সবার কাছেই নিজের কাজ অনেক কঠিন, কিন্তু এমন অনেক পেশা আছে যেখানে নিজের জীবনেরও ঝুঁকি থাকে। জীবনযাপনের জন্য সবাইকেই বিভিন্ন কাজ করতে হয়। নিজের এবং পরিবারের ভরণপোষণই এই কাজের মূল উদ্দেশ্য। এর জন্য নিজের জীবনকেও বাজি রাখতে দুই সেকেন্ড সময় ভাবি না। সব কিছুর উর্ধ্বে পরিবার এবং আপনজন, তাদের জন্য এই জীবনও।
চলুন দেখে নিই সেই ১১টি ঝুঁকিপূর্ণ কাজ আসলে কতটা ঝুঁকিপূর্ণ।
১. জেলে
অনেকেই হয়তো ভেবে থাকবেন, এই কাজ আবার ঝুঁকিপূর্ণ কিভাবে! আমাদের মাঝে অনেকেই শখের বশে মাছ ধরতে যান। অবসরে মাছ ধরা আর জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম হিসেবে মাছ ধরার মাঝে তফাৎ অনেক।
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ, এদেশের বিশেষ করে নদী পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের মানুষদের জীবিকা নির্বাহের অন্যতম মাধ্যম হলো মাছ ধরা। সব ঋতুতেই এই কাজ করতে হয়। ঝড় কিংবা বৃষ্টি সব কিছুর মাঝেও জেলেদের মাছ ধরতে যেতে হয়। এই প্রতিকূল আবহাওয়ায় মাছ ধরতে গিয়ে অনেক জেলেই প্রাণ হারায়। এই পেশায় মৃত্যুহার তুলনামূলক ভাবে অনেক বেশী।
গড় বার্ষিক আয় ঃ ৩০,০০০ ডলার
২. কাঠুরে
ছোটবেলায় কাঠুরে আর জলপরীর গল্প শুনেনি এরকম মানুষ কমই আছে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সব কিছুতেই এসেছে আমূল পরিবর্তন। এখন আর আগের মতো কুড়াল ব্যবহার করা হয় না কাঠ কাটার জন্য। এখন অনেক উন্নত এবং ভারী কাঠ কাটার যন্ত্র ব্যবহৃত হয়। এজন্য বেশীরভাগ সময় দেখা যায় যন্ত্রের ভুল ব্যবহার কিংবা ত্রুটির জন্য অনেক কাঠুরেকে প্রাণ হারাতে হয়।
গড় বার্ষিক আয়ঃ ৩৬,০০০-৪১,০০০ ডলার
৩. কুমিরের সাথে লড়াই
কুমিরের সাথে লড়াই চাট্টিখানি কথা নয়। এই কাজটা অনেকটা নিজের জীবন নিজের হাতে করে কুমীরের মুখে দিয়ে আসার মতো। খেলা দেখানোর সময় আপনাকে আপনার শরীরের বিভিন্ন অংশ কুমীরের মুখেও দিতে হতে পারে!
কুমিরের সাথে খেলা করা আর জীবন হাতে নিয়ে খেলা করা অনেকটা একই কথা। শুধু যে আপনি কুমিরের সাথে খেলবেন তাও কিন্তু নয়, আপনার সাথে কুমিরও বিভিন্ন কসরত দেখাবে। আর এখানেই সবচেয়ে বড় ঝুঁকি।
বার্ষিক গড় আয়ঃ ধারণা করা হয় প্রতি ঘন্টায় ৮ ডলার।
৪. তেল উত্তোলনকারী
তেল উত্তোলন করা সহজ কোনো কাজ নয়। এতে রয়েছে অনেক ঝুঁকি। সবসময় তেল নিয়ে কাজ করতে গেলে অনেক ধরনের ঝুঁকি থেকে যায়। বেশীরভাগ সময় যন্ত্র বিস্ফোরণের জন্য জীবনহানি ঘটে থাকে। তাছাড়া বিভিন্ন সময় আগুন লেগে যায় গায়ে কিংবা কোনো মেশিনে শরীরের কোনো অংশ আটকে যায় আর এজন্য মৃত্যুও ঘটতে পারে।
গড় বার্ষিক আয়ঃ ৭০,০০০-১৪০,০০০ ডলার
৫. যুদ্ধক্ষেত্র থেকে খবর পাঠানোর ভারপ্রাপ্ত সাংবাদিক
যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তের মানুষ বসে থাকে সর্বশেষ অবস্থা শোনার জন্য। আর এই বিশাল দায়িত্ব পড়ে একজন সাংবাদিকের উপর। তাকে যুদ্ধের সময় একদম কাছ থেকে সব রকমের খবর বিশ্ববাসীর জন্য পাঠাতে হয়।
এই কাজে নিজের জীবনের ঝুঁকি অনেক। কেননা যুদ্ধের গোলাগুলির সময় তিনিও আহত হতে পারেন কিংবা কোনো বিস্ফোরণে প্রাণও হারাতে পারেন। অনেক সাহসের প্রয়োজন এই দায়িত্ব পালন করার জন্য।
গড় বার্ষিক আয়ঃ ৩৬,০০০ ডলার
৬. মাইক্রোচিপ প্রস্তুতকারক
