অস্ট্রিয়া পশ্চিম ইউরোপের একটি রাষ্ট্র। এদেশে ৯টি ফেডারেল রাজ্য রয়েছে। এটি ইউরোপের ৬টি রাষ্ট্রের অন্যতম যারা স্থায়ীভাবে নিরপেক্ষতা ঘোষণা করেছে। অস্ট্রিয়া ১৯৫৫ থেকে জাতিসংঘের এবং ১৯৯৫ থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য। ইউরোপের এই দেশটি বসবাসের জন্য খুবই উপযোগী। কারণ, এখানে অপরাধ মাত্রা খুবই কম।
আর্থিক মাথাপিছু আয়ের হিসেব অনুযায়ী অস্ট্রিয়া পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী দেশগুলোর একটি। দেশটির অধিবাসীদের জীবনযাত্রার মান এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার মানের দিক থেকেও অনেক উন্নত।
অস্ট্রিয়াতে মূলত জার্মান ভাষার একটি পরিবর্তিত রূপ ব্যবহৃত হয়। এর নাম অস্ট্রীয় জার্মান। অস্ট্রিয়ার পাঁচটি প্রধান শহর হল ভিয়েনা, গ্রাৎস, লিনৎস, জালৎসবুর্গ এবং ইন্সব্রুক।
Image Source: traveltraingle.com
ভিয়েনা অস্ট্রিয়ার রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর ও বসবাসের জন্য সেরা শহর হিসেবে ভিয়েনাকে বিবেচিত করা হয়। এছাড়াও এ শহর অস্ট্রিয়ার অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রাণকেন্দ্র। শহরটি দানিউব নদীর দুই তীরে অবস্থিত। ভিয়েনা ইউরোপের সবচেয়ে রাজকীয় শহরগুলোর একটি। এখানে অনেক জমকালো বাসভবন, রাজপ্রাসাদ, পার্ক ও গির্জা আছে।
ভ্রমণের ক্ষেত্রে পৃথিবীর সবচেয়ে বন্ধুসুলভ দেশ হিসেবেও স্বীকৃত হয়েছে অস্ট্রিয়া। সারাবিশ্বের ভ্রমণকারীদের পাঠানো ভ্রমণ অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে এক জরিপ চালিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে ভ্রমণবান্ধব দেশের এই তালিকা তৈরি করেছে বুকিং ডট কম। চোখ জুড়ানো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং অসাধারণ সব ঐতিহাসিক স্থাপনার কারণে প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় অস্ট্রিয়া।
এছাড়াও অস্ট্রিয়ার শিক্ষাব্যবস্থা খুবই মানসম্পন্ন। অস্ট্রিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সর্বদা বিশ্ব র্যাংকিং শীর্ষ সারিতে থাকে। বর্তমানে অস্ট্রিয়ায় পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, অস্ট্রিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রয়েছে বিনা বেতনে বা স্বল্প বেতনে উচ্চশিক্ষা অর্জনের সুযোগ। অস্ট্রিয়ার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় হলো,
• University of Vienna
• Vienna University of Technology
• Universität Innsbruck
• Karl-Franzens University of Graz
• Medical University of Vienna
University of Vienna ইউরোপের পুরনো ও বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম। ১২০টির বেশি ডিগ্রি প্রোগ্রাম পড়ার সুযোগ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২২টি ব্যাচেলর প্রোগ্রাম, ২৯টি মাস্টার্স প্রোগ্রাম, ৪৯টি ডিপ্লোমা প্রোগ্রাম এবং ২৪টি টিচার অ্যাক্রিডিয়েশন প্রোগ্রাম ছাড়াও ৮০টি ক্ষেত্রে ডক্টরাল প্রোগ্রাম পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেসব বিষয়ে পড়ানো হয়
অস্ট্রিয়ার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যাচেলর অব সায়েন্স, মাস্টার অব মার্কেটিং, মেডিকেল সায়েন্স ও মেডিসিন (অ্যানেস্থেসিওলজি, কার্ডিওলজি, ডার্মাটোলজি, ভেনেরোলজি, গাইনোকোলজি, ইসিওনোলজি, কেমোথেরাপি, ইন্ডোক্সিনোলজি, গ্যাস্ট্রোয়েন্টারোলজি, হেমাটোলজি, নেফরোলজি, নিউক্লিয়ার মেডিসিন, অর্থোপেডিক, সার্জারি, প্যাথলজি, রেডিওলজি, ইউরোলজি ইত্যাদি), ডিপ্লোমা ইন ক্রিয়েটিভ আর্টস, একাডেমিক ইংলিশ, ব্যাচেলর অব ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস, জেনারেল ইংলিশ, ফটোগ্রাফি কোর্স, ডিপ্লোমা অব কমার্স, ডিপ্লোমা অব প্রপার্টি সার্ভিস, মাস্টার্স অব আর্টস, ডিপ্লোমা অব ইঞ্জিনিয়ারিং, আর্কিটেকচার, প্লাস্টিক আর্টস অ্যান্ড ডিভাইস, ফাইন আর্টস, ভিজ্যুয়াল কমিউনিকেশন, মিউজিক, ম্যানেজমেন্ট, ট্যুরিজম, হোটেল অ্যান্ড ক্যাটারিং ম্যানেজমেন্ট, বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন্স, ল’, অ্যাকাউন্টিং, মার্কেটিং, ইনফরমেশন সায়েন্স, সোশ্যাল সায়েন্স, টেলিকমিউনিকেশন, কম্পিউটার সায়েন্স, ফিন্যান্স, মিডিয়াসহ আরো অনেক কোর্সে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে।
১. উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা
অস্ট্রিয়ায় মোট ২২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ২১টি এপ্লাইড সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১৩টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।
উচ্চশিক্ষার জন্য অস্ট্রিয়ার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অনার্স, মাস্টার্স, ডিপ্লোমা, পিএইচডি ডক্টরাল ও বিভিন্ন সার্টিফিকেট কোর্স বিদ্যমান। এসব কোর্সের শিক্ষামান আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।
এদেশে অনার্স কোর্সের মেয়াদ তিন থেকে চার বছর, মাস্টার্স কোর্স এক থেকে দুই বছর এবং পিএইচডি তিন থেকে চার বছর মেয়াদি হয়ে থাকে। অস্ট্রিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাধারণত বছরে ২ বার আবেদন করা যায়। সামার ও উইন্টার এ দুই সেমিস্টারে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়।
Image Source: achilinks.com
এদেশে অধিকাংশ কোর্স জার্মান ভাষায় পড়ানো হয়। তবে ২০০টির মতো ইংরেজি কোর্সও রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষা দক্ষতার প্রমাণপত্র দেখাতে হবে।
যদি আপনি জার্মান ভাষায় পড়াশোনা করতে চান, তাহলে জার্মান ভাষা জানা বাধ্যতামূলক। অনেক অস্ট্রিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ই বিদেশী ছাত্রদের জার্মান ভাষার ওপর কোর্স করায়। আবার আপনি চাইলে বাংলাদেশ থেকে জার্মান ভাষা শিখে যেতে পারেন।
২. কাজের সুযোগ
ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত অন্যান্য দেশের মতো এদেশেও শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে প্রায় ১৫ থেকে ২০ ঘণ্টা খন্ডকালীন কাজ করতে পারে। তাছাড়া ছুটির সময় ফুলটাইম কাজ করা যায়। এখানে বিভিন্ন রেস্তোরা, শপিংমল, হোটেলে কাজ করতে পারবেন। জার্মান ভাষায় পারদর্শী হলে আপনি সহজেই কাজ পেয়ে যাবেন।
৩. বিনা বেতনে বা স্বল্প খরচে পড়ার সুযোগ
ইউরোপের যে সকল দেশে স্বল্প খরচে পড়াশোনা করা যায় তার মধ্যে অস্ট্রিয়া অন্যতম। অস্ট্রিয়ার সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাধারণত শিক্ষার্থীদের কোনো প্রকার টিউশন ফি দিতে হয় না, ক্ষেত্র বিশেষে লাগলেও সেটা খুবই সামান্য। তবে ভর্তির সময় রেজিস্ট্রেশন ও আপ্লিকেশন ফি বাবদ কিছু টাকা দিতে হবে।
Image Source: autoeurope.com
কিন্তু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কিছু কোর্সের ক্ষেত্রে টিউশন ফি দিতে হয়, তবে তা ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম।
৪. স্থায়ী বসবাস সুযোগ
পড়াশোনা শেষে শিক্ষার্থীরা চাকরি খোঁজার জন্যে ছয় মাসের একটি জব সার্চ ভিসা পাবেন। এছাড়া স্থায়ীভাবে বাস করতে চাইলে নূন্যতম পাঁচ বছর বৈধভাবে একটানা বাস করার প্রমাণপত্র দেখিয়ে পার্মানেন্ট রেসিডেন্সির (পিআর) জন্য আবেদন করতে হবে।
৫. শান্তিপূর্ণ দেশে বসবাসের সুযোগ
আলাদা আলাদা ২৩টি পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে ইকোনমিকস অ্যান্ড পিস ইন্সটিটিউট গ্লোবাল পিস ইনডেক্স শীর্ষ শান্তিপূর্ণ দেশের তালিকা তৈরি করেছে। এ তালিকায় মধ্য ইউরোপের দেশ অস্ট্রিয়া তৃতীয় স্থানে।
Featured Image: theveinnablog.com