ওজন বাড়াতে চান? পড়ুন ওজন বাড়ানোর ৬ টি আকর্ষণীয় উপায়

প্রবাদে আছে- “সুন্দর স্বাস্থ্যে সুন্দর মনের বাস”। আমাদের সকলের মেদহীন হালকা পাতলা গড়নের স্বাস্থ্য পছন্দ। কিন্তু এই মেদহীন স্বাস্থ্য অনেকের জীবনে আশীর্বাদ আবার অনেকের জীবনে অভিশাপ। আদর্শ ওজনহীনতাই অভিশাপ হয়ে আসে অনেকের জীবনে। বাড়তি ওজন যেমন সমস্যা তেমনি রুগ্ন স্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়াটাও কিন্তু এক ধরণের সমস্যা।

{ "slotId": "2452885053", "unitType": "in-article" }

সর্বপ্রথম জেনে নেই, রুগ্ন স্বাস্থ্য বলতে আমরা কি বুঝি?

যদি একজন ব্যক্তির উচ্চতা অনুযায়ী তার ওজন কম হয় তবে বুঝতে হবে তিনি আন্ডারওয়েট বা তার ওজন যথার্থ ওজনের তুলনায় কম। একজন মানুষের সঠিক ওজন নির্ণয়ের জন্য, ব্যক্তির উচ্চতা ও বর্তমান ওজন জানতে হবে। সাধারণত আমরা উচ্চতা ফিট এবং ইঞ্চিতে পরিমাপ করে থাকি এবং ওজন পরিমাপ করি কিলোগ্রাম বা কেজিতে। উচ্চতা কে ফিট/ইঞ্চি থেকে মিটারে নিতে হবে। এরপর সেই উচ্চতাকে ওজনের সংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে আমরা পাই BMI বা Body Mass Index. উদাহরণ হিসেবে একজন ব্যক্তির উচ্চতা যদি ৫ ফিট ৪ ইঞ্চি হয় এটিকে মিটারে নিলে আমরা পাই ১.৬২ মিটার। ধরি, তার বর্তমান ওজন ৬০ কেজি। তবে তার BMI হবে ২২.৯। নিম্নের BMI চার্ট অনুসরণ করে আমরা জানতে পারবো তিনি কোন ধরণের স্বাস্থ্যের অধিকারী।

 BMI নির্ণয়ের মাধ্যমে একজন মানুষ নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সঠিক ধারণা লাভ করেন; ছবিঃ brightside.me

চার্ট অনুযায়ী ব্যক্তিটির ওজন, উচ্চতা অনুযায়ী সঠিক আছে কারণ ১৮.৫-২৪.৯ পর্যন্ত BMI এর অর্থ স্বাভাবিক। BMI নির্ণয় না করে, নিম্নের চার্ট অনুসরণ করেও উচ্চতা অনুযায়ী সঠিক ওজন সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যাবে।

{ "slotId": "", "unitType": "in-article", "pubId": "pub-6767816662210766" }
                                 মহিলার উচ্চতা থেকে ওজনের অনুপাত ; ছবিঃ ebanglahealth.com
                          পুরুষের উচ্চতা থেকে ওজনের অনুপাত; ছবিঃ ebanglahealth.com

একজন মানুষ, রুগ্ন স্বাস্থ্যের অধিকারী তখনই হন যখন তার মেটাবলিজমের পরিমাণ বা সহজ বাংলায় বলতে পারি হজম শক্তি সাধারণের তুলনায় বেশী হয়। যাদের মেটাবলিজমের পরিমাণ বেশী তাদের শরীরে ক্যালরি বার্ণ হয় দ্রুত যার ফলে ফ্যাট বা চর্বি হয় না। তাছাড়া শুধুমাত্র মেটাবলিজমের জন্যই নয় সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মের অভাবে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং সেই সাথে কমতে থাকে ওজন। আজকে জানবো এমন কিছু নিয়ম এবং খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে যা আমাদের স্বাস্থ্যকে সঠিক ওজন লাভে সাহায্য করবে।

১. শরীরচর্চা করা

আমরা জানি মেদ কমাতে সাধারণত শরীরচর্চা করা হয়। কিন্তু মেদ বাড়াতেও শরীরচর্চার তুলনা নেই। আমাদের পেশীর ওজন চর্বির তুলনায় বেশী। তাই পেশীর ওজন বাড়াতে ব্যায়াম করা উচিত। ফলস্বরূপ শরীরের ওজনও বৃদ্ধি পাবে। নিয়মিত ব্যায়ামে পেশী হবে সুগঠিত, সে সাথে শরীরও।

                         সপ্তাহে অন্তত দুইবার জিমে যাওয়া উচিত সে সাথে যোগ ব্যায়াম নিয়মিত করলে শরীর সুস্থ থাকে ; ছবিঃ amazonaws.com

