শত্রুকে ভালোবাসা! শুনতে নিশ্চয়ই অবাক লাগছে? নিশ্চয়ই ভাবছেন শত্রুকে আবার ভালবাসা যায়? আমার উত্তর হলো: হ্যাঁ, যায়। শত্রুকে ভালোবাসার সুনির্দিষ্ট কারণ আছে। আমার বিশ্বাস এই কারণগুলো জানার পর আপনি নিশ্চয়ই শত্রুকে ভালোবাসবেন। কেননা আপাতদৃষ্টিতে শত্রু আপনার ক্ষতি করার চেষ্টা করলেও ক্ষতি করার এই প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে সে আসলে আপনার উপকার করে। আপনি বিচক্ষণ হলে সেই উপকারগুলো ধরতে পারবেন, যা আপনার চরিত্র উন্নয়নে সহায়তা করবে।
দিনশেষে নিশ্চয়ই মনে মনে শত্রুকে বাহবা দিবেন এই ভেবে যে সে দূর থেকে ক্রমাগত আপনার উপকার করে চলেছে। এই নিবন্ধে আমি এমন কয়েকটি কারণ বিশ্লেষণ করবো যার নিরিক্ষে আপনার শত্রুকে বিচার করলে আপনি কেবল তার প্রশংসায় করবেন।
১. ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটে
কখনো কখনো ছোট ছোট ভুল বোঝাবুঝি থেকে বিরাট শত্রুতার সৃষ্টি হয়। খুব আবেগপ্রবণ বা সাধারণ কিছু থেকে বৃহৎ ভুল বোঝাবুঝির জন্ম হয়। ভালভাবে খুঁজলে এই সম্পর্ক অবনতির কোনো যথার্থ কারণ আপনি পাবেন না। আপনার শত্রুর পক্ষ থেকে বিচার করলেও একই রকম ফলাফল পাওয়া যাবে।
এমন পরিস্থিতিতে খোলামেলাভাবে শত্রুর সাথে আলোচনা করুন। দেখবেন সকল ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে, আর শত্রু আপনার ভাল বন্ধুতে পরিণত হয়েছে।
২. আপনি কি সত্যিই ঘৃণা করেন?
বাস্তবতা হলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আবেগপ্রবণ হয়ে মানুষ শত্রুতার বিষবাষ্প ছড়ায়। আবেগপ্রবণ অবস্থা ঘুরে গেলেই শত্রুতা হারিয়ে যায়। সুতরাং আপনি যদি সত্যিই সুখী এবং স্বচ্ছন্দ জীবন-যাপন করতে চান তবে এই শত্রুতার প্রবণতা থেকে বের হয়ে আসুন। কেননা আপনি নিশ্চয়ই এমন হালকা আবেগ নিয়ে দিনের পর দিন কষ্ট পেতে চাইবেন না। তাছাড়া এই ভুল আবেগ কখনই আপনাকে সুখি করবে না।
ঘৃণা করা সত্যিই খারাপ কাজ। সুতরাং সর্বাত্মকভাবে আপনি এ আচরণ ত্যাগ করার চেষ্টা করুন। মানুষের জীবনের সবচেয়ে চমৎকার সত্য হলো কেউই সারাজীবন শত্রুতা নিয়ে বাঁচতে পারে না। একটা নির্দিষ্ট সময় পর শত্রুতার রাগ দূর হয়ে যায়।
সুতরাং নিজেকে প্রশ্ন করুন, ঘৃণা করার এই অভ্যাস আপনি আর কতদিন বাঁচিয়ে রাখতে চান? আর কতদিন মানসিকভাবে অসুখী থাকতে চান? আমার বিশ্বাস আপনি উত্তর পেয়ে যাবেন এবং দ্রুতই ঘৃণা করার অভ্যাস ত্যাগ করবেন।
৩. শত্রু আপনার মিত্র হয়ে যেতে পারে
শত্রু সারাজীবন শত্রু থাকে না। অথবা অন্যভাবে বলা যায়, শত্রুতার বিষয়ে আজীবন স্থায়ী হয় না। শত্রুর প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করে তার সাথে শান্তিপূর্ণ সহবস্থান সৃষ্টির প্রচেষ্টা চালাতে পারেন। এর জন্য শত্রুতা সত্ত্বেও দুজনের মধ্যে কিছু সাধারণ বিষয় খুঁজে বের করুন এবং দুজনের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কিছু চমৎকার বিষয় তার সামনে স্পষ্ট করে তুলুন। দু’জনের মধ্যে সাধারণ এবং স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় অনুধাবন করতে পারলে শত্রু নিমেষেই আপনার বন্ধুতে পরিণত হবে। এভাবে আপনি বিচক্ষণতার সাথে শত্রুকে বন্ধুতে পরিণত করতে পারেন। তাতে অযথা ক্ষতির সম্ভাবনা থেকে রেহাই পাবেন।
