মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষ হয়ে যাচ্ছে। এ কথা মাথায় আসলেই মনটা খারাপ হয়ে যায়। কারণ এবার নবজাতককে রেখে যেতে হবে কর্মস্থলে। একজন মায়ের জন্য চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি। এটা একমাত্র যিনি করেন তিনি বুঝতে পারেন কত ধরনের প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে পথ চলতে হয় একজন কর্মজীবী নারীকে। মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষে কাজে ফেরার পর, গ্রাস করতে পারে মন খারাপ, অনিচ্ছা আর আলসেমি। আবার কয়েক মাসের ছুটি শেষে নিজেকে নতুন করে কর্মক্ষেত্রে মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপার তো আছেই। তারপরও কাজ তো করতেই হবে।
আজকের নিবন্ধে মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষে কর্মক্ষেত্রে ফেরা নতুন মায়েদের জন্য ৫টি টিপস নিয়ে আলোচনা করব। চলুন তাহলে জেনে নিই।
১. আস্তে আস্তে কাজ শুরু করুন
কাজে ফিরে এসে দেখবেন কিছু কাজ এগিয়ে গেছে, কিছু কাজ বাকি রয়েছে, আবার নতুন কাজ জমা হচ্ছে। তবে কর্মক্ষেত্রে ফিরে এসেই কাজে ঝাঁপিয়ে পড়বেন না। একটু সময় নিন। সবকিছু একসাথে শুরু না করে নিজেকে প্রথমে কাজের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে কয়েকটা দিন সময় দিতে পারেন। এটাকে বলে নিজেকে ‘রি-ওরিয়েন্ট করা। অন্তত এক সপ্তাহ পর্যন্ত বড় কোনো মিটিং, প্রজেক্ট, প্রেজেন্টেশন বা ইভেন্টের দায়িত্ব নেওয়া থেকে বিরত থাকুন। তবে যদি বড় কোনো দায়িত্ব আপনার কাঁধে এসে পড়ে যায়, তাহলে অন্য কাজগুলোকে কিছু সময়ের জন্য সরিয়ে রেখে শুধু এ কাজের উপর ফোকাস করুন।
Image Source: momtrends.com
আপনি ছুটিতে থাকাকালীন সময় যে সব মিটিং, প্রোজেক্ট মিস করেছেন সেগুলো সম্পর্কে খোঁজ নিন, যে সকল ইমেইল চেক করা হয়নি সেগুলো চেক করুন। একদিনে হয়তো আপনি সব ইমেইল চেক করতে পারবেন না। তাই প্রথমে জরুরী ইমেইলগুলো চেক করে নিন, তারপর আস্তে আস্তে বাকি মেইলগুলো চেক করা শুরু করুন। সহকর্মীর কাছ থেকে কাজের হালনাগাদ ও অগ্রগতির খোঁজ নিন। বুঝিয়ে দেওয়া কাজ কত দূর হয়েছে, আর কী কী কাজ বাকি রয়েছে সে বিষয়ে জানুন। এক কথায়, কর্মক্ষেত্রে আবার নতুন করে মানিয়ে নিতে নিজেকে কিছুটা সময় দিন।
২. দিবাযত্ন কেন্দ্র’র খোঁজ নিন
বর্তমানে সময় পাল্টেছে, এখন বেশিরভাগ মায়েরা কর্মজীবী। অপরদিকে যৌথ পরিবারের প্রথা ভেঙে যাওয়ার কারণে শিশুর প্রতিপালনে তারা অনেকটা নিরুপায়ও। এ ধরনের পরিস্থিতিতে শিশুর রক্ষণাবেক্ষণ ও সার্বিক বিকাশের সাথী হতে পারে দিবাযত্ন কেন্দ্র। তাই আপনার বাসা বা অফিসের আশেপাশে কোনো ভালো দিবাযত্ন কেন্দ্র আছে নাকি খোঁজখবর নিয়ে দেখুন। অথবা আপনার পরিচিত অন্য কারো শিশু যদি এসব দিবাযত্ন কেন্দ্রে থেকে থাকে তাহলে তাদের কাছ থেকেও জানার চেষ্টা করুন।
Image Source: babysleepsite.com
ভালো করে খোঁজ নিয়ে তারপর আপনার সুবিধা ও পছন্দ অনুযায়ী আপনার শিশুকে দিবাযত্ন কেন্দ্রে দিতে পারেন। তবে আপনি যদি শিশুকে দিবাযত্ন কেন্দ্রে রাখতে না চান, তাহলে তাকে দেখাশোনার জন্য বিশ্বস্ত কাউকে নিয়োগ দিতে পারেন। আবার অনেকেই কাজের লোকের কাছে শিশুকে রেখে আসতে ভরসা পান না, সেক্ষেত্রে পরিচিত কোনো বন্ধু বা আত্মীয়কে অনুরোধ করতে পারেন আপনার অনুপস্থিতিতে বাচ্চার সাথে থাকার জন্য।
৩. উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে খোলামেলা আলোচনা করুন
