সবসময় উচ্চপদস্থ ব্যক্তি আর সেলিব্রেটিদের ডিভাইস, ওয়েবসাইট, ব্যক্তিগত সামাজিক যোগযোগ আইডি হ্যাক হয় কেন? তাহলে কী হ্যাকাররা শুধু বিখ্যাত ও সেলিব্রেটিদের টার্গেট করে?
প্রফেশনাল হ্যাকাররা আসলে সবাইকেই টার্গেট করে। তবে সেইসব ব্যক্তিদের ডিভাইস হ্যাক করা তাদের পক্ষে সহজ হয় যারা অধিক সময় নানা ডিভাইসের সাথে যুক্ত থাকেন। আজকের দিনে সেলিব্রেটি বা বিখ্যাত মানুষের প্রযুক্তির উপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। তাই তাদের ব্যক্তিগত সব তথ্য অনলাইনে পাওয়া যায়। আবার তারা সব ধরণের ব্যক্তিগত ও অর্থনৈতিক যোগাযোগ করেন অনলাইনে, নিজের স্মার্টফোন বা ল্যাপটপ থেকে।
আর তাই অনেক ধরণের যোগযোগ করায় তাদের যাবতীয় তথ্য ও পাসওয়ার্ড ল্যাপটপ বা স্মার্টফোনেই থাকে। এমন কোন ডিভাইস হ্যাক করতে হ্যাকারের শুধু প্রয়োজন হয় একটি সুত্র – তথ্য। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ইমেইলে বা অন্য কোন মাধ্যমে তার আপনার জন্য অপেক্ষমান জেলের মত বড়শি পেতে বসে থাকে। অসতর্ক ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা হ্যাকারদের ফাঁদে পা দিয়ে আর ফেঁসে যায়।
তাহলে হ্যাকারদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় কী? উপায় আছে। এই নিবন্ধে এমন কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো যে কাজগুলো করা বাদ দিলে আপনি হ্যাকারদের থেকে অনেকটা নিরাপদ থাকতে পারবেন।
পাসওয়ার্ড বুক
হ্যাকারের কবলে না পড়া পর্যন্ত পাসওয়ার্ড বুক খুব চমৎকার একটি জিনিস। তবে হ্যাকারের কবলে পড়লেন তো একবারে সবকিছু খোয়ালেন!
নিরাপত্তার কথা ভেবেই আসলে পাওয়ার্ডের জটিল করা হয়। পাসওয়ার্ডের মধ্যে বড় ও ছোট বর্ণ, বিভিন্ন প্রতীক, স্পেস থাকায় সব পাসওয়ার্ড মুখস্থ রাখা সত্যিই খুব কঠিন। কিন্তু তাই বলে পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করার জন্য পাসওয়ার্ড বুক ব্যবহার করা খুবই বিপদজনক। এটা অনেকটা শিকারের জন্য মাছ জড়ো করতে চার ছিটানোর মত অনলাইনে চার ছিটিয়ে হ্যাকার ডেকে আনার মত ব্যাপার। তাই পাসওয়ার্ড বুক ব্যবহার করার বদলে আপনার ডিভাইসের অন্য কোন ড্রাইভে গোপন কোড দিয়ে পাসওয়ার্ডগুলো সেভ করে রাখতে পারেন। এতে অনেকটা নিরাপদ থাকা যাবে। তবে সবচেয়ে ভাল হয় পাসওয়ার্ডগুলো মুখস্থ করে রাখলে।
দুর্বল এবং পুরানো এন্টিভাইরাস ব্যবহার
চুরি ডাকাতির প্রবল ঝুঁকি থাকা কোনো এলাকায় নিজের বাড়িতে পুরনো ও দূর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকার চেয়ে না থাকা ভালো। কেননা এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভাঙতে চোরের মোটেও কষ্ট করার প্রয়োজন হবে না। একই রকম ভাবে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা কম্পিউটারে ফ্রি অথবা মেয়াদ উত্তির্ণ দুর্বল ও পুরানো এন্টিভাইরাস ব্যবহার করা অনেকটা হ্যাকারকে আমন্ত্রণ জানানোর মত ঘটনা।