মোবাইল, ল্যাপটপ ছাড়া আজকের যুগে চলা প্রায় অসম্ভব। কিন্তু আমরা কি জানি এর তৈরীর পিছনে কী কী ভয়ংকর দিক লুকিয়ে আছে? মোবাইল ল্যাপটপে ব্যবহৃত হয় মাইক্রোচিপ। এই মাইক্রোচিপ তৈরী করতে ব্যবহৃত হয় অনেক ধরনের ক্ষতিকর কেমিক্যাল। এর মাঝে আছে আর্সেনিকের মতো ক্ষতিকর কেমিক্যালও। এই শিল্পে যদিও তাৎক্ষণিক মৃত্যুর ঘটনা তেমন নেই, কিন্তু এতে রয়েছে দীর্ঘ মেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা। যেমনঃ গর্ভপাত হওয়া, শ্বাসকষ্ট, ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধিও।
গড় বার্ষিক আয়ঃ ৬১,০০০ ডলার
৭. পাহাড়ের পথ প্রদর্শক (গাইড)
ঘোরাঘুরি করতে কে না ভালোবাসে? কেউ ভালোবাসে সমুদ্র দেখতে, কেউ আবার পাহাড়। কিন্তু যখনই নতুন কোনো জায়গায় ঘুরতে যাই, সেখানে প্রথমেই প্রয়োজন হয় গাইডের। পাহাড়ী এলাকায় যারা গাইডের কাজটি করে থাকেন তাদের কাজ ১১টি ভয়ঙ্কর পেশার মাঝে একটি।
অনেকেরই স্বপ্ন বিভিন্ন পর্বত জয় করার। সেজন্য সাথে নেয়া প্রয়োজন দক্ষ একজন গাইড। গাইড হিসেবে কাজ করার সময় অনেক সতর্ক থাকতে হয়, কেননা পাহাড়ি এলাকা সমতল নয়। পা পিছলে গিয়ে বিভিন্ন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। তাছাড়া নিজের জীবনের সাথে সেখানে অন্যের জীবনেরও ঝুঁকি নিয়ে পথ চলতে হয়।
গড় বার্ষিক আয়ঃ ৭০,০০০ ডলার
৮. ষাঁড় চালনা
এই খেলাটি জনপ্রিয়তা লাভ করে নব্বই দশকের শেষ দিকে। এতে প্রচুর অর্থ প্রদানের কথা উল্লেখ থাকলেও এর পরিণামের কাছে সেই অর্থ নেহাৎ তুচ্ছ। এই খেলায় প্রাণহানির সংখ্যা অনেক বেশী। জরিপে দেখা গিয়েছে যে, ১৫ জন চালকের মাঝে একজনের খুব মারাত্মকভাবে আহত হয়। বেশীরভাগ সময় হাড় ভাঙ্গা কিংবা হাড়ে ফাটল হতে দেখা যায়।
গড় বার্ষিক আয়ঃ ১০৭,০০০ ডলার
৯. কুরিয়ার
খুবই আশ্চর্যজনক ভাবে কুরিয়ার করা ১১টি ভয়ংকর পেশার মাঝে একটি। হয়তো ভাবছেন কিভাবে?
ধরুন, একজন পিজ্জা নিয়ে যাচ্ছে এমন একজনের বাসা যে কিনা নেশাগ্রস্ত এবং তার মেজাজ খুব খারাপ। নেশাগ্রস্ত অবস্থায় একজন মানুষ অনেক কিছু করতে পারে, নিজেকে আঘাত থেকে শুরু করে অন্যকে খুনও। আর সেইরকম একজন মানুষের বাসায় খাবার নিয়ে যাওয়াটা কম ভয়ংকর কিছু নয়। এজন্যই কুরিয়ার কিংবা ডেলিভারি কাজটিকে ভয়ংকর কাজ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
গড় বার্ষিক আয়ঃ ২৭,০০০-৩৫,০০০ ডলার
১০. নির্মাণ কাজের শ্রমিক
চারপাশে অনেক বড় বড় দালান। কখনও ভেবে দেখেছেন কি এগুলো তৈরীর পিছনের মানুষগুলোর কথা? তারা কিভাবে এত বড় দালান তৈরী করে?
নির্মাণ কাজ চলাকালীন সময় অনেক উচ্চতা থেকে পড়ে গিয়ে বিভিন্ন শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা প্রায়ই শোনা যায়। সাবধানতা ব্যবহার করার পরেও অনেক সময় যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে এরকম দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। তাছাড়া অনেক সময় নির্মাণ চলাকালীন সময় দেয়াল ধ্বসে পড়ার ঘটনাও ঘটে থাকে, এতেও অনেক শ্রমিকের মৃত্যু হয়।
গড় বার্ষিক আয়ঃ ৩১,০০০-৭০,০০০ ডলার
১১. স্বর্প দুধারের
স্বর্প দুধারের তাদের বলা হয় যারা সাপের দাঁত থেকে বিষ সংগ্রহ করেন। এক বিশেষ ধরনের প্লাস্টিক কন্টেইনারে সাপের দাঁত ধরে রাখতে হয়, আর কন্টেইনারে বিষ জমা হতে থাকে। এই বিষ বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়, বিশেষ করে বিভিন্ন ধরনের এন্টিবায়োটিক তৈরিতে। যদিও বিভিন্ন ধরণের সতর্কতা অবলম্বন করা হয়, তাও বিভিন্ন সময় সাপের কামড়ে মৃত্যু ঘটে থাকে।
গড় বার্ষিক আয়ঃ ৩০,০০০ ডলার