বর্তমান সময়ে যে কোনো সফল প্রতিষ্ঠানের প্রাণশক্তি হলো উদ্ভাবন। তবে অনেক প্রতিষ্ঠানেই উদ্ভাবনী ধারণা অনুসরণের ক্ষেত্রে একটি মূল উপাদান অনুপস্থিত, তা হলো সৃজনশীলতা (যা সাধারণত পেশাদার ব্যবসায়ীদের সাথে সংস্পৃষ্ট নয়)। নিজের মনকে বিকশিত করে ব্যবসায়িক দক্ষতাকে নতুন এবং অর্থপূর্ণভাবে উন্নীত করার একমাত্র উপায় নিজস্ব সৃজনশীলতার বিকাশ, যা আপনার পুরো প্রতিষ্ঠানের উপকারে আসতে পারে। কর্মক্ষেত্রে আপনার সৃজনশীলতা বিকাশের জন্য ১০টি পরামর্শ এখানে দেওয়া হলো-
১. কল্পনা-সংক্রান্ত হওয়া
সকলের জন্যই নিজ দলের চিন্তাশক্তি বৃদ্ধি করার একটি অত্যন্ত কার্যকর উপায় হলো ধারণা এবং উপাত্ত সমূহকে কল্পনায় দৃষ্টিগোচর করা। নিজেদের মোবাইল রাখুন, একটি কক্ষে একত্র হোন (ভার্চুয়াল কক্ষ হলেও হবে) এবং নিজেদের হাত ব্যথা না হয়ে যাওয়া পর্যন্ত একটি হোয়াইট-বোর্ড ব্যবহার করুন।গ্রাফ কিংবা ফ্লোচার্ট এর মাধ্যমে ধাপে ধাপে আইডিয়াগুলোকে সাজান।
২. বিধি-বিধান অগ্রাহ্য করুন
এর পরের বার আপনি যখন আপনার সহকর্মীদের সাথে ধারণা চর্চার জন্য একত্র হবেন,”কোনো নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য নয়।” এমন একটি অধিবেশন তৈরি এবং প্রয়োগ করুন। কোনো ক্ষেত্রেই কোনো সীমাবদ্ধতা নেই; কোনো কিছুই সম্ভাব্যতার রাজ্যের বাইরে নয়। ‘কিন্তু’, ‘কিভাবে করবো’ এবং ‘পারবো না’ এই ধরণের বাক্য ও বাক্যাংশগুলো পরিহার করুন। প্রয়োজনমতে একজনকে মনোনীত করুন যে এই ধরণের বাক্যাংশগুলো ব্যবহার না হওয়ার ব্যাপারটি নিশ্চিত করবে।
৩. বিপরীতে চিন্তা করুন
১০-১৫ বছরের মধ্যে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য কিংবা আদর্শ পরিণতি শনাক্ত করুন। সেখান থেকে শুরু করে বিপরীতে চিন্তা করুন। ‘কিভাবে’ সেটা চিন্তা না করে ‘কি’ সেই ব্যাপারে লক্ষ করুন, আপনার রোডম্যাপ নিজে থেকেই উদঘাটিত হয়ে যাবে। প্রতিযোগী কোম্পানিগুলো কি নিয়ে কাজ করছে বা কোনদিকে পদক্ষেপ নিচ্ছে ভেবে দেখুন। কি কি কাজ করে ভবিষ্যতে সেই লক্ষ্যে নিয়ে যেতে পারবেন এবং সবাইকে টেক্কা দিয়ে উপরের দিকে থাকতে পারবেন ভেবে দেখুন। এভাবে সুদূরপ্রসারী চিন্তাভাবনা আপনার চিন্তার গভীরতা বৃদ্ধি করবে এবং সৃজনশীলতা বাড়াবে।
৪. উৎসাহ বৃদ্ধি করুন
নিজেদের পরবর্তী অধিবেশনে একটি খেলার আয়োজনের মাধ্যমে সৃজনশীলতা প্রবাহিত করার সুযোগ করে দিন। সবাই যেকোনো একটি নতুন ধারণা কাগজে লিখুন। কাগজগুলো একত্র করে এলোমেলো ভাবে যে কোনো একটি ধারণা নির্বাচন করে সেই ধারণাটিকে অগ্রসর করুন। অথবা, নিজেদের জায়গা পরিবর্তন করে অপর জনকে জিজ্ঞাসা করুন,”আমার জায়গায় থাকলে আপনি কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করতেন?” কেউ ভালো কোনো আইডিয়া দিলে সেটার প্রশংসা করুন, এটা পরবর্তীতে তাকে আরো ভালো আইডিয়া দিতে উৎসাহী করবে। সব আইডিয়াকে স্বাগত জানান, ভালো না হলেও হেয় বা ছোট করবেন না, তাহলে সবাই অন্তত নিজেদের আইডিয়া শেয়ার করতে সংকোচ করবে না।
