প্রযুক্তির কল্যাণে পৃথিবী এখন হাতের মুঠোয়। এই কথার সত্যতা প্রমাণ করে দেয় ‘মোবাইল ফোন’ বা ‘সেলুলার ফোন’। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সাথী এখন এই ‘মোবাইল ফোন’ । যুগের সাথে তাল মেলাতে মোবাইল ফোনেও এসেছে বৈচিত্র্যতা। বর্তমানে ফিচার ফোনকে পেছনে ফেলে জায়গা দখল করে নিয়েছে স্মার্ট ফোন। যাকে বলা যায় একের ভেতর সব। এক ফোনেই বার্তালাপের পাশাপাশি থাকে গান শোনা, বই পড়া, গেইম খেলা ছাড়াও বিভিন্ন সুব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু মোবাইল ফোন কেনার আগে বা স্মার্ট ফোন পছন্দের ক্ষেত্রে আমাদের প্রায় সকলেরই প্রথম শর্ত থাকে – ব্যাটারি লাইফ। স্মার্ট ফোনের রকমারি এপস আর ফিচারের কারণে ফোনের চার্জ খুব দ্রুত কমতে থাকে ।
দূরপাল্লার যাত্রায় হুট করে চার্জ শেষ হয়ে ফোন অফ হয়ে যাওয়া কিংবা তাড়াহুড়ো করে বের হতে গিয়ে ভুলে চার্জার ফেলে আসা ফলস্বরূপ প্রয়োজনের সময় ফোন অফ হয়ে যাওয়া, এসব বিড়ম্বনা থেকে রক্ষা পেতে আজকে আমরা আলোচনা করব ১০ টি টিপস এবং ট্রিকস নিয়ে যা ফোনের চার্জ ধরে রাখতে সাহায্য করবে লম্বা সময়ের জন্য।
১. চার্জিং পোর্ট পরিষ্কার রাখা
ফোন পরিষ্কার রাখা বলতে আমরা বুঝি কেবল স্ক্রিন বা ডিসপ্লে পরিষ্কার রাখা। কিন্তু এটা কি জানি, চার্জিং পোর্ট পরিষ্কার রাখাও গুরুত্বপূর্ণ? ফোন পকেটে কিংবা ব্যাগে থাকতে থাকতে চার্জিং পোর্টে ঢুকে পড়তে পারে বিভিন্ন ধূলাবালি।
টুথপিক বা কটনবার দিয়ে আমরা সহজে চার্জিং পোর্ট পরিষ্কার রাখতে পারি। এতে করে চার্জিং এ কোনো সমস্যা দেখা যাবে না।
২. উজ্জ্বল ওয়ালপেপার ব্যবহার হতে বিরত থাকা
আমরা অনেকেই ফোনে বিভিন্ন রংচঙে বা উজ্জ্বল ওয়ালপেপার ব্যবহার করতে ভালবাসি। শুধুমাত্র সময় দেখা, মিসড কল বা টেক্সট দেখার জন্য উজ্জ্বল ওয়ালপেপার ব্যবহার না করাই শ্রেয়। কারণ উজ্জ্বলতা খুব দ্রুত চার্জ নষ্ট করে।
তাই অনুজ্জ্বল বা সাদা-কালো ওয়ালপেপার ব্যবহার করা উচিত।
৩. ফোন হাতে নয়, রাখুন ব্যাগ/পকেটে
আমরা অনেক সময় ফোন হাতে নিয়ে ঘুরতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। কিন্তু গ্রীষ্ম বা গরমকালে ফোন হাতে রাখা উচিত নয়। গরম আবহাওয়া ফোনের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে আর সেই সাথে ফোন হাতে থাকলে আমাদের শরীরের তাপমাত্রার কারণে ফোনের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় দ্বিগুণ হারে ।
এতে ফোনের ব্যাটারি ব্যাকাপ কমতে থাকে। তাই ফোন বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া হাতে রাখা উচিত নয়।
৪. অটো রোটেশন ফাংশন বন্ধ রাখুন
যেকোনো স্মার্ট ফোনের একটি সাধারণ অপশন ‘অটো রোটেট’। অটো রোটেশন অপশনটি আমরা সাধারণত ফোনের নোটিফিকেশন প্যানেলেই দেখতে পাই। এই অপশনের কাজ ফোনের ডিসপ্লে আমাদের সুবিধা অনুযায়ী রোটেট করে দেওয়া।
অপশনটি একটি স্পেশাল সেন্সর ‘একসিলরোমিটার’ এর সাহায্যে কাজ করে যা অতিরিক্ত শক্তি অপচয় করে। এই অপশনটি তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয় বলে এটি টার্ন অফ করে রাখলে ব্যাটারির ক্ষয় কিছুটা কমবে।
