লিডার বা দলপতি শব্দটি শুনলেই আমাদের মধ্যে একটি ধারণা তৈরি হয় হয়তো দলনেতা কোন একজন পুরুষই হবেন। কিন্তু কেন? প্রশ্নটি আমার নয়, প্রশ্নটি হওয়া উচিত সবার। একজন লিডারের অবস্থানে কেন আমরা দিনের পর একজন পুরুষকেই ভেবে আসবো? একজন নারী ও লিডার হতে পারেন। হ্যাঁ এটা সম্ভব ও। বর্তমান পৃথিবীতে অসংখ্য নারী নিজস্ব যোগ্যতার বলে নেতৃত্ব দানের অবস্থানে আছেন। এরকম অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখানে নারীদের জন্য সঠিক প্রশিক্ষণের সুযোগ নেই। সে সমস্ত প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিগণ এই বিশ্বাসের জায়গাটি অর্জন করতে পারেন নি নারীরাও সঠিক সুযোগ পেলে নিজেদের প্রমাণ করতে পারবে।
এরকম অনেক প্রতিষ্ঠানে পুরুষ এবং নারী কর্মীর সমান মেধা থাকা সত্ত্বেও নারীদের কম সুযোগ প্রদানের কারণে নিজেদের যোগ্যতার সঠিক প্রমাণ তারা করতে পারছে না। অনেক প্রতিষ্ঠানই নারীদের নেতৃত্ব প্রদানের কোন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে না অথচ নারীদের এই সুযোগ তাদের প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারতো। আর একটি কারণ দীর্ঘদিন ধরে সামজিক নিয়ম অনু্যায়ী পুরুষেরাই নেতৃত্ব প্রদানের নিয়ম নিয়ে রেখেছে। কিন্তু পুরুষেরাই শুধু নেতৃত্ব দিবে এটি কোন লিখিত নিয়ম নয়। দুঃখজনক হলেও সত্য আমাদের সামাজিক ব্যবস্থা বিষয়টিকে নিয়মের মধ্যে রেখেছে।
ইংরেজিতে একটি প্রবাদ রয়েছে, True Leaders are born. দীর্ঘদিন ধরে সমাজবিজ্ঞানী দের মধ্যে মতবিরোধ চলে আসছে True Leaders are Born Or Made? লিডার হওয়ার গুণাবলীর অনেক কিছুই জন্মগত ভাবে থাকতে হবে নাকি চাইলে সেই গুণাবলী অর্জন করা যাবে এই বিষয়টি নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। তবে একজন নারী হিসেবে ছোটবেলা থেকেই আমরা ধৈর্য্য ধারণ করা থেকে শুরু করে অনেক নেতিবাচক পরিস্থিতির সাথে নিজেদেরকে মানিয়ে নেয়া শিখে থাকি। বিতর্ক যদি এই দিকে যায় লিডারশীপ এর গুণাবলী জন্ম থেকে থাকে সেদিক থেকে নারীরা পিছিয়ে নেই,কারণ এরকম অনেক গুণাবলী নারীরা জন্ম থেকেই ধারণ করে। আবার বিতর্কের রেষ যদি এই দিকে যায় লিডারশীপ এর গুণাবলী শিখেও নেটৃত্ব দেওয়া যায়, নারীরা সেদিকেও পিছিয়ে নেই।
নিত্য নতুন নানান পরিস্থিতির সাথে নারীরা লড়াই করে অভ্যস্ত, নতুন নানারকম শিক্ষা নারীদের জীবনে প্রতিদিনকার বিষয়। তবে ইতিবাচক ঘটনা হলো নানান গবেষণায় এটি সফলভাবে প্রমাণিত হয়েছে নেতৃত্ব দানকারী সব গুণাবলী অর্জন করেও একজন সফল দলপতি হওয়া সম্ভব। তাই নারী হিসেবে যে সমস্ত বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের মাঝে নানান হীনমন্যতা থাকে যে আমার এই গুণ নেই, আমি এরকম নই,আমি হয়তো বড় অবস্থানে যেতে পারবো না তাদের জন্য কিছু বিষয় উল্ল্যেখ করা হলো। চাইলে আপনিও সেই অভ্যাসগুলো আয়ত্তে এনে একজন সফল দলনেত্রী হতে পারেন।
১. পথ চলার আয়না
একজন নারী ছোট বেলা থেকেই নানা পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে থাকে। আর আপনার এই অতীতকে পথ চলার প্রদর্শক মানুন। অতীতকে দুর্বলতা ভাবলে চলবে না। বরং অতীতের শিক্ষাগুলোকে একজন দক্ষ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার সহায়ক হাতিয়ার বানান। অতীতের ভাবনায় কিছু সময় ব্যয় করুন। বের করে নিয়ে আসুন অতীত থেকে আপনার সর্বোত্তম শিক্ষাগুলো। সেগুলোর চর্চা করুন। পৃথিবীর অনেক সফল ব্যক্তিত্ব অতীতের শিক্ষা থেকেই একজন সৃজনশীল মানুষ হিসেবে গড়ে উঠেছে। আর তাই অতীত অভিজ্ঞতাগুলোকে কাজে লাগান।
