এফএমসিজি (FMCG) বা ফার্স্ট মুভিং কনজিউমার গুডস শিল্প বলতে এমন শিল্প কারখানা বোঝায়, যারা মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্যগুলো উৎপাদন ও সরবরাহ করে থাকে। খাবার, প্রসাধনী, পানীয়, সিগারেট ইত্যাদি হচ্ছে মানুষের নিত্য ব্যবহার্য ভোগ্য পণ্য। মানুষের দৈনন্দিন চাহিদার কথা বিবেচনা করে গড়ে উঠেছে এফএমসিজি শিল্প। আপনার দক্ষতা ও যোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে, আপনিও এ শিল্পে আপনার ক্যারিয়ার গঠন করতে পারেন।
এফএমসিজি শিল্পে বিভিন্ন ধরনের পন্য উৎপাদন করা হয় এবং এসব পণ্য খুব দ্রুত মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হয়; এজন্য এফএমসিজি শিল্পে বিভিন্ন পদে প্রচুর জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। এফএমসিজি শিল্পের সেরা ৫ টি চাকরি সম্পর্কে, এ আর্টিকেলটিতে আলোচনা করবো। এ আর্টিকেলটি পাঠ করে, আপনি এফএমসিজি শিল্পের চাকরি সম্পর্কে ধারণা পেতে পারেন, যা আপনার ক্যারিয়ার গঠনের সিদ্ধান্ত নিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
১. স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা উপদেষ্টা
স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা উপদেষ্টার প্রধান কাজ হলো, কারখানায় কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিরাপত্তা বিধানের যাবতীয় কার্যাবলি সম্পাদন করা। একজন স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা উপদেষ্টা সর্বদা কারখানা পর্যবেক্ষণ করে দেখে থাকে, কারখানায় কাজের উপযোগী পরিবেশ বিরাজ করছে কি না। কোনো ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি লক্ষ্য করলেই, তাৎক্ষণিকভাবে সবার কী করণীয়? সে সম্পর্কে দিকনির্দেশনা ও পরামর্শ দেন এবং সমস্যা সমাধানের পন্থা খুঁজে বের করেন। আবার কোনো কর্মীর স্বাস্থ্য সমস্যা হলে, সে যেনো উপযুক্ত চিকিৎসা সেবা পায়; সেটাও নিশ্চিত করে থাকেন। সর্বোপরি বলা যায়, কোনো প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা উপদেষ্টা নিয়োগ দিয়ে থাকে, যাতে কারখানায় কাজকর্মের উপযুক্ত পরিবেশ সর্বদা বজায় থাকে এবং কোনো ভাবে বিঘ্নিত হলে, যেনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়।
এ পদে চাকরি করতে হলে উচ্চতর ডিগ্রি মূখ্য বিষয় না, তবে যোগাযোগের দক্ষতা, সমস্যা সমাধান করার যোগ্যতা এবং স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ে অভিজ্ঞতা থাকা খুবই জরুরি। আপনার এমন দক্ষতা ও যোগ্যতা থাকলে, এফএমসিজি শিল্পের কোনো প্রতিষ্ঠানে এ পদে চাকরি করতে পারেন। প্রাথমিক অবস্থায় প্রায় ২৪ হাজার পাউন্ড বা ২৫ লাখ টাকার মতো বছরে বেতন পাবেন। পরবর্তীতে সিনিয়ার উপদেষ্টা হয়ে গেলে বছরে প্রায় ৫০ হাজার পাউন্ড বা ৫২ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব হবে।
২. বিক্রয় প্রতিনিধি
একজন বিক্রয় প্রতিনিধি প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পণ্য কাস্টমারদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার প্রক্রিয়া পরিচালনা করে থাকেন। বিক্রয় প্রতিনিধিরা সাধারণত পণ্য সরবরাহ ও পেমেন্ট সংগ্রহে মূখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। এ কাজের জন্য স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার প্রয়োজন হয় না, তবে উচ্চতর ডিগ্রি থাকলে খুবই ভালো; সাধারণত যোগাযোগের দক্ষতা ও কাস্টমারদের আকৃষ্ট করার যোগ্যতা থাকলেই, বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করা সম্ভব।
একজন বিক্রয় প্রতিনিধির বার্ষিক গড় বেতন প্রায় ২০ হাজার পাউন্ড; যা বাংলাদেশের হিসাব অনুযায়ী প্রায় ২১ লক্ষ টাকা।
৩. ওয়ারহাউজ অপারেটর
নিত্য ব্যবহার্য পণ্যগুলো তৈরি হওয়ার পর কারখানা থেকে নিয়ে এসে গুদাম ঘরে রাখা হয়; তারপর সেখান থেকে বিক্রির জন্য সরবরাহ করা হয়। ওয়ারহাউজ অপারেটররা কারখানা থেকে পণ্য গুদামঘরে আসার পর থেকে শুরু করে বিক্রির জন্য সরবরাহ করার পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়া তথা পণ্য দেখাশোনা ও হিসাব নিকাশ রাখার কাজ তদারকি করে থাকে। এছাড়াও গুদামঘরে পণ্যের যেনো কোনো ক্ষতি না হয়, সে বিষয়টিও নিশ্চিত করে। ওয়ারহাউজ অপারেটর হওয়ার জন্য সুঠাম দেহের অধিকারী হওয়া দরকার এবং পূর্ববর্তী সময়ে সহকারী হিসেবে কোনো প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকা ভলো।
ওয়ারহাউজ অপারেটর হওয়ার জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা মুখ্য বিষয় না। একজন ওয়ারহাউজ অপারেটরের বার্ষিক গড় বেতন প্রায় ১২ হাজার পাউন্ড। ভালো অভিজ্ঞতা অর্জিত হলে বছরে প্রায় ১৮ হাজার পাউন্ড বা ১৯ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব।
৪.সাপ্লাই চেইন ম্যানেজার
একজন সাপ্লাই চেইন ম্যানেজার পণ্য উৎপাদন ব্যবস্থার কাঁচামাল সংগ্রহ থেকে শুরু করে পণ্য বাজারজাতকরণের পুরো প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। পণ্য উৎপাদনের জন্য মানসম্মত কাঁচামাল সংগ্রহ করা, পণ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ার অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করা, পণ্যের মান সমুন্নত রাখা, উৎপাদিত পণ্য সঠিকভাবে ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করাসহ বিভিন্ন কার্যাবলি সাপ্লাই চেইন ম্যানেজার সম্পাদন করেন।
এ পদে চাকরি পেতে হলে, কোনো বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করার পাশাপাশি আত্মবিশ্বাস, ব্যবসা সংক্রান্ত জ্ঞান,লিডারশীপ, সমস্যা সমাধানের যোগ্যতা, ব্যবস্থাপনা ও ভালো যোগাযোগ স্থাপনের ন্যায় দক্ষতাগুলো অবশ্যই থাকতে হবে।
এসব যোগ্যতা ও দক্ষতা আপনার থাকলে, সাপ্লাই চেইন ম্যানেজার হিসেবে ক্যারিয়ার গঠন করতে পারেন। আপনার যোগ্যতা বৃদ্ধির জন্য চেইন ব্যবস্থাপনার উপরেও ডিগ্রি নিতে পারেন, এতে কর্মক্ষেত্রে আপনার চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। প্রাথমিকভাবে একজন জুনিয়ার সাপ্লাই চেইন ম্যানেজারের বার্ষিক বেতন প্রায় ২০ হাজার পাউন্ড বা ২১ লাখ টাকা। আর অভিজ্ঞতা অর্জিত হলে বছরে প্রায় ৬০ হাজার পাউন্ড বা ৬২ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব।
৫. প্রোকিউরমেন্ট অ্যানালিস্ট
একজন প্রোকিউরমেন্ট অ্যানালিস্ট সাধারণত পণ্যের উৎপাদন, গুণাগুণ, মান, চাহিদা, খরচ, মূল্য ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা ও বিশ্লেষণ করেন। এ পদে কর্মরত কর্মকর্তারা পণ্যের গুণগত মান বজায় রাখা, বাজারে কী ধরনের পণ্যের চাহিদা বেশি, মূল্য কত নির্ধারণ হবে, কী ধরনের কাঁচামাল ব্যবহার করা প্রয়োজন, প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন কৌশল কেমন হবে ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বিশ্লেষণ, গবেষণা ও পর্যালোচনা করে; প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পরিষদকে দিকনির্দেশনা ও পরামর্শ দিয়ে থাকে।
এ পদে চাকরি করার ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা মূখ্য বিষয়। ইঞ্জিনিয়ারিং, হিসাববিজ্ঞান ও ব্যবসা সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করলে, এ পদে চাকরি পাওয়া বেশ সহজ হয়। প্রাথমিক অবস্থায় একজন প্রোকিউরমেন্ট অ্যানালিস্টের বার্ষিক গড় বেতন প্রায় ২৫ হাজার পাউন্ড বা ২৫ লাখ টাকা। পরবর্তীতে এ বেতন বেড়ে ৫০ হাজার পাউন্ড বা ৫২ লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
আপনার যোগ্যতা ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে, এফএমসিজি শিল্পের এ ৫ টি সেরা চাকরি থেকে কোনো একটি চাকরিকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করুন। তাহলে খুব সহজেই একটি সফল ক্যারিয়ার গঠন করতে সক্ষম হবেন।
Featured Image:Jobgranny.com