সময়ের সাথে সাথে প্রযুক্তির আনাগোনায় আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে ঘটেছে বিশাল পরিবর্তন। আর পরিবর্তনে ছোঁয়া লেগেছে চাকরির আবেদনের পদ্ধতিতেও। ট্র্যাডিশনাল রিজিউমের পরিবর্তে বর্তমান চাকরি মার্কেটিংয়ে যে জিনিসটি দেখা যায়, সেটি হচ্ছে ভিডিও রিজিউমের ব্যবহার।
ভিডিও রিজিউমে মানুষের চাহিদা দিনদিন বৃদ্ধি হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে, এই পদ্ধতিতে ব্যক্তি তার আগ্রহ, ক্রিয়েটিভটি, যোগ্যতা ও দক্ষতা আরো সহজে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পারেন। যেটা অন্যান্য আবেদনকারীর থেকে আলাদা করে তুলতে সহায়তা করে। তবে ভিডিও রিজিউম তৈরি করা কঠিন না হলেও সঠিকভাবে উপস্থাপন করা সহজ বিষয় নয়। আপনার ভিডিও রিজিউমটি আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করতে নিম্নোক্ত ১২টি টিপস অনুসরণ করতে পারেন।
১. সম্পূর্ণ নাম উপস্থাপন করা
ভিডিও রিজিউমের শুরুতে অবশ্যই আপনার নাম যুক্ত করতে হবে। এক্ষেত্রে মূল নাম আর বংশগত নাম আলাদাভাবে উল্লেখ করুন।
২. যেখানে রিজিউম পাঠাবেন শুধু সেখানকার উদ্দেশ্যেই ভিডিও তৈরি করুন
আপনি হয়তো ভেবে থাকতে পারেন, এমনভাবে ভিডিও রিজিউমটি নির্মাণ করতে হবে যেন আরও বেশ কয়েকটি কোম্পানিতে সেটা প্রদান করা যায়। এই চিন্তাধারা পরিহার করে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কোনো কোম্পানির উদ্দেশ্যে ভিডিওটি নির্মাণ করুন।
কারণ আপনি যখন নির্দিষ্ট একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য ভিডিওটি নির্মাণ করবেন, তখন সকল ধরনের প্রয়োজনীয় তথ্য সেখানে যুক্ত করতে পারবেন। অন্যদিকে একই ভিডিও যখন ভিন্ন কোম্পানির আবেদনে ব্যবহার করবেন, তখন সেই কোম্পানির সাথে সম্পর্কিত নয়, এমন অপ্রয়োজনীয় তথ্য যুক্ত থাকবে। যেটা আপনার উপর বাজে প্রভাব ফেলবে। তাই প্রতিটি আবেদনের জন্য আলাদাভাবে ভিডিও রিজিউম নির্মাণ করুন।
৩. প্রফেশনাল ভিডিও ধারণ
ভিডিও রিজিউম নির্মাণের পূর্বে পোশাকের প্রতি গুরুত্ব দিন। আপনাকে নিজের পোশাক আর গেটআপের বিষয়ে এমনভাবে প্রস্তুত হতে হবে, যেন সরাসরি চাকরির ইন্টারভিউ দিচ্ছেন।
৪. নিজের কণ্ঠস্বর ব্যবহার
ভিডিওতে যেসব কথা ব্যবহার করছেন, সেটা কম্পিউটার জেনারেটেড নয়, নিজের কণ্ঠস্বর ব্যবহার করুন। আপনার কথা ভিডিওতে স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে কিনা বিষয়টি লক্ষ্য করুন। কণ্ঠস্বর প্রদানের সময়ে অপ্রয়োজনীয় শব্দ চলে আসলে নতুন করে রেকর্ড করুন। নিজের কণ্ঠস্বর প্রদানের অংশে বেশি সর্তক থাকুন। কারণ এখানে আপনার যোগাযোগ দক্ষতার প্রতিফলন ঘটছে।
৫. ব্যাকগ্রাউন্ডের শব্দ দূর করুন
আপনি যদি নিঃশব্দ ঘরে ভিডিও রেকর্ড না করে থাকেন, সেক্ষেত্রে বাইরের বিভিন্ন রকমের আওয়াজ চলে আসাটা স্বাভাবিক। তাই এই আওয়াজ মুছে ফেলতে ভিডিও এডিটিং করুন।
কারণ আপনার ভিডিওয়ের এই অনাকাঙ্ক্ষিত শব্দ নিয়োগকর্তার মনোযোগ নষ্ট করবে। আর আপনার কথাগুলো বুঝতে অসুবিধা হবে।
৬. নিজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ব্যাখ্যা করুন
