এখন চলছে ভ্রমণের মৌসুম। তাই আপনিও চাইলে ঝটপট করে আপনার ব্যাগটি গুছিয়ে দূরে কোথাও ঘুরে আসতে পারেন। ভ্রমণের সময় ব্যাগ গুছানো অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কেননা বেশী বড় ব্যাগ হলে তা আপনার ভ্রমণে বাঁধা সৃষ্টি করবে। আবার সময়মত দরকারী জিনিস হাতের কাছে না পেলে তা ভ্রমণের আনন্দে বিঘ্ন ঘটাবে। জেনে নিন কীভাবে খুব সহজেই আপনি ভ্রমণের আগে আপনার ব্যাগটি গুছিয়ে নিতে পারেন।
১. ভ্রমণে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোর একটি লিস্ট তৈরী করে ফেলুন
আপনার ভ্রমণে যে জিনিসগুলো অত্যাবশ্যক যেমন: কাপড়, জুতা, সাবান, শ্যাম্পু, টুথপেস্ট, টুথব্রাশ, ম্যাপ, গাইডবুক, হোটেল এবং গাড়ির তথ্য। আমরা অনেক সময় অনেক দরকারী জিনিস নিতে ভুলে যাই। যেমন: সানগ্লাস, সান্স ক্রিম, টুপি। এগুলো আলাদা করে লিস্টে রাখতে হবে। ভ্রমণে যাবার পূর্বে অবশ্যই সেখানকার আবহাওয়া এবং তাপমাত্রা সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে যাওয়া উচিত। সেই অনুসারে তাপমাত্রা কম থাকলে গরম কাপড় অথবা বেশী থাকলে হাল্কা কাপড়-চোপড় নিয়ে যাওয়া উচিত।
২. কোনদিন কোন পোশাক পরিধান করবেন তা আগে থেকে ভেবে রাখুন
একই ধরনের পোশাক অনেকগুলো না নিয়ে পোশাকের লিস্টে বৈচিত্র্য আনুন। যেমন: তাপমাত্রা কম, তাই গরম পোশাক বেশী নিতে হবে। এক্ষেত্রে শুধু কোট না নিয়ে জ্যাকেট, কার্ডিগান, সোয়েটার বিভিন্ন ধরনের পোশাক নিতে পারেন। ভ্রমণে কাপড় ধোয়ার মতো সময় অনেক ক্ষেত্রে পাওয়া যায় না। এজন্য ময়লা কাপড় পৃথক করার জন্য আপনি কিছু প্লাস্টিক ব্যাগ সাথে নিতে পারেন।
৩. ট্রাভেল সাইজ জার কিনে নিন আপনার প্রসাধনী সামগ্রীর জন্য
সাধারণত ভ্রমণকাল খুব দীর্ঘমেয়াদী হয় না। কিন্তু আমরা যে প্রসাধনী সামগ্রীগুলো কিনে থাকি দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহারের জন্য, সেগুলো মাসব্যপী ব্যবহারের জন্য হয়ে থাকে। তাই অহেতুক পুরো বোতল না নিয়ে আমরা যে কয়দিন থাকবেন সে কয়দিনের জন্য প্রসাধনীগুলো ট্রাভেল সাইজ জারে ভরে নিতে পারেন। এতে ব্যাগে কিছু জায়গা খালি হবে। প্রসাধনী সামগ্রী ব্যাগে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখলে আপনার সব পোশাক নষ্ট করতে পারে। তাই প্রসাধনী সামগ্রী গোছানো হয়ে গেলে তা অবশ্যই আলাদা কোনো প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে নিতে হবে।
৪. ব্যাগ গোছানোর পূর্বে অবশ্যই তা খালি করে নিন
অনেক সময় আমরা অন্যের ব্যাগ ব্যবহার করি। তাই ব্যাগ গোছানোর পূর্বে তা সম্পূর্ণ খালি করে চেক করে নিতে হবে। কেননা পরবর্তীদের বিদেশ ভ্রমণের সময় আপনার ব্যাগ যখন কাস্টমসে চেক হবে তখন সেটার দায়ভার সম্পূর্ণ আপনার উপর।
