মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিবেচনায় মালয়েশিয়া উল্লেখযোগ্য একটি দেশ। উচ্চশিক্ষায় বিভিন্ন কোর্সের পাশাপাশি অনেক ধরণের পেশাগত কোর্সের সুবিধা রয়েছে এখানে। স্বল্প খরচে মানসম্পন্ন কোর্সের সুযোগ তৈরি হওয়ায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের পছন্দের গন্তব্য এখন মালয়েশিয়া।
মালয়েশিয়া বর্তমানে শুধুমাত্র এশিয়ার মধ্যেই নয়, বরং সারা পৃথিবীতে একটি উন্নত দেশ হিসাবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি সর্বক্ষেত্রে মালয়েশিয়া বিশ্বের বুকে একটি মডেল হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে। আর তাই বিশ্বের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের চোখ এখন এশিয়ার এই দেশটির দিকে। মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলি বিশ্ব র্যাঙ্কিং ৩০০ ভেতরে রয়েছে।
শিক্ষাক্ষেত্রে মালয়েশিয়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে করেছে অসাধারণ উন্নতি। মালয়েশিয়া জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে প্রচুর উন্নতমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা বিশেষত দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমাচ্ছে। বাংলাদেশ থেকেও প্রতিবছর অনেক শিক্ষার্থীরা পড়তে যাচ্ছেন মালয়েশিয়ায়।
মালয়েশিয়ায় সরকারি ও উচ্চ মানের কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া প্রায় বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য আইইএলটিএসের দরকার হয় না। এছাড়াও মালয়েশিয়ার অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে পড়াশোনার খরচ কম। মূলত এসব কারণেই বিশ্বের অনেক উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ থেকে প্রচুর শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষার জন্য মালয়েশিয়ায় যান।
মালয়েশিয়ার উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়, সকল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষাদান ব্যবস্থা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে থাকে, এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মালয়েশিয়ার শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরো উন্নত ও উচ্চপর্যায়ে নিয়ে যাওয়া।
যেসব বিষয়ে পড়ানো হয়
মালয়েশিয়ার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিভিন্ন বিষয়ে পড়ানো হয়। বিজনেস ম্যানেজমেন্ট, ইনফরমেশন সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, মেডিসিন, ভেটেরিনারী মেডিসিন, মডার্ন ল্যাঙ্গুয়েজ এন্ড কমিউনিকেশন, ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্স, বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, চার্টার্ড একাউন্টেন্সি, হেলথ সায়েন্সেস, ইঞ্জিনিয়ারিং, এগ্রিকালচার, ফরেস্ট্রি, ইসলামিক স্টাডিজ, সোশ্যাল সায়েন্স এন্ড হিউম্যানিটিজ, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স, ডিজাইন এন্ড আর্কিটেকচার ইত্যাদি বিষয়ে ব্যাচেলর্স ও মাস্টার্স কোর্সে পড়াশোনা করতে পারেন।
তবে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার সায়েন্স, আইটি এসব বিষয়ে পড়তে বেশি আগ্রহী। এরপর রয়েছে ব্যবসায় প্রশাসনে পড়তে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা।
মালয়েশিয়ার উল্লেখযোগ্য বিশ্ববিদ্যালয়
দেশটির পাবলিক ইউনিভার্সিটির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ইউনিভার্সিটি মালায়া, ইউনিভার্সিটি টেকনোলজি মালয়েশিয়া, ইউনিভার্সিটি পুত্রা মালয়েশিয়া, ইউনিভার্সিটি সায়েন্স মালয়েশিয়া, ইউনিভার্সিটি পেনডিডিকান সুলতান ইদ্রিস, ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়া কেলানতান, ইউনিভার্সিটি কেবাংসান মালয়েশিয়া, ইউনিভার্সিটি টেকনোলজি মারা, ইউনিভার্সিটি উতারা মালয়েশিয়া, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব মালয়েশিয়া ও ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়া সারাওয়াক।
প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির মধ্যে, মাল্টিমিডিয়া ইউনিভার্সিটি, নটিংহাম ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি কুয়ালালামপুর, ওয়েস্টমিনস্টার ইন্টারন্যাশনাল কলেজ, লিমককউইং ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি, ইন্টি কলেজ, সানওয়ে ইউনিভার্সিটি, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব মালায়া ওয়ালস, ইউসিএসআই, মোনাশ ইউনিভার্সিটি, সেগি ইউনিভার্সিটি, হেল্প ইউনিভার্সিটি ও আল মদিনা ইউনিভার্সিটি উল্লেখযোগ্য।
১। সহজ ভিসা প্রসেসিং ব্যবস্থা
মালয়েশিয়ার ভর্তি এবং ভিসা প্রসেসিং অন্যান্য দেশের ভর্তি এবং ভিসা প্রসেসিং থেকে অনেক বেশি সহজ। বর্তমানে নিয়ম অনুযায়ী, অতি দ্রুত ভিসা প্রসেসিং করা সম্ভব। ইউনিভার্সিটি থেকে অফার লেটার চলে আসলে পরবর্তীতে ভিসা হতে আর কোনো সমস্যা থাকে না। মালয়েশিয়ার ভিসা প্রসেসিংএর আরো একটি সুবিধা হচ্ছে ভিসা হওয়ার পরে বিশ্ববিদ্যালয়কে টিউশন ফি দিতে হয়। একারণে মালয়েশিয়াতে স্টুডেন্ট ভিসা প্রসেসিং করা সহজ এবং নিরাপদ।
২। উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা
মালয়েশিয়াতে উচ্চশিক্ষার জন্য যেতে চাইলে, নূন্যতম এইচএসসি পাশ করার পরে আবেদন করতে পারবেন। মালয়েশিয়াতে বর্তমানে মাস্টার্স লেভেলের কিছু কোর্সে আইএলটিএসের প্রয়োজন হয়। তবে ডিপ্লোমা এবং অনার্স কোর্সে আইএলটিএস বাধ্যতামূলক নয়। তবে আইএলটিএস থাকলে অবশ্যই একজন শিক্ষার্থী অনেক বেশি লাভবান হবেন।
মালয়েশিয়ায় লেখাপড়া করার আরেকটি সুবিধা হচ্ছে, এখানে পড়াশোনার খরচ অন্যান্য উন্নত দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় অনেক কম। ইউরোপ,অস্ট্রেলিয়া, কানাডাতে ২-১ বছরের পড়াশোনার খরচ দিয়ে মালয়েশিয়াতে পুরো কোর্স শেষ করা সম্ভব। কিন্তু সার্টিফিকেট এবং লেখাপড়ার মান ইউরোপীয় দেশগুলোর ইউনিভার্সিটি থেকে কোনো অংশেই কম হবে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার পর কোনো কারণে সেমিস্টারের টাকা জোগাড় করতে অসুবিধা হলে বা অপছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় পরিবর্তন করতে চাইলে তাও করতে পারবেন, তবে সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীকে বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত থাকতে হবে এবং পর্যাপ্ত সময় (দুই-তিন মাস) হাতে থাকতে প্রস্তুতি নিতে হবে।
