বিংশ শতকের এক গুরুত্বপূর্ণ ডিভাইস হলো কম্পিউটার। কী করা যায় না এটা দিয়ে? ডকুমেন্ট তৈরি করা থেকে শুরু করে এডিটিং, প্রেজেন্টেশন, যোগাযোগ, ব্যবসা-সব ধরণের কাজ কম্পিউটারের মাধ্যমে করা যায়। শিক্ষাজীবন হলো নানান বিষয়ে দক্ষতা অর্জনের সুবর্ণ সময়। কেননা পরবর্তীতে, কর্মজীবনে এইসব স্কিলগুলোই তাদেরকে সেই ক্ষেত্রের অন্যান্য প্রার্থীদের তুলনায় কয়েক গুণ এগিয়ে রাখবে!
কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটকে একে অন্যের পরিপূরক বলা চলে। খুব কম ক্ষেত্রই আছে, যেখানে এই দুটির প্রয়োজন হয় না। তাই ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীরা যেই কাজ করুক না কেন, এই দুটি সম্পর্কে জ্ঞান এবং দক্ষতা থাকা চাই! নতুন কোনো অফিসে গেলেও প্রথম দিনেই এ দুটোর কাজ করতে হবে। পরীক্ষার আগে পড়া যেমন জরুরি, তেমনি চাকরিতে ঢোকার আগে কিছু কম্পিউটার স্কিল থাকাও প্রয়োজন।
বাংলা, ইংরেজি, গণিতের মতো আজকাল শিক্ষার্থীদের বেসিক কম্পিউটার নলেজ থাকাটাও জরুরি। কম্পিউটারের প্রাথমিক জ্ঞান থাকা এখন যেকোনো চাকরির জন্য বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইচ্ছা, দক্ষতা এবং আইটি টুলস শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত ও কর্মজীবনে বেশ ভাল প্রভাব ফেলে, কিন্তু কেন কোনো বিষয়ের উপর দক্ষতা থাকা জরুরি? চলুন জেনে আসা যাক।
বাংলা এবং ইংরেজি টাইপিং দক্ষতা
ইংরেজিতে প্রতি মিনিটে ৪০টি শব্দ এবং বাংলা ২৫টি শব্দ টাইপ করতে পারতেই হবে। শিক্ষার্থীদের প্রায় বিভিন্ন এসাইনমেন্ট করতে হয়। আর এই এসাইনমেন্টগুলো তৈরি হয় কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটের সাহায্যেই। তাই তারা যদি নিজেরাই টাইপ করতে পারে, তাহলে দোকানে গিয়ে টাইপ করতে হবে না। অর্থ ও সময়, দুটোই বেঁচে যাবে।
নিজেরাই যদি টাইপিং না পারেন, তাহলে আপনাদের সাইবার ক্যাফেতে যেতে হবে এবং দোকানদারদের দিয়ে কাজটা করাতে হবে। এই কাজ করতে কেউই ২০০ টাকার কম নিবে না। তাই টাইপিং দক্ষতা থাকলে শুধু এসাইনমেন্টই না, সরকারি চাকরিও পাওয়া সম্ভব।
ডকুমেন্ট তৈরি এবং এডিটিং দক্ষতা
এটি আরেকটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কম্পিউটার স্কিল। মাইক্রোসফট ওয়ার্ড এবং গুগল ডক এর মাধ্যমে খুব সহজেই ডকুমেন্ট তৈরি করা যায়। এই দুটি সসফটওয়্যার এসাইনমেন্ট তৈরি, প্রেজেন্টেশন ডিটেইল এবং নোট তৈরির জন্য খুবই উপকারী। ৯০% কোম্পানি মাইক্রোসফট অফিস তাদের কাজের জন্য ব্যবহার করে থাকে।
গুগল এবংরফিস ৩৬৫ অনলাইনেও ব্যবহার করা যায়। ফলে শুধু কম্পিউটারই নয়, মোবাইলেও যখন তখন লিখা এবং ফাইল এডিট করা যাবে। একই ফাইলে একাধিক মানুষের এক্সেস থাকলে তারা এডিটও করতে পারবে।
গাণিতিক সমস্যাবলী এবং ফিন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট দক্ষতা
যখন কেউ গাণিতিক সমস্যা কিংবা কোনো হিসাব-নিকাশের কথা বলে, তখন মাথায় আসে মাইক্রোসফট এক্সেল এর নাম। সবার দৈনন্দিন জীবনের নানা ক্ষেত্রে এর ব্যবহার রয়েছে। এক্সেলের কাজ শেখার মাধ্যমে বিল প্রদানের হিসাব, হাতখরচের হিসাব ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। কেননা এটি আপনাদের খরচ গ্রাফ এবং চার্টের মাধ্যমে দেখায়। কমার্সের স্টুডেন্টদের এক্সেলের কাজ অবশ্যই শিখা উচিত।
প্রেজেন্টেশনে দক্ষতা
প্রেজেন্টেশন হলো একধরণের ব্যবহারিক দক্ষতা, যা ক্লাসে প্রদর্শিত হয়। Google Slide এবং Microsoft Powerpoint দ্বারা খুব সহজেই প্রেজেন্টেশন তৈরি করা যায়। তবে গুগল স্লাইডের চেয়ে পাওয়ার পয়েন্টে বেশি টুলস ও বৈচিত্র্যতা রয়েছে। প্রেজেন্টেশনের ক্ষমতা স্লাইডের প্যাটার্ন এবং রঙ, ছবি, এনিমেশন এবং ফন্টের উপর নির্ভর করে। তবে অফিসের প্রেজেন্টেশনের ধরণ আর ভার্সিটির প্রেজেন্টেশনের ধরণ কিন্তু এক হবে না! কম্পিউটারের মাধ্যমে খুব সহজেই প্রেজেন্টেশন স্কিলস বাড়ানো যায়।
গ্রাফিক্স ডিজাইনিং
অনেকের কাছেই মনে হতে পারে যে, ছবি সম্পাদনা বা ছবি আঁকা, আমাদের জীবনে তেমন একটা কাজে আসে না। এগুলো কোনো গুরুত্বপূর্ণ স্কিলও না। কিন্তু আসল ব্যাপার হলো যে, আপনারা আপনাদের চারপাশে যা দেখেন, সবই হলো বিজ্ঞান এবং ছবির মিশেল। তাই কলেজ জীবনে শিক্ষার্থীদের উচিত নিজেদের ছোটবেলার প্রতিভাগুলো জাগিয়ে তোলা। আর এগুলো করা যাবে ছবি সম্পাদনা, গ্রাফিক্স ডিজাইনিং এবং অ্যানিমেশন তৈরির সফটওয়্যার যেমন: এডোবি ফটোশপ, এডোবি ইলাস্ট্রেটর এর মাধ্যমে।
এগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে সৃজনশীল প্রতিভার বিকাশ ঘটে। সেই সাথে ক্যারিয়ার গঠনের বিভিন্ন পথ খুলে যায়। আমাদের জীবনে ফটোশপের নানা ব্যবহার রয়েছে। যা ক্যারিয়ার তৈরি ছাড়াও পার্টটাইম চাকরি খুঁজে পাওয়ার সহায়ক। যদি এই সফটওয়্যারগুলো না থাকে, তবে এমনি অনেক বিনামূল্যের এডিটিং সফটওয়্যার এবং টুল পাওয়া যায়। এই দক্ষতা অর্জন করলে নিজের ফেসবুকের ছবিগুলোও হয়ে উঠবে অন্য সবার চেয়ে আকর্ষণীয়। এমনকি প্রেজেন্টেশনেও এই স্কিল কাজে আসবে।
বেসিক কম্পিউটার হার্ডওয়্যার
কম্পিউটার এবং মোবাইল ঠিক করা জীবনেরই একটা অংশ। কম্পিউটার বা ফোনের কোনো পার্টস নষ্ট হয়ে গেলে, সেটা ঠিক করার অন্তত বেসিক উপায়টা শেখা জরুরি। শিক্ষার্থীদের জানা উচিত কিভাবে সফটওয়্যার কিনতে হয় এবং ব্যবহার করতে হয়। এছাড়াও পিসি কিভাবে পরিষ্কার রাখতে হয় এবং ভাইরাসমুক্ত রাখা যায় সেটাও জানতে হবে। এছাড়াও র্যাম, হার্ডডিস্ক, বেসিক ইনপুট এবং আউটপুট ডিভাইস সম্পর্কেও ধারণা রাখা প্রয়োজন।
এসব টুকটাক কাজ নিজেরা জানলে দোকানে ছোটা লাগবে না। টাকাও বেঁচে যাবে। আর ওই বেঁচে যাওয়া টাকা দিয়ে চাইলেই পছন্দমত বই কিনে ফেলা যাবে কিংবা অনলাইনে একটা কোর্স করে ফেলা যাবে।
ইন্টারনেট রিসার্চ এবং অনলাইন লার্নিং স্কিলস
রিসার্চ অর্থ খোঁজা। কোনো অজানা রহস্যের সমাধান করা। যেমন: কেন এইটা হয়? কী জন্য হয়? এটা হলে লাভটা কী? রিসার্চ মানে এই না যে, এসাইনমেন্টের জন্য ডাটা কালেক্ট করা। রিসার্চ অর্থ সত্য উদঘাটন করাও বটে! রিসার্চ তখনই করা লাগে, যখন কেউ কোনো সমস্যার সমাধান খোঁজে । কোনো প্রজেক্ট তৈরি করার জন্যেও রিসার্চ করা লাগে।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আমরা সবাই জানি চেষ্টা ছাড়া কোনো কাজে সফল হওয়া যায় না। এটা রিসার্চের মাধ্যমেই বোঝা গেছে। তবে আসলেই তা সত্যি কিনা, তা জানার জন্য নিজেকেই পরীক্ষা করে দেখতে হবে। কেউ হয়তো কোনো বিষয়ে ভাল না, সে যদি ওই বিষয়ে ভাল হওয়ার চেষ্টা করে, তাহলেই সে দেখবে কয়েক সপ্তাহ পর সে ওই বিষয়ে পটু হয়ে উঠেছে।
রিসার্চ শুধু ডাক্তার, প্রফেসর কিংবা বিজ্ঞানীরা করেন না, অন্যান্য মানুষও করতে পারে। তবে এর জন্য কিছু দক্ষতার দরকার। কম্পিউটারের মাধ্যমে অনলাইনে খুব সহজেই তথ্য পাওয়া যায়।
ডাটা ম্যানেজমেন্ট, প্রাইভেসি সিকিউরিটি স্কিলস
ডাটা ম্যানেজকে একটু পরিশ্রম সাপেক্ষ এবং ভারযুক্ত কাজ বলা যায়। হোয়াটস অ্যাপের মেসেজ ডিলিট করা, ডেস্কটপ, মোবাইল, পেনড্রাইভের ডাটা, মোবাইলে রাখা ছবি, ডকুমেন্ট সব গুছিয়ে রাখার জন্য অনেক কাজ করার দরকার হয়। সময় ও পরিশ্রম দুইটাই বেশি খরচ হয় এই কাজ দুইটা করতে গিয়ে, এগুলো ঠিক করে রাখতে, ডিলিট এবং আপ্লোড করতে। যদি শিক্ষার্থীরা বেসিক ডাটা ম্যানেজমেন্টের বিষয়টি আয়ত্তে আনে, তাহলে তা তাদের খুব উপকারে আসবে এবং দুশ্চিন্তা মুক্ত রাখবে। কেননা তখন আর তথ্য হারিয়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না।
শিক্ষার্থীরা চাইলে গুগল বা মাইক্রোসফটের ফ্রি ক্লাউড ব্যবহার করতে পারে। কোনো ডাটা যদি ১৫ জিবির বেশি হয়, তখন তাকে নির্দিষ্ট পরিমাণের অর্থ দিতে হবে। আর এই যুগের শিক্ষার্থীরা সবাই তাদের ফোন ও পিসিতে নানান তথ্য সংরক্ষণ করছে। তাই এই বেসিক ডাটা ম্যানেজমেন্ট শেখা খুবই জরুরি।
সোশ্যাল মিডিয়া স্কিলস
সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েবসাইট এবং অ্যাপগুলো সবসময় মানুষের চেয়েও বেশি এক্টিভ থাকে! তবে এগুলো ব্যবহার করতে চাইলে খুব বেশি অর্থের প্রয়োজন হয় না। তাই শিক্ষার্থীরা প্রায় সবাই এগুলো ব্যবহার করে থাকে। পড়াশোনা ছাড়া শিক্ষার্থীদের তেমন একটা কাজ থাকে না। তাই তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘন্টার পর ঘন্টা সময় কাটায় এবং ধীরে ধীরে তারা এর প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। তাই সোশ্যাল মিডিয়া সাইটগুলো ব্যবহারের স্কিল এবং মেথডগুলো জানা জরুরি।
ডিজিটাল কমিউনিকেশন স্কিলস
প্রায় সবাই হোয়াটস অ্যাপ, ইমেইলসহ বিভিন্ন চ্যাটিং অ্যাপ ব্যবহার করেন। তাই শিক্ষার্থীদের এই সব সোশ্যাল মিডিয়া সাইটের সঠিক ব্যবহার জানা জরুরি। এগুলোই হলো সেই ১০টি দক্ষতা, যা কলেজ জীবনে জানা খুবই জরুরি। দৈনিক এক ঘন্টা এগুলোর পেছনে সময় দিলে খুব সহজেই এগুলো আয়ত্তে আনা সম্ভব। এগুলো অনলাইনে তো শেখা যাবেই, এর পাশাপাশি কোনো প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গিয়েও শেখা যাবে।