৫. একেবারে সবকিছু লিখে ফেলুন
কোনো চিন্তাই খুব ছোট নয় এবং কোনো ধারণাই অসম্ভব নয়। যে কোনো কিছুই আপনার ব্যবসার জন্য সম্ভাবনাসূচক এবং মূল্যবান হয়ে উঠতে পারে। কোনো শব্দ বা বাক্য যে পরের বাক্যকে প্রকাশ করবে, যা হয়তো আপনার পরের বড় ধারণাতে পরিণত হবে তা গণনা করা সম্ভব নয়। তাই সবকিছু লিখে ফেলা উচিত। লেখাগুলোকে কোনো বিশিষ্ট জায়গায় প্রদর্শিত করুন, যেমন কোনো হোয়াইট বোর্ড।
৬. মানসিক বিরতি গ্রহণ করুন
অনেক ব্যবসায়ীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং অন্য বিনোদনকে সময়ের অপচয় হিসাবে দেখেন। অথচ সত্যিকার অর্থে এগুলো মানসিক বিরতি মাত্র। ক্লান্ত এবং উদাস মস্তিষ্কে সৃজনশীলতার বিকাশ কার্যত অসম্ভব। কর্মচারীদের উদ্ভাবনী শক্তির প্রসারণ এবং মনোবল বৃদ্ধির প্রধান উপায় মানসিক বিরতিকে উৎসাহিত করা।
৭. কর্মঠ হওয়া
শারীরিক কার্যকলাপে মনোযোগ দেওয়া স্ব-উদ্ভাবনী শক্তি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে, বিশেষ করে যদি কারো কাজ মূলত চেয়ারে বসা অবস্থায় হয়ে থাকে। বাইরে গিয়ে দৌড়ানো, হাঁটা, সাইকেল চালানো কিংবা যে কার্যকলাপই আপনার জন্য মানানসই তাতে অংশগ্রহণ করুন। এটি আপনার মনকে তাজা করতে সাহায্য করবে এবং পরবর্তীতে আপনি একটি ধারণা কিংবা সমস্যাকে বিশুদ্ধ মস্তিষ্কে মোকাবেলা করতে পারবেন। মাঝপথেও হয়তো অনুপ্রেরণার সঞ্চার হতে পারে।
৮. নিজস্ব দক্ষতার সুব্যবহার
এটি একটি প্রচলিত ভুল ধারণা যে, সৃজনশীলতা শুধুমাত্র তাদের জন্যই যারা নির্দিষ্টভাবে ‘উদ্ভাবনী’ পদে রয়েছেন এবং অন্যরা যারা বিশ্লেষণাত্মক পদে আছেন তারা অতিরিক্ত নিস্তেজ এবং যৌক্তিক। বাস্তবিকপক্ষে যেকোনো দক্ষতাকেই সৃজনশীলভাবে ব্যবহার করা সম্ভব। আপনি এক্সেল ভালো পারেন? আপনার ধারণাগুলোকে একটি স্প্রেডশিটে লিখে শ্রেণীভুক্ত এবং ব্যবচ্ছেদ করে নতুন ধারণার আবির্ভাব দেখুন।
৯. নতুন ধারণার প্রয়োগ
যেকোনো নতুন উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে কঠিন কাজটি (একা কিংবা দলগতভাবে) হলো ধারণার যথার্থ প্রসার। সবচেয়ে সহজ সমাধান? শুধু কথা বলা। অথবা লেখা। সবাইকে বিস্তারিত জানানো, যদি তা প্রথমে পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য হয় তবুও। প্রথম ধাপটুকু পার করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, যেন ধারণাগুলো প্রবাহিত হতে পারে।
১০. আনন্দের একটি ঘন্টা
কফির মগে চুমুক দিতে দিতে ক্লান্ত? একটি ঘন্টা আনন্দে কাটান। বের হয়ে আশে পাশের পার্কে বা কোথাও হেঁটে আসুন, প্রিয় রেস্টুরেন্টে গিয়ে প্রিয় খাবারটি খেয়ে আসুন। খোলা বাতাসে শ্বাস নিন। দেখবেন এমনিতেই দুশ্চিন্তা এবং চাপ কমে গিয়ে মাথা হালকা লাগছে এবং নতুন করে ঠান্ডা মাথায় কোন কিছু সহজেই ভাবতে পারছেন। আবার অনেক সময় আশেপাশের অনেক কিছু দেখেও মাথায় উদ্ভাবনী চিন্তা ভাবনা চলে আসে। পরেরবার যখনই ব্রেইন স্টোর্মিং এর প্রয়োজন হবে, বিরতি নিন, এক ঘন্টা আনন্দে কাটান।