তবে কাজটি সহজ নয়। এর জন্য আপনার কিছু কৌশল ব্যবহার করতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে মানুষের সাথে যোগাযোগের দক্ষতা এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি কাজে লাগবে। মানুষে মানুষে যোগাযোগ স্থাপন করার দক্ষতা কাজে লাগিয়ে নিখুঁতভাবে আপনি কাজটা করতে পারলে অচিরেই নিজেই শত্রুর কাছে নেতা হয়ে উঠবেন।
৫. সচেতনতা সৃষ্টি করে
আপনার কোনো শত্রু না থাকলে শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হওয়া বা বিপদগ্রস্ত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকে না। আর যার কোনো বিপদের সম্ভাবনা নেই তার সচেতনতার মাত্রাও কম। শত্রু আপনাকে সবসময় তটস্থ রাখে। নিজের জীবন, পরিবার, সম্পদ, কর্মক্ষেত্র ইত্যাদি সবকিছু সুরক্ষিত রাখার জন্য আপনাকে সচেতন করে তোলে। শত্রুর হাত থেকে রক্ষা পেতে এই সচেতনতা আপনার জীবনকে আরো বেশি পরিপাটি এবং নিয়মানুবর্তী করে তোলে। স্বভাবতই যা আপনাকে সাফল্যের পথে ধাবিত করে।
আপনার আপনজনেরা হইতো দিনের পর দিন সুশৃঙ্খল জীবন যাপন করতে আপনাকে উদ্ভুদ্ধ করেও ব্যর্থ হতে পারে। কিন্তু শত্রু দূর থেকে আপনার জীবনকে সুশৃংখল করে তুলতে সফলভাবে কাজ করে। তাছাড়া মানুষ বন্ধুর ভালবাসার চেয়ে শত্রুর ভয়কে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। যে কারণে আপনজনের কথা উপেক্ষা করলেও, মানুষ শত্রুর ভয় উপেক্ষা করে না। সুতরাং এক্ষেত্রেও শত্রু দূর থেকে আপনার উপকার করেই চলে।
৫. নেতিবাচক মন্তব্য আপনার সাফল্যের সোপান
আপনার শত্রু নিশ্চয়ই আপনার সম্বন্ধে ভালো কিছু বলবে না। আপনার সম্বন্ধে নেতিবাচক কথা প্রচারের স্বার্থে সে আপনাকে নিয়ে গবেষণা করবে এবং খুঁজে খুঁজে আপনার দোষ ত্রুটি উদঘাটন করবে। মনে রাখবেন শত্রুর বলা প্রতিটি কথা মিথ্যা নয়। তারা যা বলে তার কিছু না কিছু সত্যি। আপনাকে ঘৃণা করে শত্রুর প্রচার করা কথায় এমন কিছু নির্মম সত্য থাকে যা আপনার আজই ত্যাগ করা উচিত।
সুতরাং শত্রুর সব কথা নেতিবাচকভাবে নিবেন না। তার কথার ভিত্তিতে নিজেকে মূল্যায়ন করুন। তার বলা নেতিবাচক কথা আপনার জীবনের ভুল সংশোধন করে আপনাকে আরও সফল ও ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ করে তুলতে সাহায্য করবে। শত্রুর পক্ষ থেকে আপনার জন্য এটি সবচেয়ে বড় উপহার।
শত্রু মানে ক্ষতিকর মানুষ নয়। কখনো কখনো তারা উপকারীও হয়। উপরিউক্ত আলোচনা থেকে নিশ্চয়ই তা অনুধাবন করতে পেরেছেন। এবার নিজেকে সংশোধন করে শত্রুর সাথে সকল বিরোধ মিটিয়ে ফেলুন এবং সুখী-স্বাচ্ছন্দ জীবনযাপন করুন।