বর্তমান সময়ে অনেক পিতামাতারাই নিজেদের কর্ম ব্যস্ততার কারণে, তাদের শিশুদের পর্যাপ্ত সময় দিতে পারেন না। অনেক সময়ই শিশুরা নিরাপত্তাহীনতা ও একাকীত্ব অনুভব করে থাকে। এতে পিতামাতারাও দুশ্চিন্তার মধ্যে জীবন অতিবাহিত করেন। বাবা-মা’দের দুশ্চিন্তা লাঘব করতে ও শিশুদের বাড়তি যত্ন নিতে গড়ে উঠেছে চাইল্ড কেয়ার প্রতিষ্ঠান। অধিকাংশ মানুষই শিশুদের ভালোবাসতে, যত্ন নিতে, তাদের শিক্ষা দিতে ও সর্বোপরি তাদের সঙ্গে থাকতে অধিক পছন্দ করেন। আপনারও যদি শিশুদের সঙ্গ ভালো লাগে, তবে চাইল্ড কেয়ার প্রতিষ্ঠানে আপনার কর্মজীবন শুরু করতে পারেন। শিশুদের সাহায্য করা, শিক্ষা দেওয়া ও যত্ন নেওয়ার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ক্যাটাগরির চাকরি করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
আপনি এসব চাকরির পদগুলো থেকে কোনো একটিকে বাছাই করে নিয়ে; সহজেই আপনার ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন। বিভিন্ন ক্যাটাগরির চাকরির মধ্যে অন্যতম সেরা ৫ টি চাকরি সম্পর্কে এ আর্টিকেলটিতে আলোচনা করবো। আশা করি আপনি এ আর্টিকেলটি পাঠ করে, আপনার যোগ্যতা ও দক্ষতা অনুযায়ী উপযুক্ত চাকরিটি সহজেই নির্বাচন করে নিতে সক্ষম হবেন।
১. চাইল্ডমিন্ডার
একজন চাইল্ডমিন্ডারকে সাধারণত শিশুর বাসায় থেকে শিশুর দেখাশোনা করতে হয়। একজন চাইল্ডমিন্ডার শিশুকে খাওয়ানো, তার পরিধেয় তোয়ালে পরিষ্কার করা, গোসল করানো, তার সাথে খেলা করা, তাকে হাসিখুশি রাখা এবং স্কুলে আনা-নেওয়ার মতো বিভিন্ন কাজকর্মগুলো করে থাকেন।
এ পদে চাকরি করতে হলে শিক্ষাগত ডিগ্রির তেমন প্রয়োজন নেই, তবে চাইল্ড কেয়ারের উপর কোনো প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা থাকলে খুবই ভালো। চাইল্ডমিন্ডার হতে হলে, আপনাকে অবশ্যই ধৈর্যশীল, স্নেহপরায়ণ ও যত্নবান হতে হবে। আপনি কোনো প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত না হয়েও, এ ধরনের চাকরি পেতে পারেন। স্থান ও অবস্থা অনুযায়ী বেতনের তারতম্য হয়ে থাকে, তবে অবশ্যই মানসম্মত অর্থ আয় করতে পারবেন।
২. সমাজকর্মী
সমাজকর্মীরা সাধারণত নবজাতক শিশু ও নারীদের বিভিন্ন সমস্যা, দুস্থ মানুষদের বাসস্থান ও খাদ্যের সমস্যা, বয়স্কদের সঠিক খাদ্য ও স্বাস্থ্যের সুরক্ষার ব্যবস্থা এবং বিভিন্ন ধরনের সামাজিক সমস্যার সমাধান নিয়ে কাজ করে থাকে। এছাড়াও সমাজকর্মীরা ব্যক্তির বিভিন্ন মানসিক সমস্যা নিয়ে কাজ করে; বিশেষ করে বিভিন্ন দুর্যোগের আগে ও পরে মানুষকে মানসিক সহযোগিতা প্রদান করে। সমাজকর্মী হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে হলে, যে কোনো বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করে; তারপর সমাজকর্ম বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করা জরুরী। অথবা সোশ্যাল ওয়ার্কের উপরে কোনো প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে।
আর সমাজকর্মী হতে হলে ধৈর্যশীল, অনুপ্রেরণাদায়ক ও সহানুভূতিশীল ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন হতে হবে এবং বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করার মতো দক্ষতা থাকতে হবে। আপনার এসব দক্ষতা ও যোগ্যতা থাকলে, সমাজকর্মী হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন। একজন সমাজ কর্মীর বার্ষিক গড় বেতন প্রায় ২০ হাজার থেকে ৪০ হাজার পাউন্ড; যা বাংলাদেশের হিসাব অনুযায়ী প্রায় ২১ থেকে ৪২ লাখ টাকা।
৩. সহকারী শিক্ষক
একজন সহকারী শিক্ষক মূলত অন্যান্য শিক্ষকদের কাজের চাপকে হালকা করার এবং প্রয়োজনবোধে শিক্ষার্থীদেরকে অতিরিক্ত তত্বাবধান করার ও যত্ন নেওয়ার ভূমিকা পালন করে থাকে। একজন সহকারী শিক্ষককে অবশ্যই ভালো যোগাযোগের দক্ষতা ও অনুপ্রেরণাদায়ক ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন হতে হবে। সহকারী শিক্ষককে অনেক সময়ই দুষ্ট প্রকৃতির ও আত্মবিশ্বাসহীন স্টুডেন্টদের নিয়ে কাজ করার প্রয়োজন দেখা দিতে পারে, তাই একজন সহকারী শিক্ষককে প্রচুর ধৈর্যধারণ করার ক্ষমতা থাকতে হবে।
একজন টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্টের যতোটা না শিক্ষাগত যোগ্যতা দরকার হয়, বরং তার চেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় শিশুদের নিয়ে কাজ করার মানসিকতা ও স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ করার অভিজ্ঞতা। আপনার যদি এমন দক্ষতা ও যোগ্যতা থাকে বলে বিশ্বাস করেন, তবে সহকারী শিক্ষক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করে দিতে পারেন। একজন সহকারী শিক্ষকের বার্ষিক গড় বেতন প্রায় ১২ হাজার পাউন্ড বা ১২ থেকে ১৩ লাখ টাকা।
৪. খেলাধুলার কোচ
একজন কোচ মূলত নবাগত খেলোয়ার ও শিশুদেরকে খেলাধুলার মৌলিক প্রশিক্ষণ প্রদান করেন এবং তারা যেনো খেলাধুলায় উন্নতি করতে পারে, সেজন্য বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা ও পরামর্শ দিয়ে থাকেন। বিভিন্ন শিক্ষা ও ক্রীড়া প্রতিষ্ঠানে কোচদের নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। একজন কোচ হতে হলে অবশ্যই কোনো একটি খেলার উপরে পূর্নাঙ্গ জ্ঞান থাকতে হবে এবং জাতীয় ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান থেকে ক্রীড়া কোচিংয়ের উপরে ডিগ্রি অর্জন করতে হবে। আপনাকে সব খেলাধুলা জানতে হবে না, শুধু কোনো একটি খেলায় বিশেষভাবে বিশেষজ্ঞ ও পারদর্শী হলে চলবে। আর আপনি যদি খেলাধুলার উপরে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করতে পারেন, তবে কোচ হিসেবে ক্যারিয়ার গড়া আপনার জন্য অনেক সহজ হয়ে যাবে।
এছাড়াও আপনাকে শারীরিকভাবে শক্তিশালী, সক্ষম এবং অনুপ্রেরণাদায়ক ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হতে হবে। একজন কোচের বেতন মূলত অভিজ্ঞতা, খেলার ধরণ ও কর্ম পরিবেশের উপরে নির্ভর করে। আপনি কোচ হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করলে সাধারণত বার্ষিক ২০ হাজার পাউন্ড বা ২১ লাখ টাকা থেকে ৩৫ হাজার পাউন্ড বা ৩৬ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করতে সক্ষম হবেন।
৫. প্লে থেরাপিস্ট
অনেক শিশুরা তাদের কাজকর্ম যেমন: সঙ্গীত চর্চা, লেখালেখি, খেলাধুলা কিংবা পড়াশোনা করতে গিয়ে সফলতা না পেলে, হতাশাগস্ত হয়ে মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। আবার পারিবারিক ও সামাজিক কারণেও মানসিক সমস্যায় ভুগে থাকে। এমন সমস্যায় থাকা শিশুদেরকে নানা ভাবে দিক-নির্দেশনা, পরামর্শ ও অনুপ্রেরণা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে একজন প্লে থেরাপিস্ট। এ পদে চাকরি করতে হলে অবশ্যই টিচিং, সোশ্যাল সার্ভিস কিংবা সাইকোথেরাপির ন্যায় বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষাগত ডিগ্রি অর্জন ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে।
এছাড়াও স্নেহপরায়ণ, সহানুভূতিশীল ও অনুপ্রেরণা প্রদানকারী ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন হতে হবে। এসব যোগ্যতা ও দক্ষতা থাকলে খুব সহজেই প্লে থেরাপিস্ট হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন। প্রাথমিকভাবে একজন জুনিয়ার থেরাপিস্টের বার্ষিক গড় বেতন প্রায় ২৫ হাজার পাউন্ড বা ২৬ লাখ টাকা। আর অভিজ্ঞ হয়ে গেলে, বছরে প্রায় ৪২ হাজার পাউন্ড বা ৪৪ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব হবে।
শিশুদের সঙ্গ যদি আপনার পছন্দের বিষয় হয়, তাহলে আপনার দক্ষতা ও যোগ্যতা বিবেচনা করে, এ ৫ টি চাকরির কোনো একটিকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করুন। এগুলো থেকে সহজেই সফল ক্যারিয়ার গঠন করতে সক্ষম হবেন বলে আশা করা যায়।
Featured Image: Washington.edu