৫. ব্যাকগ্রাউন্ড এপ্লিকেশন ক্লিয়ার করা
স্মার্ট ফোনগুলোতে একসাথে দুই বা ততোধিক এপ একের পর এক চালানোর সুবিধা রয়েছে। কিছু ফোনে ফিচার হিসেবে যোগ করা আছে মাল্টি উইন্ডো যা এক স্ক্রিনেই দুটো এপ্লিকেশন চালাতে সক্ষম। বিভিন্ন এপ্লিকেশন চালানো শেষে আমরা শুধুমাত্র শেষ চালানো এপ্লিকেশন টি বন্ধ করেই ফোন লক করে ফেলি। কিন্তু ব্যাকগ্রাউন্ড এপ্লিকেশন হিসেবে ফোনে চলতে থাকে আমাদের আগের ব্যবহৃত এপ্লিকেশনগুলো।
ধরি, আমরা প্রথমে ফোন থেকে ফেসবুক ওপেন করলাম। ফেসবুক এপ্লিকেশনটি শুধু মাত্র সাময়িকভাবে বন্ধ করেই আমরা ওপেন করলাম ইন্সটাগ্রাম বা হোয়াটস অ্যাপ। এক্ষেত্রে ফেসবুক ব্যাকগ্রাউন্ড এপ্লিকেশন হিসেবে চালু আছে এবং তার কার্যক্রম আপডেট হচ্ছে। এবার যদি ইন্সটাগ্রাম বা হোয়াটস অ্যাপ ব্যবহার শেষে অন্য অ্যাপ ওপেন করি সেক্ষেত্রে ফেসবুকের সাথে সাথে ইন্সটাগ্রাম বা হোয়াটস অ্যাপ ও ব্যাকগ্রাউন্ড এপ্লিকেশনের তালিকায় যোগ হবে। তাই ব্যবহার শেষে সবগুলো রিসেন্ট অ্যাপ উইন্ডো বন্ধ করে ফোন লক করে দেওয়া উচিত। এতে ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপের জন্য ব্যাটারি নষ্ট হবে না।
৬. ফোনের উজ্জ্বলতা কমানো
যেকোনো ফোনেই ডিসপ্লের উজ্জ্বলতা কমানো বা বাড়ানোর অপশন থাকে। ‘ব্রাইটনেস’ অপশনটি সেটিংস বা নোটিফিকেশন প্যানেলেই থাকে। অতিরিক্ত উজ্জ্বলতা ফোনের ব্যাটারি ক্ষয় করে খুব দ্রুত। তাই ব্রাইটনেস কমিয়ে রাখা চার্জ ধরে রাখার একটি উপায়।
৭. ভাইব্রেশন ফাংশন বন্ধ রাখুন
আমরা অনেক সময় ফোনের রিংটোন হিসেবে ভাইব্রেশন অপশনটি ব্যবহার করে থাকি। এতে শব্দ কান পর্যন্ত না পৌছালেও ফোনের ক্রমাগত ভাইব্রেশন আমাদের জানান দেয় বিভিন্ন এক্টিভিটি সম্পর্কে।
কিন্তু ফোনের এই ভাইব্রেশন ব্যাটারি লাইফ কমিয়ে দেয় দ্রুত। তাই খুব প্রয়োজন ছাড়া ভাইব্রেশন অপশন ব্যবহার করা উচিত নয়। অপশনটি টার্ন অফ করে শুধু মাত্র সাউন্ড অপশন অন করে রাখতে পারি।
৮. স্ক্রিন টাইম আউট সেট করা
স্ক্রিন টাইম আউট এমন একটি অপশন যা ফোন অটো লক করে দেয় একটি নির্দিষ্ট সময় পর। বিভিন্ন সময় তাড়াহুড়োতে আমরা ফোন ওপেন রেখেই অন্য কাজ করি।
এক্ষেত্রে স্ক্রিন টাইম আউট সেট করা থাকলে ফোন অটো স্ক্রিন লক হয়ে যাবে। স্ক্রিন টাইম আউটটি সবচেয়ে কম সময়ের জন্য সেট করা উচিত, এতে বেশী সময় ডিসপ্লে অন থাকবে না ফলে ব্যাটারি অপচয় কমবে।
৯. জিপিএস,ব্লুটুথ এবং ওয়াইফাই অপশন বন্ধ রাখা
প্রয়োজন ছাড়া জিপিএস, ব্লুটুথ কিংবা ওয়াইফাই অপশন চালু রাখা উচিত নয়। কেননা এগুলো অন থাকা অবস্থায় অযথাই চার্জ নষ্ট করতে থাকে। শুধুমাত্র প্রয়োজনে এসব অপশন অন রাখা উচিত।
১০. ফোন বন্ধ রাখা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্যঃ
ক্রমাগত ফোন ব্যবহার উচিত নয়। মাঝে মাঝে কিছু সময়ের জন্য ফোন বন্ধ রেখে ব্যাটারি বা হার্ডওয়্যারকে বিশ্রাম দেওয়া উচিত। রাতে ঘুমানোর সময় ফোন অফ করে যদি পরবর্তী দিন ব্যবহার করি তাতে ব্যাটারি ঠান্ডা হওয়ার সময় পাবে এবং কর্মক্ষমতা ও বৃদ্ধি পাবে।