একটি নতুন ব্যবসা শুরু করা খুব সহজসাধ্য কাজ নয়। ব্যবসায় যেমন উত্থান থাকে, তেমনি পতনও হয়। উত্থান, পতন ও ব্যবসা একে অপরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যেকোনো নতুন ব্যবসায় ব্যবসায়িকভাবে কিছু মাস ভালো কাটে, কিছু মাস খারাপ কাটে। ব্যবসার শুরুতে কিছু সময় কাটে ব্যবসার প্রচার, প্রসার ও কর্মপ্রক্রিয়া নির্ধারনে এবং পরবর্তি সময় কাটে নির্ধারিত কর্মপ্রক্রিয়া বাস্তবায়ন, নতুন কর্মচারী নিয়োগ এবং যে সব কর্মচারী ঠিকভাবে কাজ করছে না, ব্যবসায় কোন অবদান রাখছে না; সেসব কর্মচারী বরখাস্তকরণে।
বর্তমান সময়ে অনেকেই আছেন যারা কর্পোরেট চাকরিতে কর্মরত থাকা অবস্থায় নিজের স্বাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠার দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। কর্মরত থাকার পাশাপাশি ব্যবসার প্রতি আগ্রহের সম্ভাব্য কয়েকটি কারণের মধ্যে একটি হলো, অনেকেই আছেন যারা অপরের অধীনস্থ থেকে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। এছাড়াও আর্থিক স্বচ্ছলতা এবং নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচয় দিতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করাও ব্যবসার প্রতি আগ্রহের কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম। কর্মরত থাকা অবস্থায় নিজের নতুন ব্যবসা শুরুর সবচেয়ে ভালো দিক হলো আর্থিক নিরাপত্তা। যেকোনো ব্যবসার শুরুতেই সেই ব্যবসা থেকে মুনাফার আশা করা সমীচীন নয়। ব্যবসার শুরু থেকে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মধ্যবর্তী আয়ের উৎস থাকা উচিৎ, যা উক্ত সময়কালে আর্থিক সহায়তা হিসেবে কাজ করবে।
কর্মরত থাকা অবস্থায় নতুন ব্যবসা শুরু করার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, আর্থিক নিরাপত্তা। এছাড়াও কর্মক্ষেত্র থেকে প্রতনিয়ত অভিজ্ঞতা অর্জন, নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কর্মরত থাকা অবস্থায় ব্যবসা শুরু করার সময় যে ৫টি বিষয় মনে রাখা আবশ্যক তা হলো:
১. কর্মক্ষেত্রের বাইরে কোনো বড় লক্ষ্য থাকা
আপনি আপনার কর্মক্ষেত্রে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন কিনা, এই প্রশ্নের জবাব যদি আপনার না জানা থাকে, তাহলে নিঃসন্দেহে আপনি ভুল জায়গায় কর্মরত আছেন। প্রায়শই দেখা যায়, কর্মচারীরা তাদের উর্ধতন কর্মকর্তাকে পছন্দ করেন না অথবা যে প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করছেন, সেই প্রতিষ্ঠানকে পছন্দ করেন না। যদি আপনার যথেষ্ট অভিজ্ঞতা থাকে এবং আপনার মনে হয়, আপনি যে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন সেখানে আপনার অভিজ্ঞতা এবং মেধার যথার্থ মূল্যায়ন হচ্ছে না, তাহলে আপনি আপনার অভিজ্ঞতার ক্ষেত্র অনুযায়ী স্বাধীন পরামর্শদাতা হিসেবে নিজের নতুন ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
২. কর্মক্ষেত্রের বাইরে নিজের আলাদা পরিচয় তৈরি করা
যখন আপনার মধ্যে নতুন ব্যবসা শুরুর স্পৃহা সৃষ্টি হবে, তখন আপনি নতুন ব্যবসা শুরুর জন্য কী করবেন তা না ভেবে আপনাকে ভাবতে হবে, পদক্ষেপগুলো কীভাবে নেবেন এবং কোন পন্থা অবলম্বন করবেন। নিজ কর্মক্ষেত্রের বাইরে আপনার এমন একটি পরিচিতি তৈরি করতে হবে যা আপনার পেশাদারিত্ব প্রকাশ করবে।