৫. ভারী জিনিসগুলো ব্যাগের নিচের অংশে রাখুন
রোলিং ব্যাগের ক্ষেত্রে ভারী জিনিস নিচে রাখলে তা বহন করতে অনেক সহজ হয়। এছাড়া ব্যাগ গোছানো হয়ে গেলে একবার আপনার লিস্ট ভালো করে দেখে নিন যাতে কোনো গুরুত্বপূর্ণ জিনিস শেষ মুহূর্তে বাদ না পড়ে অথবা দরকারী জিনিস খোঁজার জন্য পুরো ব্যাগ উলটপালট না করতে হয়।
৬. কাপড় চাইলে রোল করে নিতে পারেন
আপনি যদি ব্যাগে বেশী জায়গা করতে চান তাহলে খুব সহজেই রোল টেকনিক অনুসরণ করে কাপড় ব্যাগে গুছিয়ে নিতে পারেন। এতে আপনার ব্যাগে অনেক বেশী কাপড়ের জায়গা হবে। রোল করে নেওয়ার কারণে কাপড় যদি ভাঁজ হয়ে যায় তাহলে চিন্তা না করে হোটেলের লন্ড্রি থেকে ইস্ত্রি করে নিতে পারেন।
৭. মূল্যবান গহনার জন্য বিশেষ জায়গা
আপনার মূল্যবান গহনা অথবা যেকোনো সম্পদ আপনি মোজার ভেতর ভরে সেটি জুতোর ভেতর রেখে দিতে পারেন। মূল্যবান গহনার পাশাপাশি জুতোর ভিতর আপনি নিরাপত্তার স্বার্থে অতিরিক্ত অর্থও রাখতে পারেন। এতে আপনার জিনিস নিরাপদ এবং সুরক্ষিত থাকবে। জুতোর ভিতরের জায়গা আপনার গহনা এবং অর্থ যেমন নিরাপদ রাখবে তেমনি জুতোর ভিতর জায়গাটারও যথাযথ ব্যবহার হবে।
৮. কিছু শুকনো খাবার এবং পানি সাথে রাখুন
যাত্রাকাল দীর্ঘ হলে অনেক সময় খুব ক্ষুধা লাগে। তাই ব্যাগে কিছু শুকনো খাবার যেমন: চিপস, কেক, বিস্কুট রাখতে পারেন। এছাড়া অজানা অচেনা জায়গা থেকে পানি পান করবেন না। তাই নিজের জন্য আলাদা বোতলে পানি রাখুন।
৯. বিনোদনের জিনিসও সাথে রাখুন
যাত্রাকাল দীর্ঘ হলে আপনার একঘেয়েমি দূর করতে সাথে গল্পের বই, খেলার জন্য সুডোকু, কার্ড সাথে রাখতে পারেন। এতে আপনার সময় তাড়াতাড়ি পার হয়ে যাবে। এছাড়া আপনি যদি ল্যাপটপ সাথে নেন তাহলে ল্যাপটপে কিছু নতুন গান এবং মুভি রেখে দিতে পারেন। এতে আপনার অনায়াসে দুই-তিন ঘণ্টা পার হয়ে যাবে।
১০. প্রয়োজনীয় জিনিস হাতের কাছে রাখুন
সবসময় ছোট একটি ব্যাগ বহন করুন। এটি সবসময় হাতের কাছে রাখবেন। তাতে দরকারী জিনিস যেমন: পাসপোর্ট, টিকিট, ঔষধ- এগুলো হাতের কাছে রাখুন যাতে প্রয়োজনে তাড়াতাড়ি কাজে লাগাতে পারেন। এইসব দরকারী জিনিস কখনোই বড় স্যুটকেস বা ব্যাগে রাখবেন না। তাহলে তা প্রয়োজনের সময়ে পাবেন না।
ভ্রমণ সবসময়ই আনন্দের। এটি আপনার জীবনের একঘেয়েমি দূর করতে সাহায্য করে এবং আপনার জীবনে সতেজ ভাব নিয়ে আসে। তাই ভ্রমণের সময় কখনোই নিজের উপর অনেক বেশি চাপ নিবেন না। আপনার ভ্রমণ সুন্দর করার জন্য আপনি বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সির সাহায্য নিতে পারেন অথবা রিভিউ দেখে আপনি বিভিন্ন হোটেল, রেস্টুরেন্টের বুকিং নিজেই দিতে পারেন।