২. নিয়ম মেনে খাওয়া

শরীরে পর্যাপ্ত ক্যালরি তখনই পৌঁছাবে যখন শরীর সঠিক সময়ে খাবার পাবে। প্রতিদিন সময়মত তিন বেলা খেতে হবে। সকালে, দুপুরে ও রাতের খাওয়ার পাশাপাশি দু’বার স্ন্যাক্স হিসেবে হাই ক্যালরি ও শর্করা সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।

                                                                                      সময়ের খাবার সময়ে খাওয়া উচিত; ছবিঃ www.wikihow.com

৩. খাওয়ার পরে বিশ্রাম

ওজন বাড়াতে খাওয়ার পরে বিশ্রাম অত্যন্ত জরুরী। এতে খাদ্য হজম হয় ধীরে পরবর্তীতে তা চর্বিতে রূপান্তরিত হয়।

                                                    খাওয়ার পরে ৩০মিনিট থেকে ১ ঘন্টা বিশ্রাম ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে ; ছবিঃdemandstudios.com

৪. পর্যাপ্ত ঘুম

বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের মাঝে রাত জাগা এক প্রকার নিয়মিত কর্মকান্ড। রাত জাগা বা পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে শরীর খারাপ হয়। শরীর পর্যাপ্ত বিশ্রাম না পেলে পরিপাক ক্রিয়ায় সমস্যা দেখা দিতে পারে। যদি সম্ভব হয় দুপুরে খাওয়ার পরে ঘুমানো উচিত। আর প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘন্টা ঘুমানো শরীরের জন্য উপকারী।

                                                             শরীরের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত ঘুম না হলে ওজন বৃদ্ধি হয় না ; ছবিঃs-i.huffpost.com

৫. খাদ্যাভাস

প্রথমত অবশ্যই হাই ক্যালরিযুক্ত খাবার খেতে হবে। কিন্তু হাই ক্যালরি বলতে এই নয় যে, বিভিন্ন জাংক ফুড বা অস্বাস্থ্যকর তেলের খাবার খেতে হবে। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় শাক সবজির পরিমাণ বেশী রাখাই শ্রেয়। শাক সবজির মধ্যে আলু শর্করা জাতীয়। আলু দেহে চর্বি উৎপন্ন করতে সাহায্য করে। তাছাড়া এভোক্যাডো, মিষ্টি কুমড়া ইত্যাদি সবজিতেও রয়েছে শর্করা সে সাথে মাছ মাংস তো আছেই। রেড মিট দেহে প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করে। প্রোটিনের ঘাটতি পূরণের ক্ষেত্রে আরেকটি উপাদেয় খাদ্য হচ্ছে দই। আঁশ জাতীয় খাদ্য যেমন বিভিন্ন ফল, আম, আমড়া, কলা, জাম ইত্যাদি ক্যালরি চাহিদা পূরণের সাথে সাথে বিভিন্ন রোগবালাই দূরীকরণেও সাহায্য করে।

               সুষম খাদ্যাভাস শুধু ওজন না শরীরকে সুস্থ রাখতেও সাহায্য করে; ছবিঃ cdn.thinglink.me

প্রতিবেলার খাওয়ায় অন্তত ১৮০০ ক্যালরির বেশী যাতে থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ডিম এবং দুধ নিয়মিত খেতে হবে। সেই সাথে বাদাম খেতে হবে প্রতিদিন। ২টি কাঠবাদাম, ২টি খেজুর ভিজিয়ে রাখতে হবে দুধ দিয়ে। সারারাত ভিজিয়ে রাখা সেই বাদাম ও খেজুর দুধসহ সকালে খেতে হবে। প্রতিদিন চকলেট বা মিষ্টি জাতীয় খাবার খেতে হবে প্রচুর পরিমাণে। চকলেট, মিষ্টি কিংবা আইসক্রিমে ক্যালরির পরিমাণ থাকে বেশী তাই ওজন বৃদ্ধিতে এদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাছাড়া খাবারের তালিকায় বিভিন্ন রকম ডেজার্ট রাখতে পারেন যেমন ক্ষীর, গাজরের হালুয়া, সুজির হালুয়া, কাস্টার্ড ইত্যাদি। পানি খেতে হবে প্রচুর পরিমাণে। পানির কোনো বিকল্প নেই।

                                                             মিষ্টি জাতীয় খাদ্য ঘুমানোর আগে খাওয়া ভালো; ছবিঃ familysporthealth.com

৬. ছেড়ে দিন ধুমপান

ধুমপান, স্বাস্থ্যবান বা রুগ্ন সকলের জন্যই ক্ষতিকর। ধূমপান ক্ষুধা কমায়। তাই ধুমপান বর্জন স্বাস্থ্য সচেতনতার প্রথম পদক্ষেপ হওয়া উচিত।

             ধূমপান খাওয়ার রুচি নষ্ট করে তাই ধূমপান কে “না”; ছবিঃ azcapitoltimes.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *