কিছু মনস্তাত্তিক বিষয় আছে যেগুলো অবচেতন মনে কাজ করে। এগুলো জানা থাকলে মানুষের সাথে ব্যবহারের ক্ষেত্রে আপনি আরও বেশি যোগ্য হয়ে উঠবেন। কর্মক্ষেত্রে, শিক্ষাক্ষেত্রে কিংবা সামাজিক-পারিবারিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও আপনার ব্যবহার হবে অনেক সাবলিল, অনেক স্মার্ট। সহজেই অন্যদের থেকে ইতিবাচক সাড়া পাবেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক সফলতা মানুষের সাথে ভালো যোগাযোগ করতে পারা এবং তাদের থেকে ইতিবাচক সাড়া আদায় করে নিতে পারার উপর নির্ভর করে। আজ আমরা এমনই কিছু পরামর্শ দিব যেগুলো অন্যদের নিকট বিশ্বাসযোগ্য হতে, এমনকি চাপের সময় মানসিকভাবে চাপমুক্ত হতে সাহায্য করবে। তেমনই কিছু মনস্তাত্তিক বিষয় জেনে নিন-
১. যখন অনেক মানুষ একসাথে কোন বিষয়ে হাসে তখন মানুষ তার দিকেই বেশি তাকাবে যাকে সে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করে
ভালো কোন জোকস্ শোনার পর কিংবা মজার কোনো বিষয় আলোচনা করতে গেলে প্রত্যেকেই অবচেতনভাবে তাদের পছন্দের মানুষের দিকেই বেশি তাকাবে। তাই একদল বন্ধু সম্পর্কে ধারণা নিতে চাইলে কিছু ভালো জোকস্ প্রস্তুত রাখুন, যাতে সুযোগ বুঝে বলতে পারেন। ধরুন, আপনার সম্পর্কে কারো ধারণা অনুমান করতে চান। সেক্ষেত্রে একসাথে আড্ডা দেয়ার সময় জোকস বলে সবাইকে হাসান এবং সেই বিশেষ মানুষটির দিকে লক্ষ্য রাখুন। তাহলেই পছন্দ-অপছন্দের বিষয়টা অনুমান করতে পারবেন।
২. মানসিক চাপে থাকলে কিছু চিবাতে পারেন
অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা, বক্তৃতার আগে বিব্রত কিংবা নার্ভাস হয়ে যায়। এরকম সমস্যা যাদের আছে তাদের জন্য তার আগে চুইংগাম চিবানো কিংবা কিছু খাওয়া খুব ভালো কাজে দেয়। বিপদের মাঝে কেউ সাধারণত কিছু খায় না। তাই চুইংগাম চিবানোর ফলে আমাদের ব্রেন অনেকটাই রিলাক্সাড থাকে, নিরাপত্তাবোধ কাজ করে। ব্রেন ইতিবাচক সংকেত পাঠায় ফলে দুশ্চিন্তা আপনাতেই কমে আসে।
৩. কারো সাথে কথা বলার সময় স্থির দৃষ্টিতে মুখের দিকে তাকিয়ে কথা বলুন
কারো কাছ থেকে পাওয়া উত্তরে যদি আপনি সন্তুষ্ট না হন অথবা যদি মনে করেন সে আপনাকে কিছুই বলবে না, তাহলে স্রেফ তার দিকে অপলক তাকিয়ে থাকুন। তার শারীরিক অঙ্গভঙ্গি থেকে আপনি অনেক তথ্য পেয়ে যাবেন। এমন মুহূর্তে নিরবতাও অনেক কিছু বলে দেয়। মানুষের মুখের ভাষা ছাড়াও শারীরিক ভাষায় অনেক কিছু প্রকাশ পায়। চোখে চোখ রেখে কথা বললে অনেক কিছুই জানতে ও বুঝতে পারবেন।
৪. কল্পনা করুন আপনার ভবিষ্যত বস একজন ভালো ও বন্ধুভাবাপন্ন মানুষ হবেন
চাকরির সাক্ষাৎকারের সময় কল্পনা করুন আপনার ভাইভা যিনি নিচ্ছেন তিনি একজন সজ্জন মানুষ এবং ভবিষ্যতে তার কাছ থেকে বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহার পাবেন। এই চিন্তা আপনাকে দুশ্চিন্তামুক্ত করবে। ফলে অনেক নিশ্চিন্তে ও আত্মবিশ্বাসের সাথে ভাইভা বোর্ডের মুখোমুখি হতে পারবেন। ভাইভাতে নার্ভাস হয়ে গেলে চাকরি পাবার সম্ভাবনা অনেকাংশেই কমে যাবে। তাই সবসময় চেষ্টা করতে হবে যেন ভাইভাতে ধীর, স্থির ও আত্মবিশ্বাসের সাথে প্রবেশ করতে পারেন। এই ইতিবাচক চিন্তা আপনাকে অনেকের চেয়ে এগিয়ে রাখবে।
৫. যদি আপনাকে বিভিন্ন ধরনের অনেক মানুষের সাথে কাজ করতে হয় তাহলে পেছনে একটি আয়না রাখুন
যদি কর্মক্ষেত্রে আপনাকে অনেক মানুষের সাথে কথা বলতে হয়, আপনার পেছনে একটি আয়না রাখুন। দেখে অবাক হবেন যে এরপর যারাই আপনার সাথে কথা বলতে আসবে তাদের ব্যবহার তুলনামূলকভাবে অনেক ভদ্র হয়ে যাবে। কারণ কেউই নিজেকে বিরক্ত, রাগান্বিত দেখতে চায় না। এই বিষয়টা বেশ ভালোই কাজে দেবে। কারণ কেউ আপনার সাথে বিরক্ত হয়ে কথা বললে বা রাগান্বিত হলে আপনার মতামত, প্রস্তাবের প্রতিও তার নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থাকবে। এই নেতিবাচক মনোভাবকে যদি ইতিবাচক দিকে ফিরিয়ে দিতে পারেন তাহলে আপনার কাজ করাটা অনেক বেশি সহজ হয়ে যাবে।
৬. যদি মনে হয় কেউ আপনার দিকে তাকিয়ে আছে তাহলে হাই তুলুন
অনেক সময়ই অন্যের আচরণ সম্পর্কে ধারণা করতে এই টিপসটি কাজে দেবে। যদি বুঝতে চান কেউ আপনার দিকে তাকিয়ে আছে কিনা তাহলে হাই তুলুন এবং সতর্কভাবে চারদিকে তাকিয়ে দেখুন। যে লোকটি আপনাকে দেখছিলো খুব সম্ভব সেই লোকটিও হাই তুলবে। কেউ যদি আপনার দিকে বারবার তাকায় তাহলে বুঝতে হবে আপনার বিষয়ে তার কোনো আগ্রহ আছে। কিংবা কোনো কারণে সে আপনাকে দৃষ্টি দিয়ে অনুসরণ করছে।
৭. ঝগড়া থামাতে চাইলে ঝগড়াকারী দুইজনের মাঝখানে কোন খাবার নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ুন
একে বলে ‘snackman effect’। খাওয়া মানুষকে উদ্বেগ এবং উৎকণ্ঠামুক্ত করে এবং শান্ত হতে সাহায্য করে। খাওয়ায় ব্যস্ত মানুষকে অন্য কেউ আক্রমণের সম্ভাবনা অনেক কম। তাই ঝগড়া তাড়াতাড়ি থেমে যায়। তাই কাউকে ঝগড়া করতে দেখলে তাদের মাঝে দাঁড়িয়ে যান। অনেক সহজেই তাদের উগ্রতা কমে আসবে।
৮. কারো সাথে সহজে বন্ধুত্ব করতে চাইলে, তার কাছে কিছু সহযোগিতা চান
কারো সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরি করতে গেলে প্রাথমিক এপ্রোচটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কাউকে সহযোগিতা করে বা সহযোগিতা চেয়ে প্রাথমিক যোগাযোগ শুরু করাটা এক্ষেত্রে বেশি সুবিধাজনক। সহযোগিতাটি হতে পারে খুবই সহজ যেমন পানির গ্লাস এগিয়ে দেয়া, কলম দেওয়া কিংবা অন্য কোন ছোট্ট সহযোগিতা।
৯. গুরুত্বপূর্ণ মিটিংগুলো দিনের শুরুতে বা একদম দিনশেষে রাখুন
দিনের শুরুতে এবং শেষে করা কাজগুলো মানুষ সবচেয়ে বেশি মনে রাখতে পারে। মাঝখানের কিছু তেমন স্পষ্ট মনে থাকে না। তাই দিনের শুরুতে বা শেষে গুরুত্বপূর্ণ মিটিংগুলো আয়োজন করুন। যদি চাকরির ইন্টারভিউয়ে যান তাহলে চেষ্টা করুন প্রথম অথবা শেষ প্রার্থী হতে। এক্ষেত্রে আপনি সবার শেষে বা শুরুতে থাকলে নির্বাচকদের অবচেতনে কিছু বেশি গুরুত্ব পাবেন।
১০. কারো সাথে কথা বলার সময় তার পায়ের পাতা কোন দিকে আছে খেয়াল করুন
যাদের সাথে কথা বলবেন তাদের মনোভাব বোঝার জন্য তাদের পায়ের পাতার দিক আপনাকে সহযোগিতা করবে। যখন আপনি তাদের কাছে আসবেন তখন যদি তাদের দেহ আপনার দিকে ঘুরে যায় কিন্তু পায়ের পাতা অন্যদিকে ঘোরানো থাকে তাহলে বুঝতে হবে তিনি সে হয়তো আপনাকে পছন্দ করে না। কিংবা তেমন একটা গুরুত্ব দেয় না। যদি তাদের দুই পায়ের দিক দুই দিকে ঘোরানো থাকে তাহলে বুঝবেন তারা চলে যেতে চাইছে।
Feature Image -quatangme