যে ১০টি উপায়ে সঠিক বন্ধু নির্বাচন করতে পারেন

জীবনে চলার পথে আমাদের অনেক মানুষের সাথে পরিচিত হতে হয়। সেই পরিচয় থেকে ঘটে বন্ধুত্ব। তাই বলে সবাই আমাদের খুব ভালো বা কাছের বন্ধু হয় না। নিজের সত্যিকারের ভাল বন্ধুকে খুঁজতে সকলকেই বেশ বেগ পোহাতে হয়। কিন্তু এখন বন্ধু নির্বাচনের জন্য আপনাকে বেশি কষ্ট করতে হবে না যদি আপনি এই আর্টিকেলটি পড়েন। চলুন জেনে আসা যাক একজন ভালো বন্ধুর কিছু চিহ্ন সম্পর্কে।

{ "slotId": "2452885053", "unitType": "in-article" }
বন্ধুরাই আপনার চিয়ারলিডার; সূত্র: flickr.com

১. যারা প্রতিক্ষেত্রে আপনাকে উৎসাহ জোগায়

একটু চিন্তা করে দেখুন যে, আপনার বন্ধুরা আপনাকে কোন কোন বিষয়ের জন্য সাহায্য করে এবং উৎসাহ জোগায়। মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তিই হলো সে চারপাশের মানুষের কাছ থেকে তার সম্পর্কে প্রশংসা, উৎসাহ ও উদ্দীপনামূলক কথা শুনতে চায়। আর সত্যিকারের বন্ধুরা সবসময়ই তা করে থাকে। এমনকি কোনো বিষয়ে তারা আপনার সাথে একমত হতে না পারলেও তারা সেটা আপনাকে সরাসরি কষ্ট দিয়ে বলবে না।

  • যদি আপনার বন্ধুরা আপনার জামাকাপড় থেকে শুরু করে নতুন কর্মক্ষেত্র পর্যন্ত সবকিছু নিয়েই ভালো মন্তব্য করে এবং আগ্রহভরে এসব নিয়ে জিজ্ঞাসা করে, তাহলে বুঝবেন যে, তারা বন্ধু হিসেবে ভাল।
  • আপনার বন্ধুরা সবসময়ই আপনার কাজের একনিষ্ঠ ভক্ত হবে এবং আপনার কাজে উৎসাহ দিবে।
  • কিন্তু আপনার বন্ধু যদি সবসময় আপনার কাছে অহংকার দেখায় এবং আপনাকে কটাক্ষ করে এমন ধরণের কথা বলে,”ওহ তুমি টেস্টে ৮৫ পেয়েছো? আমি তো ৮৯ পেয়েছি।” বা আপনাকে সবসময় হীন উপায়ে নিচে নামানোর চেষ্টা করে এবং আপনার সাফল্যে খুশি হয় না, এমন বন্ধুদের এড়িয়ে চলুন। তারা কখনোই আপনার ভাল বন্ধু ছিল না।
বন্ধুদের কাছে খোলামেলাভাবে সব বলুন; সূত্র: videoblocks.com

২. আপনার মনোযোগী শ্রোতা

প্রত্যেকটি বন্ধুমহলে এমন একজন বন্ধু থাকে যার সামনে ঘন্টার পর ঘন্টা একই বিষয় নিয়ে বকবক করলেও সে কখনোই বিরক্তবোধ করে না। কারণ ভাল বন্ধু জানে যে, কিভাবে মুখ বন্ধ আর কান খোলা রেখে সামনের বন্ধুর কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে হয়, বন্ধু যতই একঘেয়ে কথা বলুক না কেন। তারা চোখে চোখ রেখে আপনার কথা শুনবে, মনে রাখবে এবং প্রয়োজনে প্রশ্নও করবে।

  •  যদি আপনার মনে হয় যে আপনিই শুধু আপনার বন্ধুদের সমস্যার কথা শুনে যান, কিন্তু আপনার সমস্যার কথা শোনার বেলায় কাউকেই খুঁজে পাওয়া না যায়, তাহলে আপনি আপনার প্রাপ্য মূল্য পাচ্ছেন না।
  • আপনার কথা বলার সময় যদি আপনার বন্ধু অন্যমনস্ক হয়ে পুরো ঘরে চোখ বুলাতে থাকে অথবা মোবাইলে মনোযোগ দেয়, তাহলে কেন তাদের কাছে আপনি আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করছেন?

