যারা মিলিয়নিয়ার, বিলিয়নিয়ার হয়েছেন তাদের নিয়ে পড়াশোনা করলে আপনি বুঝতে পারবেন এটি কঠিন কিন্তু অসম্ভব নয়। লক্ষ্য স্থির রেখে চেষ্টা করে গেলে, কঠোর পরিশ্রম করতে আর স্বপ্ন দেখতে জানলে কঠিন কিছুও অর্জন করা যায়। যদি মিলিয়নিয়ারদের খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করেন তাহলে তাদের সাফল্যের কিছু কারণ এবং তাদের ক্ষেত্রে সাধারণ কিছু বিষয় জানতে পারবেন। যা আপনার স্বপ্ন পূরণে পথ দেখাতে পারে। পর্যবেক্ষণ থেকে তেমনি ১৭টি বিষয় যা আপনার উপকারে আসবে । কিন্তু এগুলোই শেষ নয়, এর বাইরেও আরও অনেক কিছু আছে।
আপনি তরুণ অবস্থায় টাকা উপার্জন শুরু করছেন
সবচেয়ে সাধারণ একটি বিষয় যে, ধনীরা কম বয়সে টাকা উপার্জন শুরু করে । যেমন ১২ বছর বয়সী মার্ক কিউবান আবর্জনার ব্যাগ দরজায় দরজায় বিক্রি করতেন, ওয়ারেন বাফেট ৬ বছর বয়সের তার প্রতিবেশীর আঠার প্যাকেট বিক্রি করতেন এবং রিচার্ড ব্র্যানসন ১১ বছরের বয়সে গৃহপালিত টিয়া বিক্রি করেন । যদি শিশু বয়সেই আপনার এই ধরনের অর্থ উপার্জনের উদ্যোগ থাকে তাইলে আপনি অবশ্যই একজন মিলিয়নিয়ার হতে পারবেন।
আপনি বাড়তি কিছু অর্জন করতে চান
আপনি কি ঐ ছাত্র যে ক্লাসে কোন বি পেয়ে সন্তুষ্ট নন? যারা মিলিয়নিয়ার হয় তাদের বড় লক্ষ্যের দিকে এগোনোর মানসিকতা থাকে। তারা শুধু ১ মিলিয়ন উপার্জনে সন্তুষ্ট নয় তারা ১০ মিলিয়নের মালিক হতে চায় ।
আপনি দেখতে সত্যিই সুদর্শন
আমি জানি, এই আলোচনায় এমন কথা অযৌক্তিক এবং বৈষম্যপূর্ণ কিন্তু এক গবেষণায় অস্টিন এর টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক Daniel Hamermesh বলেন এটিই মূল বিষয়। তার গবেষণা অনুযায়ী, “আকর্ষণীয় ব্যক্তির কম সুদর্শন একই বয়সী ব্যক্তির চেয়ে ৩ থেকে ৪ শতাংশ বেশি আয় করার সম্ভাবনা রয়েছে। এটি হয়ত সৌভাগ্যের মতো শব্দ নয়, কিন্তু এটা সুদর্শন ব্যক্তির জীবনে আরো ২,৩০,০০০ ডলার আয় বাড়ায়।
আপনার কাজ করার মানসিকতা আছে
“Your Guide to Better Stock Picks” এর লেখক Todd Campbell বলেন –
“আপনি কি সেই ধরনের ব্যক্তি যে কোনো সুযোগ পেয়ে তারপর এর উপযুক্ত ব্যবহার করতে চেষ্টা করেন? যদি তাই হয়, তাহলে আপনাকে অভিনন্দন, কারণ এটা ঐ ধরনের কাজ করার মানসিকতা যা আপনাকে আর্থিক স্বাধীনতা প্রদান করতে পারে।”
“উদাহরণস্বরূপ, এটি প্রমাণিত হয়েছে যে, দীর্ঘ মেয়াদী বিনিয়োগ স্বল্প মেয়াদী ট্রেডিং এর চেয়ে বেশি সম্পদ উৎপাদন করতে পারে, তথাপি অনেক আমেরিকান তাদের অনেক কাজের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ করতে ব্যর্থ।
আপনি কি আপনার পরিকল্পনায় অবদান রাখেন? যদি তাই হয়, আপনি কি আপনার আয়ের ১০ শতাংশ বিনিয়োগ করেন? নাকি এর চেয়ে বেশি কিংবা কম? ধরুন ,আপনি যদি ৪০০০০ ডলার আয়ের ১০% বিনিয়োগ করেন তাহলে ৩৫ বছর বয়সে যারা ৩% অবদান রাখে তাদের চেয়ে ৬% বেশি মানে প্রায় ৩,১১,৫৭২ ডলার বেশি আয় করতে পারবেন।
আপনি জমানোর চেয়ে উপার্জন এ বেশি মনোযোগী
এটা কোনো গোপন বিষয় নয় যে, সম্পদশালী ব্যক্তিরা তাদের সম্পদের ব্যাপারে মিতব্যয়ী হন। তারা বিজ্ঞভাবে সম্পদ সংরক্ষণ ও ব্যয় করে, কারণ তারা এটা ভালোভাবেই জানেন যে, অর্থ উপার্জনের সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে এটি বিনিয়োগ করা ।
