দেরি করা লোকেরা আশাবাদী এবং বাস্তবতার ধার ধারে না। এটি তাদের সময়ের হিসাবের উপর প্রভাব ফেলে। তারা সত্যই বিশ্বাস করে যে, এক ঘণ্টার ভিতর তারা তাদের পোশাকাদি ক্লিনারস থেকে আনতে, মুদি কিনাকাটা এবং তাদের বাচ্চাদের স্কুলে রেখে আসতে পারবে। অন্য কথায়, এমন লোকেরা সেরাটাই আশা করে – যা তাদের দৈনন্দিন জীবনে শাঁখের করাত হতে পারে।
অভিযোগ করা
কেউই এমন বন্ধু চায় না যে কিনা সকল বিষয় নিয়ে শুধু অভিযোগ করে। The Atlantic – এর সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, যারা বেশি আন্তরিকভাবে অভিযোগ করে, তারা আসলে একটি ভাল প্রতিকার পাবার জন্য তা করে। যদি আপনার অভিযোগ করা প্রয়োজন হয় তাহলে আপনি আপনার আশেপাশের মানুষকে বিরক্তি বা সমস্যাটা বড় না করে এর সমাধানটি দেখানোর চেষ্টা করুন। না বুঝলে চোখে আঙ্গুল দিয়ে বোঝান। না হলে অন্যরা আপনাকে ভুল বুঝবে।
Business Insider এর Anisa Purbasari এর মতে, “একটি ইতিবাচক অভিযোগ প্রতিকারযোগ্য হতে পারে এবং এটা এমন একজনকে উদ্দেশ্য করে বলা যেতে পারে যার তা সমাধান করার ক্ষমতা আছে। একটি ইতিবাচক অভিযোগের ৩টি স্তর আছে: প্রথমে, অভিযোগটি সহজভাবে বলুন যাতে শ্রোতা প্রতিবাদী না হয়। দ্বিতীয়ত, শত্রুতার মানসিকতা নিয়ে নয় বন্ধুত্বপূর্ণ উপায়ে অভিযোগ উপস্থাপন করুন। এবং সবশেষে, তাদের বলুন সমস্যা সমাধানের জন্য তারা যে পদক্ষেপ নেবে তা আপনি সাদরে মেনে নেবেন।
চুইংগাম চিবানো
চাকরির ইন্টারভিউতে এটা করা অভদ্রতা । কিন্তু আপনি যখন একা বসে থাকেন তখন তা আপনাকে কার্যক্ষম ও উদ্বেগ মুক্ত করার চাবিকাঠি হতে পারে । একাধিক গবেষণা থেকে জানা যায় যে, চুইংগাম চিবানোর ফলে আপনি আরো সতর্ক বোধ করবেন। এমনকি অন্য একটি গবেষণা থেকে জানা গেছে, যারা চুইংগাম খায় তারা বুদ্ধিমত্তার পরীক্ষায় অন্যদের চেয়ে ভাল করে তাদের মেজাজ ভাল করে এবং স্ট্রেস হরমোন cortisol – এর মাত্রা কমায় ।
টেবিল অগোছালো রাখা
যদি আপনার সহকর্মীদের টেবিলে কাগজের স্তুপ জমে থাকে তাহলে সাজিয়ে রাখা প্রয়োজন। কিন্তু এটা ধরে নেওয়া হয় আপনি নিজের কাছে নিজে বিশৃঙ্খল থাকতে পারেন, এরকম এলোমেলো থাকার উপকারিতা আছে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে এলোমেলো মানুষরা লক্ষ্যের প্রতি অনেক বেশি সচেতন। অর্থাৎ, শুধু অগোছালো টেবিলটা আপনাকে আরো কার্যক্ষম করে তুলতে পারে ।
প্রায়ই অস্থির থাকা
আপনি যখন আপনার বসের সাথে মিটিং এ থাকেন, তখন অস্থির হয়ে বসে থাকা ভালো নয়। কিন্তু ডেস্ক এ বসা অবস্থায় আপনার পা নাড়ানো বা আঙুল নাড়া আপনাকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করতে পারে। এক গবেষণায় দেখা গেছে যারা কম অস্থিরতায় ভোগেন তাদের চেয়ে যে নারীরা বেশি মাত্রায় অস্থিরতায় ভোগেন তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি কম।
আকাশ কুসুম কল্পনা করা
২০১০-এ গবেষকরা কিছু আকর্ষণীয় কিছু বিষয় প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, দিবাস্বপ্ন আপনাকে অসুখী করতে পারে। কিন্তু কিছু সময় নিজের জগৎ থেকে অন্যত্র বিচরণ আপনাকে আরও কার্যক্ষম ও সৃষ্টিশীল করে তুলতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একটি গবেষণা, হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ-এ উল্লেখ করেছে যে, যখন আপনি একটি কঠিন কাজ করছেন, তখন আপনার মনকে প্রায় ১২ মিনিট এলোমেলো চিন্তা করতে দিন। এটা একটি সমাধান খুঁজে পেতে আপনাকে সাহায্য করবে।
ঠাণ্ডা জলে স্নান করা
আপনি হয়তো আপনার শরীর চাঙ্গা করার জন্য ঠান্ডা জলে স্নান বা সাঁতার কাটার প্রবণতার ব্যাপারটা জানেন । যদিও এই বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোন বৈজ্ঞানিক তথ্য পাওয়া যায়নি। ফিনল্যান্ড, যেখানে ঠাণ্ডা জলে সাঁতার কাটা সাধারণ বিষয়, সেখানে থেকে গবেষণায় জানা গেছে, “ঠান্ডা জলের সাথে মানিয়ে নেওয়া আপনার মানসিক চাপ এবং ক্লান্তি দূর করবে এবং মেজাজ এবং স্মৃতিশক্তি উন্নয়নে সাহায্য করবে। এগুলো মস্তিষ্কের ফাংশনকে চাঙ্গা এবং আরো কর্মক্ষম করবে। তাই আপনি যদি পোলার ভাল্লুক ক্লাবে যোগ দেন, এর অভ্যাসগুলো প্রতিদিন আপনার মস্তিষ্ককে আরো শক্তি প্রদান করতে পারে। আপনি কর্মদক্ষ অন্য লোকদের প্রতিদিনের অভ্যাসগুলো দেখতে পারেন।
কথায় অর্থহীন শব্দ ব্যবহার
উম, হু এই শব্দ গুলো সম্পূর্ণ অপেশাদার, কিন্তু আপনি কি প্রায় সব বাক্যই ব্যবহার করেন? সম্প্রতি একটি Quartz article highlights গবেষণা করে এমন কিছু কথা তুলে ধরেছে যে “হুম” এবং “আহ্”- এইশব্দ গুলো আপনি কি বলছেন তা শ্রোতাদের বুঝতে সাহায্য করে। আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, অত্যন্ত কর্তব্যপরায়ণ, পরিশ্রমী মানুষদের কথাবার্তার মধ্যে এইসব অর্থহীন শব্দের ব্যবহার বেশি।