৩. মন খুলে সব বলার সাথী

ভালো বন্ধুদের কাছে আপনি খোলামনে নিজের বিব্রতকর, মজার, গোপনীয় কথা সব বলতে পারেন এবং তারাও আপনাকে তাদেরটা বলে থাকে। তারা খুব সহজেই আপনার মনের অবস্থা জানতে পারে এবং আপনার মন খারাপ হলে কিভাবে মন ঠিক করতে হয় তাও জানে। তারা কখনোই আপনার মিথ্যা প্রশংসা করবে না। আর আপনার প্রতি তাদের কোনো অনুযোগ থাকলে সেটি সরাসরি আপনাকেই বলবে। কিন্তু আপনি যদি আপনার বন্ধুর কাছ থেকে কোনো কথা গোপন রাখার প্রয়োজনবোধ করেন তাহলে বুঝবেন যে, আপনি তাকে বিশ্বাস করতে পারেন না। আর বিশ্বাসই হলো বন্ধুত্বের অন্যতম ভিত্তি।

{ "slotId": "", "unitType": "in-article", "pubId": "pub-6767816662210766" }

৪. খুঁজে বের করুন যে কে আপনার সৎ বন্ধু

বন্ধুত্বের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার উপায় হলো সততা। আপনার বন্ধু যদি সৎ থাকে তাহলে এটি একটি ভালো লক্ষণ। যদি আপনার বন্ধু আপনার কাছে মিথ্যা কথা বলে, সেটি যত ছোটই হোক না কেন, তা কিন্তু আপনাদের বন্ধুত্বে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

বন্ধুদের কাছে খোলামেলাভাবে সব বলুন ; সুত্র: faithstrongtoday.com

৫. গুজব রটিয়েদের কাছ থেকে দূরে থাকুন

ট্রাকের পেছনে যেমন লেখা থাক,”বিপদজনক! ১০০ হাত দূরে থাকুন।” ঠিক তেমনি এসব বন্ধুদের পেছনেও অদৃশ্যভাবে ১০০ হাত দূরে থাকার কথা লেখা থাকে। যে যাই বলুক না কেন, গুজব রটাতে এবং শুনতে অনেকেই পছন্দ করে। আপনার বন্ধুরা যদি আপনার সামনে অন্য কারো সম্পর্কে কটুক্তি করে, নানান আজেবাজে কথা ছড়ায়, তাহলে কে জানে তারা হয়তো আপনার পেছনেও এমন সব কথাই ছড়ায়? এখানে কিছু উপায় বলা হলো যা দেখে আপনি বুঝতে পারবেন যে, আপনার বন্ধুরা কতটা লাগামহীনভাবে কথা ছড়ায়

  • মাত্রই রুম থেকে বের হয়ে যাওয়া কাউকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করে বসলে।
  • সে যদি তার ‘খুব ভাল বন্ধু’দের নিয়ে আপনার কাছে খারাপ মন্তব্য করে, তাহলে জেনে রাখুন সে তার ‘খুব ভাল বন্ধু’দের কাছে আপনার নামেও একই রটনাই রটাচ্ছে।
  • যদি আপনার বন্ধু কক্ষে অনুপস্থিত এমন কাউকে নিয়ে কোনো মন্তব্য করে, যা শুনে সেই ব্যক্তিটি কষ্ট পেতে পারে; তাহলে আপনি বের হয়ে যাওয়ার পরে সে আপনাকে নিয়েও গুজব রটাবে।
যারা আপনাকে সময় দেয়; সূত্র: shutterstock.com

৬. যারা আপনাকে সময় দেয়

জীবন অনেক সময় ইয়ারফোনের মতন প্যাঁচালো হয়ে যায়, সেই প্যাঁচ যেন সহজে ছুটতেই চায় না। ফলে মানুষ নিজের নাওয়া-খাওয়া সবই ভুলে যায়। কিন্তু ভাল বন্ধু তারাই, যারা শত ব্যস্ততার ফলেও বন্ধুদেরকে একটা মেসেজ বা ফোনকল দিত ভোলে না। তারা যদি আপনাকে দিনে একটা ছোট্ট খুদে বার্তাও না দিতে পারে এই ফোর জির যুগে, তাহলে তারা কীসের ভালো বন্ধু?

  • যদি আপনার বন্ধুরা আপনাকে প্রতিদিন নিয়মমাফিক ফোন দিয়ে খোঁজ নেয়, বা ছোট্ট একটা বার্তা পাঠায়, তাহলে আপনি আসলেই অনেক সৌভাগ্যবান। অবশ্যই এই একই কাজ আপনি তাদের সাথেও করবেন।
  • কিন্তু আপনার বন্ধুরা যদি আপনাকে সময় না দেয় অথবা ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে অন্য বন্ধুদের সাথে সময় কাটায়; তাদেরকে ছেড়ে দিন! ব্যস্ততা সবারই থাকে, কিন্তু তাই বলে ব্যস্ততার ভণিতা করা বন্ধুদেরকে তো বন্ধু ডাকাই ভুল।

