ধরুন আপনি একটি ফাস্ট ফুড রেস্টুরেন্টের ঠিক উল্টো পাশের কোনো অফিসে চাকরি করেন, অথবা ৫০ হাজারের অধিক কর্মীর একটি বিশাল কোম্পানি পরিচালনা করেন। তাহলে বুঝতেই পারছেন আপনার উপর কি পরিমাণ মানসিক বা কাজের চাপ! এমন বিশাল কোম্পানিতে প্রত্যেকে যার যার কাজ নিয়ে ব্যস্ত, যার যার কর্মজীবনের সমৃদ্ধি নিয়ে ব্যস্ত।
এমন পরিবেশে নিজেকে শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ রাখতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো খুব দ্রুত এই ধকল থেকে নিজেকে বের করতে পারার দক্ষতা। কিন্তু সেটা কিভাবে সম্ভব? এই নিবন্ধে এমন কিছু কৌশল আলোচনা করব যা প্রয়োগ করে আপনি খুব সহজেই কর্মক্ষেত্রের সকল ধকল সামলে নিয়ে টিকে থাকবেন এবং এগিয়ে যেতে পারবেন। সাথে সাথে ব্যক্তিজীবনেও সুখ, সমৃদ্ধি বয়ে আনবেন।
১. সমস্যাকে মানসিক শক্তিতে রুপান্তরিত করুন
কর্মক্ষেত্রে আপনার বাঁধা বা পিছুটান কী সেটা আগে খুঁজে বের করুন। প্রথমে সমস্যা খুঁজে বের করলে তবে কিনা তার সমাধান করা যাবে! অবশ্যই যথাযথ এবং সুনির্দিষ্ট কারণ আছে। এই কর্মক্ষেত্রে আপনার অতিরিক্ত মানসিক চাপ সৃষ্টি হওয়ার পেছনে আসল কারণ কী? আপনি হয়তো আপনার সাধ্যের বাইরে অতিরিক্ত কাজ করছেন। নিজের কাছে সৎ থাকতে আপনি কোনো কাজই ফেলে রাখেন না, আর এই অতিরিক্ত কাজের চাপে আপনার মানসিক অশান্তির কারণ হয়ে উঠেছে।
এক্ষেত্রে হঠাৎ বিক্ষিপ্ত হয়ে নিজের কাছে নিজে এমন অভিযোগ করবেন না- আমি আমার এই চাকরি ঘৃণা করি। তার বদলে বরং খুঁজে বের করুন আপনার কাজের কোন দিকটি বা কোন সুনির্দিষ্ট বিষয়টি আপনি অপছন্দ করেন, যা আপনার মানসিক অশান্তির কারণ হতে পারে। আপনার কাজ কি অনিরাপদ অথবা আপনি কি যোগ্য সম্মানী পাচ্ছেন না? অথবা এই কাজ আপনার ব্যক্তি এবং সামাজিক জীবন ক্ষতিগ্রস্ত করছে? যত সুনির্দিষ্টভাবে এই সমস্যাটি আপনি নির্ণয় করতে পারবেন তত যথাযথভাবে সমাধান খুঁজে পাবেন।
২. একজন পরামর্শদাতার সহযোগিতা নিন
অনেক সময় সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যবসায়িক দায়িত্ব পালন নিয়ে সহকর্মীর সাথে ভুল-বোঝাবুঝির কারণে এমন মানসিক অশান্তি সৃষ্টি হতে পারে, অথবা কোনো একটি কাজ যথাযথভাবে করতে না পারার কারণেও এমন অশান্তি সৃষ্টি হতে পারে। যদি এমন মনে হয় যে, যথাযথ প্রস্তুতির অভাবে আপনার এমন মানসিক বিক্ষিপ্ততা সৃষ্টি হচ্ছে। তবে অবশ্যই খুব দ্রুত আপনার অন্য কারো সহযোগিতা নেওয়া উচিত।
কর্মক্ষেত্রের যে কোনো বিষয় যেমন হিসাব সংক্রান্ত, বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত, কোনো লেখা সংক্রান্ত, কোনো কিছুর নকশা, প্রকল্প পরিকল্পনা, গ্রাহক সেবা অথবা এজাতীয় যেকোনো কিছুতে সমস্যা হলে বিশেষজ্ঞ পরামর্শদাতার সহযোগিতা নিন। কেননা পরামর্শদাতারা সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্রটিতে বিশেষজ্ঞ হয়ে থাকেন। আপনি বহু চেষ্টা করেও যার কোনো সমাধান খুঁজে পাচ্ছেন না, বিশেষজ্ঞের কাছে তার খুব সহজ সমাধান থাকতে পারে।
সুতরাং এমন যোগ্য কাউকে খুজে বের করুন এবং তার কাছে সহযোগিতা চান। নিশ্চয়ই আপনার সমস্যার সমাধান হবে এবং মানসিক অশান্তিও দূর হবে।
৩. পদক্ষেপ গ্রহণ করুন