ফলাফল ও আর্থিক অবস্থা ভালো হলে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা মালয়েশিয়ার যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারবেন। তবে আর্থিক অবস্থা এবং ফলাফল ভালো না হলে উচ্চশিক্ষার জন্য মালয়েশিয়াতে আসা উচিৎ নয়। আমাদের দেশের অনেক শিক্ষার্থী পড়ার জন্য মালয়েশিয়াতে আসলেও, তাদের আসল উদ্দেশ্য থাকে কাজ করা। তবে মনে রাখতে হবে, মালয়েশিয়াতে ফুল টাইম কাজ এবং পড়াশোনা- দুটো একসাথে করা সম্ভব নয়।
৩। কাজের সুযোগ
মালয়েশিয়ায় একজন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী তাদের পড়াশোনা শুরু করার পর কাজের অনুমতির জন্য আবেদন করতে পারেন। একজন শিক্ষার্থী সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২০ ঘণ্টা কাজ করার অনুমতি পেয়ে থাকেন। কাজ করতে আগ্রহী ছাত্রছাত্রীদের অবশ্যই স্টুডেন্ট পাস থাকতে হবে।
মালয়েশিয়ায় বিদেশি শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন রেস্তোরা, পেট্রোল পাম্প, ছোট মার্কেট ও বিভিন্ন হোটেল, এবং বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করতে পারেন।
৪। শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ দেশ
মালয়েশিয়াতে অপরাধের হার তুলনামূলক কম এবং রাজনৈতিক অবস্থা স্থিতিশীল। ২০১১ সালে মালয়েশিয়া ১৫৩টি দেশের মধ্যে ১৯তম শান্তিপূর্ণ দেশ ছিলো। সারা বছর মালয়েশিয়ার আবহাওয়া রৌদ্রজ্জ্বল অথবা বৃষ্টিস্নাত থাকে।
এখানে অতিরিক্ত গরম বা ঠাণ্ডা পড়ে না, তাই এ আবহাওয়ার সাথে বিদেশি শিক্ষার্থীরা সহজেই খাপ খাওয়াতে পারবে।
৫। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য
মালয়েশিয়া আধুনিক শহর হলেও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ভরপুর। পুরো মালয়েশিয়া জুড়ে দেখা যায় পাহাড় আর জঙ্গল। সরকারি নজরদারিতে মালয়েশিয়াতে পর্যটকদের সুবিধার জন্য সব রকমের সুব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
এখানে বার বারই মনে হবে দেশটির রাস্তা থেকে শুরু করে প্রতিটি স্থাপনা যেন পর্যটকদের চোখ ধাঁধিয়ে দেয়ার জন্যই তৈরি করা হয়েছে।মালয়েশিয়ার কয়েকটি আকর্ষণীয় স্থান হলো-
মুলু কেভস
মালয়েশিয়ার পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে দর্শনীয় ও আকর্ষণীয় স্থান হল মুলু কেভস। এটি একটি গুহা। গুহাটি মালয়েশীয় বোর্নিও এর গুনুং মুলু ন্যাশনাল পার্কে অবস্থিত। পার্কটি অবিশ্বাস্য ভাবে অনেকগুলো গুহা দ্বারা ঘেরা।
তামান নেগারা
তামান নেগারা, আক্ষরিক ভাবে এই মালয় শব্দটির অর্থ হল “জাতীয় উদ্যান”। এটি পৃথিবীর প্রাচীনতম ট্রপিক্যাল রেইনফরেস্ট এর মধ্যে একটি।
মাউন্ট কিনাবালু
মালয়েশিয়ার আরেকটি দর্শনীয় ও আকর্ষণীয় স্থান হলো মাউন্ট কিনাবালু (Mount Kinabalu)। এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বোর্নিও দ্বীপে অবস্থিত সর্বোচ্চ পর্বত। এছাড়া রয়েছে পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার, বাটু কেভস।
৬। ব্যাপক খাবারের সমারোহ
মালয়েশিয়ায় অনেক জাতি এবং সংস্কৃতির মানুষ একত্রে বসবাস করে। যার ফলে এখানে প্রচুর বৈচিত্র্যপূর্ণ খাবারের সমারোহ রয়েছে।
মালয়েশিয়ার কয়েকটি বিখ্যাত খাবার হচ্ছে- কলা পাতার ভাত, নাসি দাগাং, রুটি চানাই, রোজাক, সাতায়, বার কুত তেহ ইত্যাদি।
Featured Image-visitmalaysia.com