৭. যদি উভয়পক্ষই বন্ধুত্বকে সামাল দিয়ে থাকে

যখন যোগাযোগ করার ব্যাপার আসে, মুভি দেখা বা শপিং এ যাওয়ার কথা উঠে, বন্ধুত্ব সেখানে ৫০/৫০। আজ আপনি তাকে কিছু দিলে কালকে সে আপনাকে দিবে। কিন্তু যদি আপনিই সবসময় দিয়ে যান, আর সে নিয়ে যায় তাহলে তো বন্ধুত্বের ব্যালেন্সটা ঠিক থাকলো না। যদি আপনাকেই সবসময় ফোন দিতে হয়, মুভির টিকিটের টাকা দিতে হয়, আপনার জিনিস অনুমতি না নিয়ে ব্যবহার করে, এসব বন্ধুদের সঙ্গ ছেড়ে দিন।

  • বন্ধুকে বোঝানোর চেষ্টা করুন তার বিপদে-আপদে সবসময় তার পাশে আপনিই থাকবেন।
  • সবকিছু সমান সমান রাখা মানে এই নয় যে, আপনার বন্ধু আপনার জন্য যত টাকা খরচ করবে,ঠিক তত টাকাই আপনাকেও খরচ করতে হবে। টাকা দিয়ে কখনোই বন্ধুত্বকে পরিমাপ করা যায় না।
  • সবসময় নিজে বিপদে পড়ার সময় তাদেরকে স্মরণ করবেন না, নিজে থেকেও তাদেরকে জিজ্ঞাসা করুন যে, তাদের কোনো কাজে আপনার সাহায্য লাগবে না কি।

৮. প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা

একজন মিথ্যাবাদী কখনোই কারো বন্ধু হতে পারে না। যদি আপনার বন্ধু আপনাকে দেওয়া কথা ভুলে যায়, বিপদের সময় পিছু হটে যায় অথবা কোনো প্ল্যান করলে শেষ মুহুর্তে সরে আসে তারা আপনার ভাল বন্ধু না। যারা আপনাকে সময় দেয় এবং কখনোই আগে থেকে ঠিক করে রাখা তারিখ পেছায় না, তাদের সাথেই আপনি ভাল সম্পর্ক গড়ে তুলুন।

নিঃস্বার্থ বন্ধুত্ব; সূত্র: videoblocks.com

৯. নিঃস্বার্থ বন্ধুত্ব

না না! নাম দেখে ভাববেন না যে ভাল বন্ধু খুঁজে বের করার জন্য আপনাকে আপনার হৃদয় খুলে দিতে হবে! তবে স্বার্থহীন বন্ধুদের খুঁজে বের করা আর হৃদয় খুলে দেওয়া একই জিনিস বটে! একটু সময় নিয়ে ভাবুন যে কেন আপনার বন্ধুরা আপনার সাথে সময় কাটায়? আমাদের সাথে এমন অনেক সুবিধাবাদী রয়েছে যারা নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য বন্ধুত্ব রক্ষা করে চলে।

  • জনপ্রিয়তা: আপনি যতই বিখ্যাত হোন না কেন, আপনার আসল বন্ধুরা এগুলো চিন্তার মাঝেও আনে না! বরং তারা আপনাকে তাদের ভাল বন্ধু, তাদের মত সাধারণ একজনই ভাবেন। কিন্তু যারা আপনার সাথে আপনার জনপ্রিয়তার কারণে থাকে তারা আপনাকে শুধু তোষামোদই করবে, বিপদের সময় তাদের টিকিটিও দেখা যাবে না।
  • প্রাচুর্যতা: নিজেদের দলে একজন ধনী বন্ধু থাকা আসলেই মজার ব্যাপার। তার সাথে থেকে আপনি এতদিন যেসব কাজ করতে পারতেন না সেসব কাজ খুব সহজেই করতে পারবেন। তবে যারা কেবল মাত্র টাকার জন্যই আপনার সাথে থাকে তাদেরকে নিজের দল থেকে ছাঁটাই করে দিন।

১০. আপনাকে কি তারা ‘পাত্তা’ দেয়?

‘বন্ধুদের’ সাথে থাকলে সবসময়ই মন-মেজাজ ফুরফুরে থাকে! কিন্তু সবাই কি আপনাকে সব জায়গায় গুরুত্ব দেয়?

  • ‘ফেইক’ বা ‘ক্যাজুয়াল’ বন্ধুরা আপনার সাথে ব্যক্তিগতভাবে যত সময়ই কাটাক না কেন, জনসম্মুখে কখনোই আপনার দিকে ঘুরেও তাকাবে না। এমনকি দলগত আলোচনা থেকেও আপনাকে বাদ দিয়ে দিবে।

অনেক সময় দেখা যায় যে, কারো মধ্যে যদি উপরের সব কথাগুলো অক্ষরে অক্ষরে মিলেও যায়, তবুও তার সাথে থাকতে আপনার মন সায় নাও দিতে পারে। বন্ধুত্ব কখনো যুক্তি দিয়ে নয়, মন থেকে হয়। আর এই মনের সাথে যদি যুক্তির মিশ্রণ থাকে তাহলে অন্তত এই বন্ধুত্বের বিষয়ে কখনোই ধোঁকা খাবেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *