শারীরিক শ্রমের মাধ্যমে পৃথিবী যতটা পরিবর্তিত হয়েছে, তার থেকে কয়েক গুণ বেশি পরিবর্তিত হয়েছে মানসিক শ্রমের মাধ্যমে। প্রযুক্তি, ক্যারিয়ার, ব্যবসা ইত্যাদি বিষয়ের বিভিন্ন দিক নিয়ে একজন চিন্তাবিদ ভেবে থাকেন। কিভাবে সফলতা পাওয়া যাবে কিংবা অদূর ভবিষ্যতে কোন ক্ষেত্রটি কতটুকু পরিবর্তিত হবে সেগুলো একজন চিন্তাবিদ বিভিন্ন দিক থেকে বিচার-বিশ্লেষণ করে বের করে থাকেন।
একটি আইডিয়া সারাবিশ্বকে পরিবর্তন করে দিতে পারে, তাই একজন চিন্তাবিদের গুরুত্ব অনেক বেশি। তাই আপনিও পারেন একজন চিন্তাবিদ হিসেবে ক্যারিয়ার গঠন করতে। আপনি হয়তো ভাবছেন এটি খুবই কঠিন কিন্তু সেটা ভুল। আপনি যদি নিয়মিত ৬টি পদ্ধতি অনুসরণ করেন, তাহলে আপনিও হতে পারবেন একজন চিন্তাবিদ। জেনে নিন সেই ৬টি পদ্ধতি সম্পর্কে।
মূল্যবান কনটেন্ট তৈরি করুন
বিভিন্নভাবে একজন চিন্তাবিদ হিসেবে সুনাম অর্জন করতে পারেন। তবে বিশ্বের প্রায় অধিকাংশ চিন্তাবিদ ক্যারিয়ার গঠন শুরু করেছেন নিজস্ব ব্লগে লেখালিখির মাধ্যমে অথবা অন্যের ব্লগে গেস্ট রাইটার হিসেবে অথবা নিউজ লেটারে নিজের কিছু চিন্তা-ভাবনা যুক্ত করে অন্যদের পাঠিয়ে। তবে সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হচ্ছে নিজের ব্লগে বিভিন্ন বিষয়ে লেখালিখি করা। আপনি আপনার একটি ব্লগ সাইট তৈরি করে সেখানে সমসাময়িক বা যেকোনো বিষয়ে নিজের মতামতগুলো গুছিয়ে প্রকাশ করুন। তবে লেখাগুলো যেন অবশ্যই মানুষের জন্য উপকারী হয়।
আবার নিউজ লেটারে বিভিন্ন বিষয়ে উপদেশ প্রদান করে মেইল করতে পারেন। নির্দিষ্ট সময় পর পর ব্লগে নিয়মিত লিখতে পারেন এবং ভালো কিছু নিউজ লেটার পাঠাতে পারেন। কিন্তু আপনি যদি লেখক না হন তাহলেও চিন্তার কোনো কারণ নেই। আপনার ছোট ছোট ফেসবুক পোস্ট বা টুইটের মাধ্যমেও নিজের সুপ্ত প্রতিভাকে বিকশিত করতে পারেন।
পরামর্শ বা উপদেশ দিন
মানুষের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কিংবা কোন বিষয়ে নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করার মাধ্যমেও নিজেকে একজন চিন্তাবিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন। ধরুন, আপনি কোনো বিষয়ে অভিজ্ঞ। আপনি যে বিষয়টিতে অভিজ্ঞ সে বিষয়ে অনেকেই জানতে চাচ্ছেন। যখন আপনি তার সাথে আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করবেন তখন শুধুমাত্র কারো উপকার হবে না, সেই সাথে আপনার নিজেরও প্রচার হবে।
যখন আপনার প্রচার বৃদ্ধি পাবে তখন অনেক মানুষ আপনাকে চিনবে এবং আপনাকে নতুন নতুন প্রশ্ন করবে। ফলে আপনাকে আরো বেশি জানতে হবে। এভাবে আপনি এক সময় সফল একজন চিন্তাবিদ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন।
যদি কেউ আপনাকে প্রশ্ন না করে, তাহলে হতাশ হবেন না। আপনি Quora বা Reddit এর মতো প্ল্যাটফর্ম তৈরি করবেন যাতে আপনি যে সকল বিষয়ে উপদেশ প্রদান করতে ইচ্ছুক সে বিষয় সম্পর্কিত প্রশ্নগুলো খুঁজে পান।
অন্যদের সাথে যুক্ত হোন