যখনই আপনি এককভাবে বা আপানার পরামর্শদাতার সহযোগিতা নিয়ে যথার্থ সমস্যাটি খুঁজে পাবেন, তখন নিশ্চয়ই পূর্বের মতো আবার প্রফুল্ল বোধ হবে এবং আপনি পুরনো কর্মোদ্যম ফিরে পাবেন। যদি তা না করতে পারেন তাহলে আপনি কখনোই মানসিকভাবে সন্তুষ্ট থাকতে পারবেন না এবং বিরক্তিকর, অস্বস্তিকর এবং বাধ্যতামূলকভাবে কাজ করে যাবেন।
কিন্তু তার পরিবর্তে যদি আপনি সমস্যাটি খুঁজে বের করেন এবং দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করেন, তাহলে নিজের অগ্রগতিতে নিজেই অনুপ্রাণিত হবেন এবং ক্রমান্বয়ে আরো এগিয়ে যেতে পারবেন। সুতরাং সমস্যা চিহ্নিত করা মাত্রই তা সমাধানে নেমে পড়ুন।
৪. জাগতিক চাহিদার ঊর্ধ্বে উঠুন
দিনের পর দিন একই কাজ করে ব্যবসা পরিচালনা আপনাকে একঘেয়ে করে তুলতে পারে, যাতে আপনার গভীর অন্তর্দৃষ্টি এবং সুদূরপ্রসারী ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি হ্রাস পেতে পারে। এই পরিস্থিতি আপনাকে বিক্ষিপ্ত, নিরুৎসাহিত এবং হতাশ করে তুলতে পারে। তাই একটু বিরতি আপনার এই একঘেয়েমিতা বা অস্বস্তি দূর করতে খুব প্রয়োজন।
সুতরাং দু’একদিন সময় নিন নিজেকে প্রফুল্ল করতে এবং কাজের ফোকাস ঠিক করে নিতে। থেরাপিস্ট মেলোডি ওয়েল্ডিং পরামর্শ দেন, আপনাকে এর জন্য কোথাও ভ্রমণ করার প্রয়োজন নেই; শুধু সচেতনভাবে নিজের লক্ষ্য অন্বেষণের জন্য একটু সময় ব্যয় করুন। জাগতিক চাহিদার ঊর্ধ্বে উঠে জীবন সম্বন্ধীয় দু’একটি বড় প্রশ্ন নিজেকে করুন। যেমন যদি টাকা রোজগারের কোনো প্রয়োজন না হত তাহলে আমি কী করতাম? অথবা কখন নিজেকে সবচেয়ে একা লাগে?
৫. অর্জনযোগ্য লক্ষ নির্ধারণ করুন
মাঝেমধ্যে আমরা অকারণেই বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়। মানুষের কিছু সহজাত প্রবৃত্তির কারণে আমরা কখনো কখনো অনুভব করি, আমি সঠিক পথে নেই আর তখনই হতাশা ভর করে মনে। ভাবনা আসে আমাকে সঠিক পথে ফিরে যেতে অনেক কাজ করতে হবে, অনেক দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে। এই ভাবনায় আমরা হতাশ হয়ে পড়ি এবং নিজেকে দিকভ্রান্ত মনে করি। এই সমস্যার সমাধান করতে আপনাকে ছোট ছোট অর্জনযোগ্য লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে।
নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ করুন। লেখক পেগ স্ট্রিপ বলেন, আমরা আমাদের ক্ষমতাকে অতিরঞ্জিত করতে পারি, আবার নিজের নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়ে নিজেদের ব্যর্থ জ্ঞান করতে পারি। বাস্তবসম্মতভাবে চিন্তা করুন লক্ষ্য অর্জনে কিভাবে নিজের সৃজনশীলতা ও দক্ষতা ব্যবহার করবেন। যদি সত্যিই আপনার গন্তব্য অর্জনের অযোগ্য হয়, তবে ফিরে আসুন এবং মানসিক বিপর্যয় থেকে আগে বাঁচুন।
মানসিক বিপর্যয় দূর করার উপায়
জীবনের লক্ষ্য একবারে অর্জিত হয় না। একটি বড় লক্ষ অবশ্যই নির্ধারণ করতে হবে এবং সাথে সাথে সেই লক্ষ্য অর্জনে ছোট ছোট পরিকল্পনা করতে হবে। সেই পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করেই পর্যায়ক্রমে একসময় বড় লক্ষের কাছে পৌঁছানো যায়।
আপাতদৃষ্টিতে এই ভাবনা অকার্যকর মনে হতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, একটি একটি করে সিঁড়ি পার না হয়ে কখনো উপরতলায় ওঠা যায় না। সুতরাং নিজের মানসিক বিপর্যয় থেকে বের হয়ে আসুন আর ছোট ছোট পরিকল্পনা করে এগিয়ে যান। তাহলেই কর্মক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছতে পারবেন।