বর্তমান পৃথিবীতে প্রযুক্তির বিশ্বায়ন চলছে। প্রতিদিনই কোনো না কোনো প্রযুক্তি যুক্ত হচ্ছে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে। ফলে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র হয়ে চলেছে সহজ ও গতিশীল। আধুনিকায়ন হচ্ছে পৃথিবী। কিছু মানুষ এই প্রযুক্তি ছড়িয়ে দিচ্ছে সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে।
Source: Glassceling.com
পৃথিবীর আধুনিকায়নে নারী পুরুষ উভয়ের অবদান রয়েছে। কিন্তু এখনো পুরুষের সংখ্যাই বেশি। কারণ, আজও নারীকে নানা প্রতিকূলতা অতিক্রম করে এগিয়ে যেতে হয়। কিন্তু কিছু নারীকে প্রতিকূলতা আটকে রাখতে পারেনি। বেঁধে রাখতে পারেনি পরাধীনতার শিকলে। তুলতে পারেনি প্রতিবন্ধকতার দেয়াল। সব বাঁধা, সব শিকল, সব দেয়াল ভেঙে এগিয়ে গিয়েছেন সফলতার পথে।
Source: m.huffpost.com
আজকে তারা পৃথিবীর বুকে সফল, আজ তারা শুধু নারী কাছে নয় পুরুষের কাছেও অনুকরণীয় আদর্শ। আজ আমি ছয় জন নারীর জীবনের গল্প শেয়ার করতে চাই। যারা নানা প্রতিকূলতা অতিক্রম করে জীবন যুদ্ধে সফল হয়েছেন। খুলে দিয়েছেন নতুন সম্ভাবনার দ্বার।
সোফিয়া আমরুসো
গত কয়েক বছর আগে হয়ত অনেকেই এই নারীর কথা শুনে থাকবেন। তখন তিনি একটি অনলাইন কাপড়ের দোকান তৈরি করেছিলেন। এই অনলাইন কাপড়ের দোকানের মাধ্যমেই কয়েক মিলিয়ন ডলার আয় করেছিলেন। এর জন্য তিনি নিউ ইয়র্ক টাইমস ম্যাগাজিনের শিরোনাম হয়েছিলেন। ফলে সারা পৃথিবী তার জীবনের গল্প জানার সুযোগ পেয়েছিল।
গার্লবস হিসেবে খ্যাত এই নারী সফলতার সঙ্গে পেয়েছিলেন তুমুল জনপ্রিয়তা। কিন্তু সোফিয়া আমরুসোকেও সামলাতে হয় ব্যর্থতার ধাক্কা।
Source: Wikipedi. Org
২০১৬ সালে সোফিয়াকে এক চরম বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হয়। ভোগ করতে হয় ঋণ খেলাপির চরম নিষ্ঠুর স্বাদ। বিক্রি করে দিতে হয় পুরো প্রতিষ্ঠান।
এরপরও সোফিয়া থেমে থাকেননি। কারণ, তিনি একজন উদ্যোক্তা। উদ্যোক্তাকে থেমে থাকতে নেই। তিনি আবারও শুরু করলেন নতুন প্রতিষ্ঠান ‘গার্ল বস মিডিয়া’। এখানে তিনি নারী উদ্যোক্তাদের জন্য অনলাইন কনটেন্ট তৈরি করতেন। এখানেও তিনি সফল হয়েছেন।
Source: girlsnightinclub.com
এরপর সোফিয়া একটি টেক ইন্ডাস্ট্রি তৈরি করেন। বর্তমানে তিনি নারীদের জন্য একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তৈরি করেছেন। এখানেও তিনি ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন। আজকে তার তৈরি করা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গার্লবসকে লিঙ্ক ডিনের বিকল্প ভাবা হচ্ছে।
এদিথ হারবাগ
এদিথ হারবাগ, মান সম্পন্ন পণ্য তৈরিতে এক উজ্জ্বল নারী নক্ষত্রের নাম। বর্তমানে তার সরবরাহ করা প্রতিটি পণ্য সারা ফেলছে পুরো বিশ্বে। তার প্রতিটি পণ্য বিশ্ববাজারে শক্ত অবস্থান দখল করে নিচ্ছে। নাড়িয়ে দিচ্ছে তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের।
Source: xing.com
এই পণ্য উন্নয়নের দক্ষতা তিনি একদিনে আয়ত্ত করতে পারেননি। দীর্ঘ ১০ বছরের অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে গড়ে তুলেছেন এই অপ্রতিরোধ্য দক্ষতা। দক্ষতার মাধ্যমেই তার প্রতিষ্ঠান লাউঞ্চডার্কলী থেকে সরবরাহ করে চলেছেন আকর্ষণীয় পণ্য সমূহ। ফলে বেড়েই চলেছে তার পণ্যের গ্রাহকের সংখ্যা।
এখন তার এই প্রতিষ্ঠান রূপান্তরিত হয়েছে শত কোটি টাকার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে। আজকে তার প্রতিষ্ঠান থেকে মাইক্রোসফট এবং গো প্রো-এর মতো প্রতিষ্ঠান সফটওয়্যার কিনছে।
এলসা বারনাদত্তি
এলসা বারনাদত্তি। হ্যাঁ, ২০১৮ সালে ফোর্বস সাময়িকীতে জায়গা করে নেওয়া নারী বারনাদত্তির কথা বলছি। এলসা বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ার প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যাওয়া নারী। তিনি চান পৃথিবীতে খাবারের অপচয় থাকবে না। ফলে পৃথিবীতে খাবারের অভাবও হবেনা। এরই প্রেক্ষিতে তিনি একটি অ্যাপ তৈরি করেন। যা সেই সব মানুষদের জন্য, যারা অবিক্রীত খাবার কম দামে কিনতে চায়।
Source: Chef.se
এই অ্যাপটি খাবারের দোকানের সঙ্গে ঐসকল ক্রেতাকে যুক্ত করে থাকে। ফলে অবিক্রীত পণ্য কিছু মানুষ খেয়ে জীবন ধারণ করতে পারে। অপরদিকে খাবারও অপচয় হয় না। এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এই পদক্ষেপে সারা বিশ্বের মানুষ সারা দিচ্ছে। অসংখ্য খাবারের দোকান, মুদি দোকান যুক্ত হয়েছে এই অ্যাপে। লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রতিনিয়ত কিনছে এই সকল অবিক্রীত পণ্য। ফলে পৃথিবী মুক্তি পাচ্ছে অপচয়ের পাপ থেকে।
বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানটি ‘উইয়ার্ড ইউকে’ –এর তথ্য অনুযায়ী ইউরোপের সাড়া ফেলা নতুন ১০০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম।
সাদাফ মোনাজেমি
চিকিৎসা বিজ্ঞানে টেকনোলজি উদ্ভাবকের এক বিস্ময় ব্যক্তির নাম সাদাফ মোনাজেমি। সিঙ্গাপুরে জন্ম নেওয়া একজন নারী উদ্যোক্তা। তিনি ২০১৭ সালে এমন একটি টেকনোলজি আবিষ্কার করেন, যা চিকিৎসা বিজ্ঞানে আলোড়ন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়।
Source: eneralassemb.ly
সাদাফের উদ্ভাবিত এই যন্ত্রের সাহায্যে একজন ডাক্তার খুব সহজেই রুগীর স্ট্রোকের ঝুঁকি নিরূপণ করতে পারেন। এই প্রক্রিয়ায় কোনো মেডিক্যাল পরীক্ষার প্রয়োজন হয় না। ফলে রুগীর চিকিৎসা খরচ কম হয়।
তার এই উদ্ভাবনের ফলে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুন সাফল্য অর্জিত হয়। তিনি এখনো চালিয়ে যাচ্ছেন নতুন নতুন উদ্ভাবনের গবেষণা।
শাউ নিয়াং হুয়ান
পৃথিবীতে কিছু মানুষ আছে যাদের প্রতিটি কাজই মানুষের জন্য, পৃথিবীর উন্নয়নের জন্য। এঁরা শুধুমাত্র নিজের জন্য নয়, সকলের জন্য ভাবেন। আর তারাই পৃথিবীর বুকে বেঁচে থাকেন অমর হয়ে। এরকম একজন মহৎ নারীর নাম হচ্ছে, শাউ নিয়াং হুয়ান।
Source: virgin.com
এই নারী তার প্রতিষ্ঠিত ‘এঞ্জেল সেন্ট্রাল’ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পাঁচ’শত এঞ্জেল বিনিয়োগকারী সমন্বয়ে একটি কমিউনিটি গঠন করতে সক্ষম হয়েছেন।
এই কমিউনিটির মাধ্যমে পুরো দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে বিনিয়োগ করবেন। এই মহতী উদ্যোগের সফল বাস্তবায়ন হলে, ঘটে যেতে পারে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক রূপ রেখা।
ক্যাথলিন ইয়ু
ক্যাথলিন ইয়ু যখন ২৩ বছর বয়সী, তখন তার মাথায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে আইডিয়া আসে। তাই তিনি গবেষণা করতে শুরু করেন। তিনি ভাবতে থাকেন, কীভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়ন ঘটানো যায়! অবশেষে তিনি সফল হন।
Source: josiahgo.com
বর্তমানে তার ২৬ বছর বয়স। এখন তিনি একটি টেক ইন্ডাস্ট্রি পরিচালনা করছেন। এই ইন্ডাস্ট্রির মাধ্যমে বড় বড় প্রতিষ্ঠানের নিয়োগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তা দিয়ে আসছেন। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে এখন, তার প্রতিষ্ঠানটি ৮ মিলিয়ন ডলারে রূপ নিয়েছে।
Feature Image Source: wea-sg.com