আপনি যদি নিজেকে একজন চিন্তাবিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান, তাহলে শুধুমাত্র নিজের প্রচারণা চালালে হবে না। সেই সাথে আপনাকেও অন্যদের প্রশ্ন করতে হবে, বেশি বেশি জানতে হবে এবং অন্যদের কথা মনোযোগ সহকারে শুনতে হবে।
ধরুন, আপনি কোনো বিষয়ে জানতে চান, তাহলে আপনি সেই বিষয়ে অন্যদের ব্লগ পড়ুন। অন্য কোনো চিন্তাবিদের সাথে যোগাযোগ করুন। অথবা আপনি আপনার ফেসবুক, লিঙ্কডিন বা টুইটারে আপনার কো্নো প্রশ্ন থাকলে করুন, অন্যদের মতামতগুলো যাচাই করুন।
আপনার কোনো মতামত থাকলে প্রকাশ করুন
আপনি যদি নিজেকে একজন চিন্তাবিদ হিসেবে বিবেচনা করেন, তাহলে আপনাকে যে কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে অথবা যেকোনো যৌক্তিক হিসেবে যদি আপনার নিজস্ব কোনো মতামত থাকে সেটা নির্দ্বিধায় প্রকাশ করতে হবে। একজন চিন্তাবিদ হিসেবে কখনোই ভয়ে জড়সড় হয়ে পড়লে চলবে না। যদি আপনার কোনো মতামত থাকে সেটা নির্ভয়ে প্রকাশ করতে হবে। ধরুন, এমন একটি ইস্যু সৃষ্টি হয়েছে যে বিষয়ে আপনি কোনো কথা বলতে অস্বস্তিবোধ করছেন কিন্তু আপনার ইস্যুর বিষয়ে মতামত প্রকাশ উচিত, তাহলে আপনাকে চুপ থাকলে হবে না। অবশ্যই একজন নেতার মতো অন্যদের পাশে দাঁড়াতে হবে।
ব্যক্তিত্ব গঠন করুন
আপনি যখন একজন চিন্তাবিদ হিসেবে নিজের প্রচারণা চালাবেন, তখন যেমন মানুষ আপনার ভিতরের প্রতিভা দেখবে তেমনি আপনার বাহিরের ব্যক্তিত্বও দেখবে। নিজেকে কখনোই ব্যক্তিসত্তাহীন জড়বস্তু হিসেবে উপস্থাপন করা যাবে না বরং নিজেকে একজন প্রাণবন্ত মানুষ হিসেবে সবার সামনে উপস্থাপন করতে হবে। মানুষ একজন চিন্তাবিদ হিসেবে শুধু আপনার ভিতরের চিন্তা-ভাবনাগুলোকে দেখবে না, আপনি মানুষ হিসেবে কেমন সেটাও দেখবে। তাই নিজেকে যদি একজন চিন্তাবিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান, তাহলে নিজের চিন্তা-ভাবনার প্রসারের সাথে সাথে নিজের ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলুন কারণ ব্যক্তিত্ব মানুষের উপর অনেক বড় প্রভাব সৃষ্টি করে।
সময় বিনিয়োগ করুন
মানুষের সবচেয়ে বড় সম্পদ হচ্ছে সময়। আপনি যদি সময়কে উত্তম ভাবে ব্যবহার করেন তাহলে আপনি যে কোনো ক্ষেত্রে সফল হতে পারবেন। তেমনি আপনি যদি একজন সফল চিন্তাবিদ বা চিন্তাশীল মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান, তাহলে আপনাকে অবশ্যই নিয়মিত সময় ব্যয় করতে হবে।
একজন চিন্তাবিদের জন্য কোন বিষয়গুলো জানা দরকার, সেগুলোর জন্য সময় দিতে হবে। আবার আপনি যদি একজন প্রতিষ্ঠিত চিন্তাবিদ হয়ে যান সেক্ষেত্রেও আপনাকে সময়ের সদ্ব্যবহার করতে হবে। আপনি যদি নিয়মিতভাবে ব্লগে পোস্ট করে যান অথবা আপনি ইউটিউব ভিডিও তৈরি করে চিন্তা-চেতনা ছড়িয়ে দিতে চান, তাহলে আপনাকে অবশ্যই সময় দিতে হবে। তাই একজন চিন্তাবিদ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য পরিশ্রমের পাশাপাশি সময়ের মূল্য দিতে হবে।
Featured Image: mascalicomm.com