অনেকেই আছেন যারা কর্মক্ষেত্রে তাদের কাজের ধরন অনুযায়ী অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের অথবা ব্যক্তির কাছে তাদের নিজেদের প্রতিষ্ঠানের নামে বেশি পরিচিত। যেমন: ক প্রতিষ্ঠানের খ সাহেব। যখন আপনি আপনার নিজের ব্যবসা শুরু করার কথা ভাববেন, তখন অবশ্যই আপনি যে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন এবং সেই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আপনার যে পরিচিতি সৃষ্টি হয়েছে, তার বাইরেও আপনার নিজের এমন একটি পরিচিতি সৃষ্টি করতে হবে যা আপনার ব্যবসা শুরুর জন্য একটি সহায়কের ভূমিকা পালন করবে।
৩. গোপনে নিজের শ্রোতা তৈরি করা
আপনার ঘনিষ্ট সহকর্মীদের সাথে গোপনে আপনি আপনার নতুন ব্যবসার ধারণা আলোচনা করতে পারেন। তাদের মতামত জানতে পারেন। আপনার ধারণায় নতুন কিছু সংযোজন অথবা পরিবর্তন করা যায় কিনা, সে ব্যাপারে তাদের পরামর্শ নিতে পারেন। আপনি এমন কোনো ব্যক্তি অথবা প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করতে পারেন, যে ব্যক্তি অথবা প্রতিষ্ঠানে আপনার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগতে পারে। আপনি অবাক হবেন এটা দেখে যে, অনেক ব্যক্তি অথবা প্রতিষ্ঠান আছে যেখানে আপনার মতো দক্ষ ও অভিজ্ঞ স্বাধীন পরামর্শদাতার দরকার।
৪. আয়ের উৎস নিশ্চিত না করে চাকরি ছাড়বেন না
যদি আপনি আপনার কর্মক্ষেত্র থেকে বরখাস্ত না হন অথবা গুরুতর কোন সমস্যার সম্মুখীন না হন, তাহলে আয়ের উৎস নিশ্চিত না করে চাকরি ছাড়বেন না। যদি আপনার নিশ্চিত আয়ের উৎস না থাকে, তাহলে তা আপনার জন্য মানসিক চাপের কারণ হবে, যা ব্যবসার প্রসার ও স্বাভাবিক ব্যবসায়িক কার্যকলাপে ব্যাঘাত ঘটাবে। যদি একান্তই চাকরি ছাড়তে হয়, তাহলে আপনার ছয় মাসের পারিশ্রমিকের সমমানের অর্থ আপনার কাছে আছে কিনা তা নিশ্চিত করে নিতে হবে।
৫. ব্যবসার কর্মপ্রক্রিয়া সংরক্ষন
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপনার ব্যবসার ধারণা, ব্যাবসায় আসতে চাওয়ার পেছনের গল্প ইত্যাদি নিয়ে কথা বলা আপনার জন্য লাভজনক। মানুষ যখন আপনার ব্যবসার ধারণা সম্পর্কে অবগত হবে, তখন অনেকেই আপনার দিকে তাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিবে। যেহেতু আপনি নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠিত করতে চেষ্টা করছেন, সব সময় নিজের ব্যবসার প্রগতি এবং অবনতি সবকিছু আপনার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারেন।
এছাড়াও লিঙ্কডইন, ইউটিউব ইত্যাদি মাধ্যমেও আপনি আপনার ব্যবসার প্রতিদিনের ব্যবসায়িক কর্মপ্রক্রিয়া, অর্জন, ব্যর্থতা ইত্যাদি নিয়ে কথা বলতে পারেন, মানুষের দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য। এক কথায় আপনি কে, কী করছেন, কী করতে চান ইত্যাদি বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা শ্রোতাদের দৃষ্টি আকর্ষন করে এবং আপনার জন্য অফুরন্ত সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেয়।
featured image source: theladders.com