২. ইতিবাচক ভাবনা ভাবুন
মনে রাখবেন আপনি যেভাবে আপনার মস্তিষ্ককে আদেশ করবেন, আপনার মস্তিষ্ক সেভাবেই কাজ করবে। আর তাই ইতিবাচক ভাবুন সবসময়। একটি কঠিন কাজ আপনি পারবেনই,আপনাকে দিয়ে সম্ভব এরকম ভাবনা আপনার মনের শক্তিকে বাড়িয়ে দিবে বহুগুণ আর তাই মস্তিষ্ককে সবসময় ইতিবাচক এবং সংকল্পবদ্ধ ভাবে ভাবার পথে পরিচালিত করুন।
৩.ভাবনার উপর আস্থা রাখুন
নারীরা অনেক ক্ষেত্রেই অবাস্তব অহেতুক ভাবনাগুলোকে প্রশয় দিয়ে থাকে। আজ থেকেই এরকম অহেতুক অবিবেচক ভাবনাগুলোকে দূরে সরিয়ে দিন। আপনি ও অনেক সুন্দর এবং স্বাভাবিক ভাবতে পারেন সেই বিশ্বাস রাখুন নিজের প্রতি। আর নিজের অনুভূতি গুলোর উপর আস্থা ও রাখুন। আপনার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় কে বিশ্বাস করা শিখুন।সেভাবেই কাজ করুন। সফলতা আসবেই।
৪. নিয়ম ভাঙার ভয়
আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটে নারীদের সবসময় নিয়মের মধ্যে থাকার শিক্ষা দেওয়া হয়ে থাকে।তাদের বলা হয় নিয়ম না ভাংগতে, যেকোন কাজই সীমারেখার মধ্যে করতে। কিন্ত কেন? কেন একজন জোরে কথা বলতে পারবে না, রাগান্বিত হতে পারবে না? কেন তাকে সব কাজ নিয়মেই করতে হবে? নিয়মগুলো যদি অনিয়ম হয়ে মাথার উপর বসে ভেংগে ফেলুন সেই নিয়ম। সাহসিকতার সাথে প্রচলিত প্রথা ভেংগে সত্যের দিকে এগিয়ে আসুন। আপনি নারী, আপনি পারবেন।আর তাই সৃজনশীলতাগুলোকে পাখা মেলে উড়তে দিন। নিজের ভেতর রাখুন সকল অন্যায় নিয়মের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সাহস।
৫. সুযোগের সদ্ব্যবহার
আপনি যদি আপনার নতুন ভাবনাগুলোকে নিয়ে কাজ না করেন সেই স্বপ্নের জায়গায় সফল হবেন কিভাবে? নিজেকে খাঁচায় বন্দী না রেখে বের হয়ে পড়ুন স্বপ্ন সফল করার পথে। বড় স্বপ্ন দেখতে ভয় পেলে, বড় সফলতা কিভাবে পাবেন। আর তাই যেকোন সুযোগের সদ্ব্যবহার করুন। ভয় পেয়ে,আড়ালে থেকে স্বপ্নগুলোকে মেরে ফেলবেন না।
৬. জ্ঞানের পরিসীমা বৃদ্ধি
নিজেকে সময় দিন, অবশ্যই যে কাজে সময় দিলে নিজস্ব উন্নয়ন সম্ভব না, সেদিকে নয়। ভালো বই পড়ুন, ভালো মুভি দেখুন, ভালো জায়গা ঘুরুন এক কথায় যা করলে আপনার ব্যক্তি জ্ঞানের পরিসীমা বৃদ্ধি পাবে সেদিকে সময় ব্যয় করুন। এরকমভাবে সুস্থ জ্ঞানসম্পন্ন জায়গায় সময় ব্যয় আপনার সৃজনশীলতা,বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
৭. মস্তিষ্ককে সময় দিন
আপনার মস্তিষ্ককে সৃজনশীল ভাবনায় কাজে লাগান। আপনি যদি দিনের পুরো সময় দুশ্চিন্তা, কষ্ট বা অন্য কাজে ব্যয় করেন তাহলে নতুন কোন সৃজনশীল ভাবনার জন্য আপনার মস্তিষ্ক সময় পাবে না। তাই দিনের কিছু সময় নতুন ভাবনার পেছনে ব্যয় করুন। এমন কোথাও বসুন যেখানে আপনার মন এবং মস্তিষ্ক একটু সতেজত খুঁজে পাবে। এরপর সকল দুশ্চিতা কে দূরে সরিয়ে নতুন সৃজনশীল চিন্তায় মনোনিবেশ করুন।
একজন নারী চাইলেই চার দেয়াল ভেংগে সামনে এসে নিজেকে প্রমাণ করতে পারে। আর এই দক্ষতাগুলো নিজের আয়ত্তে আনা যায় আপনি নারী তাতে আপনি পিছিয়ে যাবেন না বরং আরো বেশি সমৃদ্ধ হবেন। বিশ্বাস রাখতে হবে, আমি নারী, আমি সবকিছুতেই নিজেকে প্রমাণ করতে পারবো। আর নেতৃত্ব দেওয়ার মতো সকল গুণাবলীই আমার আছে।