ইন্টারনেটে প্রচুর ফ্রি এন্টিভাইরাস পাওয়া যায় সত্যি। কিন্তু এগুলো খুবই দুর্বল আর অকার্যকর। কখনো কখনো এই ফ্রি এন্টিভাইরাসই বিপদজনক! বাজারে ফ্রি পণ্য সম্বন্ধে নিশ্চয়ই আপনাদের তিক্ত বাস্তব অভিজ্ঞতা আছে। আর অনলাইনে যখন কেউ ফ্রি নিরাপত্তা দিতে চায়, তখন বিষয়টা আরও বেশি ভাবনার। বুঝতে হবে এখানে অন্য কোনো স্বার্থ আছে।
সুতরাং সবেচেয়ে নিরাপদ হলো নির্দিষ্ট মূল্য পরিশোধ করে, উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন সচল এন্টিভাইরাস কিনে ব্যবহার করা এবং নিয়মিত আপডেট করা। তাহলে হ্যাকিং ঝুঁকি থেকে অনেকটা নিরাপদ থাকা যাবে।
সবকিছুর জন্য একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার
ভিন্ন ভিন্ন অ্যাকাউন্টের জন্য ভিন্ন ভিন্ন পাসওয়ার্ড মনে রাখা সত্যি খুব কঠিন। আর তাই অনেকে পাসওয়ার্ড ভুলে যাওয়ার ঝামেলা এড়াতে সকল সাইটে সব অ্যাকাউন্ডের জন্য একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেন। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছেন যদি কোন ভাবে এই একটি পাসওয়ার্ড কোন হ্যাকারের হাতে চলে যায় তাহলে আপনার কী পরিস্থিতি হবে? আপনি এইক সাথে সকল সাইটের সবগুলো অ্যাকাউন্ট হারাবেন। আর যেহেতু সবগুলো অ্যাকাউন্ট একই সাথে হারাবেন তাই অন্য কোন অ্যাকাউন্টের সূত্র ধরে হ্যাক হওয়া অ্যাকাউন্ট উদ্ধার করারও কোন সুযোগ থাকবে না।
সুতরাং সকল কাজে একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা একজনের হাতে জীবন রেখে দেওয়ার মত। এই ভুলটা কখনো করবেন না। তাতে হ্যাকার থেকে অনেকটা নিরাপদ থাকতে পারবেন।
অনলাইন আকর্ষণীয় কোন আমন্ত্রণে ক্লিক করা
অনলাইনে প্রায় অপরিচিত লোকের পক্ষ থেকে নানান ধরনের আকর্ষণীয় প্রস্তাব আসে। আপনাকে ডলার দেওয়া হবে, কোন পুরস্কার জিতেছেন, এ জাতীয় অফারের জন্য বিশেষ লিংক আপনাকে ইমেইল করে বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যক্তিগত বার্তা হিসেবে পাঠানো হয়। আবার কোন কোর হ্যাকার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দীর্ঘদিন আপনার গতিবিধি অনুসরণ করে আপনার পছন্দের কোন বিষয়ের কথা লেখা লিংক পাঠায়।
আসলে ওই লিংককের আডালে বিশেষ কোড থাকে, যে কারণে ওই লিংকে ক্লিক করা মাত্র আপনার কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ হ্যাকারের হাতে চলে যায়। সুতরাং যেকোন বিশেষ অফার বা আকর্ষণীয় কিছু দেখলে ভাল করে যাচাই বাছাই না করে ক্লিক কথা থেকে বিরত থাকুন।
নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবা
অনেকে ভাবেন আমি তো কোন সেলিব্রেটি বা বিখ্যাত মানুষ না, কাজেই আমার ডিভাইস হ্যাক হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এই ধারণা ভুল। হ্যাকার যে কাউকে টার্গেট করতে পারে। আপনি বিখ্যাত কেউ না হতে পারেন কিন্তু অর্থ সম্পদ নিশ্চয়ই আছে। হ্যাকার আপানর ব্যাংক বা অন্য আর্থিক অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ হাতিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে পারে।
মানুষের জীবন যত সহজ হয়েছে ততটা বিপদসংকুলও হয়ে উঠেছে। কাজেই সচেতন হোন, আর নিরাপদ থাকুন। আশা করি উপরের বিষয়গুলো এড়িয়ে চললে হ্যাকারের হাত থেকে অনেকটা নিরাপদ থাকবেন।