আপনি উচ্চ বিদ্যালয়ে জনপ্রিয় ছিলেন
আপনি যদি উচ্চ বিদ্যালয়ে জনপ্রিয় হন, মানে অনেক বন্ধু ছিল,তাহলে আপনার উপার্জনের ভাল সুযোগ আছে। বেশিরভাগ মিলিয়নিয়ারই বিদ্যালয়ে বন্ধুদের মধ্যে জনপ্রিয় ছিলেন।
আপনি আপনার অবস্থার তুলনায় সাধারণ জীবনযাপন করতে পারেন
একটা সাধারণ ব্যাপার এই যে,মিলিয়নিয়াররা তাদের সামর্থ্যের চেয়েও নিম্নমানের সাদাসিধে জীবনযাপন করতে সক্ষম। তারা সাধারণ গাড়ি ব্যবহার করেন, সাধারণ ঘরে বাস করেন, এবং তাদের কষ্টার্জিত অর্থ অযথাই বিলাসবহুল দ্রব্য কিনতে খরচ করে না।
আপনি সন্তুষ্ট থাকতে পারেন
জেসন হল, Motley Fool এর একজন লেখক এবং সম্পাদক, তিনি বলেন-
“পরিতৃপ্তি একজন ধনকুবের হওয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ।”
হল আরো বলেন,
“বাস্তবতা হলো,সম্পদশালী হতে প্রচুর সময় দরকার। এমনকি ওয়ারেন বাফেট, একজন জীবিত এবং শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগকারী ধনী। তিনিও তার সম্পদের প্রায় ৮০% এর মতো ৫০ বছর বয়সের পর অর্জন করেছেন।”
মানসিক সন্তুষ্টি এক্ষেত্রে তাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আপনার একজন ভালো পরামর্শদাতা আছে
আপনি কতটা সফল হবেন তা প্রভাবিত করতে পারে আপনার সহযোগীরা। এক সেকেন্ডের জন্য ভাবুন। যদি আপনি আপনার বেশিরভাগ সময় এমন লোকদের সাথে ব্যয় করেন যারা নেতিবাচক, যাদের জীবনে কোনো আশা নেই, জীবন সম্পর্কে যারা হতাশ তাহলে আপনি কি মনে করেন যে তারা আপনাকে আশাবাদী হওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাবিত করবে?
অন্য কথায়,আপনি যদি সম্পদশালী হতে চান। তাহলে লাখপতিদের সাথে চলাফেরা শুরু করুন। এটা শুধু আপনাকে অনুপ্রাণিত করবে না। আপনি এমন একজন কে পাবেন যে আপনার পরামর্শদাতা হবে এবং আপনাকে সঠিক রাস্তা দেখাবে।
আপনি যদি কোন লাখপতিকে না চিনেন, তাহলেও শঙ্কিত হবেন না। বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে তাদের সাথে যোগাযোগ করুন এবং একটি ভালো সম্পর্ক তৈরি করুন।
আপনার নির্দিষ্ট লক্ষ্য আছে
ভবিষ্যতের কথা বলে, সম্পদশালীরা তাদের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য ও প্রয়োজনের কথা চিন্তা করে ।
Game Changers Academy- এর প্রতিষ্ঠাতা Peter Vooger, যিনি তার ২৬ বছর বয়সের আগেই প্রথম মিলিয়ন উপার্জন করেছিলেন। তিনি বলেন –
“আমি হঠাৎ করে এক মিলিয়ন বানাতে পারবেন না। যদি এ নিয়ে আপনার কোন লক্ষ্য না থাকে আপনি নিশ্চিত এটা আপনি পাবেন না।
আপনার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়নি
প্রায় ৯,০০০ ব্যক্তির উপর করা এক গবেষণায় জানা গেছে বিবাহ বিচ্ছেদ একজন ব্যক্তির সম্পদ কমিয়ে দেয় ( প্রায় ৭৭ শতাংশ) এবং বিয়ে তুলনামূলকভাবে সম্পদ প্রায় দ্বিগুণ (৯৩ শতাংশ বাড়িয়ে) করে দেয়। Ohio State University – তে Center for Human Resource Research -এর এক গবেষণা বিজ্ঞানী Jay Zagorsky বলেছেন-