ভিডিও রিজিউম করার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, নিজেকে আরও আকর্ষণীয়ভাবে নিয়োগকর্তার কাছে উপস্থাপন করা। তাই নিজের কর্ম অভিজ্ঞতা এবং কাজের দক্ষতার বিষয়ে ব্যাখ্যা করুন।
যেহেতু ভিডিও রিজিউম সরাসরি ভিডিওচিত্রের মাধ্যমে ধারণ করা হয়, সেক্ষেত্রে কোন সময়ে কী বিষয়ে কথা বলবেন, সেটা আগে থেকে ঠিক করুন। আগে থেকে পরিকল্পনা করে ভিডিওচিত্র ধারণ করুন।
৭. সংক্ষিপ্ত ভিডিও প্রদান
আপনার ভিডিও রিজিউমটি ২ থেকে ৩ মিনিটের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখুন। আর সংক্ষিপ্ত পয়েন্ট আকারে তথ্যগুলো প্রদান করুন। পয়েন্টগুলো প্রদানের ক্ষেত্রে নিয়োগকর্তাদের চাহিদার দিকে লক্ষ্য রাখুন।
পাশাপাশি আপনার পয়েন্টগুলোতে স্পষ্টভাবে পরিপূর্ণ তথ্য প্রদান হচ্ছে কিনা, খেয়াল রাখুন।
৮. নিজের বিষয়ে স্পষ্ট এবং সঠিক ধারণা প্রদান
ভিডিও রিজিউম সংক্ষিপ্ত করে তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ হলেও নিজের বিষয়ে বিস্তারিত বলার ক্ষেত্রে কিছুটা সময় নেয়া অন্যায় নয়। আপনি যখন কোন তথ্য ভিডিও রিজিউমে প্রদান করবেন, তখন পূর্ণাঙ্গ তথ্য দেয়ার বিষয়ে লক্ষ্য রাখুন।
আপনার তথ্যগুলো এমনভাবে উপস্থাপন করুন, যাতে সেখানে নিয়োগকর্তার কোন ধরনের প্রশ্ন না থাকে। এজন্য নিজের কথাগুলো ভালোভাবে পরীক্ষা করুন। আর আপনার দেওয়া তথ্যে কোনো ধরনের প্রশ্ন অথবা সন্দেহের বিষয় থাকলে সেগুলো দূর করুন। পাশাপাশি নিয়োগকর্তার চাহিদা পূরণ হচ্ছে কিনা, সেটা নিশ্চিত করুন।
৯. শুধু ব্যক্তিগত অর্জন নয়, প্রাতিষ্ঠানিক অর্জনের কথাও উল্লেখ করুন
পূর্ববর্তী কোন কোন প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজে নিয়োজিত ছিলেন, সে বিষয়গুলো নোট করুন। তাদের সাথে কোন কোন সেক্টরে কাজ করছেন আর আপনার কাজের মাধ্যমে সে অর্গানাইজেশনের কী ধরনের পরিবর্তন ও সফলতা অর্জিত হয়েছে, সেটি উল্লেখ করুন।
আপনার কর্মদক্ষতার কারণে পূর্ববর্তী কোম্পানির কী কী পরিবর্তন ঘটেছে, সেই বিষয়টি আপনি যখন যুক্ত করবেন, তখন নিয়োগকর্তারা আপনার সাফল্যকে গুরুত্বের সাথে দেখবেন।
১০. নিজের কল্পনাশক্তি ব্যবহার করুন
আপনার গতানুগতিক রিজিউমটি সরাসরি ভিডিওতে উল্লেখ করা হতে বিরত থাকুন। নিজের কল্পনাশক্তি ব্যবহার করুন আর একই তথ্য ভিন্ন ভিন্নভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করুন।
আপনার কর্মদক্ষতা এবং অভিজ্ঞতাকে কোনভাবে উপস্থাপন করলে সবথেকে বেশি আকর্ষণীয় হবে, তা ভেবে দেখুন।
১১. ইন্টারনেট থেকে আইডিয়া গ্রহণ
হুট করে আকর্ষণীয় ভিডিও রিজিউম তৈরি করা অসম্ভব বটে। তবে নিজের রিজিউম তৈরি করতে আপনি ইন্টারনেটের সহায়তা নিতে পারেন। ইউটিউব আর বিভিন্ন ব্লগের সাহায্যে অন্যরা কিভাবে ভিডিও রিজিউম নির্মাণ করে বিষয়টি সম্পর্কে ভালোভাবে গবেষণা করুন।
১২. নিজস্ব স্টাইলে তৈরি
বিভিন্ন ভিডিও দেখে কীভাবে ভিডিও রিজিউম তৈরি করা হয় সেটা শিখলেও সরাসরি একইরকম ভিডিও তৈরি হতে বিরত থাকুন।
পাঁচ ধরনের ভিডিও থেকে আইডিয়া নিয়ে নিজের মতো করে ভিডিও রিজিউম নির্মাণ করুন। ভিডিওটি এমনভাবে উপস্থাপন করুন, যেন সকলের মনোযোগ কাড়তে সক্ষম হয়। পাশাপাশি গ্রাফিকসে বিশেষভাবে মনোযোগ প্রদান করুন।