কেমন হতে পারে জার্মান আক্রমণ ভাগ!!

কেমন হতে পারে জার্মান আক্রমণ ভাগ!!

Image result for germany squad 2018দরজায় কড়া নাড়তেছে আরও একটি ফুটবল বিশ্বকাপ। আর কিছুদিন পরেই টানা ২য় বারের মত বিশ্বকাপ জয়ের জন্য মাঠে নামবে জোয়াকিম লোর জার্মানি। আসুন দেখে নেওয়া যাক রাশিয়া বিশ্বকাপে কি ফর্মেশনে জার্মানি টীম খেলতে পারে।তারকাবহুল জার্মানি স্কোয়াড খেলবে ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে। ব্যাক ফোর হবেন হেক্টর,হামেলস,বোয়াটেং,কিমিখ। সেন্টার মিডফিল্ডে থাকবেন টনি ক্রুস এবং সামি খেদিরা। লেফট উইংয়ে থাকবেন রয়েস, এটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবে থাকবেন ওজিল, রাইটে থাকবেন থমাস মুলার।
স্ট্রাইকার হিসেবে থাকবেন টিমো ওয়ার্নার।

Image result for germany timo werner

যেসব দলে টনি ক্রুসের মত হাই ওয়ার্ক রেট সম্পন্ন প্লেয়ার থাকে সেখানে সাধারণত খেলার বিল্ডআপ শুরু হয় তাকে দিয়েই। জার্মানিতেও সেটার ব্যাতিক্রম হবে না। ব্যাকলাইনের প্রথম কাজ হবে বলটা টনি ক্রুসকে সাপ্লাই করা। একজন পাসিং একুরেসি জিনিয়াস হিসেবে টনি ক্রুস বল পাঠাবেন কখনো ওজিলের দিকে আবার কখনো পাঠাবেন রয়েসের দিকে। সেখানে প্রেসার ক্রিয়েট হলে আবার পিছনে পাসিং লেন ক্রিয়েট করে দাঁড়াবেন ব্যাক পাস রিসিভ করার জন্য। ব্যাকপাস রিসিভ করে সেটি পাস করবেন ফ্রি থাকা প্লেয়ারের দিকে। ওজিলের কাজ বরাবরের মত হবে কি পাস বের করা / গোল স্কোরিং চান্স ডেলিভার করা টিমো ওয়ার্নারকে। টিমো থাকবেন ফিনিশ করার জন্য। মুলারের কাজ যতটা উইং প্লে হবে তারচেয়ে বেশি হবে বক্সের মাঝে ঘোরাঘুরি করে একজন শ্যাডো স্ট্রাইকার হিসেবে গোল করার চেস্টা করা বা ডিফেন্সকে সামনের দিকে ড্র্যাগ করে প্রতিপক্ষের ব্যাক ফোরকে বিভ্রান্তির মাঝে ফেলে দেওয়া। এই কাজটা মুলার বরাবরই ভাল করে থাকে। ২ বিশ্বকাপে ১০ গোল এবং কিছু এসিস্ট তার সামর্থ্যের প্রমাণ দেয়। এবারো দলের মূল স্ট্রাইকার না হলেও তার কাছে থেকে আবারো গোল প্রত্যাশা করতেই পারে জার্মানি।

