নিজের সাথে কথা বলার অসাধারণ ১০ টি সুফল

আমরা অনেকেই নিজের সাথে কথা বলি। বেশির ভাগ সময়ই এই ব্যাপারটি সাধারণত আমরা অবচেতন মন থেকে করি। নিজের সাথে কথা বলার জন্য সবাই ভাবতে পারে আপনি মানসিক সমস্যায় ভুগছেন অথবা আপনার সাথে হয়তো খারাপ কিছু ঘটেছে- এরকম নানান কুসংস্কারের জন্য নিজের সাথে কথা বলার অভ্যাস ধীরে ধীরে পরিবর্তন করে ফেলেন অনেকেই। কিন্তু বিজ্ঞান ইতিমধ্যেই আবিষ্কার করেছেন নিজের সাথে কথোপকথন এর কিছু ভালো দিক। নিজের সাথে কথোপকথনের আশ্চর্যজনক তথ্যগুলো সম্পর্কে জানলে আপনিও হয়তো ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনার পুরনো অভ্যাসটি।

{ "slotId": "2452885053", "unitType": "in-article" }

১. একাকীত্ব দূর করে

নিজের সাথে কথা বললে একাকীত্ব দূর হয়। এই অভ্যাসটি একটি স্বান্তনাকারী প্রতিষেধক। অর্থাৎ একটি শান্ত পরিবেশে বসে যখন আপনি নিজের সাথে নিজেই কথা বলবেন তখন এটি আপনার মনে একটি প্রশান্তি এনে দিবে। Aniesa M. Schneberger ব্যাখ্যা করেছেন, আপনি কী নিয়ে দুশ্চিন্তা করবেন যখন নিজের সাথে আপনি চাইলে বিতর্ক করতে পারছেন? এই অভ্যাসটি অস্বাভাবিক আচরণের প্রতিষেধক হিসেবেও কাজ করবে।

২. বাচ্চাকে শেখাতে সাহায্য করবে

আপনার যদি ছোট বাচ্চা থাকে তাহলে তাদের উপস্থিতিতে নিজের সাথে কথা বলার ব্যাপারটি বাচ্চার ভাষা শিখতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। স্বাভাবিক ভাবেই ছোট বাচ্চাদের মধ্যে স্পঞ্জের মতো তথ্য শোষণ করার ক্ষমতা থাকে এবং তারা তাই পুনরাবৃত্তি করে যা তারা বার বার শোনে। বাচ্চারা আপনার বাক্য গঠনের পদ্ধতি, শব্দভাণ্ডার সহজেই রপ্ত করতে পারবে।

Image Source: Chobi Bazar

নিজের সাথে কথোপকথন হতে পারে আপনার বাচ্চার জন্য শিক্ষণীয় পদ্ধতি। কাজেই যখন যা করছেন, নিজের সাথে কথা বলুন মন খুলে। থালা বাসন ধোয়ার সময় থেকে শুরু করে সাজসজ্জার সময় যখন যে কাজেই থাকুন, ছোট বাচ্চাটি পাশে থাকলে কথা বলুন নিজের সাথে। আপনি যেভাবে যত সুন্দর ভাবে বাচ্চার সামনে কথা বলবেন বাচ্চা সেভাবে আপনার কথা বলার শৈলী অনুকরণ করবেন।

{ "slotId": "", "unitType": "in-article", "pubId": "pub-6767816662210766" }

৩. তাড়াতাড়ি খুঁজে বের করতে সহায়ক 

University of Wisconsin-Madison এবং University of Pennsylvania একটি গবেষণায় জানা গিয়েছে, নিজের সাথে কথোপকথন আপনার যেকোনো কিছু সহজেই খুঁজে বের করতে সাহায্য করে। কোনো কিছু হারিয়ে গেলে, সেই জিনিসটির নাম যদি বার বার উচ্চারণ করেন। তাহলে হারানো জিনিস খুঁজে বের করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। যারা এই পদ্ধতি অবলম্বন করেন না তাদের চেয়ে যারা এই পদ্ধতি অনুসরণ করেন তাদের হারানো জিনিস খুঁজে বের করার ক্ষমতা অনেক বেশি হয়ে থাকে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, আপনার মোবাইল হারিয়ে গিয়েছে আর আপনি যদি নিজে নিজেই বলেন “মোবাইল, আমার মোবাইলটা কই?” এরকম অভ্যাসগুলো সত্যিকার অর্থেই কার্যকরী।

৪. আপনাকে রাখবে সংঘটিত

মনোবিজ্ঞানী Julia Breur বলেছেন, যদিও আমরা একসাথে অনেক কিছু ভাবি তবুও আমাদের মন যেকোনো একটি কাজকে এক সময়ে সঠিকভাবে করতে পারে। আপনার প্রতিদিনের কাজগুলোর সময় যদি নিজেকেই বলেন, এরপর আপনার এই কাজ আছে, তাহলে আপনার মস্তিষ্ক পরবর্তী কাজ সম্পর্কে সতর্ক হয়ে যাবে। আর আপনি প্রাকৃতিক ভাবে সব কাজ সঠিক সময়ে শেষ করতে পারবেন যা আপনাকে রাখবে সংঘটিত সবসময়।

৫. লক্ষ্যের দিকে রাখে অবিচল 

লক্ষ্য যত ছোটই হোক না কেন, নিজের সাথে কথা বলার অভ্যাসের মাধ্যমে আপনি হয়তো তা অর্জন করতে পারবেন। মুদি দোকান থেকে কিছু খুঁজে বের করতে হলে, একসাথে অনেকগুলো জিনিসের মাঝে খুঁজে বের করা বেশ কঠিন। মনোবিজ্ঞানীরা বলেছেন নিজের সাথে কথা বলার অভ্যাস সহজেই দৃষ্টিগোচর করে নির্দিষ্ট জায়গাটিকে মনের মাঝে এনে দেয়, যাতে সহজেই চোখ পড়ে।

Image Source: Chobi Bazar

Linda Sapadin, lifehack.org এর এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন,”নিজের লক্ষ্যের কথা জোরে জোরে বলার মাধ্যমে সফলতাকে সহজেই নিকটে আনা সম্ভব। আর এই অভ্যাসটি আপনার মনোযোগ ধরে রাখে, যা সফলতা অর্জনের উত্তম পন্থা।

৬. মানসিক চাপ কমায় 

এরপর যখন থেকে মানসিক চাপ বা অস্থিরতা অনুভব করবেন তখনই নিজের সাথে একটানা কথা বলুন। Dr. Breur বলেছেন, নিজের সাথে কথা বলা একটি সহজ পন্থা যা অবলম্বন করে আপনি মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তার সাথে সহজেই মানিয়ে নিতে পারবেন। নিজের কথার শব্দ আপনার মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে, আর নিশ্চিত করে  আপনার প্রফুল্লতার দিকটি। এছাড়া নিজের কথার আওয়াজ মানসিক চাপের সময় অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী করে তোলে।

৭. স্বাধীনভাবে সমস্যা সমাধান 

যারা নিজের সাথে কথা বলেন না তাদের চেয়ে যারা নিজের সাথে কথা বলেন তারা বেশি স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে নিজেদের সমস্যা সমাধান করেন। যখনই কোনো সমস্যায় পড়েন, তখন হয়তো পরিবারের কারো কাছে বা কোনো বন্ধুর নিকট পরামর্শের জন্য যাওয়া হয়। কিন্তু কারো উপর নির্ভরশীল না হয়ে যদি আপনি নিজের সাথে কথা বলেন, তাহলে আরো বেশি স্বাধীনভাবে সমস্যা সমাধান করতে পারবেন। নিজের কথাগুলো আরো বেশি সমস্যা সমাধানের মাধ্যম হতে পারে।

Image Source: Chobi Bazar

৮. আত্মোপলব্ধি অর্জন 

আপনি হয়তো বুঝে উঠতে পারছেন না কিভাবে আপনি আপনার সহকর্মীদের সাথে যোগাযোগ বাড়াবেন। আপনার ভেতরে হয়তো কিছু ভাবনা আছে কিন্তু সেগুলো কিভাবে আরোপ করবেন তা নিয়ে বিভ্রান্তিতে আছেন। নিজের সাথে কথা বলুন, নিজের ভাবনাগুলো নিয়ে, দেখবেন এই কথোপকথন আপনার আত্মোপলব্ধিকে অনেক স্তরে খুলে দিবে। সমাধানের রাস্তা কী হতে পারে আপনি নিজেই তা বুঝতে পারবেন। এছাড়া আপনি যখন সবার সাথে আছেন তখন আপনার মনকে সর্বদা পাহারায় রাখতে হয় যাতে ভুল কিছু বলে না ফেলেন। কিন্তু যখন আপনি একা তখন আপনার এমন অনেক কথাই বের হয়ে আসতে পারে যা শুনে আপনি নিজেও অবাক হতে পারেন সেই সাথে আপনার মাঝে নিজস্ব কিছু উপলব্ধি ও আসতে পারে।

৯. উচ্চাকাঙ্ক্ষী করে তুলবে 

মনোবিজ্ঞানী Linda Sapadin বলেছেন, নিজের সাথে জোরে জোরে কথা বলা আপনার উচ্চাকাঙ্ক্ষাগুলোকে বাড়াতে সাহায্য করে। কেন আরেকজনের কাছ থেকে প্রশংসা শোনার জন্য অপেক্ষা করতে হবে? নিজেই নিজের প্রশংসা করুন। এতে আত্মবিশ্বাস বাড়বে। আপনি হয়তো আইসক্রিম খেতে পছন্দ করেন। ওজনজনিত সমস্যার কারণে এড়িয়ে চলছেন। কিন্তু এমন হতেই পারে সেদিন আপনার আইসক্রিম খেতে খুব ইচ্ছা হচ্ছছে। তখন নিজেই নিজেকে বলুন আমি যেহেতু ওজন কমাচ্ছি সেহেতু আমি আইসক্রিম খাবো না, তবে এতদিন পর এই আইসক্রিমটা আমার প্রাপ্য। এই সুন্দর ভাবনাটি নিজের প্রতি সত্যিই আপনার ওজনে কোনো প্রভাব ফেলবে না বরং আরো অনেক বেশি আশাবাদী করে তুলবে।

১০. বুদ্ধি বাড়াতে সাহায্য করবে 

Dr. Sapadin বলেছেন, নিজের সাথে কথা বলার ব্যাপারটি আপনার বুদ্ধিমত্তা বাড়াতে সাহায্য করে। কারণ এই বিষয়টি আপনার ভাবনাগুলোকে সাজিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজে রুপান্তরিত করছে। তবে হ্যাঁ নিজের সাথে অবশ্যই সম্মানের সাথে কথা বলা জরুরী। নিজেকে নিজের সর্বোত্তম বন্ধু হয়ে পাশে থাকতে হবে সবসময়। যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজের কথা গুরুত্বের সাথে শুনতে হবে।

{ "slotId": "2452885053", "unitType": "in-article" }
Image Source: brainpic.com

নিজের সাথে কথা বলুন সবসময়, নিজের মনের কথার গুরুত্ব দিন। এই অভ্যাসটি আপনাকে একজন কর্মঠ ও সুন্দর ব্যক্তিত্বে পরিণত করতে সাহায্য করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *