নিউজিল্যান্ড ওশেনিয়ার একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। এটি অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত। এর রাজধানীর নাম ওয়েলিংটন। নিউজিল্যান্ড অসংখ্য ক্ষুদ্র দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত। তবে এদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো স্টুয়ার্ট দ্বীপ এবং চাথাম দ্বীপ। নিউজিল্যান্ডের আদিম অধিবাসীদের ভাষা মাওরি। নিউজিল্যান্ড ভৌগোলিকভাবে বিচ্ছিন্ন একটি দেশ।
নিউজিল্যান্ডের রাষ্ট্রপ্রধান ইংল্যান্ডের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ব্যাপারে রাণীর কোনো প্রভাব নেই, রাণী কেবল আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রপ্রধান। তাঁর প্রতিনিধি নিউজিল্যান্ডের সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অধিকারী। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর অধীন সংসদই হলো রাষ্ট্র ক্ষমতার অধিকারী। প্রধানমন্ত্রীই নিউজিল্যান্ডের সরকার প্রধান।
এটি অস্ট্রেলিয়ার প্রায় ২০০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে তাসমান সাগরে মধ্যে অবস্থিত। ফিজি, টোঙ্গা এবং নুভেল কালেদোনি হলো নিউজিল্যান্ডের প্রতিবেশী রাষ্ট্র। এদেশের পরিবেশ এবং প্রাণীকূল বৈচিত্রময়। মনুষ্যবসতি প্রতিষ্ঠার পূর্বে এখানে প্রচুর স্থানীয় পাখি ছিল, যার মধ্যে অনেক প্রজাতিই জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে ক্রমান্বয়ে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
নিউজিল্যান্ড একটি উন্নত দেশ। এছাড়া দেশটির জীবন-যাত্রার মান, প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল, শিক্ষার হার, শান্তি ও অগ্রগতি, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, রাজনৈতিক অধিকার রক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে অগ্রসরমান একটি দেশ। পৃথিবীর সর্বাধিক বাসযোগ্য শহরগুলোর মধ্যে নিউজিল্যান্ডের শহর অন্যতম।
উন্নত জীবনযাত্রার মান, উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা, সচ্ছল অর্থনীতি ও সামাজিক নিরাপত্তার কারণে অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের মতো উচ্চশিক্ষার জন্য নিউজিল্যান্ডকেও বেছে নিচ্ছেন বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা।
নিউজিল্যান্ডে ব্যাচেলর ডিগ্রি, মাস্টার ডিগ্রি, ডক্টরেট ডিগ্রি ছাড়াও বিভিন্ন ডিপ্লোমা কোর্সের উপর উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারবেন। দেশটির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনটি সেমিস্টার থাকলেও অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণত দু’টি সেমিস্টারে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়।
ব্যাচেলর ডিগ্রির মেয়াদ সাধারণত চার বছর, মাস্টার ডিগ্রির মেয়াদ দুই বছর এবং ডক্টরাল ডিগ্রি তিন বছর, মেডিকেল সায়েন্সে চার থেকে পাঁচ বছর এবং ডিপ্লোমা ডিগ্রি জন্য এক থেকে দুই বছর পড়াশোনা করতে হয়।
যে সব বিষয় পড়ানো হয়
এগ্রিকালচার, হর্টিকালচার, কোয়ান্টিটি সার্ভেইং, এডভান্সড স্টাডিস ফর টিচার, ল্যাঙ্গুয়েজ, সোস্যাল সায়েন্স, ব্যবসায় প্রশাসন, একাউন্ট্যান্সি, অফিস সিস্টেম, ম্যানেজমেন্ট, কমিউনিটি এডুকেশন, নন-ফরমাল এডুকেশন, জেনারেল এডুকেশন, কম্পিউটার সায়েন্স, ভেনস্টিট্রি, ইঞ্জিনিয়ারিং, টেকনোলজি, ফাইন আর্টস, ডিজাইন, হেলথ সায়েন্স, আইন, মেডিসিন, মিউজিক, ট্রেড, ভেটেরিনারি, নার্সিং, মেডিকেল ইমেজিং, মিডউইফারি, অকুপেশনাল থেরাপি, ফিজিওথেরাপি, মেডিকেল রেডিয়েশন থেরাপি, ফার্মেসি, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিসহ বিভিন্ন বিষয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য নিউজিল্যান্ড যেতে পারেন।
১। উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা
নিউজিল্যান্ডের ডিগ্রির গ্রহণযোগ্যতা পুরো পৃথিবীব্যাপী। নিউজিল্যান্ডের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশ্ব র্যাঙ্কিং বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে।
২০১৬-১৭ সালে কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাঙ্কিং নিউজিল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব অকল্যান্ডের অবস্থান ৮১তম, ইউনিভার্সিটি অব ওটাগো ১৬৯তম। এ তালিকার শীর্ষস্থানীয় নিউজিল্যান্ডের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো-
ইউনিভার্সিটি অভ ক্যান্টারবারি, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অভ ওয়েলিংটন, ইউনিভার্সিটি অভ ওয়াইকাতো, ম্যাসেই ইউনিভার্সিটি, লিংকন ইউনিভার্সিটি এবং অকল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অভ টেকনোলজি।
নিউজিল্যান্ডের সরকারি ভাষা তিনটি। সেগুলো হলো ইংরেজি, মাওরি ও নিউজিল্যান্ড সাইন ল্যাংগুয়েজ। মাওরি সরকারি ভাষা হলেও ইংরেজি ভাষার জনপ্রিয়তা কারণে তা প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার পথে। তাই এটিকে সংরক্ষণের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ও গণমাধ্যমে মাওরি এখন সাধারণভাবে ব্যবহৃত হয়। তবে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের দেশটিতে উচ্চশিক্ষার জন্য যেতে চাইলে অবশ্যই ইংরেজি জানতে হবে। এবং এজন্য আইইএলটিএসের ভালো স্কোর থাকতে হবে।
২। কাজের সুযোগ
নিউজিল্যান্ডের পড়াশোনার পাশাপাশি খন্ডকালীন কাজের সুযোগ রয়েছে। ভিসার মেয়াদ একবছরের বেশি থাকলে কাজ করার অনুমতির জন্য আবেদন করা যায়।
একজন শিক্ষার্থী প্রতি সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করতে পারবেন। তবে ছুটির সময় ফুল টাইম কাজ করা যায়।
৩। ক্রেডিট ট্রান্সফারের সুবিধা
ব্যাচেলর ও মাস্টার্স পর্যায়ে ক্রেডিট ট্রান্সফার করা যায়। বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক গ্রেড বি থাকলে ক্রেডিট ট্রান্সফারের সুযোগ দেয়। তবে কোর্স অর্ধেকের বেশি সম্পন্ন হয়ে গেলে এ সুবিধা পাওয়া যাবে না।
৪। স্কলারশিপের সুযোগ
নিউজিল্যান্ডের উচ্চশিক্ষার জন্য প্রচুর স্কলারশিপের সুযোগ আছে। স্কলারশিপগুলোর মধ্যে আছে কমনওয়েলথ স্কলারশিপ ও ফেলোশিপ, নিউজিল্যান্ড এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (এনজেডএআইডি) পোস্ট গ্র্যাজুয়েট স্কলারশিপ ও এনজেডএআইডি স্টাডি এওয়ার্ড স্কলারশিপ অন্যতম। স্কলারশিপগুলো যোগ্যতার ভিত্তিতে দেয়া হয়ে থাকে।
৫। সুখী, নিরাপদ ও শান্তির দেশ
বিশ্বের নিরাপদ দেশের তালিকায় নিউজিল্যান্ডের অবস্থান তৃতীয় এবং সুখী দেশের তালিকায় নিউজিল্যান্ডের অবস্থান অষ্টম। এবং বিশ্বের শান্তিপূর্ণ দেশের তালিকায় নিউজিল্যান্ডের অবস্থান দ্বিতীয়।
৬। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের দেশ
নিউজিল্যান্ড একটি অসাধারণ সুন্দর দেশ। মনোমুগ্ধকর নির্মল প্রকৃতি যেন অপার্থিব সৌন্দর্যের আধার। এখানে আছে ঘন সবুজ বন, পাহাড়, নীল সমুদ্র সৈকত, গ্লাসিয়ার, উষ্ণ অঞ্চলসহ সবকিছু। ঐতিহ্যবাহী মাউরি সংস্কৃতি মিশেছে শহুরে আধুনিকতার সাথে। সবুজ গ্রাম আর বিশাল অপূর্ব বন্য জীবন, যেকোনো ধরনের রোমাঞ্চকর অ্যাডভেঞ্চারের জন্য একদম উপযুক্ত। এখানের আকর্ষণীয় স্থানগুলো হলো-
করমেন্ডাল পেনিনসুলা
উত্তর-পূর্ব পেনিনসুলা জনপ্রিয় এর চমৎকার সাদা আর সোনালি বালুকাবেলার জন্য।
স্কাই টাওয়ার
নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে বড় শহরে অবস্থিত স্কাই টাওয়ার আসলে অবজারভেশন এবং টেলিকমিউনিকেশন টাওয়ার।
নাপিয়ার আর্ট ডেকো
নাপিয়ার অবস্থিত হাওকে বে তে, দক্ষিণ দ্বীপের পূর্ব কোস্টে। এটি বিখ্যাত চোখ ধাঁধানো সব শিল্প ডেকো স্থাপত্যের জন্য।
কাইকোউরা
সামুদ্রিক খাদ্য প্রেমিকদের দক্ষিণ দ্বীপের এই ছোট্ট উপকূলীয় অঞ্চলটি আদর্শ। আপনি পাবেন শিল মাছ, ডলফিন এবং স্পার্ম তিমি।
Featured Image: gadventures.com