নতুন মায়েদের অফিসের ম্যানেজার বা মানব সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে কিছু বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করা প্রয়োজন। এছাড়াও এ সময় প্রতিষ্ঠান পক্ষ থেকে নতুন মায়েদের কিছু বাড়তি সুযোগ সুবিধা দেয়া উচিত। বাচ্চার জন্মের পর মায়েরা কর্মক্ষেত্রে কাজের সময় ক্লান্তবোধ করতে পারে। তাই তাদের জন্য কাজের ফাঁকে বিশ্রামের ব্যবস্থা করা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব। কাজের ফাঁকে ১০ থেকে ১৫ মিনিটের জন্য বিরতি নিলে, কাজের খুব একটা ক্ষতি হবে না।
Image Source: araglegal.com
তবে কর্মক্ষেত্রে সব সময় সন্তানের অজুহাত দেখিয়ে সুবিধা নেওয়াও ঠিক নয়। অফিস থেকে যখন তখন ছুটি না নিয়ে ছুটি জমিয়ে রাখতে হবে, যাতে বাচ্চার অসুস্থতার সময় ছুটি নেওয়া যায়। অনেক সময় বাচ্চারা হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। সেজন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। জরুরি কোনো প্রয়োজনে যাতে অফিস থেকে ছুটি নেয়া যায় এটা অফিসের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে আগে থেকেই আলোচনা করে রাখতে হবে।
৪. নিজের মতো কাউকে খুঁজে বের করুন
নারীরা যখন মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষে কাজে ফেরেন, তখন স্বাভাবিকভাবেই মন পড়ে থাকে শিশুর কাছে। শিশুটি কী করছে, কী খাচ্ছে এসব চিন্তা করেই মন বিষণ্ণ হয়ে উঠে। কিন্তু মনে রাখবেন, এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি আপনি শুধু একা নন। সারা বিশ্বে আপনার মতো হাজার হাজার চাকরিজীবী মা রয়েছেন। সুতরাং নিজেকে কখনো একা ভাববেন না। যেকোনো পরামর্শ বা মনের কথা শেয়ার করার জন্য আপনার মতো কাউকে খুঁজে বের করুন। অর্থ্যাৎ আপনার পরিচিত কোনো কর্মজীবী মা থাকলে, তার সাথে আলাপ করতে পারেন। তারা তাদের জীবনের এ সময়টা কীভাবে পার করেছিলেন বা করছেন, কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারেন।
Image Source: cmphower.com
এছাড়াও ইন্টারনেটে সার্চ করে জেনে নিতে পারেন কীভাবে সন্তান ও কাজ দুটো একসাথে সামলাবেন। এখন ফেসবুকে ও অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন ধরনের গ্রুপ রয়েছে, যেমন: নতুন মায়েদের গ্রুপ, কর্মজীবী মায়েদের গ্রুপ ইত্যাদি। এরকম যেকোনো গ্রুপের মেম্বার হতে পারেন। এসব গ্রুপের মেম্বাররা নিজেদের জীবনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা সবার সাথে শেয়ার করে থাকেন। তাদের সাথে যোগাযোগ রাখলে বা নিজের মনের কথা শেয়ার করলে আপনি কিছুটা হলেও হালকাবোধ করবেন।
৫. নিজেকে সময় দিন
কথায় আছে, মায়ের চাকরি ২৪ ঘণ্টা- হোক সে গৃহিণী অথবা চাকরিজীবী। সেইসাথে নতুন মা হলে তো কথাই নেই। সারাদিন অফিস করে তারপর বাসায় এসে বাচ্চার দেখাশোনা করতে। নিজের প্রতি খেয়াল রাখার সময়ই হয় না। এ সময় অনেক মায়েরাই বিষণ্ণতায় ভোগেন। তাই নিজেকে সময় দিন ও নিজের যত্ন নিন।
যেসব মায়েরা শিশুদের বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন, সেইসাথে ঘরে বাইরে কাজ করছেন, তাদের উচিত প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, হালকা ব্যায়াম করা। এছাড়াও নিজেকে প্রাণবন্ত ও উৎফুল্ল রাখতে সময় পেলে বাচ্চাকে নিয়ে ঘুরতে বের হোন, পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম নিন, শরীরের প্রতি যত্নশীল হোন, নিজের শখের কাজগুলো করুন।
Featured Image: huffingtonpost.com