Related image


ডিফেন্সে বরাবরের মতই আস্থার প্রতীক হিসেবে থাকবেন জেরম বোয়াটেং এবং ম্যাট হামেলস। রাইট ব্যাক হিসেবে থাকবেন হালের সেরা রাইট ব্যাক কিমিখ। লেফট ব্যাক হিসেবে থাকবেন প্রতিভাবান জোনাস হেক্টর। প্রতিপক্ষের এটাককে থামিয়ে দেওয়ার যথেষ্ট সামর্থ্য নিয়েই মাঠে নামবে জার্মানরা। সবকিছু কি এত সহজেই হবে? উত্তরটা অবশ্যই না! সামি খেদিরার কাজটাই বা কি এখানে? কেন হালের আলোচিত কিছু মিডফিল্ডার রেখে পুরাতন সামি খেদিরাকেই খেলাবে জার্মানি? টনি ক্রুসকে দিয়ে খেলা বিল্ড আপ করার কিছু সমস্যা আছে। টনি ক্রুসের এটাকিং খেলার এবিলিটি অনেক বেশি ভাল। পাসিং এ্যাকুরেসি চোখ কপালে তোলার মত, শর্ট পাস – লং পাস দুটোই ভাল দিতে পারেন, ডান পা – বাম পা দুই পায়েই খেলতে পারেন, গোলে লং শট মারতে পারেন, কি পাস দিতে পারেন ফরওয়ার্ডদের। টনি ক্রুসের এত এবিলিটি থাকার পরেও কিছু দুর্বলতা তারও আছে। তার দুর্বলতা হল ডিফেন্সিভ এট্রিবিউটে। এটাকে তার দুর্বলতা বললেও বেশি বলা হবে, আসলে বলা যায় তার এটাকিং এবিলিটি থেকে ডিফেন্সিভ এবিলিটি তুলনামূলক কম। সিঙ্গেল পিভট সিস্টেমে তাই যদি টনি ক্রুসকে রাখা হয় তখন সে যদি এটাকে উঠে যেয়ে থাকে আর কোনভাবে জার্মানি কাউন্টার এটাকের সামনে পড়ে তখন ডিফেন্সিভ লাইন পুরো এলোমেলো হয়ে যাবে। কারণ বল মিডফিল্ড পার হয়ে আসলে টনি ক্রুস যেহেতু উপরে আছে তাই বিপক্ষ প্লেয়ারকে চ্যালেঞ্জ করতে ছুটে যেতে হবে ব্যাক লাইনের কাউকে। তখনি ডিফেন্স লাইন ৪ থেকে হয়ে যাবে  ৩! আর ৩ জন নিয়ে ব্যাক লাইন কাউন্টারে ঠেকানো অনেকটাই কঠিন হয়ে পড়বে জার্মানির জন্য। বোয়াটেং,হামেলস ২ জনই এখন তাদের সেরা ছন্দে নেই এটাও একটা ইস্যু হতে পারে তখন। বোয়াটেং ইঞ্জুরি থেকে ট্রেনিংয়ে ফিরতেছে কেবল। তাই এটাকিং সাইড যতটা স্ট্রং হবে ডিফেন্সিভ সাইড ততটাই দুর্বল হয়ে পড়বে যদি টনি ক্রুসকে সিঙ্গেল পিভট সিস্টেমে খেলানো হয়। স্যার এলেক্স ফারগুসনের সেই বিখ্যাত উক্তিটি এখানেও টানব। তিনি বলেছিলেন, এটাক আপনাকে একটা ম্যাচ জিতাবে কিন্ত ডিফেন্স জিতাবে ট্রফি!জোয়াকিম লোও কথাটি ভালভাবেই বোঝেন।
এ কারণেই সামনে চলে আসবে সামি খেদিরার নাম। চমৎকার একজন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার। টিভিস্ক্রিনের আড়ালেই তার উপরে থাকবে বিশাল এক দায়িত্ব। সামি খেদিরা এবং টনি ক্রুস খেলবে ডাবল পিভট হিসেবে।ডাবল পিভট জিনিসটা একটি আলোচনা করা যাক। ডাবল পিভট সিস্টেম হল মিডফিল্ডে ২ জন মিডফিল্ডার এমনভাবে খেলবেন যখনি একজন এটাকে উঠে যাবে তখনি অন্যজন নিচে থেকে যাবেন তার ডিফেন্সিভ গ্যাপটা পূরণ করার জন্য। ডাবল পিভট সিস্টেমটাকে পেন্সিল আর রাবারের সাথে তুলনা করা যায়। যখনি কোন মিস্টেক হবে পেন্সিল থেকে, রাবার তখনি যেয়ে সেটাকে মুছে ফেলে দিবে। এখানে পেন্সিল বলা যাবে টনি ক্রুসকে। টনি ক্রুসকে কোচ বরাবরের মতই উপরে ওঠার লাইসেন্স দিবে। আর ক্রুস যখনই উপরে উঠবে তখন কাউন্টার এটাক বা ডিফেন্সে সলিডিটি এনে দেওয়ার জন্য দাঁড়াবেন সামি খেদিরা। প্রতিপক্ষ কাউন্টারে আসলে মিডফিল্ডে সেটা থামানোর চেষ্টা করবেন ডিফেন্সে সলিড সামি খেদিরা। এর ফলে ব্যাকলাইন চার ছিল চারই থাকবে। যার ফলে ডিফেন্স লাইনে ফাঁক থাকবে কম। বোয়াটেং, হামেলস, হেক্টর কিমিখরা এটাক থামিয়ে দিতে সক্ষম হবে এবং শেষ প্রহরী হিসেবে থাকবে নয়্যার! আসুন এখন দেখে নেওয়্ব যাক কোন সময় কোন ফর্মেশন সেট হবে খেলায়।

