সাধারণত মানুষের স্বভাব দুই ধরণের হয়ে থাকে৷ একটি হলো অন্তর্মুখী এবং অন্যটি বহির্মুখী৷ বহির্মুখী স্বভাবের মানুষগুলো অনেক বেশি কথা বলতে পছন্দ করে অর্থাৎ মনে যা আসে তাই মুখে বলে দেয়। আর অন্তর্মুখী স্বভাবের লোকেরা কথা কম বলে, তবে যাই বলে ভেবেচিন্তে বলে। মোটকথা অন্তর্মুখী স্বভাবের লোকজন হয় গম্ভীর। অপরদিকে বহির্মুখী স্বভাবের লোকজন হয় বেশ চটপটে। এখন জানা যাক পৃথিবীতে কোন স্বভাবের মানুষ বেশি।
অন্তর্মুখীদের জন্য সহকর্মীদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা জরুরি; Source: Show attitude
অন্তর্মুখীদের নিয়ে লেখা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বিক্রিত বইগুলোর মধ্যে ‘কোয়াইট’ বইটি অন্যতম। সুসান কেইনের এই বইয়ের ভাষ্যমতে, “পৃথিবীর অর্ধেক মানুষের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ মানুষই অন্তর্মুখী।” কিন্তু এতো বেশি পরিমাণ অন্তর্মুখী মানুষ থাকার স্বত্ত্বেও অনেকেই তাদের সম্পর্কে ভিন্ন মনোভাব পোষণ করে। তাদের শান্ত শৃঙ্খল স্বভাবের জন্যই তাদেরকে আত্মকেন্দ্রিক ও অসামাজিক ভাবা হয়। কিন্তু তাদের এমন কিছু গুণ আছে, যা কাজে লাগিয়ে তারা ক্যারিয়ারে অনেক ভালো ফলাফল পেয়ে থাকে। চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই বিষয়গুলো সম্পর্কে।
১. আত্মবিশ্বাসী হোন
আত্মবিশ্বাস এমন একটি বিষয় যেটি থাকলে আপনি যেকোনো কাজে সাহসিকতার সাথে এগিয়ে যেতে পারবেন। আর এই আত্মবিশ্বাস অন্তর্মুখীদের মধ্যে অনেক বেশি দেখা যায়। কেননা তারা নিজের যোগ্যতা ও ক্ষমতা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখে। তাই ক্যারিয়ারে ভালো কিছু করতে হলে অবশ্যই একটি উন্নত ও আত্মবিশ্বাসী মনোভাব গড়ে তুলুন।
আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যান; Source: Elite Daily
একজন আত্মবিশ্বাসী মানুষকে যেকোনো প্রতিষ্ঠান অনেক গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করে৷ তাছাড়া অন্তর্মুখী ব্যক্তিরা তাদের চরিত্রে ধৈর্য্য ও গাম্ভীর্যতা ধরে রাখতে পারে খুব সহজেই। তাই যেকোনো মানুষের কাছে তাদের একটা অন্যরকম গুরুত্ব থাকে। মোটকথা কোনো কাজকে সহজভাবে নেওয়ার জন্য যেই সাহস ও মনোভাবের প্রয়োজন তা একজন অন্তর্মুখী মানুষ নিজের মাঝে লালন করে। এই প্রতিভাটাকে কাজে লাগিয়েই তারা ক্যারিয়ারে অনেক উন্নতি করতে পারে।
২. নিজেকে প্রস্তুত করুন
অন্তর্মুখী ব্যক্তিদের অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো ‘কথা কম বলা’। কিন্তু তার মানে এই নয় যে তারা নিজের মতামত উপস্থাপন বা তার প্রয়োজনীয় কথাগুলোও বলতে পারবে না। যে সকল অন্তর্মুখী ব্যক্তিদের মধ্যে এখনো এই অভ্যাসটা আছে, তাদের এটি খুব দ্রুত পরিত্যাগ করা উচিত। কেননা বর্তমানে যেকোনো কাজের জন্য যোগাযোগ মাধ্যমটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয়।
এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে নিজেকে সময় দিন। আপনি কোন বিষয়ে যোগাযোগ করতে চান তা নির্ধারণ করুন এবং আপনার অবস্থান থেকে আপনার সহকর্মী বা তত্ত্বাবধায়কের কাছে ব্যাপারটা সর্বোত্তমভাবে পৌঁছানোর চেষ্টা করুন। হতে পারে অন্যদের থেকে একটু বেশি সময় ব্যয় হবে৷ কিন্তু আপনার দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে একটু আলাদা ভঙ্গিতে প্রকাশ করে আপনিও সবাইকে চমকে দিতে পারেন।
৩. যোগাযোগ ক্ষমতা বাড়ান
বেশিরভাগ অন্তর্মুখী ব্যক্তিদের ধারণা নেটওয়ার্কিং কেবল বহির্মুখীদের জন্য। এমনকি আমরা অনেকেই এটি বিশ্বাস করি যে ভালো যোগাযোগ ক্ষমতা শুধু বহির্মুখীদের আছে। এই ধরণের ধারণা থেকে বেরিয়ে আসুন। অন্তর্মুখী মানেই লাজুক ও গম্ভীর স্বভাবের, অসামাজিক নয়।
অন্তর্মুখীরা লাজুক প্রকৃতির হয়; Source: Leapfrogging Success
লেখক সুসান কাইন ২০১২ সালে ‘দি পাওয়ার অফ ইন্ট্রোভার্টস’ শিরোনামের TED বক্তৃতায় বলেছিলেন, লাজুকতা হলো সামাজিক মূল্যায়নের ভয়। আর অন্তর্মুখিতা হলো সামাজিক উদ্দীপনায় আপনার প্রতিক্রিয়া সম্পর্কিত বিষয়।
অন্তর্মুখীদের যেই কাজই দেওয়া হোক না কেন, তারা সেটির সর্বোচ্চ ফলাফল বয়ে আনে। অন্তর্মুখী ব্যক্তিদের অল্পতেই সবার প্রিয় হওয়ার কারণ হলো তারা অন্যের কথা খুব মনোযোগ সহকারে শোনে। তাই যে কারো কাছে সহজেই তারা প্রিয় ব্যক্তিতে রুপান্তরিত হয়।
৪. সৎ হোন
সততা এমন একটি জিনিস যা সব মানুষের কাছে থাকা উচিত। এক্ষেত্রে অন্তর্মুখী বা বহির্মুখীতার কোনো ভেদাভেদ নেই। জীবনকে ভালোভাবে সাজাতে হলে সততাকে নিজের মধ্যে লালন করুন। এতে আপনি যেমন মানুষের কাছে প্রিয় ব্যক্তি হতে পারবেন, তেমনি কর্মজীবনেও সফলতা পাবেন খুব সহজেই।
অন্তর্মুখী ব্যক্তিরা চাপা স্বভাবের হওয়ায় তাদের ব্যক্তিত্ব থাকে মজবুত। যদিও সবাই একই রকম ব্যক্তিত্বের অধিকারী হয় না, তবে প্রতিটি ব্যক্তির সৎ হওয়া জরুরি। কেননা একমাত্র সততা মানুষকে যেকোনো কাজে এগিয়ে যেতে সহায়তা করে।
৫. নিজেকে প্রিয় ব্যক্তিত্বে রুপান্তর করুন
অন্তর্মুখীরা নিজ থেকে সহজে মিশতে না পারলেও তাদের আলাদা কিছু গুণাবলী আছে। যেমন তাদের একটি স্বভাবসুলভ বিষয় হলে তারা অন্যের কথা দীর্ঘ সময় ধরে মনযোগ সহকারে শুনতে পারে। এজন্যই বলা হয়, “Introverts are good listeners”। তাদের ধৈর্য্য মাত্রা অনেক বেশি হয়। যার ফলে তারা অনেকের কাছে প্রিয় ব্যক্তিত্বে রূপান্তরিত হয়৷
অন্তর্মুখীরা অন্যের কথা খুব মনযোগ সহকারে শোনে; Source: timandjulieharris.com
অন্য এক গবেষণার তথ্যানুসারে, ঠিক এই গুণটির জন্যই অনেক অন্তর্মুখী মানুষই নেতা হিসাবে খুব ভালো হয়, বিশেষ করে যদি তার টিমের কর্মীরা সক্রিয় হয়। কেননা একজন বহির্মুখী নেতা সবসময় নিজের পরামর্শগুলো বলতে ব্যস্ত থাকে। কিন্তু অন্তর্মুখী নেতা শান্ত মেজাজে কর্মীদের মতামত বিবেচনা করে পরামর্শ দেয়। অর্থাৎ এক্ষেত্রে কর্মীদের সাথে তার ভালো সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। ঠিক তেমনি অন্তর্মুখী ব্যক্তিরা তাদের যোগ্যতা ও ব্যক্তিত্বের মাধ্যমে অনেকের প্রিয় হয়ে থাকে।
৬. নিয়মিত উপস্থিত থাকুন
সবসময় কর্মক্ষেত্রে উপস্থিত থাকার চেষ্টা করুন৷ এটি আপনাকে একটি সময়নিষ্ঠ ক্যারিয়ার গঠনে সাহায্য করবে। অন্তর্মুখী ব্যক্তিরা সাধারণত তাদের কাজের প্রতি দায়িত্বশীল হয়। এই উপস্থিতির মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন অফিস আপনার থেকে কী আশা করে। সেই অনুযায়ী কাজ করে নিজেকে ভালো একটি অবস্থানে দাঁড় করান।
নিজের অর্জনগুলোকে সম্মান করুন এবং আত্মবিশ্বাস বাড়াতে এগুলো ব্যবহার করুন৷ এটি আপনাকে ক্যরিয়ারে ভালো কিছু করতে উৎসাহিত করতে পারে৷ তাছাড়া কর্মক্ষেত্রে বেতন আলোচনা এবং প্রচারে সাহায্য করতে পারে৷ সুতরাং নিয়মিত উপস্থিতি ক্যারিয়ারের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
Featured Image Source: Medium