“বিবাহ বিচ্ছেদ সম্পদ কমার কারণ। এর মাত্রা দুইজনের মিলিত সম্পত্তি অর্ধেক হয়ে যাবার চেয়েও বেশি। আপনি যদি সত্যিই আপনার সম্পদ বাড়াতে চান তাহলে বিয়ে করুন এবং বিবাহিত থাকুন।”
এর মানে এই না যে আপনার বিবাহ বিচ্ছেদ হলে সম্পদশালী হতে পারবেন না। অনেকে বিবাহ বিচ্ছেদের পরও কোটিপতি হয়েছেন। হতাশ হবার কিছু নেই। জরিপে এমন ফলাফল আসার কারণ হয়তো যার বিবাহ বিচ্ছেদ হয় তিনি মানসিকভাবে বিদ্ধস্ত থাকেন। এবং কাজের দিকে মনোযোগ দিতে পারেন না।
আপনি আশাবাদী
আপনি কি এমন কোন মানুষকে চিনেন যারা শুধুই ঘ্যানঘ্যান করে এবং অন্যদের দোষারোপ করে? আমি চ্যালেঞ্জ করতে পারি, এই লোকগুলো আর্থিকভাবে স্বচ্ছল নয়। মিলিয়নিয়াররা ঘ্যানঘ্যান,অভিযোগ করে না। এর বদলে তারা চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে এবং তা জয় করার উপায় খুঁজে বেড়ায়।
“Secrets of the Millionaire Mindset ” এর লেখক T.Harv Eker বলেন-
“ধনীরা বিশ্বাস করে, আমার জীবন আমি গড়বো, আর গরীবরা মনে করে এটা আমার কপালে ছিল।”
পার্থক্য আসলে এখানেই তৈরি হয়ে যায়।
আপনি মানসিকভাবে শক্ত
আপনার সম্পর্কে অন্যরা কি চিন্তা করল আপনি যখন তা ভাববেন তখন আপনি নিজে মানসিকভাবে পিছিয়ে ফেললেন।আপনার সম্পর্কে অন্যরা কী চিন্তা করে তা নিয়ে বিচলিত না হয়ে, সম্পদশালীরা তার কাজ ঠিকমত করে যেতে থাকে, কে কি বললো তাতে তার কিছুই যায় আসেনা।
আসলে, মানসিকভাবে শক্ত হওয়াটা একজন সফল উদ্যোক্তা হবার অন্যতম উপাদান, যেহেতু এটা তাদের চাপ নিয়ন্ত্রণ এবং চ্যালেঞ্জে সফল হতে সাহায্য করে।
বর্তমান ঘটনাপ্রবাহের সাথে তাল মিলিয়ে চলা
বিশ্বের সবচেয়ে সফল ব্যক্তিরা তাদের প্রথম প্রহরে বর্তমান ঘটনাগুলো দেখে নেন। যেমন, ওয়ারেন বাফেট এবং বিল গেটস “ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল”, “নিউ ইয়র্ক টাইমস”, “ইউএসএ টুডে” এবং “ফিন্যান্সিয়াল টাইমস”-এর মত প্রকাশনা গুলো পড়েন, যাতে তারা বিশ্বে কি হতে যাচ্ছে তার উপর নির্ভর করে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন।
আপনি ক্রমাগত নিজেকে আরো উন্নত করছেন
কলেজ ডিগ্রী আপনার সম্পদের পরিমাণে একটি ইতিবাচক পার্থক্য তৈরি করতে পারে,কিন্তু এই ডিগ্রী বলাইবাহুল্য এটা ঠিক করবেন না যে আপনি একজন মিলিয়নিয়ার হবেন কি না। বিল গেটস সব সময়ের নামকরা কলেজ ড্রপআউট ছিলেন। কিন্তু, এটা তাকে থামাতে পারেনি,এবং মার্ক জাকারবার্গ এবং জেফ বেজোস এর মতো ধনীরা নতুন তথ্য বা দক্ষতা জানা ও শিখার মাধ্যমে ক্রমাগত নিজেদের উন্নত করেছেন, প্রতিনিয়ত করছেন। যারা ড্রপআউট ছিলেন তারা একাডেমিক পড়াশোনা না করলেও নিজের প্রয়োজনে নিজের মত করে পড়াশোনা করেন ।
আপনি খোলা মনের মানুষ
কখন সুযোগ আসবে আপনি নিজেও জানেন না। এবং আপনি এই মুহূর্তে যেক্ষেত্রে বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত বাতিল করবেন বলে ভাবছেন, ঠিক তখনই আপনি হয়তো ভাগ্য পরিবর্তনের একটি বড় সুযোগ হারিয়ে ফেলছেন। তাই মিলিয়নিয়ার হতে চাইলে আপনার উচিৎ হবে নতুন কোন আইডিয়ার প্রতি গুরুত্ব দিন, খোলা মনের হোন এক্ষেত্রে। Warren Buffett বলেছিলেন –
” সুযোগ কলেভদ্রে আসে। যদি স্বর্ণবৃষ্টি হয় তাহলে কুড়িয়ে ঝুরিতে রাখুন। সুযোগ নষ্ট করবেন না। “