Image result for germany world cup 2018


৪-২-৩-১ ফর্মেশনে জার্মানি খেলা শুরু করবে। ডিফেন্স লাইন থেকে কাজ হবে বল মিডফিল্ডে টনি ক্রুসকে পাস করা। এটাকের সময় ফর্মেশনটা দাঁড়াবে ৪-১-৪-১ এ। যেখানে ব্যাক ফোরের সামনে থাকবেন খেদিরা এবং টনি ক্রুস যোগ দিবে এটাকিং সাইডে। ফ্রন্ট সাইডে রয়েস,ক্রুস,ওজিল,মুলার,ওয়ার্নাররা প্রতিপক্ষের ডিফেন্সকে খুন করে আসতে পারবে যেকোন সময়। আবার রাইট সাইডে মুলারের কাজ থাকবে তুলনামূলক কম। কিমিখ বরাবরের মতই ওভারল্যাপ করবে এবং কোচ এটার লাইসেন্সও দিবে। কারণ এটাকে কিমিখ অনেক ভাল। কিমিখ যখন ওভারল্যাপ করে উপরে উঠে আসবে মুলার তখন লেফট সাইডে বক্সের দিকে চলে আসবে গোল স্কোরিং চান্স খোজার জন্য। এসময় টনি ক্রুস মিডফিল্ডে একটু নিচে থাকবে ডিফেন্সিভ কারণে। ফর্মেশনটা এসময় হবে ৩-২-৪-১ এর মত যা অনেকটা ৩-১-১-৪-১ এর মত যেখানে ক্রুস খেদিরা থেকে সামান্য উপরে থাকবে কিন্ত ডিফেন্সিভ কারণে সেটি খুব উপরে হবে না। ব্যাক থ্রিকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য এসময় দায়িত্ব থাকবে ক্রুস, খেদিরা ২ জনের উপরেই।ডিফেন্সিভ খেলার সময় ফর্মেশন হতে পারে ৪-৩-২-১। তখন ফ্রন্ট ৩ জনের মাঝে কেউ একজন নিচে নেমে এসে ডিফেন্সিভ লাইনে সাহায্য করবে।এরকমই হতে পারে জার্মানির এবারের বিশ্বকাপের ফর্মেশন। যেখানে তারা আবারও ৪-১-৪-১ বা ৩-২-৪-১ এ খেলে ২০১৪ এর ব্রাজিল বা পর্তুগালের মত যেকোন দলের ডিফেন্স লাইনকে এলোমেলো করতে পারবে। আবার ৪-৩-২-১ ফর্মেশন খেলে ডিফেন্স সলিড করে আর্জেন্টিনার সাথে ফাইনালের মত ১-০ গোলের জয়ও এনে দিতে জার্মানিকে।সময়ই বলে দিবে জোয়াকিম লোর জার্মানি কতদূর যেতে পারে রাশিয়া বিশ্বকাপে। কিন্ত ট্যাক্টিক্যালি যে তাদের সামর্থ্য অন্য যেকোন দলকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মত তা সহজেই অনুমান করা যায়।

 

Written By

Mohammad Ali

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *